![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিথিলা জানে, নিজে দেখতে আহামরি সুন্দর না হলেও একেবারে খারাপও না। অন্তত সামনে বসে থাকা যেকোনো ছেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত সুন্দর। অথচ মুখোমুখি বসে থাকা লোকটি ওকেতো দেখছেই না বরং ও যে লোকটিকে দেখছে সেটাও পাত্তা দিচ্ছে না।
সাধারণত অপরিচিত কোনো ছেলে কোনো মেয়ের দিকে তাকালে মেয়েটা কপট রাগ দেখায় বা অস্বস্তি বোধ করার অভিনয় করে এটা মিথিলা জানে কারন ও নিজেও এমন করে মাঝে মাঝে। মনে মনে অবশ্য সব মেয়েই চায় সামনে বসা ছেলেটি তাকে দেখুক। অন্যদিকে কোনো মেয়ে যদি একটি ছেলের দিকে লক্ষ্য করে তবে ছেলেটির ভাব বেড়ে যায়। ছেলেটি এমন একটা ভাব করে জেনো সে পূর্ণিমার চাঁদের মালিক।
কিন্তু এই লোকটি ওকেও দেখছে না আবার ভাব ও নিচ্ছে না। ট্রেনে ওঠার পর থেকেই দেখছে লোকটি জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। মিথিলা ভেতরে ভেতরে অস্থির বোধ করছে। এই ধরনের অস্থিরতা মানুষকে ধীরে ধীরে রাগিয়ে দেয়। ও অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে বোঝাতে পারছে না যে এভাবে রেগে যাওয়াটা ঠিক না।
বিষয়টা ভুলে থাকার জন্য মিথিলা অন্য পাশের জানলা দিয়ে বাইতে তাকাতে যাবে এমন সময় সামনে বসা লোকটি পা ওর পায়ের সাথে সামান্য একটু ঘষা খেলো।
-সরি আপু...
-হুহ... সুন্দরি মেয়ে দেখে ইচ্ছে করেই পা লাগিয়েছেন। ভেবেছেন আমি কিছু বুঝি না?
-না না আপু। আপনি ভুল বুঝতেছেন। আমি ইচ্ছে করে এটা করি নি।
-থাক আর সাফাই গাইতে হবে না। আমি বুঝি আপনারদের মত মানুষ কোনটা ইচ্ছে করে করেন আর কোনটা করেন না।
-আমি যদি আপনাকে প্রমান করে দেই যে আমি ইচ্ছে করে এটা করি নি, তাহলে...
-এটা আবার প্রমান করবেন কিভাবে? আচ্ছা ঠিক আছে যদি প্রমান করতে পারেন তাহলে আমি আপনাকে সরি বলব।
লোকটি তার শার্টের বুকপকেট থেকে একটি কার্ড বের করে এগিয়ে দিলো। মিথিলা হাত বাড়িয়ে কার্ডটি নিয়ে পড়লো। পড়ে অবাক চোখে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল,
-আপনি অন্ধ?
-জী...
-সত্যি আপনি আমাকে দেখছেন না?
-আপনার কাছে কি আমার আইডি কার্ডটি মিথ্যে মনে হচ্ছে?
-না তা না। তাহলে আমি যখন প্রথম এসে আপনার সামনে বসলাম তখন আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন। আবার পরে বললেন "সরি আপু"। কিভাবে বুঝলেন আপনার সামনে একটি মেয়ে বসে আছে?
-আপনি যখন এসেছেন, তখন খুব মিষ্টি একটা স্মেল আমি পেয়েছি। এমন স্মেলের পারফিউম সাধারণত টিপটাপ ছিমছাম মেয়েরাই বেশি পছন্দ করে।
-বাহ... আপনার ঘ্রান শক্তি তো যথেষ্ট ভালো!!
-আসলে ঈশ্বর যাকে অন্ধ করে দেন, তাকে তিনি অন্য অনুভূতিগুলো বাড়িয়ে দেন। লাইক ঘ্রান শক্তি, শ্রবণ শক্তি।
-আর কি বলতে পারবেন আপনি আমার সম্পর্কে?
-আপনি যখন এসে বসেছেন তখন একধরনের খসখস শব্দ হচ্ছিলো যা প্রমান করে আপনি একটা স্ত্রি করা মার দেয়া কাপড় পড়ে আছেন। কিন্তু আপনার কাপড় থেকে আসা হালকা পুরোনো একটা গন্ধ বলছে এই কাপড়টা আপনি অনেকদিন যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন। সম্ভবত কাপড়টি আপনার মায়ের। আপনি আপনার মা কে দেখতে যাচ্ছেন। তাই মায়ের দেওয়া কাপড়টি পরেছেন এবং আপনার মন খুব ভালো আজ। কারন যাদের মন খারাপ থাকে তারা অনেক ছোট ছোট বিষয় এড়িয়ে যায়। আপনার পায়ে আমার পা লাগাটা আপনি ইগ্নোর করতেন যদি আপনার মন খারাপ থাকতো।
এসময় ট্রেনটি একটি স্টেশনে এসে থামল। অন্য একটি ছেলে এসে লোকটিকে ধরে ধরে নিয়ে নিয়ে গেলো। যাবার আগে লোকটি বলল,
-আপনি অনেক সুন্দর। ভালো থাকবেন...
ট্রেন আবার চলা শুরু করলো। মিথিলা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে আর মিনহাজ নামের অন্ধ লোকটির কথা ভাবছে। ভাবছে অন্ধরা শুধু বাহ্যিক ভাবে অন্ধ। মনের দিক থেকে অন্ধ নয়... অন্য দিকে চোখ ভালো এমন অনেক মানুষ মুখ দেখেও বুঝতে পারে না সামনে থাকা মানুষটির মানসিক অবস্থা কেমন...
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৪৮
শাহরিয়ার পলক বলেছেন: আমার কাছে এমন মনে হয় যে আমার যখন খুব বড় কোনো কারনে মন খারাপ থাকবে তখন ছোট ছোট মন খারাপের কারণগুলো আমি ইগ্নোর করবো।
আপনার ভাবনাটাও আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। সম্ভবত এটা মানুষ এবং মানসিকতার উপর নির্ভর করে।
কাঁচা হাতের লিখা দাদা। আপনি বলার পর আসলেই বুঝলাম ঐ লাইনটা এখানে উরে এসে জুড়ে বসেছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২১
ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: যাদের মন খারাপ থাকে তারা অনেক ছোট ছোট বিষয় এড়িয়ে যায়। আপনার পায়ে আমার পা লাগাটা আপনি ইগ্নোর করতেন যদি আপনার মন খারাপ থাকতো।
গল্পটা যদি আমার মাথায় আসতো তাহলে আমি উপরের লাইনটা পুরাই উলটা লিখতাম... কারন আমার সেটাই স্বাভাবিক মনে হয়... মন ভালো থাকলেই মনে হয় মানুষ ছোট বিষয় এড়িয়ে যায়
-আপনি অনেক সুন্দর। ভালো থাকবেন.
এই লাইনটার মানে কী?