নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/shusmitashyamaofficial

স্বাগতম

সুস্মিতা শ্যামা

লেখাটা আমার প‌্যাশন। তবুও লিখি খুব কম। তখনই লিখি যখন আর না লিখে কোন উপায় থাকে না। মাথাটা যখন ভার হয়ে যায়, চিন্তাগুলো প্রসববেদনার মত কষ্ট দেয়, তখন লিখতে বসি। লিখে কিছু পরিবর্তন করার আশা করি না। নিজের ভাবনাগুলো নিজের কাছে আর একটু ভাল করে প্রকাশ করার জন্য লিখি। আমারর চরিত্রগুলোর আনন্দ-বেদনা আর বদলের সঙ্গী হবার জন্য লিখি।\nআমার সবচাইতে বড় পরিচয়- আমি সিরিয়াস পাঠক। আপাতদৃষ্টিতে অসামাজিক। নিজেকে মাঝে মাঝে ভীষণ বিরক্তিকর বলে মনে হয়; ঠিক তখনই মনে পড়ে, ঈশ্বর/আল্লাহ/সৃষ্টিকর্তা বড় ভালবেসে আমায় তৈরি করেছেন। তিনি আমার হাজার খামতি সত্ত্বেও আমাকে সঙ্গ দিয়ে চলেছেন। একথাটা ভাবলে নিজেকে বা অন্যকে ভালবাসতে বা ক্ষমা করতে আর অসুবিধা হয় না। \nআমার ফেসবুক ঠিকানা: https://www.facebook.com/shusmitashyamaofficial

সুস্মিতা শ্যামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

থাইল্যাণ্ডের দিনপঞ্জী ২- বন্ধু যখন বান্ধবী!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২১

ওই যে বলে না--- দাগ থেকে যদি ভাল কিছু হয়, তবে দাগ ভাল। ঠিক সেই রকম, আমার আহাম্মকি থেকে যদি কৌতুকের জন্ম হয়, তবে আহাম্মকিই ভাল।



হেঁয়ালী না করে ব্যাপারটা খুলে বলি। আজকে আমাদের সবগুলো সেশন ছিল ফাইনাল কাট প্রো-এর উপরে। দশজনের মধ্যে সাতজনেরই এডিটিংয়ের অভিজ্ঞতা আছে এবং ওরা সাতজনই ঈর্ষণীয় একেকটা ম্যাক ল্যাপটপের মালিক। তো, আমরা যারা এডিটিংয়ে এক্কবারে আনাড়ি তাদেরকে ওই সাতজনের সাথে একসাথে মিশিয়ে বসানো হল। আর আমাদের- মানে যাদের ম্যাক ল্যাপটপ নেই তাদের জন্য একটা করে আইম্যাক দেওয়া হল।



আমার পাশে বসল রিচার্ড। ছেলেটা জন্মসূত্রে আমেরিকান। কিন্তু থাইল্যাণ্ডে বড় হয়েছে বলে মন মানসিকতা এবং মূল্যবোধ এশিয়ানদের মত। ও নিজেকে থাই হিসেবেই পরিচয় দেয়- যদিও থাই সরকারের চোখে সে নিছকই বিদেশী।



ওকে পাশে পেয়ে আমি খুশিই হলাম। কারণ ওর সাথে আমার খুব জমে। কিন্তু তখন কি আর জানি ও আজ আমার মান-সম্মান নিয়ে 'অপু দশ বিশ' খেলবে!



যাহোক, আমাদের কানেডিয়ান শিক্ষক বললেন, তিন চার লাইনের একটা স্ক্রিপ্ট দিয়ে ছোটখাট একটা মক শুটিং করে ফেলতে। ৩০ মিনিটের মধ্যে শুটিং শেষ করতে হবে।রব নামের এক আমেরিকান এক পায়ে খাড়া হয়ে গেল পরিচালনা করার জন্য। কিন্ত এবারই বাধল আসল বিপত্তি। শিক্ষক শর্ত জুড়ে দিলেন।বললেন-এমন দুজনকে দিয়ে অভিনয় করাতে হবে যারা ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় যোগাযোগ করতে সক্ষম। আর সেই ভাষাটা হতে হবে পরিচালকের অজানা। উনি দেখতে চান, অনুবাদকের উপর ভর করে পরিচালক Cross cultural situation মোকাবেলা করতে কতটা সক্ষম।



রব তো ভেবে পায় না, কাদের দিয়ে অভিনয় করাবে। ফস করে রিচার্ড বলে বসল, ‍"শ্যামা আর ওয়াসিম। ওয়াসিম পাকিস্তানী, ও উর্দু বলে আর শ্যামাও ভালই উর্দু বোঝে। ওরাই অভিনয় করুক।"



আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। ছেলে মেয়েকে দিয়ে অভিনয় করালে নিশ্চয় রোমান্স করাবে! হ্যা, আমার আশঙ্কাই সত্যি হল। পরিচালক রব আমাকে সিন দুটো বুঝিয়ে দিল।হাত ধরাধরির কোন ব্যাপার নেই। কেবল দুই লাইন ডায়ালগ। খুবই সিম্পল। তবু আমি এদের কী করে বোঝাব, আমি প্রাণ খুলে হাসতে পারি, মজা করতে পারি। কিন্তু আমি এসব পারি না! মানুষের সামনে অভিনয় করতে গেলে আমার ভীষণ আড়ষ্ট লাগে। কিন্তু এই তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আপত্তি করলে ওরা সবাই হয়তো আমাকে খুব সংকীর্ণ ভাববে! আর রব এবং শিক্ষককে আমি খুব সম্মান করি।আমি ছাড়া আর কেউ তো উর্দু বা হিন্দি বুঝবে না।



চুপ করে বসে থাকলাম। সবাই মহাসমারোহে ক্যামেরা, বুম, লাইট সেট করতে শুরু করে দিয়েছে। হঠাৎই রিচার্ড ভীড় ঠেলে এসে আমার পাশে বসল। ও বুঝে গেছে, খবর খারাপ! বলল, "Are you okay, Shyama?"

থমথমে মুখে বললাম, "No. I'm not."

ও কী বলবে ভেবে না পেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, "I'm such an idiot!"

ওর অনুতপ্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, ওর অনুতাপে কোন খাদ নেই। হেসে বললাম, "ইয়েস, ইউ আর।" ও হেসে উঠল। তারপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল। একটু পরে রব এসে আমার সাথে কথা বলল। আমাকে জিজ্ঞেস না করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে দু:খ প্রকাশ করল।



কিন্তু প্যাচটা লাগল কাস্টিং নিয়ে। মেয়েরা কেউই উর্দু বা হিন্দি পারে না। এখন ওদেরকে ডায়ালগ মুখস্থ করাতেই সময় পার হয়ে যাবে। কিন্তু রিচার্ড চাইছে না, চাপে পড়ে আমি আর এ ব্যাপারে মাথা গলাই। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ও বলে উঠল, "আরে বাদ দাও, আমিই পারব! মাত্র তো কয়টা লাইন। আমিই হব ওয়াসিমের প্রেমিকা্।"

সবাই তো হা। কয়েকজন বলে উঠল, "তা কী করে হয়? একে তুই ছেলে, তার উপরে জীবনে কোনদিন উর্দু, হিন্দীর ধারেকাছে ছিলি না।"

ও কিন্তু সিরিয়াস। সোজা আমার পাশে এসে বসল। লাইনগুলো মুখস্থ করার চেষ্টা করল কিন্তু হিন্দী মুখস্থ করা কি চারটি খানি কথা? তাও আবার জিভ যদি হয় আমেরিকান! বুঝতেই পারছেন পাঠক, উচ্চারণের কী হাল হয়েছিল। যাই হোক, ও ঠিক করল, ডায়ালগ লেখা নোটবুকটা হাতে নিয়েই অভিনয় করবে।

শুটিংয়ের সময় সবাই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল।নিজের দাড়িওয়াআলা মুখ নিয়ে এত সুন্দর করে ও মেয়ের গলা করছে যা আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারি নি, আর অঙ্গ ভঙ্গীও ভীষণ হাস্যকর। আমি লক্ষ্য করলাম, ও অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে, মজাও পাচ্ছে, কিন্তু লজ্জায় ওর পুরো মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে প্রতিটা ডায়ালগের পর।

শুটিং শেষে পরিচালক রব বলল, " আমার জীবনে দেখা সেরা দাড়িওয়ালা নায়িকা তুমি।"

প্যাক আপ হয়ে গেলে, ও আমার কাছ থেকে কলম চেয়ে নিয়ে আমার নোটবুকে কী যেন লিখতে লাগল। ওর মুখে চাপা হাসি।

নোটবুকটা ফিরে পেয়ে দেখলাম, তাতে লেখা-- "মনে রেখো, আজ রিচার্ড তোমার জীবন বাচিয়েছে।"

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৪

শাহজাহান মুনির বলেছেন: "মনে রেখো, আজ রিচার্ড তোমার জীবন বাচিয়েছে।



পড়ে ভাল লাগলো ।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪১

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৮

মদন বলেছেন: মজা লাগলো :)

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০২

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০০

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: বুঝলাম না, আপনি অভিনয় করতে এত ভয় পাচ্চিলেন কেন? আর প্রোগ্রামটাওতো মনে হয় ইন্টারনাল ছিল !!! :||

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: কেন যে ভয় পাচ্ছিলাম, সেটা আমিও জানি না। তবে অনেক মানুষের মধ্যে প্রথমে আমার আড়ষ্ট লাগে। পরে পরিচিত হয়ে গেলে, তাদের সাথে মিশে যেতে পারি, গল্প করতে পারি, কিন্তু তাই বলে রোমান্সের অভিনয়! না রে ভাই, সবাইকে দিয়ে সব কিছু হয় না। আমার জড়তা ভীষণ বেশি। :(

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৪

স্বপনচারিণী বলেছেন: সেরা জোকস। পুরুষ থুক্কু রিচার্ডকে অবহেলা করবেন না। এখানেই শেষ নয় এবার তৈরি থাকুন রিচার্ড এর জীবন বাঁচানোর জন্য।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৭

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: স্বপনচারিণী, রিচার্ডের সাথে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। ও আমার গার্জিয়ান সাজার ভান করলেও ও আসলে আমার ছোট ভাই। তাই, ওর কোন কাজে লাগার জন্য আমিও সদা প্রস্তুত।

আপনাকে যদি হতাশ করি থাকি, তাহলে আমি দু:খিত। হি হি।

৫| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯

স্বপনচারিণী বলেছেন: পুরুষ বলেছি কারন ওরা জাতে পুরুষ। আপনি আগে না বললেও আমি সন্দেহ করেছিলাম সেই বালক আমার চেয়ে তো অবশ্যই আপনার চেয়েও ছোট। আমার ছেলে বাচ্চারাও কিন্তু পুরুষই। আর স্বীকার করুন যে ছেলে হিসাবে রিচার্ড মেয়ের ভুমিকায় ভালই অভিনয় করেছে ( পড়ে আমার তাই মনে হয়েছে)। অন্তত, মেয়েদের তুলনাই ভাল।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৬

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: জ্বি, খোঁচাটা ধরতে পেরেছি। তবে আমার পুরু ত্বক ভেদ করে সেটা বেশিদূর যেতে পারে নি।

আচ্ছা বেশ, হার মানলাম। হার মানা হার পরালেম আপনার গলায়। ;)

৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩

ময়নুল েহােসন বলেছেন: আমি কোন মন্তব্যই করব না। বলেন কেন!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৬

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: সরি ভাইয়া! আমি ভুলেই গেছিলাম! সঅঅঅঅরি!

৭| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৫

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৮

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: Shudhu dhara biboroni porei eto hashlen bhaia? Taile bojhen, ei kirti chokher shamne ghotte dekhe amader ki obostha hoyechilo. :P

৮| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৫৩

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
খুব মজা পাইসি।
আমার জীবনে দেখা সেরা দাড়িওয়ালা নায়িকা তুমি। হাহাহ :P ||

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৪

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: Dhonyobad bhaia. Spot e amra hashte hashte pagol hoye gechilam. :D :D

৯| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২১

মিজান মল্লিক বলেছেন: এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। ঝরে ঝরে গদ্য।ভালো লাগল।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫০

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাইয়া। :)

১০| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: মজা পেলাম। B-)

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩২

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকবেন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.