নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহরিয়ার পলক

গল্প উপন্যাসে আগ্রহী একা প্রবাসী মানুষ। খুব বেশি লিখালিখি করতে পারি না। মাঝে মাঝে মনের কথা বলার চেষ্টা করি। মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই সবসময়।

শাহরিয়ার পলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনাদের সাথে আমার একটি অভজ্ঞতা শেয়ার করি

২০ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৬:০৮

আমি তখন এইচ.এস.সি. তে পড়ি। আমরা কয়েকজন বন্ধু একসাথে একজন ম্যাম এর কাছে রসায়নের টিউশন নিতাম। একদিন আমি, সাওন, জ্যোতি, রকি আরো ২-১ জন ছিল সম্ভবত, হেটে হেটে ম্যামের বাসায় যাচ্ছিলাম। তার বাসার গেইটের একটু আগে দেখলাম ছোট একটা জটলার মত। একটুখানি দেখলাম, যে একজন লোক রাস্তার পাশে শুয়ে আছে আর কয়েকজন তাকে ঘিরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে। আমাদের সময় ছিল না তাই দাড়াই নি। খুব বেশী ভাবলাম না ওটা নিয়ে। মনে হয়েছিলো কেও শম্ভবত ভিক্ষা করছেন নিজের অসুস্থতার কথা বলে। পড়া শেষ করে ম্যামের বাসার গেইট থেকে বেড়িয়ে দেখি, ওই লোকটা রাস্তার উল্টোদিকে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার পা দুটো সামনের দিকে ছড়ানো। চলে যাচ্ছিলাম আমরা। কিন্তু আমার ভালো লাগে নি এভাবে কিছু দেখেও না দেখার ভান করতে। আমি বন্ধুদের বললাম একটু দাড়াতে। লোকটার সামনে গিয়ে আমি জানতে চাইলাম কি হয়েছে আপনার। লোকটি প্রায় কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলল বাবা আমারে বাঁচান। আমি একটু ধাক্কার মত খেলাম। জানতে চাইলাম কি হয়েছে। উনি আমার হাত টা ধরে তার পেটের একটু নিচের দিকে ছোঁয়ালেন। আমি অনুভব করলাম তার পেট একটি ফুটবলের মত শক্ত হয়ে ফুলে আছে। বললেন তার প্রস্রাব আটকে আছে ৬ ঘণ্টা ধরে। আমি বুঝলাম যে লোকটি কি পরিমান কষ্ট সহ্য করছে শেষ কয়েক ঘণ্টা ধরে। কারন আমাদের যখন প্রস্রাব ধরে আর আমরা তা না করতে পাড়ি তাহলে বোঝা যায় কেমন কষ্ট হয়। ডায়াবেটিস এর কি একটা সমস্যার কারনে এটা হয়েছে। একটি ইনজেকশন দেওয়া লাগবে। তা না হলে তার প্রস্রাব হবে না। জানতে চাইলাম তার পরিবারের কথা। বলল তার ছেলে নাকি জেলে আছে। কি কারনে জেলে তা আর জানতে চাইলাম না। তিনি রিকশা চালান। তার স্ত্রী ছাড়া দেখার আর কেউ নেই।

ভাবলাম আমাদের মত সুস্থ ও সাবলম্বি মানুষগুলো থাকতে একটি মানুষ সামান্য ২০০ টাকার জন্য মারা যাবে সেটা হতে পারে না। আমি বন্ধুদের কাছে আসতে বললাম আর বেপারটা বললাম। আমি আমার পকেটে হাত দিয়ে দেখি ৩০ টাকার মত ছিল। বন্ধুদের যার কাছে যা আছে তা দিতে বললাম। কারো কাছে তেমন বেশী টাকা ছিল না কারন আমরা সবাই ছাত্র। সবার টাকা মিলিয়ে দেখি ১০০ টাকার মত হয়েছে। পরে আমরা রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া মানুষগুলোর কাছে লোকটাকে দেখিয়ে সামান্য কিছু সাহায্য চাইতে শুরু করলাম। অবাক ভাবে লক্ষ করলাম ৫ টাকা ১০ টাকা, যে যা পাড়ছে সবাই দিচ্ছে। একজন তো তার পকেট থেকে ৫০ টাকা বের করে দিলেন। শেষে যখন দেখলাম ২৫০ টাকার মত হয়েছে। তখন একটি রিকশা দাড় করালাম। রিকশাওয়ালাকে বললাম ওই লোকটাকে একটু বারডেম এ নিয়ে যাও। রিকশাওয়ালা যেতে চাইল না। তাকে মিনতি করে বললাম তোমার মতই একটি রিকশাওয়ালা মারা যাচ্ছে। তখন রিকশাওয়ালা বলল ভাই আমি বারডেম পর্যন্ত জাইতে পারমু না। কারন আমার রিক্সার নাম্বার নাই। তখন বললাম অন্য কোন রিক্সা নাই আসে পাশে তুমি তাহলে সামনে নিয়ে গিয়ে আরেকটি রিক্সায় তুলে দিও। তোমাকে ভাড়াও দিয়ে দিচ্ছি। ২৫০ টাকার মধ্যে ৫০ টাকা রিক্সা ওয়ালাকে দিলাম আর বাকি ২০০ টাকা ওই লোকটিকে দিলাম। পরে লোকটিকে রিক্সায় তুলে দিলাম। লোকটির চোখ থেকে পানি পরছিল। আমাদের মুখের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে ছিল। আমি ওই চোখের দিকে তাকাতে পারলাম না। কি কি যেন বলছিল লোকটি আমদেরকে। কোন কথাই আমার কানে যাচ্ছিলো না। রিক্সা চলতে শুরু করতেই আমরা বাসার দিকে হাটতে শুরু করলাম।

বাসায় এসে সারাদিন মন খারাপ হয়ে থাকল। রাতে ঘুমাতে গিয়েও ঘুমাতে পাড়ি নি এই ভেবে যে লোকটিকে কি ওই রিক্সা ওয়ালা পৌঁছে দিয়েছিল? সেকি বারডেম এ যেতে পেরেছিল? তাকে কি বাঁচাতে পেরেছি আমরা? এর পর আর জানতে পাড়ি নি লোকটির শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিলো...

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৬:২২

রিফাত হোসেন বলেছেন: . এই ধরনের হলেও কিছুটা কাছাকাছি অভিজ্ঞতা হয়েছিল.... ব্লগে এই নিয়ে লিখেছিলামও বছর ৫ এক আগে মনে হয় ।

২০ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৬:৩০

শাহরিয়ার পলক বলেছেন: সময় করে আপনার অভিজ্ঞতা টাও পড়ে দেখব একদিন। পড়ার জন্য ধন্যবাদ :)

২| ২০ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৬:২৩

খেয়া ঘাট বলেছেন: লোকটির জন্য খুবই দুঃখ পেলাম।
আর বুঝলাম পৃথিবী এখনো এতো সুন্দর আপনাদের মতো মানুষ আছে বলেই।

২০ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৬:৩৭

শাহরিয়ার পলক বলেছেন: এখনো মাঝে মাঝে মনে পরলে খারাপ লাগে যে, হয়তো অবহেলাই করে ফেলেছি। নিজেরা গিয়েই দিয়ে আশা উচিৎ ছিল লোকটিকে বারডেমে। হয়তো আমাদের এসএসসি এর সময় আমরা নিজেদের এখনকার ছেলে মেয়েদের মতো বড় ভাবতাম না তাই হয়তো নিজেদের যাওয়া হয় নি।
ধন্যবাদ :)

ভালো কথা, আপনাকে রাত দিন সবসময় দেখা যায় এখানে। অন্য কোথাও সময় দেন না? ::P

৩| ২০ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৭:২৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: অন্য কোথায়???

২০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫০

শাহরিয়ার পলক বলেছেন: অনলাইন ছাড়া যেকোনো জায়গায়। মানে বলতে চাইলাম আপনি কি সব সময় অনলাইনেই থাকেন?

৪| ২০ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৭:২৭

বটের ফল বলেছেন: মানবতার জয় হোক।

২০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫০

শাহরিয়ার পলক বলেছেন: মানবতার জয় হোক... ধন্যবাদ পড়ে দেখার জন্য :)

৫| ২০ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৯:০০

আহলান বলেছেন: মানুষ মানুষ (ও পশুর )জন্য

২০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫১

শাহরিয়ার পলক বলেছেন: চিরন্তন...ধন্যবাদ :)

৬| ২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩৪

আলাপচারী বলেছেন: লোকে বলে দেশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমি তা মনে করি না। আমার নিজেরই এরকম শুভ কিছু কর্মকান্ড একেবারে পথের লোককে করতে দেখেছি।
তাই বলি মানুষে এখনো ভরসা করা যায়। এটা আমার ব্লগ নয় তাই নিজের দেখা অভিজ্ঞতা গুলো এখানে উল্লেখ করলাম না।
ধন্যবাদ।
জানবেন নিজের আত্মতৃপ্তিই আপনার একমাত্র প্রত্যাশা । আর কিছু প্রত্যাশা করবেন না।
আবারও ধন্যবাদ।

২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৭

শাহরিয়ার পলক বলেছেন: সময় করে আপনার ব্লগে দেখে আসবো আপনার অভিজ্ঞতা গুলো।
"নিজের আত্মতৃপ্তিই আপনার একমাত্র প্রত্যাশা" সত্য বচন...

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ :)

৭| ২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৭

নতুন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে... নিজের আত্নতৃপ্তিই সবচেয়ে বড় পাওয়া....

++++++

২১ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৫:২৬

শাহরিয়ার পলক বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ে দেখার জন্য :)

৮| ২১ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৫:৪৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: হয়তোবা সবসময় লগড ইন হয়ে থাকি।
কিন্তু তখন হয়তোবা অন্য কিছু করছি। এই যে এখন..........কাজ করছি আর ফাঁকে ফাঁকে ব্লগ দেখছি।

৯| ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫২

সপ্নাতুর আহসান বলেছেন: বেশ ভাল একটি কাজ করেছেন।

তবে আমাদের মাঝে একটা প্রবণতা দেখা যায় আমরা সামর্থ্য যখন থাকে না তখন যেসব কাজ করতে এগিয়ে যাই সামর্থ্য হলে পিছুপা হই বা ওই পথে আর পা বাড়াই না।

ধন্যবাদ।

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৭

শাহরিয়ার পলক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আমি জেনো তেমন মানুষ না হই যে সামর্থ্য বান হবার পড়ে ঐ ধরনের কাজ করাতে যায় না, সে চেস্তাই করে যাচ্ছি সবসময়... :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.