নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাচ্ছেতাই

সিদ্দিকী শিপলু

সিদ্দিকী শিপলু

সিদ্দিকী শিপলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুৎ ভাইভা-ঘুষ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫৩

খুব সম্ভবত ২০০৬ সাল। সরকারি স্টাইলের একটা প্রাইভেট ব্যাংকের লিখিত শেষে ভাইভাতে ডাক পেলাম। আকর্ষণীয় জব।

ভাইভা বোর্ডের (রুমের) বাইরে কয়েকজনকে উচ্চস্বরে খুব হম্বিতম্বি করতে দেখলাম। স্কীপ করে ভাইভা দিলাম। ভালো ভাইভা দিয়ে শেষে অফিস থেকে বের হতেই সিঁড়ির গোড়ায় তাদের কয়েকজন আমাকে ঘিরে ধরল, জিজ্ঞাসা করলো জবটা খুব জরুরী কি-না। সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বললাম, জবতো অবশ্যই দরকার।
তারা বললো, তারা সিবিএ, তাদের হাতে ২০% কোটা আছে। আমার যদি চাকরিটা লাগে তাহলে তারা দিতে পারবে, তবে বেশী না, মাত্র এক লাখ টাকা লাগবে।

আমি তখন সাবজেক্ট রিলেটেড একটা জব করি (উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার)। টাকা দিয়ে চাকরী বাগানোর কোন ইচ্ছা নাই, নীতিতেও নাই। তবে খুব অবাক হয়েছিলাম। জীবনে তখ পর্যন্ত এভাবে ঘুষ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইনি। ভয়ও পেলাম সামান্য, হাসিও পেল কিছুটা।

তবুও ভদ্রতার খাতিরে বললাম, ঠিক আছে আমি জানাবো, তারা নাম্বার দিল, আমিও নাম্বার নিলাম।

আমি অফিস থেকে বের হয়ে সাম্নেই নীচে থাকা একটা ভ্রাম্যমান দোকানে চা খেতে বসলাম।

কিছুক্ষণ পর আমার সাথেই ভাইভা দেয়া একটা ছেলে চোখে মুখে আতংক নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে এসে জানালো তাকে এরকম একটা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমি টাকা দিব কি-না জিজ্ঞাসা করলে আমি জানালাম যে না, আমার টাকা দিয়ে চাকরীর দরকার নাই। কিন্তু সেই ছেলেটা খুব টেনশনে ছিল। তার পরিবারের পক্ষে এখন এক লক্ষ টাকা জোগাড় করা কঠিন। কিন্তু চাকরীটাও তার দরকার। আসলে সে এরকম প্রস্তাব পাবে কল্পনাও করেনি, এরকম পতিস্থিতিতে সে আতংকিত হয়ে পড়েছিল। দেখলাম ফোন করে বাবাকে বুঝাচ্ছে।
এরপর আরেকটা ছেলে নামলো, নেমেই সে কোথায় যেন ফোন করল, তারপর হাসিমুখে আমাদের পাশেই চা খেতে বসল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম তাকে এরকম প্রস্তাব দেয়া হয়েছে কি-না। প্রশ্ন শুনে তার চোখ বিস্ফোরিত হবার জোগাড়। অবাক হয়ে বলল আপনাকেও এই প্রস্তাব দিয়েছে? তারপর তার কথ শুনে বুঝলাম সে ভেবেছে শুধু সেই একাই সুযোগ পেয়েছে। সে ইতিমধ্যে তার পরিবারের সাথে কথাও বলেছে, পরিবারও রাজী। তবে সে সিবিএ এর সাথে একটা চুক্তিতে এসেছে যে প্রথমে ৭০% দিবে, বাকীটা চাকরীর পর। কিন্তু আমরাও একই প্রস্তাব পেয়েছি শুনে খুব মন খারাপ করল। তবে আমি টাকা দিতে রাজী না শুনে খুশী মুখ নিয়ে কতক্ষণ চুপ করে থাকল।

প্রথম ছেলেটা তখন একটু দূরে যেয়ে পরিবারের সাথে এবং অন্যান্য যায়গায়ও ফোন করেছে, কিন্তু কোন কিনারা করতে না পেরে প্রায় কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে আমাদের সাথে যোগ দিল।

এর মধ্যে আরেকজনকে দেখলাম নেমে ফোন করতে করতে কোথাও দৌড়ে যাচ্ছে। বুঝলাম হয়তো টাকা জোগাড় করতে যাচ্ছে।

এর মধ্যে দুই জনের সাথেই আলাপ হল, জিজ্ঞাসা করলাম পরীক্ষা ভালো হয়নি না-কি। জানলাম দুইজনই মাত্র একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নাই (অবশ্য আমিও আধাটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি)।
এরমধ্যে ২য় ছেলেটা অনেক উপদেশ দিল, বলল, এখন ঘুষ ছাড়া চাকরির কোন নিশ্চয়তা নাই, অথবা মামা-চাচা লাগবেই। কি আর উত্তর দিব, আশে পাশে শুনে আমারও তখন একই রকম বিশ্বাস। ১ম ছেলেটাকে মন খারাপ অবস্থায় রেখে আমি বাসে চড়লাম।

১৫/২০ মিনিট পর একটা ফোন আসল সিবিএ এর এক নেতার কাছ থেকে। জিজ্ঞাসা করল তাদের প্রস্তাবের ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত কি? জানাল যে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত জানাতে, নয়ত তাদের কোটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি ফ্যামিলিতে কথা বলে জানাব বলে কোনরকমে কাটালাম। আমার আসলে কোন ইচ্ছা ছিল না, কারণ আমি তখন প্রায় সরকারি একটা চাকরি করছি। সাবজেক্ট রিলেটেড হওয়ায় তখনও ঐ চাকরির প্রতি একটা নেশা ছিল। আর সাথে সাথে দেশ গঠনে ভুমিকা রাখার সম্ভাবনা। (কিছুদিন পরে অবশ্য নেশা ভালো মতই কেটেছিল)।

১৫ মিনিটও যায় নাই, আবার ফোন, এবার বললাম, ভাই, এত টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব না। একথা বলাতে সে খুবই আন্তরিক ভংগিতে টাকার অংক কমানোর প্রস্তাব করল। বললো ঠিক আছে আপনি ৮০ হাজার টাকা জোগাড় করেন। আমি "ঠিক আছে, দেখি" বলে কথা সমাপ্ত করলাম।

১০ মিনিট পর ফোন করে আবার আপডেট জানতে চাইল লোকটা। আমি এবারও বললাম যে ঐ টাকাও বাসা থেকে দিতে পারছে না। এবার সে আমাকে ফোনে রেখে কারো সাথে আলাপ চালালো, কাউকে যেন অনুরোধ করল আমার বিষয়টা যেন বিবেচনা করে। যার সাথে আলাপ করছিল সে এবার ফোনটা নিয়ে আমাকে বলল ঠিক আছে ভাই, আপনি ৫০ হাজারই দিয়েন। তাতেও আমার কাছ থেকে কোন নিশ্চয়তা না পেয়ে শেষে বলল, ঠিক আছে আপনি এখন ৩০ হাজার দেন, বাকীটা চাকরির বেতন থেকে কিস্তিতে দিয়েন। আমার ততক্ষণে বিরক্ত লাগা শুরু করছে, আবার তাদের সক্ষমতা নিয়েও সন্দেহ হওয়া শুরু হয়েছে। তাই "পরে জানাব" বলে ফোন কেটে দিলাম। এরপর আর ফোন ধরিনি।
কিন্তু মনে মনে ভাবছিলাম অন্য ছেলেদুইটা আবার বেশী টাকা দিয়ে ঠকল কি-না।
যাই হোক, এরপর আমি অনেককেই গর্ব করে এই ঘটনা বলতাম, বলতাম যে আমি টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার দিকে হাত বাড়াইনি।

বেশ কিছুদিন পর, যেদিন পত্রিকায় সেই চাকরির রেজাল্ট বের হল, রেজাল্ট দেখে খুব অবাক হলাম, তারপর হো হো করে হেসে দিলাম। কারণ ভাইভাতে যে কয়জন উপস্থিত হয়েছিলাম, প্রত্যেকের চাকরি হয়েছে।

চলমান চাকরিটার প্রতি তখনও মারাত্বক নেশা ছিল, তাই ঐ ব্যাংকে জয়েন করিনি আমি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ফাঁকতালে ব্যবসা করে নিল কেউ কেউ ;) হা হা হা

আমি এক সরকারী স্কুলে এমন অফার পেয়েছিলাম! ১ লাখ থেকে নেমে ৪০ এ এসেছিল!
এতদিন আফসোস হয়নি ;) এখন স্কেল দেখে মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস বেরোয় বৈকি :P

হা হা হা

+++

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:২২

সুমন কর বলেছেন: বিশ্রী বাস্তবতা !! শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এখন তো ঘুষ ছাড়া প্রাইভেট ব্যাংক-এর চাকুরি কল্পনাও করা যায় না...

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০৩

যবড়জং বলেছেন: এখন টাকার অঙ্কটা বেড়েছে এই আর কি.........আর সব ঠিকমতই চলছে .....এবং চলবে ....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.