![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
রাত তখন হবে প্রায় একটা। সামনে দুইটা ভূতের বাচ্চা। আকাশে মস্ত বড় একটা চাঁদ। খুব মনযোগ দিয়ে ভূতের বাচ্চাগুলা দেখলাম। ঐতো শ'খানেক হাত দূরে হবে। আমি খুব সাবধানে ধীরে ধীরে আগানো শুরু করলাম। এক ধরণের উত্তেজনা কাজ করছে। বড় হয়ে বুঝেছি, এমন উত্তেজনার সময় এড্রেনাল গ্রন্থি থেকে এড্রেনালিন নামের একটা হরমোন বের হয়। যা সমস্ত শরীরে এক ধরনের ভোঁতা টাইপ নেশা ছড়িয়ে দেয়। উঁচু ব্রিজের উপর থেকে পায়ে রশি বেঁধে যখন মানুষ বাঞ্জি জাম্পিং করে তখনো একই ঘটনা ঘটে। অথবা সাপের বিষ আছে জেনেও তার সাথে খেলা করার সময়ও এক ধরণের নেশা কাজ করে। বড় অদ্ভুৎ আকর্ষণের এক নেশা।
আমি চরম নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে এক পা, দুইপা করে আগাচ্ছি। ঠিক এই সময় হয়ত পিছন দিক থেকে কেউ আমাকে দেখলে ভয় পাবে। হয়ত কেউ ভাববে আমাকে ভূতে ধরেছে। হয়ত কেউ ভাববে আমাকে তাবিজ করে বশ করা হয়েছে। আসলে তা না, আমার মধ্যে এক ধরণের ঘোর কাজ করছে। ঐতো দেখা যাচ্ছে! দুইটা ভূতের বাচ্চাই আমাকে দেখে থমকে গেলো। আমার দিকে চোখাচোখি হলো। চাঁদের আলো শুধু বিভ্রান্তি ছড়ায়, স্পষ্ট করে কিছু দেখতে দেয় না। আমার অবচেতন মন বলছে এরা ভূতের বাচ্চা। তাই আমার যুক্তি কাজ করছে যে আমি সামনে ভূত দেখছি। কিন্তু আমার যৌক্তিক মস্তিষ্ক বলছে, এরা ভূত নয়। আমি অন্য কিছুকে ভূত বলে শুরু থেকেই ভুল করে বসে আছি।
মাথাটা ডানে, বামে কয়েকবার ঝাকাইলাম। বড় করে নিঃশাস নিলাম। যৌক্তিক মস্তিষ্কই জয়ী হলো। এরা ভূতের বাচ্চা না। কাঠবিড়ালী বা বেজী টাইপ কিছু একটা হবে। চাঁদের আলোতে দূর থেকে অত স্পষ্ট দেখা গেলো না। আর অতটা কাছেও যাওয়া গেলো না। কারন আমাকে দেখে এরা বেশ ভয় পেয়েছে। থমকে দাঁড়িয়ে আছে। মজার কান্ডটা হলো, এরা সাধারণত চার পায়ে ভর করে দৌড়ায়। এরা যে পিছনের দুইটা পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াইতে পারে তা কোন দিন দেখি নাই। ঠিক যেন কেঙ্গারুর মত। তাই দূর থেকে মনে হচ্ছিলো মানুষের মত কিছু একটা দাঁড়ায়ে আছে। আর ঘোমটার বিষয়টা হইলো, এরা পিছনের দুই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ায়েছে। সামনের পা দুইটাকে হাতের মত ব্যবহার করছে। আশেপাশে পাতা টাতা টাইপা যা ই পাচ্ছে তা দিয়ে একে অপরের মাথায় ঘষাষসি করছে। এতেই মনে হচ্ছে বুঝি কেউ একজন ঘোমটা পড়ায়ে দিচ্ছে। আর সামনের দিকে আগাইলাম না। চাঁদের আলোতে রোমান্টিক হওয়ার অধিকার শুধু মানুষেরই কেন থাকবে? দুনিয়াটাতো শুধু মানুষের না। কাঠবিড়ালী হোক আর বেজী হোক, তাদেরও সমান অধিকার আছে চাঁদের আলোতে মুগ্ধ হয়ে রোমান্টিক হওয়ার। এদেরকে এদের মত ফেলে আমি বাড়ীর দিকে হাটা দিলাম।
আমাদের গ্রামে সদর আলী মসজিত নামের একটা জায়গা আছে। পুকুরের পাড়ে মসজিত। পুকুরের তিন পাড় জুড়েই বিশাল এক বাঁশ ঝাড়। আশেপাশে কয়েক গ্রামের মধ্যে আমাদের বাজারই সব চাইতে বড়ছিলো। আর বাজার থেকে সব চাইতে বড় যে রাস্তাটা গ্রামের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে তাই রাতে সব চাইতে ভয়ংকর ছিলো। কারন প্রথমে কামাইরাখালের পুল এর পরে সদর আলী মসজিদের পুকুর পার। আমি যতদিন গ্রামে ছিলাম, সন্ধার পর এই সদরআলী মসজিতের রাস্তায় কেউ একা হেটেছে তার প্রমান পাই নাই। সে যত বড় বীর পুরুষই হোক।
মসজিদের আমৃত্যু মোয়াজ্জিন ছিলেন আলেক ক্কারী। মসজিদের কাছেই বাড়ী। জ্বীনরা কখনো আলেক ক্কারীকে কিছু করতে পারে নাই। কিন্তু তার ছেলেরা ছিলো জ্বীনের ভিকটিম। কেউ পাগল, কেউ রগচটা ইত্যাদি টাইপ। এবং সব চাইতে দুঃখজনক হইলো কয়দিন পর পর এই পরিবারের মানুষজনের অদ্ভুৎ মৃত্যু হইতো। মনে আছে, একবার এলাকায় খুব সাড়া পড়ে গেলো। আলেক ক্কারীর এক ছেলেকে ভূতে মেরে ফেলছে। শুধু যে মেরে ফেলছে তা না, মারার পর মসজিদের পাশের দীঘিতে কচুরী পানার নীচে আসান ধরাইয়া বসাইয়া রাখছে। আসান ধরাইয়া বসা হইলো ধ্যানে বসার একটা ভঙ্গি। আমার খুব সখ ছিলো যাবার, কিন্তু আমি যেন যাইতে না পারি তাই তিন জন পাহাড়াদারের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন মা।
আরেকবার শুনলাম, আলেক ক্কারীর নাতিকে জ্বীনে মাইরা ফেলছে। এবার তারে মাইরা পেট ফাইড়া নাড়িভূরি বের করে দিয়েছে। মা জানার আগেই আমি এই খবর পেয়ে গেলাম। দিলাম সোজা দৌড়। আলেক ক্কারীর ঘরে গিয়ে দেখি মানুষের ভিড়। ঘরের ঠিক মাঝখানে মাস ছয়েকের একটা বাচ্চা মরে পড়ে আছে। ঘটনা হইলো, ছেলেটাকে মাটিতে বিছানা করে ঘুম পাড়ায়ে মা গিয়েছে কাজে। তখন গ্রামের বাড়ীতে সিন্দুক থাকতো। একটা বড় বাক্সর মত বস্তু। সিন্দুকের উপরে সিকায় ঝুলানো ছিলো কাঁচের বোতল। সেই বোতলে কেরুশিন তেল। সিকা ছিড়ে কাঁচের বোলত পড়েছে সিন্দুকে। এই বোতল ভেঙ্গেছে সিন্দুকের কাঠে বাড়ি খেয়ে। ভাঙ্গাক বোতল পড়েছে মাটিতে ঘুমানো শিশুটার পেট বড়াবড়। এইখানে জ্বীনের কোন প্রভাব আমার মনে হইলো না। কিন্তু সমস্ত গ্রাম জ্বীনের ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
এলাকায় ছিলো না বিদ্যুৎ। আমাদের একটা ১৪ ইঞ্চি সাদাকালো টেলেভিশন ছিলো, নিপ্পন কোম্পানীর। ব্যাটারি দিয়ে চালাতে হইতো। আশেপাশের কোন বাড়ীতে বিশেষ অনুষ্ঠান হইলে এই টিভি রিকোয়েষ্ট করে নিয়ে যেত। আর টিভি চালাইতে হইলো আমাকে ছাড়া গতি নাই। আমিই একমাত্র পন্ডিত ব্যক্তি যিনি ব্যাটারির নেগেটিভ, পজেটিভ বুঝি। ব্যাটারির লাল বোতামে লাল ক্লিপ, আর কালো বোতামে কালো ক্লিপ দিলেই হয়। এই সহজ জিনিসটা তখন আমি কাউকে শিখাইতাম না। এ এক বিশাল বিদ্যা। একবার পড়লাম এক বড় বিপদে। তখনো আমার রাতে হাটার নেশা ধরে নাই। চৌধুরী বাড়ীতে আমাদের টিভি নেওয়া হইলো। আমিও গেলাম সাথে। সারা দিন খুব আদর পাইলাম। দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন টিভি দেখতে আসলো খবর পেয়ে। আমার বসার ব্যবস্থা করা হইলো চেয়ারে। অন্যরা সবাই মাটিতে। রাত যখন প্রায় দুইটা তখন দর্শকও কমে গেলো। সাথে কমে গেলো ব্যাটারির চার্জ। আমাকে রাতে থাকার অনুরোধ করলো সবাই। কিন্তু আমি বাড়ী যাবো। আমার সাথে একটা ছেলে দিয়ে দেওয়া হইলো টেলিভিশন যে মাথায় করে নিয়ে যাবে। বাড়ী ফিরতে হবে সেই সদরআলী মসজিদের পুকুর পাড় দিয়ে।
পুকুর পাড়ের কাছাকাছি আমরা চলে আসলাম। ঘোর অন্ধকার। ছেলেটা বল্লো
- কাকু আমার ডর করে।
আমি সান্ত্বনা দিয়ে বল্লাম
- ধুর ব্যাটা ভয়ের কী আছে?
পুকুর পাড়ের কাছাকাছি চলে আসলাম। এত ঘন বাঁশের জঙ্গল! এই এলাকাটা মনে হয় কবরের মত অন্ধকার। ছেলেটা আর আমি পাশাপাশি হাটছি। সে মাথা থেকে টেলিভিশনটা আমার হাতে দিলো। তার পর, কাকু আমার ডর করে, আমি যাই। এই কথা বলে পিছন দিকে ভুঁ দৌড়। আমি সাহস করে আগাইতে থাকলাম। পুকুরের লম্বা পাড়টাই পার হয়ে আসলাম। বাঁশের ঝোপ আর নাই। এখন মসজিদটা পার হইলেই ভয় শেষ। ভয় কাটানোর জন্য গান ধরলাম, দেখা হে পেহলি বার...। হঠাৎ করে আমার মনে হইলো আশে পাশে বুঝি কোন বম্ব পড়লো। মসজিদের ভিতর থেকে চরম ভাবে একটা ধমকের সুর। ধমকটা থামলো। আমি ঠিক বুঝলামইনা ঘটনাটা কী হইলো। গান থামাইলাম, মাথা ঠান্ডা রেখে পথ চলছি। আবারো ধমক... চউপ, চউপ।
অন্ধকার রাতের সমস্ত নীরবতা ভেঙ্গে এই ধমক যেন ধ্বনি,প্রতিধ্বনি হয়ে বারবার আমাকে ঘিরে ধরছে। কিভাবে বাড়ী আসলাম আমি ঠিক জানি না। আমি কঠিন জ্বড়ে পড়লাম। একই দিনে আরেকটা কাকতালীয় ঘটনা ঘটলো। ভোর বেলা আমার বড় ভাই শরীফ বের হয়েছিলেন রাস্তায় হাটাহাটি করতে। ঠিক ফজর নামাজের আগে আগের ঘটনা। বাড়ীর পাশেই স্কুলঘর পাড় হয়ে এক মহিলা উনার দিকে এগিয়ে আসলো। মহিলা ঠিক মত কাপড় পড়ে নাই। কাপড় উঠে আছে হাটুর উপড়ে। খুব দ্রুত হাটতে হাটতে শরীফ ভাইয়ের দিকে আসছে মহিলা। মাথার চুল আউলা, ঝাউলা। শরীফ ভাই মনে করলেন পাশের বাড়ীর ছন্দুর বউ। ছন্দুর বউকে আমরা দাদী ডাকি। তার আবার ফকিরীর শখ। দুই দিন পর পর আজব, আজব কাজ করার পর দাবি করবে তিনি ফকিরী পাইছেন। যাই হোক, শরীফ ভাই মহিলাকে দেখে ডাক দিলো, কে গো ছন্দু দাদী নাকি? মহিলা উত্তর দেয় না। খুব কাছে যখন চলে আসলো তখন মহিলার হাত ধরে বল্লো
- কী হইছে দাদী, আবার ফকিরী পাইলা নাকি?
মহিলা দাঁত কিড়মিড় করে তাকাইলো। চোখগুলা আগুনের মত জ্বলজ্বল করছে। ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়ায়ে নিলো। নাকে ঘঁৎ ঘঁৎ শব্দ করতে করতে সাই সাই করে পুকুরের পারে যে কবরস্থান সেই দিকে চলে গেলো। যাবার আগে নাকি শরীফ ভাইয়ের মনে হইলো, উনার পেটের নীচের অংশে কেউ একজন এসিড ঢেলে দিয়েছে। বাড়ী আসার পর শরীফ ভাইয়ের পেটের নীচের অংশ কালো হয়ে পুড়ে গেলো। কয়েকঘন্টার ব্যবধানে সেখানে ঘা হয়ে গেলো। আমার জ্বর এবং আমার আমার রাত করে ফেরা তখন আর এত গুরুত্বপূর্ণ কিছু রইলোনা। সবাই শরীফ ভাইকে নিয়ে ব্যস্ত।
তখন আমি রাতে হাঁটা শুরু করে দিয়েছি। একদিন কঠিন অমাবশ্যা। ঠিক করলাম আজ সদর আলী মসজিদের পাশ দিয়ে হেটে যাবো। এবং দেখা হে পেহলিবার..গান গাইতে গাইতে যাবো। সন্ধার রাত থেকেই আমার মধ্যে উত্তেজনা কাজ করছে। এড্রেনালিন হরমোন বের হওয়া শুরু হয়ে গেছে। আমি কঠিন নেশার ঘোরে পড়ে গেলাম। অপেক্ষা করছি কখন বাড়ীর সবাই ঘুমাবে। রাত একটার দিকে আমার রুমের হারিকেনের আলো ডিম করলাম। দড়জা খুব সাবধানে ভেজিয়ে বের হইলাম। ঘোরের মধ্যেই আমি হাটা শুরু করলাম সদরআলী মসজিদের সেই ভয়ংকর পুকুর পাড়ের দিকে।
#আমার_দেখা_রাতগুলি
০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২৩
সুখী মানুষ বলেছেন: আপনাকে সবসময় পাই ভাই। আমার লেখায় পাঠক কম। আপনাকে তাই কলিজার ভিতরের মানুষ মনে হয়
২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৪:১৪
শ্মশান বাসী বলেছেন: অপেক্ষায় রইলাম।
৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৬
কাবিল বলেছেন: আগের গুলো পড়ে তারপরে কমেন্ট করবো।
কিন্তু ০২ ও ০৩ দেখতে পাচ্ছি ০১ আছে নাকি? থাকলে লিঙ্ক দিলে ভাল হত।
০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬
সুখী মানুষ বলেছেন: Click This Link
৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮
কাবিল বলেছেন: ৪নং পর্ব তারাতারি দেন।
৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৩
পাজল্ড ডক বলেছেন: পড়ে আরাম পাচ্ছি, চমৎকার লাগছে! এই সিরিজটাকে বড় কইরেন,মানে আপনার রাতের কোন অভিযান গুলো সব যেন পাই
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:০৫
প্রামানিক বলেছেন: খুব ভাল লাগল রাতের কাহিনী। পরে কি ভুতের দেখা পাইছিলেন?