নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস এম এলিট

সিমন্ত

এস এম এলিট

সিমন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

নরকবাসীদের জন্য বিশেষ সুযোগ

২২ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৫৪

নরকবাসীদের জন্য ইশ্বর একটি বিশেষ সুযোগ দিলেন। তারা সাজা কমানোর জন্য আবেদন করতে পারবে। নরকের প্রধানকে প্রহরীকে শাস্তি কমানোর ক্ষমতাও দিলেন ঈশ্বর। এই সুযোগ কে হাতছাড়া করে। ঢালাওভাবে সব সবাই সাজা কমানোর আবেদন করল। আবেদনের ঠেলায় তো নরকের প্রহরীদের নাস্তানাবুদ অবস্থা। অবশেষে, দেশ অনুযায়ী ভাগ কর হল আবেদনগুলো। এভাবেই এক সময় সুযোগ এলো,বাংলাদেশীদের।

কাঠগড়ায় দাড়ালো এক বাংলাদেশী। তার ফাইল আনা হল। জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি কে, তোমার কি অপরাধ? লোকটি বলল, হুজুর আমি নেতা। আমি অন্যায়ভাবে বিরোধী দল দমন করেছি, জোর করে ক্ষমতায় টিকে থেকেছি, আর দুর্নীতি তো আছেই। আমার আদেশে অনেক খুন ও গুম হয়েছে। প্রধান প্রহরী জিজ্ঞেস করলেন - ক্ষমতা আকড়ে ধরা, দুর্নীতি ইত্যাদি সবই বুঝলাম, কিন্তু খুন ও গুম করলে কেন? লোকটি বলল - ভয়ে, হুজুর। আমি বিরোধী দলকে সব সময় ভয় পেতাম। আমি যা করেছিলাম তাতে, ক্ষমতা হারালে যদি প্রানে মেরে ফেলে এই ভয় পেতাম। এই ভয়েই তাদেরকে মারতাম। প্রহরী বললেন - বুঝেছি, এমন কেস যাদের আছে তারা সবাই এসে লাইনে দাঁড়াও। কয়েক হাজার লোক লাইনে দাঁড়াল। ঘোষনা করা হল, এসব রাজনীতিবিদের সাজা কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হোক। বিশাল জনসমুদ্রে একটা চাপা গুঞ্জন উঠল। এমন চরিত্রের লোকদেরকে সাজা কমিয়ে দেওয়ার জন্য সবাই অখুশী।

এর পরে এল আরেকজন। তার ফাইলে দেখা গেল সে একজন ব্যবসায়ী। জিজ্ঞেস করা হল - তোমার অপরাধ কি? সে বলল, হুজুর আমি অসত ভাবে ব্যাবসা করতাম। মজুদ করতাম, ফর্মালিন মেশাতাম, অবৈধ টাকা বানাতাম আর নেতাদেরকে সমর্থন দিতাম। প্রধান প্রহরী বললেন - ওরা অসৎ নেতা সেটা জেনেও কেন তাদেরকে সমর্থন কেন দিতে? উত্তর এল - হুজুর, ব্যাবসাতে সফল হওয়ার জন্য। দেশের মানুষ গোল্লায় যাক, আমার ব্যাবসা আগে। আচ্ছা বুঝেছি, এমন কারা আছ তারা লাইনে দাঁড়াও। লাখ খানেক লোক লাইনে দাড়ালো। এদের সাজাও কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হল। বিশাল জনসমুদ্রে আরো বড় গুঞ্জন এলো। এদের সাজা কমিয়ে দেওয়ার জন্য সবাই আরো বেশী অখুশী।

এভাবেই বিভিন্ন পেশার লোকজন এলো, নিজের ভুল স্বীকার করল, কেন এই কাজ করেছে সেটা বর্ননা করল। সবারই বিভিন্ন মেয়াদে সাজা কম হল। সাজা কমানোর এই তামাশা দেখে জনগন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। তারা প্রতিবাদ করল - দেশের সব আজেবাজে লোকদেরকে সাজা কমিয়ে দিয়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে গেল। মানি না,মানবো না এমন স্লোগানও চলতে লাগল। অনেকে আবার নরকের প্রহরীর ঘুষ খাওয়ার ব্যাপারেও সন্দেহ করতে লাগল। জনগনের দাবী, এই শুনানি আর চলতে দেওয়া যায় না। এটা সম্পুর্ন অবৈধ শুনানী। এখানে শুধু শুধুই দোষীদের সাজা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জনগনের চাপের মুখে নরকের প্রহরী হার মানতে বাধ্য হলেন। তিনি এতক্ষন যেসব সাজা কমিয়েছেলেন সেগুলো বাতিল করে দিলেন। কারো সাজাই কমলো না।

পরিস্থিতি সামলে নিয়ে আবার শুরু হল শুনানী। এবার কাঠগড়ায় যে দাড়াল সে হল - সাধারন নাগরিক। কি ব্যাপার - তোমার দোষ কি? লোকটি বলল - দোষটা যে কি এটাই তো বুঝতে পারছি না। আমি কারো ক্ষতি করিনি, সমস্যা এড়িয়ে চলেছি, সমস্যা এড়ানোর জন্য ঘুষ, মুক্তি পন সবই দিয়েছি, রাজনীতিও করিনি। তবে আমার প্রিয় রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছি, নাররিক হিসাবে ভোট দিয়েছি। প্রহরী বললেন, আচ্ছা, তোমার প্রিয় দলের নেতারা কি এখানে আছেন? লোকটি বলল - জ্বী হুজুর, তারা সবাই নরকবাসী। প্রহরী বললেন, তাহলে তাদের দল কেন তোমার প্রিয়? লোকটি বলল - হুজুর, আমি তো দল ভালোবাসি, নেতারা কি করল সেই কারনে আমি দল অপছন্দ করব কেন? প্রহরী বলল - সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু ন্যায় অন্যায় বলে তো একটা কথা আছে, নাকি? লোকটি বলল - হুজুর দলের আবার ন্যায় অন্যায় কি? আমার প্রিয় দল যা করেছে সেটাই সব সময় সমর্থন করেছি, দলের প্রার্থী কলাগাছকে আমি ভোট দিয়েছি, প্রিয় দল বলে কথা? নরকের প্রহরী বলল - কোনদিন প্রতিবাদ করেছ? উত্তর এলো - না হুজুর। আমরা সাধারন জনগন, খেটে খাওয়া মানুষ। ওসব প্রতিবাদ কি আমাদের সাজে? তাছাড়া ঝামেলার মধ্যে কে যায় বলেন? আচ্ছা, একটু আগেই যে তোমার প্রিয় দলের নেতাদের সাজা কমিয়ে দিয়েছিলাম, তখন কেন প্রতিবাদ করলে? সাধারন নাগরিক উত্তর দিল - কি বলেন, একটা অন্যায় হচ্ছে তার প্রতিবাদ করব না ? নরকে প্রহরী বললেন - তাহলে তোমাদের নেতাদের, ব্যাবসায়িদের, ঘুষখোরদের অন্যায় দেখে কেন চুপ ছিলে? উত্তর এলো - হুজুর, ভয়ে চুপ ছিলাম। কিজানি কোন ফ্যাসাদে পড়ে যাই। যদি আমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দেয়, যদি আমাকে মিথ্যা মামলায় ঢুকিয়ে দেয়। আর অফরন, খুন, গুম তো আছেই। ভয় পাইছিলাম হুজুর। প্রধান প্রহরী বলল - আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। এমন আর কতজন আছে? উপস্থিত সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে গেল। দশ কোটির উপরে মানুষ সেই লাইনে।

প্রধান প্রহরী বলল - শুনানীতে জানা গেল, অসৎ নেতারা অনেক অন্যায় করেছে। ওয়ে পরে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে তাদের প্রানে বাচা কঠিন হয়ে যাবে। এজন্য ভয় থেকেই তারা জোড় করে ক্ষমতায় থেকেছে, ভয় থেকেই তারা বিরোধীদেরকে বিভিন্ন কায়দায় হত্যা করেছে। এটা না করে ক্ষমতা ছাড়লে হয়ত নিজেদের জীবন বিপন্ন হোত। এজন্য সবাই তাদেরকে দায়ী করছে, তারা দোষী। তারা সংখ্যায় মাত্র কয়েক হাজার। কয়ক লক্ষ দুর্নীতিগ্রস্থ বিভিন্ন পেশার লোক যেনে বুঝেই অসৎ নেতাদের সমর্থন করেছেন নিজের ফায়দার জন্য। সর্ব শেষ দশ কোটির উপরে সাধারন মানুষ এগুলো চোখের সামনে দেখেও ভয়তে চুপ করে রয়েছে। বছরের পর বছর অন্যায়কে শুধু মেনেই নেয়নি, সহযোগিতাও করেছে। ওই কয়েক লক্ষ লোক যারা নিজেদের ফায়দার জন্য অসৎ নেতাদের সমর্থন করেছে, তারা যে সাজা পেয়েছে সেটাই বহাল রাখা হোক। তাদেরকে আবার নরকে পাঠানো হোক। ওদেরকে ধরে নরকে পাঠানো হল।

নরকের প্রহরী বলতে থাকলেন - এবার বাকী থাকল নেতা ও সাধারন জনগন। এই দুই শ্রেনীর লোকই ভয় থেকে অন্যায় করেছে। অতএব তাদের সমান সাজা হওয়া আবশ্যক। নেতাদের সাজা কময়ে অর্ধেক করা হোক। সেই অর্ধেক সাজা চাপিয়ে দেওয়া হোক সাধারন জনগনের ঘাড়ে যারা সংখায় লক্ষ গুন বেশী হওয়ার পরেও নেতাদের অন্যায়কে মেনে নিয়েছে ও তার সমর্থন করেছে।

বিদ্রঃ এই গল্পটি সম্পুর্ন কাল্পনিক। আমার নিজস্ব রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃস্টিভঙ্গি এতে প্রতিফলিত হয়নি।

সুত্রঃ Click This Link
আমার ফেসবুক --------- http://www.facebook.com/smelite

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.