![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
মায়া ঘড়ি'র দিকে না তাকায়েই বললো, এগারোটা পঞ্চাশ। তাকায়ে দেখে, এগারোটা চুয়াল্লিশ। দশ মিনিট পরপর সে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলো। এবার ছয় মিনিট আগেই তাকালো। ফোন কি সে আরেকবারে দিবে? ভেবেছিলো এক ঘন্টা পর দিবে। মায়া এসএমএস করলো
- তুমি কি আজ বাসায় আসবে?
মায়া দেওয়ালের ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটার দিকে আনমনে চেয়ে রইলো। ঘড়িটা রিয়েল এনালগ, সেকেন্ডের কাঁটাটা একাধারে ঘুরতেই থাকে। অন্য ঘড়ি'র মত টিক টিক করে থেমে থেমে চলেনা। গত কিছুদনিন আগে সে ঘড়িটা নিজে গিয়ে কিনে এনেছে। নরম্যাল একটা দেওয়াল ঘড়ি যেখানে তিনশো টাকায় পাওয়া যায়, সেখানে এই ঘড়িটা নিলো পাঁচশো পঞ্চাশ টাকা। ইদানিং মায়া'র ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। রাতে যখন ঘুম আসেনা, তখন ঘড়ির টিক টিক শব্দটাকে বড় খট খট শোনায়।
মায়া'র চেহারা সুন্দর না। বেটে, মোটা, মুখে ভ্রনের দাগুলা না থাকলে তাকে শ্যামলা হয়ত বলা যেতো। পাগলের মত আষ্টেপিষ্টে ভালোবেসে সে বিয়েটা করেছিলো। ছোটখাটো অবহেলাগুলা শুরুর দিকে খুব অভিমানের মত লাগতো মায়া'র। কয়লার আগুনে খোঁচা লাগলে যেমন ভিতর থেকে রক্তিম আগুন ঝলকে উঠে। এমন করেই এই অভিমানগুলো মায়ার ভিতরের ভালোবাসাটাকে আরো জ্বেলে দিতো। বিয়ে'র দুই বছরের মাথায় এই অবহেলাগুলা বড় অপমানের ঠেকে মায়া'র কাছে। কয়লার আগুনে এখন আর তা খোঁচার মত কাজ করেনা, বিন্দু বিন্দু পানি'র মত কাজ করে। জ্বলন্ত কয়লায় পানি'র ফোটা পড়লে যেমন ছেৎ হয়ে ওঠে, তেমনি করে মায়া মাঝে মাঝে ফোঁপায়ে কাঁদে।
ঘড়ি'র দিকে তাকায়ে থাকতে থাকতে মায়া সময় দেখা ভুলে গেলো। কতক্ষণ পর সে কোনটা ঘন্টার কাঁটা, কোনটা মিনিটের তা আলাদা করে বুঝতে পারলোনা। ঠান্ডা পড়ছে, তার খাটে গিয়ে শোয়া দরকার। মায়া ফ্লোরেই কাত হয়ে শোয়ে রইলো।
গত কিছুদিন আগে মায়া বাজার থেকে টাটকা মলায়া মাছ এনে চার পদের তরকারী রান্না কারলো। মলায় মাছ ওর পছন্দ। টক রান্না করার মত কোন আইটেন না পেয়ে, ঘরে তেতুল ছিলো। পুরানো তেতুল দিয়ে, মলায়া মাছ দিয়ে টকও রান্না করলো। ভাত খাওয়ার সময় পাশে বসে বললো
- আব্বাসউদ্দিনের ঐ গানটা শোনছো? বিদেশে বিভূঁয়ে যার ব্যাটা মারা যায় / পাড়া পড়শী জানার আগে, জানে তার মা'য়?
- নাহ আমি ঐসব ফালতু গান শুনিনা। ঘরে বইসা না থাইকা একটা চাকরি খোঁজো। ফালতু সব গান শুনে শুনে আরো ক্ষেত হইতেছো। এমনিতেও কম ক্ষেত না তুমি।
মায়া ভেবে রেখেছিলো সে পরে বলবে, দূরে থাকলেও মা'রা যেমন সন্তানের খবর ঠিকই মনেমনে পায়। স্ত্রীরাও স্বামী দূরে থাকলেও অনেক কিছুই মনেমনে বলে দিতে পারে। কিন্তু ঐ পর্যন্ত কথা গেলোইনা। মায়া'র প্রায়ই এমন হয়। দুনিয়ার সবার সাথে সে গুছায়ে কথা বলতে পারে। আগে থেকে জমা রাখা যুক্তিগুলা বরতে পারে। কিন্তু ওর সাথে পারেনা। দূর্বলতা ভালোবাসাকে শক্তিশালী করেনা, ভঙ্গুর করে। মায়া তা জানে, তবু কঠিন হতে সে পারেনা একটা জায়গায়।
মায়া মাঝেমাঝেই যুক্তি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে, সে রুচিশীল একটা মেয়ে। সে কিভাবে পড়লো এমন একটা রুচিহীন মানুষের প্রেমে? প্রমে অন্ধ তাইবলে প্রেমের কি নাক, কানও নাই? রুচিহীনতার গন্ধ, শব্দও কি সে পেলোনা? মায়া কোনদিন ওর মোবাইল ফোন ধরেও দেখে নাই। কে ফোন দিলো বলে কোনদিন জিজ্ঞাসাও করে নাই। তোমারটা'র মত একটা স্মার্টফোন কিনে দিও বলে আব্দারও করে নাই। চাকরীটা ছেড়ে দিলো, শুধু ওর জন্য সমস্ত সময় ব্যয় করবে বলে। অপেক্ষা করাতেও যে সুখ, তার জন্য ঘর গুছায়েও যে সুখ, এই সুখটা পাবে বলে। মায়া'র মোবাইল নম্বর কেউ জানেনা, তাই সারা দিনে ওকে ফোন করা ছাড়া আর কোথাও সে ফোনও করেনা। যে মানুষটার জন্য ঘরের সবাইকে পর করে আসলো। সেই মানুষটা তবু ফোন নিয়ে প্রায়ই ঘেটে দেখে, কোন কিছু পাওয়া যায় কি না।
মায়া বিষয়টা কিছুদিন আগেই টের পেয়েছে। সরাসরি বলতে ওর ঘিন্না লেগেছে। ফিরে যাবার জায়গাগুলা একে একে বন্ধ হয়ে গেছে নাকি ধাক্কা দিলেই খুরবে তা ফিরে গিয়ে মায়া'র দেখতে বড় ইচ্ছা করে। আচ্ছা তার জন্য কোন পত্রিকায় কি নিখোঁজ সংবাদ ছাপা হয়েছিলো? ঘরে একটা পত্রিকাও কোনদিন রাখা হয় নাই। টিভিও নাই। দুইটা বছর ভালোবাসার ঘোরে কেটে গেছে তার। কিন্তু যে সংগ্রাম করে সে বের হয়ে এসেছে, তার ফলাফল এতটা ভালো হবার কথা না। সে আর যেখানেই যায় বাবা মায়ের কাছে যাবেনা।
সেদিন খাটে শোয়েই ও মেসেজ চালাচালি করছিলো। কার সাথে কী কথা এসব মায়া'র দেখতে ইচ্ছা হয় নাই। ঘন্টাখানেক পর আস্তে করে বলেছিলো
- দুনিয়াটা বড় কঠিন জায়গা। সবাইকে আমার মত ভাবলে ভুল করবে।
মোবাইল নিয়ে ওঠে সোফায় চলে গেলো। সারা রাত আর কোন কথা হলোনা।
কবি'রা রাধা'র বিরহ নিয়ে গান লেখতে গিয়ে লেখেছে, নিঠুর কালিয়া সোনারে / সোনা গত নিশী কোথায় ছিলো। বাস্তবত বড় ভিন্ন, কালিয়াকে তখন সোনা মনে হয়না। বড় ঘিন্না লাগে তখন, বড় ঘিন্না।
রাত দুইটা বাজে। মেসেজের কোন রিপ্লাই আসে নাই। মায়া কল দিবেনা আর। আচ্ছা একটাবারও ওর কেন মনে হয় নাই, যে লোকটাতো এক্সিডেন্টও করতে পারে! শেষ কথা হলো, নয়টার সময়, তেমন কোন কথাই হয় নাই। শুধু বললো, এত কল দাও কেন! আসতেছি। অথচ সারা দিনে আর একটা বারও সে কল দেয় নাই!
রাত প্রায় চারটা বাজে। ফ্লোরে শোয়ে থাকার জন্য ঠান্ডা লেগেছে, জ্বরও মনে হয় আসছে। কিছুটা ঘোরের মত লাগছে। মায়া বাথরুমে গিয়ে গোসল করলো। অনেক্ষণ পানি ঢেলে গোসল। বাথরুম থেকে বের হয়ে ব্যাগে কয়েকটা কাপড় নিলো। এই ব্যাগ আর কাপড়গুলা নিয়েই সে ঘর ছেড়েছিলো ঘর সাজাবে বলে। নতুন ঘরে নতুন কোন কিছুই আর যোগ হয় নাই, শুধু কিছু স্মৃতি ছাড়া।
বাইরে অন্ধকার কেটে যাচ্ছে। মায়া হাতে মোবাইলটা নিলো। ও ছাড়া আর কেউ তাকে ফোন করেনা। তবু কেন যেন মনে হলো একটা ফোন তার আসতে পারে। কোন কল আসলোনা। মায় ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘরের বাইরে এলো। দজড়া কি সে লাগাবে? কীইবা আছে এমন নিয়ে যাবার। ভিতরে মোবাইল ফোন বেজে ওঠলো। মায়া'র কোন তাড়া নাই। ধীরস্থির ভাবেই সে গিয়ে মোবাইল ফোনটা হাতে নিলো।
হ্যালো টেলো কিছুই বলে নাই মায়া। কথা শুনে, ফোনটা রেখে আবার বাইরে আসলো। ব্যগটা বাইরেই রাখা ছিলো। ব্যগটা হাতে নিয়ে মায়া হাটা শুরু করলো। ততক্ষণে বাইরে অন্ধকার কেটে গেছে।
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩
সুখী মানুষ বলেছেন: শিখছি...। আগে তোমার, তুমার এই প্যাঁচ লাগতো। ভুল বানানগুলা ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
আপনি সম্ভবত বলতে চেয়েছিলেন "বিরক্ত লাগে", বলেছেন "বিরক্তিকর লাগে"। সম্ভবত হবে "বিষয়টা বিরক্তিকর"। কোথায় যেন খটকা লাগছে বাক্যটা পড়তে।
২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৩
কাবিল বলেছেন: ভাল লাগল।
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩
সুখী মানুষ বলেছেন: কৃতজ্ঞতা জানাই।
৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৪৮
ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
আসসালামুয়ালাইকুম,
ভাল আছেন সুখী ভাই।
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭
সুখী মানুষ বলেছেন: ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে... ভালোআছি ডানা ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২০
নিষ্কর্মা বলেছেন: বানান শুদ্ধ করে লিখতে শিখুন। ভুল বানানের লেখা কেউ পড়ে না, বিরক্তিকর লাগে পড়তে।