![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
আব্বাকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরে আসলাম।
PIKU সিনেমাটা দেখছেন? যাদের বাবা, মা বৃদ্ধ তাদের সিনেমাটা দেখা উচিৎ। ঘুরাঘুরির এই কয় দিন নিজে আমি PIKU হয়ে গেছিলাম। উদাহরণ দেই-
বাসা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। উত্তরাতেই যেহেতু বাসা, রিক্সা দিয়েই এয়ারপোর্টে গেলাম। ডমেষ্টিক টার্মিনাল পর্যন্ত একটু জায়গা হেটে যেতে হয়। রিক্সা থেকে নেমে দশ হাত যেতে না যেতেই হাত চেপে ধরে ষ্ট্রেইট মাটিতে বসে পড়লেন!
- আব্বা কী হইছে!
কিচ্ছু বললেন না, ঈশারা দিয়ে বললেন হাত ব্যথা। আমার অবস্থা শুদ্ধ শব্দের মত, যাকে বলে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ব্যাগে ঔষধ আছে। কিন্তু সঙ্গেতো পানি নাই। পানি কই পাই? আব্বাকে রাস্তায় রাইখাই গেলাম পানির সন্ধানে। বিমানের ক্যান্টিন থেকে পানি আনলাম। ঔষধ খেয়ে ব্যথা একটু কমলো। বাকী কয়েকশো ফিট যেতে আব্বা রাস্তায় আরো দুইবার বসে গেলেন। বললাম
- আব্বা যাইতে পারবেন কক্সবাজার? নাকি বাসায় ফেরত যাবো?
- না গেলে কি বিমানের টাকা ফেরত পাইবা?
আমি হাসি দিয়া বললাম, আপনার শরীরের কন্ডিশন আগে। টাকা পয়সার প্রশ্নতো এইখানে উঠতেছে না। আব্বা বুঝে গেলেন যে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। শেষমেষ ডরমেটরি পর্যন্ত গেলেন। আমি মনেমনে বললাম, ইয়া মা'বুদ কোন্ পরীক্ষায় আমারে ফালাইলা! কক্সবাজার গিয়া আরো অসুস্থ হয়ে গেলে একা আমি কী করবো?
কক্সবাজার এয়ারপোর্টে নামলাম। নেমেই দেখি মুত্রের গন্ধে চারিদিক মৌমৌ করতেছে। ছোট্ট টারিমনালের বাথরুমের অবস্থা বিশাল খারাপ। ভাসমান মূত্রে ফ্লোর থৈ থৈ করতেছে। আর ঠিক বাথরুমের সামনেই একটা ষ্ট্যান্ডফ্যান রাখা। এই ফ্যানের দায়িত্ব হইলো মুত্রের গন্ধ যেন সমস্ত এয়ারপোর্টে ছড়িয়ে যায়, এই ব্যবস্থা করা। ফ্যান তার দায়িত্ব ঠিক মতই পালন করে যাচ্ছে। আব্বা বাথরুমে যাবেন। কিন্তু তিনি দাঁড়ায়ে প্রশ্রাব করবেন না। বহু কষ্টে তিনি বসে বসেই বাথরুম করলেন, পাঞ্জাবী ফ্লোরের (আপাতত পানিই বলি) পানিতে ভিজে গেলো। উপায় না দেখে আমি তাড়াহুড়া করে পাঞ্জাবী আলগি দিয়ে ধরে পাশে দাঁড়ায়ে রইলাম।
হোটেলে উঠলাম। হোটেলে উঠেই
- এত বড় হোটেলে উঠছো কেন? আমরা কি হোটেলে থাকতে আসছি নাকি সাগর দেখতে আসছি?
সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, আব্বা বিশাল ডিসকাউন্ট পাইছি। আর আপনি ভুলে যান টুটাল ট্যুরে টাকা পয়সার কোন ইস্যু আছে। তখনই আপনি খোলা মনে এনজয় করতে পারবেন।
হোটেল থেকে বের হয়ে বিচে যাচ্ছি। রিক্সা নিলাম। শুরু করলো ঘেনঘেন
- এইখান থেকে এইখানে রিক্সা নেওয়ার কী দরকার?
সাগর দেখলাম। ফেরার পথে ভাবলাম, ওকে রিক্সা নিবো না। দশ কদম হেটেই আবার রাস্তায় বসে পড়লেন। হাটলে নাকি হাত ব্যথা করে। নিলাম রিক্সা। আবার শুরু করলেন ঘেনঘেন, এইখান থেকে এইখানে রিক্সা নেওযার কী দরকার?
হোটেলে ফিরেই দেখি মুখ খিচ্চা বইসা আছেন। জিজ্ঞাসা করলাম
- আব্বা কী সমস্যা?
- পেটে ট্রাবল দিচ্ছে।
বললাম বাথরুম হচ্ছেনা, নাকি পাতলা পায়খান, কোনটা? বললেন
- বাথরুম হবে হবে করতেছে কিন্তু হচ্ছেনা।
সমাধান দিলাম, আব্বা কমোডে গিয়ে বসে থাকেন, যখন হবে তখন হয়ে গেলো...।
খাবার দাবারের সময় আরো বড় সমস্যা। যখনই জিজ্ঞাসা করি, আব্বা কী খঅইবেন? তখনই একই উত্তর... পেটে খিদা নাই। প্রিয়'র মা আমারে বারবার করে বলে দিয়েছে
- আব্বার কিন্তু না না করার একটা বিষয় আছে। খাইতে না চাইলেও বুদ্ধি করে রাজি করাইবা।
বুদ্ধি করে কোরাল মাছ খাওয়াইতে রাজি করাইলাম, আব্বার গেলো পেট খারাপ হয়ে। আমি আক্ষরিক অর্থে অথৈ সাগরে পড়লাম।
লবনী বিচ থেকে দূরে দেখাইলাম, আব্বা ঐখানে আরো দুইটা বিচ আছে। একই সাগর, জাষ্ট বিচগুলার নাম আলাদা। আব্বা ঐগুলাও দেখবেন। উপায় না দেখে হাটা শুরু করলাম। একটু পর আবার তার হাত ব্যথা, বুক ব্যথা। রেষ্ট নিলাম। আবার হাটবেন। কিন্তু ফেরত আসবো কিভাবে? শেষ মাথায় গিয়ে বিচ থেকে একটু দূরে দেখি একটা রিক্সা আছে। এই রিক্সা করে হোটেলে ফিরলাম। আব্বার তখন চোখ, মুখ ব্যথায় কালো হয়ে আছে।
সারা জীবন আব্বার সাথে একটা নীরব দূরত্ব ছিলো। কোনদিনই তেমন কথা হতো না। সব কথা ছিলো মা'র সাথে। আব্বাকে জোর করে কিছু বলতেও পারি না। আব্বার শরীরের অবস্থা দেখে বেমালুম চেপে গেলাম হিমছড়ি, ইনানী বিচ এইসবের কথা। আমার তখন একটাই চিন্তা, আব্বাকে নিয়ে ঢাকা ফিরবো কিভাবে।
যাক অবশেষে ঢাকা ফিরলেন। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই শুরু করলেন, তিনি বাড়ী যাবেন। বুঝায়ে শোনায়ে রাতটা রাখলাম। আজ সকালে পরে ট্রেনে উঠায়ে দিলাম। মাত্রই ফোন করে জানালেন, বাড়ী গিয়ে পৌঁছেছেন। একটা ট্যুর সফল হইলো। কিন্তু সামনের বার ইন্ডিয়া যাবেন এই কথা জানায়ে বললেন, যাই বাড়ী থেকে পাসপোর্টটা করায়ে আসি।
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১১
সুখী মানুষ বলেছেন: এত মমতা দেখায়েন না রে ভাই, ভালোবাসাটাই সহ্য হয় না, কেবল চোখ ভিজে যায়।
২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৪
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: অনেক ভাল লাগল পোষ্টটি....
আবেগ মিশ্রিত ভালবাসা মা বাবার জন্য অটুট থাক
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১০
সুখী মানুষ বলেছেন: মা নাইরে ভাই
মা'র জন্য কিছুই করতে পারি নাই, মা চলে গেছেন ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪ এ ...
৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
মো : আবু সাইদ বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো
শুনে. ।……………… আমার ও বাবার সাথে এমন সম্পর্ক. ……………
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১১
সুখী মানুষ বলেছেন: যান, কোথাও গিয়ে ঘুরে আসেন। বয়সের কারনে ঘুরাটা খুব বিব্রতকর হয়। কিন্তু শান্তি লাগে...।
৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪২
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: কক্সবাজারে ছবি কই ভাইয়া
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১২
সুখী মানুষ বলেছেন: দিচ্ছি...
৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৫৮
মানবী বলেছেন: আপনার বাবার এ্যান্জিওগ্রাম করা না হয়ে থাকলে একবার করে নেয়া ভালো। সামান্য পরিশ্রমে(হাঁটা) হাত ব্যাথা, বুক ব্যাথা হলে হার্টের আর্টারী সব ভালো আছে এটা নিশ্চিত করা জরুরী।
ভালো লাগলো আপনার বাবার সাথে ভ্রমন পড়ে, ধন্যবাদ।
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১৩
সুখী মানুষ বলেছেন: হুম, ধন্যবাদ...
আপনাকে অনেক দিন পর মন্তব্যে পেলাম...
৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৪
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ভাল লাগলো বাবাকে নিয়ে সমুদ্র দেখতে যাবার ঘটনাটা । আপনার বাবা দীর্ঘজীবী হোন, আর আপনার মত সন্তানরা বাংলাদেশের ঘর আলো করুক........।
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১৩
সুখী মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:১৫
আশিকুজ্জামান পিয়াশ বলেছেন: খুব ভাল্লাগলো ভাই। আগের লেখাটাও পড়লাম। আপনার বাবার আর মায়ের গল্প। এই পোস্টে মন্তব্য করার জন্যই অঅঅঅঅনেক বছর পর লগ ইন করলাম।