নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার_দেখা_রাতগুলি ০৭

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০

আব্বার জ্বীন পরীর দিকে খুব আগ্রহি ছিলো। একটা পরী বস মানানোর জন্য উনি কতবার যে জগৎপুর নামের একটা গ্রামে গেছেন তার হিসাব নাই। তখন ছোট ছিলাম, অত ডিটেইল মনে নাই। বড় হয়ে বুঝেছি, নিশ্চয়ই ভাউতাবাজি করে আব্বার কাছ থেকে ভালোই পয়সা কড়ি নিয়েছে। কিন্তু পরী নাকি কিছুতেই বস হইতে চায় না। আব্বা পরী ধইরা দেখতে চাইলো। পরী যে চালান দেয় সে বললো
- স্যার পরীর আলো তো সবাই সহ্য করতে পারে না। আপনে চওখ বাইন্ধা নেন।

চওখ বান্ধার পরে পরী হাত দিয়ে ধরতে পারলেন। আব্বার ভাষায়
- মখমলের মত শরীর, কী মোলায়েম! কী সুন্দর পশমী পশমী হাত!
ছোটবেলাতেই বলছিলাম
- আব্বা চওখ বাইন্ধা নিশ্চয়ই আপনারে বিড়াল টিড়াল কিছু একটা ধরাইছে।
কথা শোনার পর আব্বা আমারে মাইর দেয় নাই ঠিকই। কিন্তু শীতল ভাবে বলছিলো
- এইখান থেকে যা, বড়দের মাঝে তোর কী কাজ!

পরী চালান দেওয়া লোকের বড়ই বুদ্ধি। শেষমেষ বলছে
- স্যার পরী আপনারে একটা দিয়া দিতে পারি। কিন্তু পরী বস মানার পরে আপনার পরিবারের লোকজন কিন্তু কেউ আর সেইফ থাকবো না। এই দেখেন না আমার ছোট ছেলেটারে কয়েক বছর আগে পরী মাইরা আইসা আমারে কয়
- আমারে তো বস কইরা রাখছোস, তোর পোলার লাশ এখন কচুরীপানার আটি'র নীচ থেকে তুইলা আইনা কবর দেওয়ার ব্যবস্থা কর।

ব্যাস আমার বাপের পরী বস করার প্রজেক্ট বাতিল হয়ে গেলো। আব্বা তখন নগরপাড় স্কুলে। সন্ধা বেলা যখন স্কুল থেকে বের হবেন তখনই আব্বার কাছে খবর আসলো
- স্যার ওমুক বাড়ীর তুমুকরে জ্বীনে ধরছে। আপনি ছাড়া কোন গতি নাই।

আব্বা জ্বীন ছাড়ানোর কোন মন্ত্র টন্ত্র কিছুই পারেন না। কিন্তু ওঝাদেরকে দেখেদেখে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। আব্বা বললেন, চলো যাই। গেলেন। রোগীনী আব্বার ছাত্রী। জ্বীনে যারে ধরে সে তুই তুকারী করে। আমি নিজেও বহুবার এইসব ঘটনার স্বাক্ষী। আব্বারে দেখেই মেয়ে বলে উঠলো
- তুই আইছোস কেন? যা বাইত যা, ওরে আমি ছাড়ুম না।
আব্বা বাম হাতের কানি আঙ্গুল ধরলেন। জ্বীনে ধরলে এই সিস্টেমে ধরলেই কেবলমাত্র জ্বীন কথার উত্তর দেয়। আর না হয়ত দেয় না। কানি আঙ্গুল ধইরা বললেন
- তুই কেন ধরছোস এরে?
স্পষ্ট ভাষায় বললো
- ও আমার উপরে হিঙ্গিস ফেলছে। কত বড় খাচ্চর সারাদিন হিঙ্গিস জমায়ে রাখে। ধরাম কইরা এত্তগুলা ফেলছে আমার উপরে, সাথে সাথে ঘপাৎ কইরা ধরছি।
- এখন যাবি কিভাবে?
- যামু না।

সরিষার তেল, মরিচ পোড়া এমন বহু কিছুর ভয় দেখানো হইলো। কিন্তু জ্বীন কিছুতেই ছাড়বে না। নাক ঝেড়ে উপরে ফেলার যে অপরাধ সেই অপরাধ জ্বীনের জন্য চড়ম অপমানের। শেষমেষ জিজ্ঞাসা করা হইলো
- তোর নাম বল
- সাবলী ঘোষ।
এইবার বুদ্ধি কইরা বললো
- যদি না যাস তো গরুর মাংস খাওয়াইয়া দিবো, এই কে আছোস যা গরুর মাংস নিয়া আয়।
ব্যাস জ্বীন যাইতে রাজি হইলো। যাবার আগে ঝাড়ুতে কামড় দিয়া লাফ দিয়া দুই হাত দূরে গিয়াই বেহুশ। হুশ ফেড়ার পর আব্বারে দেখে কয়, স্যার আসসালামু আলাইকুম।

এই হইলো কাহিনী। সেইদিন আব্বা বাড়ীতে ফেরার পর আকাশ জুড়ে উঠলো চাদনী। চাঁদ মনে হয় মাথার উপরে চলে আসছে। আর শুরু হইলো টিনের চালে ধুড়ুম ধুড়ুম ঢিল পড়া। শুধু যে আমাদের ঘরে তা না। সারা বাড়ীর মানুষ সবাই চাঁদের আলোতে সবার উঠানে আমরা ছোটাছোটি শুরু করলাম। কিন্তু ঢিল কিছুতেই থামে না। এক সাথে আট, দশটা ঢিল। বিভিন্ন ঘরে একাধারে ঢিল। কিন্তু কে ঢিল দেয় কিছুই দেখা যায় না। আর নারিকেল গাছের পাতা উল্টাপাল্টা নড়াচড়া শুরু হইলো। কোথাও বাতাস নাই। কিন্তু নারিকেল গাছের একটা ডাল দুমড়ায়ে মুচড়ায়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে! (চলবে)

#আমার_দেখা_রাতগুলি ০৭

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৪৭

বিজন রয় বলেছেন: একটু বড় আপনার জন্য।
হা হা হা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.