নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক পার্থ আরেক শিরিন আপা

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৭

পার্থ স্মার্ট ছেলে। দেখতে দেব-শিশু'র মত সুন্দর। মফস্বল স্কুলে'র সবচেছে ব্রিলিয়ান্ট ষ্টুডেন্ট। এতগুলো'র পরেও ছোট্ট আরেকটা পরিচয় আছে। সে লোকাল থানা'র টিএনও'র ছেলে। অতএব সে হইলো, স্কুলের একেবারে মধ্যমণি।

পার্থ'র সাথে সবার কথা বলার সাহস বা সৌভাগ্য হয় না। তবে আমার কথা ভিন্ন। কারন পার্থ আর আমি দুইজনই স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পারফর্মার। পার্থকে সবাই ষ্টেজে দেখে, কারন সে "কারার ঐ লৌহ কপাট" এর নাচে। আমাকে কেউ চিনে না, কারন আমি মুক্তিযুদ্ধের একটা নাটিকাতে মরা লাশের অভিনয় করি। সারা শরীর ঢাকা থাকে শাদা কাপড়ে। পার্থর সাথে নাচে রৌশন। রৌশন হইলো আমাদের স্কুলের অন্তত বিশ বছরের ইতিহাসে সব চেয়ে সুন্দরী মেয়ে। কিন্তু তাতে কী! ভাগ্য পার্থর চেয়ে আমারই ভালো ছিলো। কারন ষ্টেজের এক কোনায় পার্থ নাচে, আরেক কোনায় রৌশন। কিন্তু আমি যখন মরা লাশ হই, আমার উপর ঝাপায়ে পড়ে, লেপ্টায়ে কান্নাকাটি করে শিরিন আপা। শিরিন আপা আমার দুই ক্লাশ সিনিয়র। দেখতে রৌশনের মত না হইলেও আকর্ষণে রৌশনের চেয়ে বেশী।

একদিন স্কুল থেকে বাড়ী গিয়ে দেখি শিরিন আপু আমাদের বাসায়! আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। বুকটা ধক্ করে উঠলো। সেদিন রাত আটটার আগে আর বাড়ী ফিরলাম না। সেই ছোটকাল থেকেই সুন্দরীর সামান্য আসকারা পেলেই মনটা বড় পালাই পালাই করে। অবশ্য পরে শুনতে পাইলাম। আমর যে কাজিনটা তার সাথে পড়ে তার সাথে তিনি আমাদের বাড়ী এসেছিলেন।

তারপরেও মন থেকে কিছুতেই এই দূর্বলতা গেলো না। রিহার্সালের সময় শিরিন আপা আমাকে খামচি দিয়া ধরতেন মাঝে মাঝে। আবার কান্নার অভিনয়ের এক ফাঁকে ছোট্ট করে ফিসফিস করে বলতেন
- কাতুকুতু লাগে?

আমার নষ্ট মন। মনে মনে ভাবা শুরু করলাম, শিরিন আপা আমাকে ভালোবাসে। রিহার্সাল ছাড়া শিরিন আপাদের ক্লাশের সামনেও যাই না, ভয় লাগে। ফাইনাল ষ্টেজ পারফরমেন্স যেদেন হবে। আমি স্যারকে বল্লাম
- স্যার আমি মরা লাশ হবো না।
স্যার তো অবাক! বললেন, কেন? স্যারকে আর বলতে পারলাম না শিরিন আপা যে খামচি দেয় অভিনয়ের ফাঁকে। যেহেতু কোন উত্তর দিতে পারলাম না, তাই আমারই উঠতে হলো ষ্টেজে। আমার সমস্ত শরীর শাদা কাপড়ে ঢাকা। শিরিন আপা কেমন অভিনয় করলেন দেখতে পাইলাম না। শুধু এইটুকু বুঝলাম, তিনি কোন খোঁচাখুচি করলেন না। এবং স্ক্রিপ্টে কোথাও ছিলো না যে অন্য কেউ এসে উনাকে টেনে নিয়ে যাবে। অথচ শিরিন আপা'র কান্না এতটাই বেশী হয়ে গেলো। অন্য দুইজন লোক গিয়ে শিরিন আপাকে ধরে ষ্টেজ থেকে নামাতে হয়। এতে করে দর্শক সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলো। আহা কী অভিনয়! কী অভিনয়!!

শিরিন আপা ক্লাশ টেনে পড়তেন। কয়দিন পর এসএসসি পরীক্ষি ছিলো। তিনি পাশ করে চলে গেলেন। এর সামান্য কয়দিন পর, পার্থর বাবা কোথায় যেন বদলি হলেন। পার্থও চলে গেলো। যাবার আগে আমার সাথে তেমন কথাও হইলো না।

বছরখানেক পর পার্থ আমাদের স্কুলে আসলো কয়েক মিনিটের জন্য। আমাদের তখন ক্লাশ চলছিলো। ক্লাশে ঢুকেই সবার দিকে তাকাইলো। রৌশনের সাথে, কেমন আছো / ভালো আছি টাইপ কাথাও বললো। কিন্তু আমার সাথে কোন কথা বললো না। জীবনে প্রথম বারের মত বুঝলাম - তোমাকে আমি বন্ধু ভাবতেই পারি / তুমিও যে আমাকে বন্ধু ভাববে তা আশা করতে নাই।

পার্থ ক্লাশ থেকে বের হয়ে গেলো। আমি জেনে গেলাম, পার্থ'র কাছে আমি স্পেশাল কেউ না। শিরিন আপার কথা মনে পড়লো। মনে মনে বললাম, প্লিজ শিরিন আপা যেন এমন করে কোন দিন আমাদের স্কুলে না আসে।

(পার্থকে আমি প্রায় কুড়ি বছর খুঁজেছি। প্রথমে মুখে মুখে, পরে ব্লগে, পরে ফেসবুকে। ফাইনালি ফেসবুকে পার্থকে খুঁজে পাই। এখন অষ্ট্রেলিয়ায় আছে। দেশে আসার কথা। আমরা এখন অনেক বড় হয়ে গেছি। সৌজন্যবোধের জন্য হলেও পার্থ একটু আন্তরিকতা দিয়েই হয়ত কথা বলবে, যদি দেখা হয়। কিন্তু শিরিন আপা'র সরাথে দেখা হইলেওতো আর তাকে চিনতে পারবো না। তার চেহারাটাও এখন আর মনে পড়ে না। বিধাতা আমাকে মায়া দিয়েছেন, স্মৃতিশক্তি, জ্ঞান-বুদ্ধি তার ধারে কাছেও দেননি।)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২১

Jahirul Sarker বলেছেন: স্মৃতিকাতর বিষয় । খুব ভালো লাগল।

২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪১

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.