নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমিয় সাহা

অমিয় সাহা › বিস্তারিত পোস্টঃ

তৃতীয় নয়ন

২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২

কাব্য, প্রেমের সহিত তাহার আত্মিক সম্পর্ক গৌণ হলেও প্রভাবক হিসেবে মুখ্য। তাহার রচিত ছড়া মার্কা কবিতার প্রভাবে চতুর্থ শ্রেনিতে অধ্যয়নরত রাকিব প্রেমে উত্তীর্ন হইয়াছিল। এছাড়া মাধ্যমিকে তাহার আনুগত্যে রচিত প্রেমপত্রের সাফল্যের হারও সম্মানজনক। পরবর্তীতে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তার আগমনের মাধ্যমে তাহার প্রতিভা অস্তমিত হয়। জীবনের পূর্বাহ্ণ শুধু রচনা রচিত করিয়া পরার্থে দান ও বইপত্র লইয়া সুবোধ বালকের মতই কাটিয়াছে।

জীবনের মধ্যাহ্নে আসিয়া এবার অনন্ত আফসোস। অন্তর্যামী তাহার অন্তর তাঁহার বশীভূত করিয়া ফেলিয়াছেন। পূর্বে সে যাহা তাহার গুন হিসেবে বিবেচনা করিত, এখন সে তাহা স্বীয় দোষ হিসেবে প্রত্যক্ষ করিতেছে। প্রেমে না পড়ার ব্যাপারে তাহার যে অহমিকা ছিল, এখন সেই বিষয়টিই ব্যর্থতা বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে। অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য কেউ যখন বাহু বন্ধনরত অবস্থায় ঘুরিয়া বেড়ায়, তখন নিজের উপর স্ফূত রাগ জন্মে, মহাকালের দীর্ঘসময়ও অট্টহাস্যে তাহাকে তাচ্ছিল্য করে।

ভালবাসার উপর প্রাথমিক আলোচনা জাতীয় উপাত্ত ও করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার লক্ষ্যেই আমার সহিত তাহার নিয়মিত যোগাযোগের শুরু। যদিও খেলা বা পড়াশুনার বিষয়ও বাদ যইত না তবুও ভালোবাসার বিষয়টাই আমাকে বেশী আগ্রহী করিয়া তুলিয়াছিল। পরামর্শের প্রাথমিক আলোচনা বিষয়ে আমি তাহাকে গতিশীল হইবার উপদেশ দিলাম। অতিগ হওয়া ভিন্ন এই পথে সাফল্যের হার ন্যূন।

আমার তাত্ত্বিক বিষয় তাহার মনে শান্তি আনিতে অক্ষম হইলে ব্যাবহারিক ক্লাস দেওয়া শুরু করিলাম।বলিলাম প্রথমত পাত্রী নির্বাচন। মাহানাদ করিয়া মহাশয় জবাব দেন, পাত্রী পছন্দ করার পরিশ্রম উনি বছর খানেক আগেই ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পন্ন করিয়াছেন। শুধু তাহাই নহে, আনুপূর্বিক বাক্য বিনিময়ও হয়। তবে তাহা হাই, হ্যালো, হাউ আর ইউ, ফাইন এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ, তাহার পরে কি বলিতে হইবে ভাবিয়া পায় না। জিজ্ঞাসা করিলাম নাম কি? বলিল খেয়া- সপ্নিল খেয়া। দ্বিমাত্রিক নামের এই মেয়েটি আমাকে আমার ভেতর থেকেই কখন যেন হরণ করিয়া লইয়া গিয়াছে।

বিজ্ঞের মতো উপর নীচে মাথা নাড়াইয়া বলিলাম- বেশ ভালো। তবে দ্বিতীয় চক্র হইতে শুরু করিতে হইবে। তাহার প্রিয় বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখিতে হইবে। যেমন প্রিয় রঙ, প্রিয় খাবার, শখ ইত্যাদি জজ্ঞাসা করিতে হইবে এবং প্রত্যুত্তর যাহাই হউক না কেন একমত পোষণ করিয়া বলিতে হইবে “ আশ্চর্য, আমারও তো এইগুলোই পছন্দ।” উদাহরনস্বরূপঃ সে যদি তাহার প্রিয় খাবার মাশরুম এর স্যুপ বলিয়া উল্লেখ করে তবে তোর ও তাহাই হইতে হইবে। এমনকি জীবনে যদি তাহা দেখিয়া/ খাইয়া না থাকিস তবুও।কাব্য পরামর্শ পাইয়া খুশি হইল। তাহার হাসি মাখা মুখ দেখিয়া প্রীত হইলাম।ডাক্তার না হইলেও বুঝিলাম, রোগী সন্তুষ্ট হইলে ডাক্তারের হৃদ মাঝারে যে আনন্দের ঢেউ খেলা করে তাহা বড়ই মনোরম ।

আজ দ্বিতীয় চক্রের হালনাগাদ পাইলাম, যাহা বড়ই হৃদয় বিদারক। কাব্য দুই দফা হাই বলিয়া খেয়াকে চ্যাটে আমন্ত্রণ জানালেও খেয়া পুরোপুরি নির্লিপ্ত। বলিলাম “ বাদ দাও দোস্ত, তোমার যোগ্যতা আছে, আর বিয়ের বয়সও দোরগোড়ায়। এই সময়ে প্রেম মানায় না। এখন করিতে হইলে বিবাহ করো, প্রেম নহে”। কাব্য রবীন্দ্রনাথ হইতে ধার করিয়া বলিল “বিয়ে যদি করিতে হয় তবে তাহাকেই করিব নয়তো বিয়েই করিব না” তবে বিয়ের পূর্বে তাহার সহিত প্রেম করিতে চাই। যেন নিজেকে আর অপদার্থ বলিয়া প্রতীয়মান না হয়। আমি যে পারি, তাহার প্রমান দিব। উহাকেই বিবাহ করিব এবং প্রেম করিয়াই বিবাহ করিব।

সপ্তাহ খানিক কাব্যের কোন খোঁজ নাই।আজ হঠাৎ করিয়া ফোন আসিল। ভাবিলাম ভুত পালাইয়াছে। বলিলাম কেমন আছিস? কোন উত্তর দিলনা। যেন আমার কথা শুনিতেই পায় নাই। এক নাগাড়ে বলিয়া চলিল, মিথ্যা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নহে; মিথ্যা যাহার ভিত,তাহার স্থায়িত্ব ক্ষণিকের।
কি হইয়াছে?
তুই বলিয়াছিলি তাহার প্রিয় জিনিসগুলো জিজ্ঞাসা করিয়া তাহাতে যেন আমি পূর্ণ একমত পোষণ করি। কিন্তু আমি তাহা করিতে ব্যর্থ । তাহার প্রিয় রঙ স্কাই ব্লু, আমার গোলাপি আর সাদা।আমি সত্যি করিয়া বলিয়াছি আমার প্রিয় রঙ সাদা আর গোলাপি, স্কাই ব্লু নহে। তাহার সমস্ত গুণাবলীর মাঝে মাত্র দুইটা গুেণ আমার সহিত মিল হইয়াছে। তাহারও বই পড়িতে ভালো লাগে- আমারও, আইসক্রিম দুই জনেরই পছন্দের। কিন্তু দুঃখের বিষয় অবসরে সে গান শুনে না।আর প্রিয় লেখকদের নাম জিজ্ঞাসা করিতে কি সব হিজিবিজি নাম বলিল, কিছুই হৃদয়াঙ্গম হইল না। শুধু বুঝিলাম ইহারা দেশীয় কেউ নহে। কিন্তু আমি হুমায়ুন ব্রাদার্স, নির্মলেন্দু, মহাদেব সাহা আর বাংলা ধ্রুপদী এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমি দীপ্তহীন কণ্ঠে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করিয়াছি।

আর এই সব শুনিয়া সে ‘বিদায়’ বলিয়া প্রস্থান করিয়াছে ।

না, তাহার পরও সে আমার সঙ্গেই ছিল।

চিন্তার কিছু নাই, খুব বেশি দিন থাকিবে না। যিনি প্রেমিকার বাক্য শুনিয়া সর্বদা হ্যাঁ হ্যাঁ করিতে না পারে, তাহার প্রেম টিকিবার সম্ভাবনা ক্ষীণ।বাজারে প্রেমের ক্ষেত্রে প্রেমিকা আর বিয়ের ক্ষেত্রে বর এর মূল্য চড়া। এছাড়া তোর “ভালবাসি” কথাটা এখন পর্যন্ত বলা হয়নি। ওই পথে যাস না, দুঃখ বৈ আর কিছুই পাইবে না।

আমার শেষ বাক্যগুলো তাহার কর্ণ কুঠিরে প্রবেশ করিয়াছে বলিয়া বোধ হইলো না।দুই দিন পর এবার ফোন দিয়া কেমন আছে জানিতে চাহিলাম। বলিল “ভালো আছি, একটু ব্যস্ত, এখন রাখি” পরে ফোন করিবার প্রতিজ্ঞাও করিল। এক সপ্তাহ পার হইয়া গেলেও তাহার কোন ফোন পাইলামনা। আমার কেন যেন মনে হইতেছে তাহার সামনে সাঙ্ঘাতিক বিপদ। কিন্তু উপযাজক হইয়া কিছু বলিতে গেলে দোষ আমার উপরেই বর্তাবে, তাই চুপ করিয়া থাকিলাম । সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটা সাধারন বিষয় , যদি কারো সন্তান প্রেমে লিপ্ত হয় তবে তাহার পুরো দোষ তার বন্ধুর উপরই বর্তায়। আমার কাঁধে এমনিতেই প্রজেক্ট এর নানা ঝামেলা ভর করিয়াছে, তাই নতুন কোন ঝামেলায় জড়াইতে চাহিতেছি না।

আজ বুধবার। আমার জন্মদিন। কাব্যের ফোন আসিয়াছে। বুঝিতে পারিয়াছি সেই গদ বাঁধা লাইনটা “ হ্যাপি ব্যার্থ ডে” বলতেই আজ তার এই ফোন। আমিও থাঙ্ক ইউ বলিবার প্রস্তুতি লইয়াই কল রিসিভ করিলাম। কিন্তু হায়! ...

দোস্ত একটা সুখবর আছে।
কি?
গ্রিন সিগন্যাল পাইয়াছি।
কি রকম?
মেয়েটা বলিয়াছে যদি তাহার পিতৃদেব এবং মাতৃদেবী রাজী থাকেন তবে আমাকে বিবাহ করিতে তাহার কোন আপত্তি নাই।
ওহ।
ব্যাস। একটা ওহ... এই প্রেক্ষাপটে তোর বলিবার কিছুই নাই ?
না... ইয়ে...হুম। মানে... তুই কি চাহিতেছিস? বিবাহ নাকি প্রেম?
বিবাহ। কিন্তু প্রেম করিয়া বিবাহ। হউক না প্রেম টা অপ্রকাশিত, শুধু গহীন হৃদে প্রকাশিত। আমি চাই সে যেন আমার নামটা তাহার পিতৃদেব এবং মাতৃদেবীর নিকট উপস্থাপন করে।ব্যাস, ইহাই আমার নিকট আমার প্রেম।
বলিতেছিলে মেয়ে রাজি... রাজি আছে কিন্তু মা বাবার উপরে কিছু বলিবে না।তাঁহারা যাহাকে পছন্দ করিবে লক্ষ্মী কন্যার ন্যায় সে তাহাকেই বরমাল্য দান করিবে।
আর তুই চাহিতেছিস সে যেন তোর নাম উপস্থাপন করে...
ঠিক তাহাই।
ধন্যবাদ না জানিয়েই কথা বলা শেষ করিল।ফোন কাটার ৫ মিনিট পরে আবার কল করিল। জানতে চাহিল “প্রেম কিভাবে করে ”
মানে ?
মানে প্রেম কিভাবে করিতে হয়।আমি তাহাকে ভালবাসি কিন্তু সে তো বাসে না। তুই এই বিষয়ে পারদর্শী তাই অনুগ্রহ পূর্বক পথ দেখিয়ে দিলে কৃতার্থ হইতাম।

হা হা হা ......... হাসিতে হাসিতে আমার দম আটকে যাওয়ার উপক্রম। কোন মতে প্রানবায়ুকে দেহাভ্যন্তরে রাখিয়া বলিলাম “তোর আর আমার তফাৎ হইল তুই প্রস্তাব দিয়া সফল হইয়াছিস আর আমি ব্যর্থ। আমাকে বলা হইয়াছিল দুঃখিত এই মুহূর্তে অন্য জায়গায় ব্যস্ত আছি, অনুগ্রহ পূর্বক কয়েক বছর পর আবার চেষ্টা করুন” প্রেমের শুরুটাই শুধু জানি। কিভাবে চালাইয়া যাইতে হয় তাহা আমার অজ্ঞাত।

অনুগ্রহ পাইলে সাহায্য হইত। হাই, হ্যালো বলিবার পর আর কোন বিষয় পাইনা যাহাতে বাক্য দীর্ঘায়িত করা যায়। কথা বলিতে ইচ্ছা করে কিন্তু বিষয় বস্তুর অভাবে কিছুই বলা হইয়া উঠে না। বুঝিতে পারিতেছি না যাহারা প্রেম করে তাহারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলিবার বিষয় কোথায় পায়?

কীরূপে প্রেম করিতে হয় ইহা না জানার দরুন বোধ হয় কাব্যের আর প্রেম করা হইল না। উহার জন্য কষ্ট হইতেছে। কিন্তু সাহায্য করিতে গেলে আমার উপরেই দোষ বর্তাবে, তাই সাহায্য করিবোনা। প্রেম বিষয়টাকে আমার কাছে কেমন যেন অপরাধ বলিয়া বোধ হইতেছে। কেননা প্রেম এবং অপরাধ কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে দারুন মিল রহিয়াছে। যেমন, উভয়েই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে করা হয়, লুকোচুরি করিয়া সম্পাদন করিতে হয়, আর ধরা পরিলে শাস্তি অনিবার্য।

আজ থেকে বারো বছর পূর্বে এখানেই বিরতি দিয়াছিলাম কাব্যের ভালবাসা উপখ্যানে নিজের অংশগ্রহন। পরবর্তীতে কাব্য বিভিন্ন বিষয়ে আমার মতামত চাহিলেই তাহাকে এড়াইয়া চলিতাম। বুঝিতে পারিয়া কাব্যও আর আমার পথ মাড়াইত না।

(...............................................................)

আজঃ
আজ কাব্যের বসায়। চাকুরীর বদলির সুবাদে ঝিনাইদহের শৈলকূপাতে আমার নিয়োগ। আমার ৮ বৎসরের একমাত্র পুত্র কে লইয়া সৌজন্য সাক্ষাত করিতে কাব্যের বাড়িতে আসিয়াছি ।কাব্য স্বস্ত্রীক হাজির হইয়া আমাকে তাহার স্ত্রীর সহিত পরিচয় করাইয়া দিল। বলিলো এই হইল উজ্জ্বল, আমার বিশ্ববিদ্যালয়কালীন সময়ের বন্ধু।তোমার সহিত সম্পর্ক হওয়ার পেছনে যাহার হাত সবচেয়ে বেশী।আর এই হইল খেয়া-স্বপ্নিল খেয়া; আমার স্বপ্নের খেয়া।(আমার ৮ বছরের ছেলেটা জিভ এ কামড় দিয়া বাবার মুখের দিকে তাকাইলো।আমরা কেউ ওইদিকে খেয়াল করিলাম না )।

ছোট করিয়া খেয়া বলিল “নমস্কার”।

আজ অনভুতিহীন মানুষটার মনে অনুভুতি দোল দিল। খুব আফসোস হইতেছে একটি সফল গল্পের পরামর্শক এর ভুমিকায় নিজেকে রাখিতে না পারিয়া। তবে ভালো লাগিতেছে হাসি মাখা মুখ দুটো দেখিয়া। স্বপ্নিল খেয়াতে ভেসে চলুক কাব্যের অপ্রকাশিত যত কাব্য,যত না বলা কথা।
ভালো থাকিস।
( ... ... ... ... ...শুরু... ... ... ... ...)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.