![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অলীক আজ খুশি মনে মিহানদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলো। মিহান অলীকের স্টুডেন্ট। এক মাস আগে অলীকদের পাশের ফ্ল্যাটের বড় আপু টিউশনিটা জোগাড় করে দিয়েছে ওকে। জীবনে প্রথম ছাত্র পড়াচ্ছে অলীক। টিউশনির প্রথম দিন একটু ভয়ে ছিল ও। কয়েকদিন পড়ানোর পর ভয়টা কেটে গেছে।
আজ সত্যি অলীক অনেক খুশি। জীবনে প্রথম ও নিজের যোগ্যতায় টাকা উপার্জন করেছে। আজ জীবনে প্রথম বেতন পেয়েছে। এতোটা খুশি ও বুঝতে শিখার পর আর কোনোদিন হয় নি। ওর মন চাইছে চিৎকার করে সবাইকে বিষয়টা জানায়।
প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে মাকে একটা শাড়ি কিনে দিবে বলে ভেবে রেখেছিল অনেক আগেই। দুদিন আগে ও ভার্সিটি থেকে আসার পথে শপিং মল থেকে ঘুরে এসেছে। একটা নীল শাড়ি অনেক পছন্দ হয়েছে ওর। সেদিন শাড়ির দামটাও ঠিক করে এসেছে। শাড়ির দামটা ওর বেতনের টাকার থেকে একটু বেশি ছিল। অনেক বলার পরও দোকানদার শাড়ির দাম কমাচ্ছিল না। শেষে ও দোকানদারকে বলেছে ও শাড়িটা ওর মায়ের জন্য কিনতে চায় নিজের টিউশনির টাকায় মাকে গিফট দেওয়ার জন্য। তবুও দোকানদার দিবে না বলায় ও মন খারাপ করে চলে আসছিলো। দোকান থেকে বেড়িয়ে যাবে এমন সময় দোকানদার লোকটা পেছন থেকে ডেকে বলল, "শাড়িটা নিয়ে যান ভাইয়া।" অবাক চোখে পেছন ফিরে অলীক দেখল দোকানদার লোকটা মুচকি হেসে আবার বলল, "আপনি মায়ের কথা বললেন তাই দিলাম। অন্য কারো জন্য হলে দিতাম না।" দোকানদার লোকটা শাড়িটা প্যাকিং করে দিয়ে দিচ্ছিল। অলীক লোকটাকে বলল, "আপনি কি আমার একটা উপকার করতে পারবেন? আমি শাড়িটা নিচ্ছি কিন্তু আজকে না পরশুদিন। আপনি যদি এটা প্যাকিং করে রেখে দেন তাহলে আমি পরশু এসে দাম দিয়ে নিয়ে যাবো। আমি এখনো আমার টিউশনির টাকাটা হাতে পাই নি।" লোকটা আবার একটু মুচকি হেসে বলল আচ্ছা ঠিক আছে।
আজ আবার ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে অলীক শপিং মলে গেলো। শাড়ির দোকানদার ওকে দেখেই একটা হাসি দিয়ে বলল, "ভাইয়া কেমন আছেন? আপার মা ভালো আছে?" সবাই ভালো আছে বলে উত্তর দিয়ে ও মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে গুনে দোকানদারকে দিল। দোকানদার টাকাগুলো আবার গুনে নিয়ে ওকে শাড়ির প্যাকেটটা দিয়ে বলল, "আপনার মাকে আমার সালাম দিবেন।" "অবশ্যই, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ" বলে অলীক দোকান থেকে বেড়িয়ে আসলো।
শপিং মল থেকে বেরোতে বেরোতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। প্যান্টের পকেটে মোবাইলটা বাজছে। মা কল দিয়েছে। "হ্যালো মা?" "অলীক তুই কই? কাল কিন্তু হরতাল দিয়েছে। রাস্তায় গণ্ডগোল হতে পারে। তারাতারি বাসায় আয়।" " তুমি ভেবো না। আমি এখনি আসছি মা" বলে ও ফোনটা রেখে দিল।
রাস্তায় বেড়িয়ে দেখে অনেক জ্যামজট। সন্ধ্যার সময় সবার বাড়ি ফেরার তারা তাই প্রতিদিন সন্ধ্যায় এমন জ্যাম লাগে। এমনিতে জ্যামের কারণে প্রতিদিন ও বিরক্ত ভাব নিয়ে বাসে উঠে। কিন্তু আজ ওর ভেতর কোনো বিরক্তি নেই। খুশি মনে একটা গাদাগাদি করে মানুষ দাড়িয়ে থাকা বাসের মধ্যে উঠে পড়লো। এত ভিড় আর গরমের মাঝেও অলীক চোখ বুজে ওর মায়ের হাসি মাখা মুখটা কল্পনা করলো। ও মাকে শাড়িটা দিয়ে বলছে, "মা আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমি আজ প্রথম বেতন পেয়েছি। এই নীল শাড়িটা আমি তোমার জন্য এনেছি সেই টাকা দিয়ে। দেখোতো তোমার পছন্দ হয়েছে কিনা?" মা শাড়িটা হাতে নিয়ে একবার শাড়ির দিকে আরেকবার ওর দিকে তাকাচ্ছেন। পরে শাড়িটা পাশে রেখে দিয়ে অলীককে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন আর তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে কে ভিজিয়ে দিচ্ছে। এটা ভেবে অলীকের চোখ দিয়েও দুফোটা পানি বেড়িয়ে আসলো। কেউ দেখে ফেলতে পারে এই ভয়ে কোনোরকমে হাতের উল্টো পীঠ দিয়ে চোখের পানিগুলো মুছে ফেলল।
ভিরের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে অলীক একেবারে বাসের পেছনে চলে এসেছে সেটা একদম খেয়াল করে নি ও। কিছুক্ষন পর হঠাত বাসটা থেমে গেলো। বাসের মধ্যে মানুষগুলো সব চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু করে দিল। কি হয়েছে বুঝে ওঠার আগেই সামনের দিকের অনেক মানুষ বাস থেকে নেমে গেছে। পেছনের মানুষগুলো এগুতে না পেরে অনেকেই বাসের জানলা দিয়ে নামার চেষ্টা করলো। অলীক তখনো কিছু বুঝে উঠে নি। সংবিৎ ফিরে পেয়ে ও দেখল বাসের চারিদিকে আগুন। যারা জানলা দিয়ে নামার চেষ্টা করছিলো তাদের অনেকেই আগুনের কারণে নামতে পারছে না। অলীকও চেষ্টা করলো নামার জন্য কিন্তু পারলো না। ও ভয় পেয়ে গেলো। মাথা কাজ করছে না। বার বার মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। শাড়ির প্যাকেট টা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে সামনের দিকে আগানোর চেষ্টা করলো। সেদিকেও আগুন। মানুষের চিৎকার আর কান্নার শব্দে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। চারদিকে কালো ধোঁয়ায় চোখ জ্বলছে। নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। অলীক ধোঁয়া থেকে বাঁচতে উপুর হয়ে বসে পড়লো। অক্সিজেনের অভাবে ওর শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে। জ্ঞান হারানোর আগে অলীক শেষ বারের মত মায়ের হাসিমাখা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতে দেখল। মা নীল শাড়িটা পরে ওর সামনে দাড়িয়ে আছে ওর দিকে দুহাত তুলে। ও কোনোরকম ঠোঁট নেড়ে বলল, " আমি আসছি মা..."
২| ৩১ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:২৯
ঢাকাবাসী বলেছেন: একটা ব্যার্থ মহা দুর্নীতিবাজ রাস্ট্রের চিত্র!
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:২৮
সকাল হাসান বলেছেন: ট্র্যাজিক