নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/shusmitashyamaofficial

স্বাগতম

সুস্মিতা শ্যামা

লেখাটা আমার প‌্যাশন। তবুও লিখি খুব কম। তখনই লিখি যখন আর না লিখে কোন উপায় থাকে না। মাথাটা যখন ভার হয়ে যায়, চিন্তাগুলো প্রসববেদনার মত কষ্ট দেয়, তখন লিখতে বসি। লিখে কিছু পরিবর্তন করার আশা করি না। নিজের ভাবনাগুলো নিজের কাছে আর একটু ভাল করে প্রকাশ করার জন্য লিখি। আমারর চরিত্রগুলোর আনন্দ-বেদনা আর বদলের সঙ্গী হবার জন্য লিখি।\nআমার সবচাইতে বড় পরিচয়- আমি সিরিয়াস পাঠক। আপাতদৃষ্টিতে অসামাজিক। নিজেকে মাঝে মাঝে ভীষণ বিরক্তিকর বলে মনে হয়; ঠিক তখনই মনে পড়ে, ঈশ্বর/আল্লাহ/সৃষ্টিকর্তা বড় ভালবেসে আমায় তৈরি করেছেন। তিনি আমার হাজার খামতি সত্ত্বেও আমাকে সঙ্গ দিয়ে চলেছেন। একথাটা ভাবলে নিজেকে বা অন্যকে ভালবাসতে বা ক্ষমা করতে আর অসুবিধা হয় না। \nআমার ফেসবুক ঠিকানা: https://www.facebook.com/shusmitashyamaofficial

সুস্মিতা শ্যামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

থাইল্যাণ্ডের দিনপঞ্জী ৩- আমি তোমাদেরই লোক

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৮

থাইল্যাণ্ডে এসে প্রথম ধাক্কাটা খেয়েছি সুইচে। আমাদের দেশে সুইচের নিচের অংশে চাপ দিয়ে অন করতে হয়। এদের দেশে উল্টো। আজ একমাস হয়ে গেল। হাত ক্রমশই অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও চোখ এখনো ধাক্বা খায় সুইচের এই উল্টো পজিশন দেখলে।

দিন গড়িয়ে মাস হলেও আমার থাই ভাষাজ্ঞান এখনো কয়েকটা বাক্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আসলে কোন থাইয়ের সাথে যোগাযোগ করার দরকার পড়ে নি তেমন। সারাদিন তো ট্রেনিংয়েই কেটে যায়। আর থাইরা তো কথা বলে না, রীতিমত গান গায়। সুর করে টেনে টেনে কথা বলে।এবং এই টান আপনাকেও দিতে হবে।টান ছাড়া সমান্তরাল সুরে কথা বলে গেলে ওরা সেটা বুঝবে না। আপনি যদি ভুল জায়গায় ভুল টান দেন তাহলেই বিপদ। অর্থই বদলে যেতে পারে। তাই, ওসব ঝামেলায় জড়ানোর চেষ্টা করি নি। ওদের ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি।

বিপত্তিটা বাধে শখ করে কখনো রেস্টুরেণ্টে খেতে গেলে। খাবার অর্ডার করার সময় ছোটখাট একটা কমিক ফিল্ম হয়ে যায়।এই কয়দিনে আবিষ্কার করে ফেললাম, মূকাভিনয়ে আমাদের সবারই ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। থাই ধ্বনি উৎপাদনে এক জিহ্বার নির্লজ্জ অক্ষমতার কারণে হাত, পা মাথা সহ গোটা শরীরটাকে এখন ঝাঁকাতে হচ্ছে। যে কোন রেষ্টুরেণ্টে গিয়ে আমরা বিদেশীরা আগেই খাবারের ছবি খুঁজি। তারপর সেই ছবির উপরে হাত রেখে সেটা আনার ইশারা করি।

বেটারা এমন হাড় বজ্জাত! আমাদের সাথে নিজেরাও গা,মাথা দুলিয়ে গলদঘর্ম হবে যোগাযোগ করতে গিয়ে তবু দুই লাইন ইংরেজি শিখবে না। এমনকি চিকেন, বিফ জাতীয় শব্দগুলোও ওরা বোঝে না।চিকেন-এর থাই হল গাই। গাই বললে বুঝবে কিন্তু চিকেন বলে মুখে ফেনা তুললেও কোন লাভ হবে না। ওদের ভাবটা এমন যে, তুমি আমার দেশে এসেছ, সুতরাং আমার ভাষা শিখে আমার সাথে কথা বলতে আস। ওদের এই মনোভাবের প্রশংসা করতাম যদি দেখতাম পোশাকে আশাকেও স্বকীয়তাটা ওরা ধরে রেখেছে। কিন্তু না। ভাষার ব্যাপারে এতখানি জাতীয়তাবাদী, ওদিকে পোশাকে ষোলআনা ওয়েস্টার্ন।

যাহোক, ওদের ভাষা না বোঝার জন্য কোন অনুতাপ এতদিন হয়নি। সগৌরবে একই রকম বীরদর্পে চলে এলাম হাত ইয়াই। আমাদের হোটেল থেকে মাত্র কয়েক পা হাটলেই সাগর।

প্রথম দিন হই হই করে সাগর দেখতে গেলাম। পথে পড়ল ছোট্ট একটা মুদি দোকান। দোকানদার একটা মহিলা। বিকেল বেলা বলে দোকানের সামনে উচু একটা মাচার মত জায়গায় শুয়ে আছে, আর ছোট্ট একটা মেয়ে তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।

ভীষণ পরিচিত একটা দৃশ্য।



আমরা পাশ দিয়ে যেতেই শোয়া থেকে ওঠার ভঙ্গি করে হাসিমুখে মাথা নোয়াল।

ভীষণ পরিচিত হাসি।



আর একটু এগোতেই দেখি এক লুঙ্গিপরা কৃষক খালি গায়ে বসে সিগারেট টানছে।

ভীষণ পরিচিত ভঙ্গি। কেবল তার পাশের যে বাহনটা আছে, সেটা একটু অন্যরকম। শোলে সিনেমায় অমিতাভ বচ্চন আর ধর্মেন্দ্রর ‘ইয়ে দোস্তি নেহি তোড়েঙ্গ’ ধরণের একটা বাহন। ফসল এবং ওদের বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে চলাচলের জন্য জিনিসটা ভারি উপযোগী।



সাগরে যাওয়ার পুরোটা পথ ধরে নারিকেল গাছ আর কলা গাছ দেখতে পেলাম। রাস্তার ঝোপঝাড় আর গরুগুলোর সাথে বাংলাদশের প্রকৃতির কোন পার্থক্য দেখলাম না। পুরোটা পথ জুড়ে হাঁটতে গিয়ে একবারের জন্যও মনে হল না যে আমি বিদেশের পথ ধরে হাটছি।

পথে একটা ৫-৬ বছরের মেয়েকে দেখলাম দোকানের সামনে সাইকেল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। গায়ে স্কুল ড্রেস। সাদা হাফ হাতা শার্ট, নেভি ব্লু স্কার্ট- আমাদের সেই চেনা ছোটবেলার অপ্রিয় পোশাক- অথচ এখন কারো পরণে ওই পোশাক দেখলে মনটা নস্টালজিক হয়ে যায়।

হোটেলে ফিরে এলাম। রাতে কাস্টিং করা হবে। তা্‌ই গ্রামবাসী দল বেধে এসেছে অডিশন দিতে। আমাদের জন্য নারিকেলের একরকম জুস বানিয়ে এনেছে।ওরা নিজে হাতে আমাদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দিচ্ছে সেই জুস।

ভীষণ পরিচিত আপ্যায়ন। সেই মুহুর্তে মনে হল, ভাষাটা ছাড়া ওদের সাথে আমার অন্তরের কোন বিভেদ নেই।আমার দলের অন্যরা আলাদা কারণ ওরা বেশিরভাগই এশিয়ার বাইরের। কিন্তু আমার সাথে এই গ্রামবাসীদের যেটুকু বিভেদ তা আরোপিত। ওরা যে সরঞ্জামটা ব্যবহার করে সেটুকু আলাদা- শুধু সেটুকুই বিদেশী। কিন্তু ঈশ্বরের দেওয়া মন,হাসি আর অনুভূতির কোন দেশ, কাল সীমানা নেই- তা সর্বজনীন। প্রবীণ যে ভদ্রলোকটি টেবিলের ওপাশে বসে আমার হাতে ড্রিংকস তুলে দিলেন, তাকে বলতে ইচ্ছে হল—আপনি আমার গুরুজন। আপনি কেন এত ব্যস্ত হচ্ছেন? আমাদের বলুন কোথায় কী আছে। আমরা করব সব।

কিন্তু আমার অপদার্থ জিভ আমার অনুভূতির সাথে তাল মেলাতে অক্ষম। এই প্রথম অনুভব করলাম -ভাষা না শিখে আসাটা আসলে আমারই অন্যায়।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৪

আদম_ বলেছেন: পড়তে পড়তে অর্ধেক মুকুস্ত কইরা ফালাইছি। বারবার পড়ার জন্য প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম। অনেক দরদ দিয়া লেখা। খুবই ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০১

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: আরিব্বাস! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন।

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

শ্যামল জাহির বলেছেন: ভাল লাগলো থাইল্যাণ্ডের দিনপঞ্জী।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৭

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: আমারও ভাল লাগল আপনার মন্তব্য পেয়ে। অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫

ম্যানিলা নিশি বলেছেন:

সুন্দর ধারা বর্ণনা।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি কেবল আমার অনুভূতিগুলোই লিখে যাই লেখার সময়। যে ধারায় ভাবি, সেই ধারাতেই লিখে যাওয়ার চেষ্টা করি।

৪| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৯

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: ভাল লাগল, অনেক সুন্দর করে লিখেছেন... থাই জীবন ভাল কাটুক... :)

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩২

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া। আমার থাই জীবনের বর্ণনা যে আপনার ধৈর্য ধরে পড়ছেন, এতে আমারও মনটা ভাল লাগছে।

৫| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৫

তরুক মকতো বলেছেন: সাবাই ডি মাাই

থাই ভাষা সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন
http://www.speakingthai.com/index.htm

আর হাসি হাসি মুখে বাংলা চালিয়ে যান।
এক থেকে দশ পর্যন্ত গণনা শিখে ফেলুন।

৬| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৯

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: Ami AR matro 2 weeks thakbo bhaia. Thanks liknk tar jonno.

৭| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৭

পলক শাহরিয়ার বলেছেন: সাবাই দি মাই?

খুব সুন্দর করে লিখেছেন,আপু।আপনার সমস্যাগুলো আমিও ফিল করছি গত চার মাস ধরে। আরো চার মাস থাকব।

আমি গতমাসে চিয়াংমাই গিয়েছিলাম....ভালই লাগছে এখানে,কি বলেন।আমার অভিজ্ঞতা ভাল লাগতে পারে.....

জার্নি টু দ্যা প্যারাডাইস@চিয়াং মাই,থাইল্যান্ড

৮| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৭

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: Swadee khaaaa! Hya, bhaia. Jaiga Ta asholei oshadharon.

৯| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৪৮

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: চিকেন খেতে হলে কাউ অর্থাৎ গাই বলতে হয়, জেনে মজা পেলাম। এক মাসেই কি সব শেখা যায়! আমি ভেবেছিলাম পর্যটনের দেশ হিসেবে থাইল্যান্ডবাসীরা ভালো ইংরেজি বলতে পারবে।

“থাইরা তো কথা বলে না, রীতিমত গান গায়। সুর করে টেনে টেনে কথা বলে।এবং এই টান আপনাকেও দিতে হবে।টান ছাড়া সমান্তরাল সুরে কথা বলে গেলে ওরা সেটা বুঝবে না। আপনি যদি ভুল জায়গায় ভুল টান দেন তাহলেই বিপদ। অর্থই বদলে যেতে পারে।” -চিনা ভাষায় মতো মনে হচ্ছে।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৩০

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: Apni jene aro moja pben je kau mane rice. :D

১০| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক চমৎকার বর্ণনা।
ওদের সাথা কিন্তু আমাদের ভাষা সংস্কৃতিরও কিছু কিছু মিল আছে।
যেমন এদের সিংহা, আমদের সিংহ একই প্রাণী (সিংহা নামে একটা জনপ্রিয় লোকাল বিয়ার পাওয়া যায় ওখানে)। ওদেশে সংক্রান্তি বলে একটা দিবস আছে, সেদিন ছুটি থাকে, এপ্রিল মাসের ১২ বা ১৩ তারিখে খুব সম্ভব দিনটা পরে, যা আমাদের চৈত সংক্রান্তির সাথে বেশ মিলে যায়।
আর যদিও এখন ওরা পোষকে আশাকে অনেকটা ওয়েস্টার্ন, কিন্তু ওদের ট্রেডিশনাল পোষাক কিন্তু অনেকটা ভারতীয় ধূতি, শাড়ি বা চোলির মত।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: Amar prob Ta holo, Amar team ER shobai foreigner. Amra 10 Jon eshechi 10 Ta vinno vinno desh theke. Keu e Thai jani na. Ebong nijeder project niyei byasto thaki. Thai kono manusher shathe meshar shomoi ba shujog konotai hoi na temon. Tobe, oder antorikota AR hashi dekhe Ami mugdho.

১১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বাহ ...।
পড়ে মজা পেলাম ।থাইদের জানলাম কিছুটা । :)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৪

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, আপু। ভাল থাকবেন। ইচ্ছে আছে, এই বিষয়ে আরো একটু বিস্তারিত লেখার। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.