নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মৃত্যুর স্বাদ খুবই ভয়াবহ, নিঃশ্বাসেরও সন্নিকটে।

মো সিরাজুল ইসলাম

এম ডি সি

মো সিরাজুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারত উপমহাদেশের ধর্মের উৎপত্তি ও বিকাশ

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০২

মানব শিশু অতিশয় দূর্বল ও অসহায়। আদি প্রকৃতি ও তার দৃশ্য-অদৃশ্য অধিকাংশ উপাদান ছিল মনুষ্য সন্তানের বেড়ে উঠা ও জীবন ধারনের প্রতিকূল। মানুষ নিরলস প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম দ্বারা প্রতিকূল পরিবেশকে অনেকাংশে অনুকূলে এনেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে হয়েছে নিয়ন্ত্রক। তথাপি রোগ-শোক, দঃখ-বেদনা, জরা-মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্‍্যোগ মানুষকে ব্যথিত করে। বলতে কি, মানুষই মানুষের প্রতিপক্ষ। তাই সামষ্টিক ভাবে বা ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যথিত হৃদয়ের আর্জি জানানোর আশ্রয় খুঁজেছে মানুষ আদিকাল থেকে। প্রকৃতিক ও পার্থিব সকল শক্তির উর্ধে কোন মহাশক্তির কাছে নিজের দুঃখ নিবেদন করে বেদনা লাঘবের প্রয়াস পেয়েছে।

গুহাবাসী আদিম মানুষ দিনের বেলায় সূর্যালোকে অনেকটা নিঃশঙ্ক ও সাচ্ছন্দবোধ করত, আহার সংগ্রহ করত। তাই সূর্য হয়ে উঠল মানুষের কাছে পরম আরাধ্য। পৃথিবীর প্রাচিন সব দেব-দেবীর মধ্যে সূর্য তাই বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। প্রাচীন সুমেরীয়, আসেরীয়, ব্যবলনীয়, মিশরীয়, গ্রীক ও রোমান মিথে সূর্যের দেবত্বের নানা উপাখ্যান বর্নিত হয়েছে। প্রাচীন ভারতে “বরুন” বা “আদিত্য” ছিল অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেবতা– এর রয়েছে নানা উপাখ্যান। রাতের অন্ধকার মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলত। আবার চন্দ্রের উদয়ে সেই ভীতি কমে আসত। তাই চন্দ্রও “সোম” নামে দেবতার আসনে আসল। মানুষ যেখানে শক্তির প্রকাশ দেখেছে- সেখানেই নত হয়েছে, দেবতাজ্ঞ্যানে পুজা করেছে। এই ভাবে নদী-সমুদ্র, পাহাড়-পর্বত, বটবৃক্ষ, বড় পাথরখন্ড, ঝড়-ঝাঞ্জা, আকাশের বজ্র, রৌদ্র, বায়ু প্রভৃতি দেবতার আসনে পেয়ে গেল। এইরুপে ৪০০০ (চার হাজার) বছরেরও পূর্বে ভারতের আদিবাসী দ্রাবিড় ও অন্যান্য সম্প্রদায় নিজস্ব চিন্তা-চেতনায় কিছু দেব-দেবী সৃষ্টি করে প্রণতি জানাতে লাগল। মানুষ পুর্বেই ভাষার সৃষ্টি করেছিল। সে ভাষাকে বাহন করে তাদের কল্পিত দেব-দেবীর নানা উপাখ্যান ও স্তব-স্তুতি সৃষ্টি করল। এ সব তখনও মুখে মুখে বলা ও শ্রুত হত। ফলে সেই শ্রুতিগুলি সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত ও সংযোজিত হতে থাকল।

প্রায় ৪০০০ (চার হাজার) বছর পুর্বে দুটো আগমনকারী দল (ইন্দু-ইউরোপীয় এবং ইন্দু-ইরানীয়) ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিক থকে প্রবেশ করে- যারা এদেশে আর্য নামে পরিচিত। তারা নিয়ে আসল উন্নত ভাবধারা, সমাজ ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি। সমর কৌশলে সহজেই তারা আদিবাসীদের পরাস্ত করতে সমর্থ হল। দখল করে নিল অথবা ধ্বংস করে দিল আদিবাসীদের গড়া নগর, পশু সম্পদ ও শস্যক্ষেত্র। আর্যদের বিজয় রথ অব্যাহত রাখল ভারতের পুর্ব ও দক্ষিন দিকে। অধিকাংশ আদিবাসী তাদের বশ্যতা স্বীকার করল, অন্যরা পালিয়ে গেল ভারতের অধিক্তর পুর্ব ও দক্ষিন দিকে। আর্যরা নিজেদের সুর বা দেবশ্রেনী এবং অনার্যদের অসুর বা রাক্ষস শ্রেনী মনে করত। তাইতো আমরা হিন্দু পুরানদিতে সুর-অসুর বা দেব-রাক্ষসশ্রেনীর মধ্যে সহাবস্থানের প্রেক্ষাপটে মত ও সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ গড়ে উঠে। আর্যরা তাদের ধর্মীয় চিন্তার ও রীতি-নীতির প্রাধান্য দিলেও আদিবাসীদের ধর্মীয় চিন্তা ও রীতি-নীতির কিছু গ্রহন করে। আর্যদের প্রধান দেবতা ছিল পজাপতি, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, বরুন, সোম, ইন্দ্র, উষষ, অগ্নী, স্কন্দ ইত্যাদি। আদিবাসীদের দেবতা রুদ্র বা শিবকে মহাদেব বা মহেশ্বর রুপে অন্যতম দেবতা হিসেবে আর্যরা গ্রহন করে। ফলে ধর্মীয় সহমর্মিতা গড়ে উঠে। আর্যরা সমাজ ব্যবস্থাকে চার ভাগে ভাগ করে- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র। সাধারণত আর্যরা প্রথম দুই শ্রেনীভুক্ত এবং আদিবাসী দ্রাবিড়্গন শেষোক্ত দুই শ্রেনীভুক্ত হয়। ব্রাহ্মণগণ পূজিত হত নরদেব হিসেবে, ক্ষত্রিয়গন ছিল তাদের রক্ষকদল। বৈশ্যগন ছিল কৃষি ও ব্যবসাজীবি এবং শুদ্রগন পূর্ব তিন বর্নের বা শ্রেনীর সেবা করত। বৈশ্য ও শুদ্র শ্রেনী যারা ছিল জনগণের সিংহভাগ তারা ছিল অস্পৃশ্য ও ঘৃণিত এবং তাদের সাথে মানবেতর ব্যবহার করা হত।

এতকাল শ্রুত ধর্মীয় উপদেশাবলীর সমন্বয়ে প্রথম ধর্মীয় পুস্তক “ঋকবেদ” রচিত হয় প্রায় তিন হাজার দুইশত বছর পূর্বে। তবে একসঙ্গে এর রচনা কাজ শেষ হয় এবং পুস্তকাকারে প্রকাশ পায় তা ধরে নেওয়ার অবকাশ নেই। বরং বলা যায় দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে বহুপন্ডিতের সমবেত প্রচেষ্টায় “ঋকবেদ” রচিত হয় যদিও এর শ্লোকগুলি স্বর্গীয় বলে দাবী করা হয়। এরপর আরো চার-পাঁচ শত বছরের মধ্যে বহু জ্ঞ্যানীর প্রচেষ্টায় শ্যামবেদ, যর্তুবেদ এবং অথর্ববেদ রচিত হয়। প্রাচীন ভারতের এই সমন্বিত ধর্ম “বৈদিক ধর্ম” নামে পরিচিতি লাভ করে। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের প্রাধান্য হেতু একে কখনও “ব্রাহ্মণ্য ধর্ম”ও বলা হত। বহুকালের ব্যবধানে সপ্তম শতকে মুসলমানদের দ্বারা সিন্ধু(সিনধ) থেকে হিন্দু শব্দের উৎপত্তি হয় এবং ধর্ম ও জাতি যুগপৎ হিন্দু নামে অবহিত হয়। যদিও বর্তমান কালের শিক্ষিত হিন্দুরা একে “সনাতন ধর্ম” বলে পরিচয় দিতে অধিক আগ্রহী।

বলে রাখা ভালো, সংস্কারের অভাবে পৃথিবীর ধর্মমতগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে নতুবা মৃতবৎ টিকে আছে। প্রাচীন মিথগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রাচীন জড়তস্ত্রু মতবাদ, স্যাবাইন ধর্ম, পারশিক ধর্ম, তাওইজম, সিন্তোইজম, প্রাচীন গ্রীক ধর্ম এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই নামে টিকে আছে। ভারতে আজও কিছু পারশিক ধর্মের অনুসারী রয়েছেন। হিন্দুধর্মের সংস্কারকগন যুগে যুগে ধর্মের সংস্কার সাধন করেছেন এবং পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের শিক্ষাকে আত্তীকরন করে নিজ ধর্মের সংস্কার করেছেন। ফলে কালের করাল গ্রাসে হিন্দু ধর্ম হারিয়ে যায়নি। আজও শতকোটির অধিক লোক এ ধর্মের অনুসরণকে ইহলৌকিক ও পরলৌকিক কল্যানের পথ বলে মনে করে।

আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভারতে এক ধর্মীয়বিপ্লব সংঘঠিত হয়। যার প্রথম প্রকাশ ঘটে বিহারের এক চিন্তাশীল বালক “বর্ধমানের” দ্বারা যিনি পরবর্তী জীবনে পরিচিত হন “মহাবীর” রুপে। তাঁর প্রচারিত ধর্মের নাম “জৈন ধর্ম” অর্থাৎ বিজয়ী ধর্ম। জৈন মতে ২৪ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে মহাবীরই সর্বশেষ। তাদের মতে আত্মা সর্ব বস্তুতে বিরাজমান, গাছ-পালা এমনকি পাথরেরও আত্মা আছে, আর তা ঈশ্বরের সৃষ্ট নয়। পরলৌকিক মুক্তি এর লক্ষ্য। এজন্য প্রয়োজন কঠিন তপস্যা, সর্বত্যাগ ও আত্মপীড়ন। আর এজন্য তারা সন্ন্যাসকে প্রাধান্য দেয়। তারা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের তীব্র সমালোচনা করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের সহিতও প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অবতীর্ন হন। এতদসত্বেও তাদের অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কালক্রমে তারা শ্বেতাম্বর ও দ্বিগম্বর নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মহাবীরের জন্মের একশত বছরেরও কম সময়ের মধ্যে খৃষ্টপূর্ব ৫৫৪ সালে কপিলাবস্তুর নরপতি শুদ্ধোধনের ঔরসে এবং মাতা মহামায়ার গর্ভে যে শিশুর জন্ম হয় যার বাল্য নাম সিদ্ধার্থ, তার ৭ দিন বয়সে মাতার মৃত্যু হলে সৎমাতা গৌতমী কতৃক তিনি লালিত-পালিত হন। এই জন্য তাঁর আর এক নাম গৌতম। পরবর্তীতে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে বুদ্ধ হন এবং তিনি “গৌতম বুদ্ধ” নামে খ্যাত হন। তাঁর প্রচারিত ধর্ম বৌদ্ধধর্ম যা অনেক পরে মৌর্য সম্রাট অশোক কর্তৃক বিশ্বজনীন রুপ লাভ করে। বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থের নাম ত্রিপিটক এবং বৌদ্ধরাও পরে মহাযান ও হীনযান দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বৌদ্ধরাও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের সমালোচনা করেন। তবে বৈদিক বা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের দেব-দেবীগন বৌদ্ধ ধর্মে নিন্দিত হয়নি। বৌদ্ধ ও জৈন উভয় ধর্মই বৈদিক ধর্মের জন্মান্তরবাদকে গ্রহন করে। বৌদ্ধ শিক্ষামতে সর্বজীবে দয়া, অহিংসা, দশশীল অনুসরন নির্বান লাভের উপায়। বুদ্ধ স্রষ্টা, পরকাল সমন্ধে অনেকটা মৌন রয়েছেন। তাঁর মতে জগতে জরা-ব্যাধি, শোক-দুঃখ আছে তা থেকে পরিত্রানের উপায় আছে। নির্ভানলাভই জীবনের চরমতম লক্ষ্য। পৃথিবীর প্রায় ৩৫ কোটি লোক বৌদ্ধমতকে গ্রহন করেছেন তাদের মুক্তির উপায় হিসাবে। সমসাময়ীক ভারতে অগ্নীস্পূলিঙ্গের ন্যায় আর একটি মতবাদ ব্যপক প্রভাব বিস্তার করে। তারা হল অজীবিক শ্রেনী। তাদের প্রধান হলেন গোসলা। প্রথম দিকে এমতের অনুসারীর সংখ্যা বৌদ্ধদের চেয়েও বেশী ছিল। এ সময়ে পরিভ্রাজক বা শ্রমন নামে একদল সন্যাসী যারা ঐন্দ্রজালীক ক্ষমতাধরও ছিলেন। তারাও ব্রাম্মন্যবাদের বিরোধীতা করেন। খ্রীষ্টপূর্ব সময়ে বস্তুবাদী ভাবধারারও উম্মেষ ঘটে। বস্তুবাদী চিন্তাধারার বৈশিষ্ট্য ছিল অন্ধ ধর্মীয় বিধি-নিষেধ ও কুসংস্কারের হাত থেকে চিন্তা স্বাধীনতা অর্জনের। এর সাথে মিল আছে উপনিষদ, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম শাস্রের বস্তুবাদী ধ্যান-ধারনা যার অনেকাংশ প্রতিপক্ষীয়রা নষ্ট করে ফেলে। তবে আভাস পাওয়া যায় বৈদান্তিক দর্শনশাস্ত্রী শংকরাচার্য, মাধবাচার্য, জয়ন্তভট্ট ও হরিভদ্রের রচনাবলীতে। বর্তমান বিশ্বে ইন্দিয়াতীত ধ্যান-ধারনা মুক্ত অনুসারীর সংখ্যা ৮০ কোটির মত। ঋষি বৃহস্পতি, ঋষি উদ্দালক বস্তুবাদী ভাবধারার উদ্ভাবক। ঋষি ভরদ্বাজ বস্তুবাদী ভাবধারার অন্যতম প্রবক্তা। এই মতবাদের অন্যতম প্রবক্ত ছিলেন চারবাকমনি। পরবর্তিতে ঋষি দুর্ব্বাসা বৈদিক ও অন্যান্য দেবদেবী অস্বীকার করেন এবং ব্রাম্মন্য ধর্মের তীব্র সমালোচনা করেন। উক্তবিদ কারনে ক্রমে পুরোহিততন্ত্রের প্রাধান্যতা লোপ পায়। বস্তুবাদী ভাবধারার মধ্যে “লোকায়ত” ছিলে প্রধান ধারা। পরবর্তীতে কৌটীল্য একে দর্শনের ত্রিধারার অন্যতম বলে প্রচার করেন।

বৈদিক ধর্মের উপাসনা প্রথমে বিমূর্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে দেবদেবীদের মূর্তিসহ উপাসনা প্রচলিত হয়। এইরুপ দেব উপাসনায় মূর্তি সংযোজিত হওয়ায় পাপবোধ থেকে মহর্ষি বেদব্যাস কর্তৃক বিরচিত শ্লোকের বঙ্গানুবাদঃ “তুমি রুপ বিবর্জিত আমি ধ্যানে তোমার রুপ কল্পনা করিয়াছি। তুমি অখিল গুরু ও বাক্যের অতিত আমার স্তব-স্তুতির দ্বারা তোমার সে অনির্বচনীয়তা দূর করিয়াছি। তুমি সর্বব্যপী কিন্তু আমি তীর্থযাত্রাদি দ্বারা তোমার সেই সর্বব্যপিত্ব নিরাকৃত করিয়াছিঃ অতএব হে জগদীশ! তুমি আমার এই বিকলতা-দোষত্রয় ক্ষমা কর”।

খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্ছম/চতুর্থ শতকে ভারতে হিন্দু ধর্মের ব্যপকতা রক্ষা, জৈন, বৌদ্ধ ও অজীবিক শ্রেনী তাদের অস্তিত্ব রক্ষা ও প্রসারতার জন্য এক সংঘাতে লিপ্ত হয়। এইজন্য প্রত্যেক ধর্মের প্রচারকগন দেশের রাজন্যবর্গ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গকে নিজ নিজ ধর্মমতে দীক্ষিত করার এক হীন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এই প্রতিযোগিতায় প্রথমেই নিস্প্রভ হয় অজীবিক শ্রেনী। সময়ের ব্যবধানে তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। কিন্তু তাদের যুক্তিপূর্ন উপদেশগুলো আজও টিকে আছে। যেমনঃ ব্রাহ্মণ ছেলে হলেই ব্রাহ্মণ বলা যাবে না- তাঁর মধ্যে ব্রক্ষত্ব থাকতে হবে। ব্রহ্মভাব থাকলে চন্ডালও ব্রাহ্মণ হতে পারে। আজ হিন্দু দর্শন হিসেবে আমরা যে ষড়দর্শন পাই যেমন, সাংখ্য দর্শন, যোগ বা পতঞ্জলী দর্শন, ন্যায় ও বৈশেষিক দর্শন, মিমাংসা দর্শন, বেদান্ত দর্শন ইত্যাদির প্রথম কয়টির মূলভাব এসেছে অজীবিক শ্রেনী থেকেই। দ্বিতীয় আঘাত আসে জৈন ধর্মের উপর। বর্তমানে এ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা অল্পই বলা যায় এবং ভারতের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল সমূহে জৈন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাধিক্য দেখা যায়। কয়েক শতাব্দী পর খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয়/প্রথম শতকে হিন্দু ধর্ম পুনঃ সুসংহত হওয়ার পর আঘাত হানে বৌদ্ধধর্মের উপর। তখন তারা প্রচার করে কোন হিন্দু যদি কোন বৌদ্ধকে হত্যা না করে তবে তাকে রৌরব নরকে যেতে হবে। খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতকে রাজা পূষ্যমিত্র এবং সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাংকের সময় এই নিধনক্রিয়া প্রবলভাবে চলে এবং হিন্দুরা হয় বৌদ্ধ মন্দিরগুলি দখল করে নেয় নতুবা বৌদ্ধমন্দিরে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি স্থাপিত হয়। এ সময় চীনা পরিব্রাজকরা ভারতের বৌদ্ধ মঠগুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পান। তাইতো আমরা দেখতে পাই, বুদ্ধের জন্ম ও কর্মস্থান ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী কম!

প্রাচীন ভারতে ঋকভেদ ব্যতীত বাকী তিনটি বেদের রচনাকাল থেকেই পুরান, স্মৃতিশাস্ত্র, ব্রাহ্মণ, সংহিতা প্রভৃতি রচনা হতে থাকে। উপনিষদের রচনা কাল খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ থেকে ৪র্থ শতেকের মাঝে। বেদ থেকে প্রতিটি ধর্মগ্রন্থই একক কোন পুস্তক নহে বরং প্রতিটি ধর্ম পুস্তকই অনেকগুলো পুস্তকের সমষ্টি যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন কর্তৃক রচিত হয়। খ্রীষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে মহাঋষি ও মহাকবি বাল্মিকী কর্তৃক “রামায়ন” রচিত হয়। খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয়/চতুর্থ শতকে মহাকবি, মহাঋষি ও সংস্কারক ব্যাসদেব বা বেদব্যাস (তিনি বেদের শ্রেনীবিভাগ করে ছিলেন বলে তাঁর এই নাম করন হয়) কর্তৃক “মহাভারত” রচিত হয়। দেবভাষা অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষায় রচিত দুটি মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতে যে বীররস সৃষ্টি করা হয় তার অন্যতম কারন সমসাময়িক তিন-চারটি ধর্মমতের হীন প্রতিযোগিতা থেকে হিন্দু ধর্মের প্রাধান্যতা অক্ষুন্ন রাখার জন্যই যে রচিত হয়েছিল এরুপ চিন্তা করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতকে বা খৃষ্টের জন্মের সমসাময়িককালে “শ্রী ভগবত গীতা” রচিত হয়। ইহা একটি অনন্যগ্রন্থ এবং হিন্দুধর্মের সর্বাধিক পঠিত পুস্তক। ভারতীয় ধর্মীয় জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। মহাভারত কাব্যে ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের অংশ বিশেষ যেখানে মধ্যম পান্ডব অর্জুন করুক্ষেত্রের সমর আরম্ভ হওয়ার পূর্বক্ষনে জ্ঞাতি বধের আশংকায় যুদ্ধে বিরত থাকার ইচ্ছা পোষণ করলে তাকে যুদ্ধ প্রবৃত্ত করার জন্য অর্জুনের সখা, ধর্মগুরু ও সারথি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক উপদেশাবলীর সমষ্টি। যুগে যুগে হিন্দু ধর্মের উপর যারা প্রাজ্ঞতা দাবি করেছেন এমনকি পাশ্চাত্য মনিষীগন যারা হিন্দু উপর গবেষনা করেছেন, সকলেই এর পাদটিকা রচনা করেছেন।

পরবর্তীতে ব্রাহ্মণে ধর্মে আরও অনেক দেবদেবীর অনুপ্রবেশ ঘটে। দেবতা মহাসেন, গনেশ, কার্তিক, পার্বতী, ঊমা, তারা, কালী, লক্ষী, সরস্বতী, দূর্গা ইত্যাদি প্রায় ৩৩ কোটি দেবতার মহাসংখ্যা পূজিত হতে থাকে। বৈদিক যুগের প্রথম সারির বহু দেব-দেবী গুরুত্ব হারায় এবং পরবর্তীতে সৃষ্ট দেব-দেবীর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে হিন্দুধর্মের একটি শাখা বৈষ্ণবধর্মের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং বিষ্ণু হয়ে উঠেন অন্যতম প্রধান দেবতা যেমনঃ সাম্প্রতিক কালে দেবী দুর্গা রয়েছেন অন্যতম শীর্ষ পুজিত দেবী হিসেবে। বিষ্ণু তিন পদক্ষেপে বিশ-ব্রহ্মাণ্ড পরিভ্রমন করেন। পরবর্তীতে অন্যান্য দেব-দেবীগনও এই অনন্য ক্ষমতার অধিকারী রুপে পূজিত হন। পরবর্তী সময়ে বিষ্ণু, নারায়ণ ও বাসুদেবের উপাসনা মিলেমিশে এক হয়ে যায়। এ সময়ে ত্রিমূর্তির (ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব) আরাধনা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করে যা এখনও ভারতের জাতীয় প্রতীক। এ সময়ে শৈবধর্মের বিকাশ ঘটে। বিশেষত দক্ষিন ভারতে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। আজও শিবলিঙ্গের পূজা দক্ষিন ভারতে জনপ্রিয়। শিবের আরাধনা সার হিসাবে শক্তি পুজার বিকাশ ঘটে যা পরে তান্ত্রিক মতবাদের সাথে মিশে যায়। পাণিনি, পতঞ্জল, মেগাস্থিনিষের রচনাবলীতে মগদ, মৌর্য ও শুঙ্গ রাজাদের আমলে উত্তর ভারতেও শৈব ধর্মের প্রসারের কথা জানা যায়। দ্বাদশ শতাব্দীতে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা “বাসব” ভক্তিবাদকে তন্ত্রবাদের সাথে যুক্ত করেন এবং জাতিভেদ প্রথারন্যায় হিন্দু ধর্মের অপরিহার্য নীতিকে প্রত্যাখান করেন। তারা খোলাখোলি হিন্দু ও জৈন ধর্মের বিরুধীতা করেন। খ্রীষ্টের জন্মের সমসাময়িক কালে শক পরবর্তীতে হুন, জাঠ ও গুর্জ জাতি ভারতে আগমন করে কিন্তু আর্যদের ন্যায় তাদের কোন প্রতিষ্ঠিত ধর্মমত না থাকায় ক্রমে তারা এদেশের জাতিতে ও ধর্মে বিলীন হয়ে যায়।

বেদব্যাস কর্তৃক বেদান্ত প্রণীত হয়। ইহা একটি দর্শনগ্রন্থ বিশেষ যাতে ব্রহ্মার স্বরুপাদি বর্ণিত হয়েছে। বেদান্তের উৎস বেদ, উপনিষদ ইত্যাদি। খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে সংস্কারক ও বৈদান্তিক শংকরাচার্য বেদান্ত দর্শনের প্রণয়ন ও প্রচার করেন। পরে মাধবাচার্য ও অন্যান্য সংস্কারকগনও বেদান্তের ধারাভাষ্য লিখেন। শংকরাচার্য দশ অবতার (যিনি অবতরণ করেন) সৃষ্টি করেন এবং বুদ্ধদেবকে নবম অবতাররূপে গ্রহন করেন। ফলে বৌদ্ধদ্বেষ হ্রাস পায়। শংকরাচার্য অদ্বৈতবাদের প্রচারক। অবশ্য এর পূর্বে স্বর্বেশ্বরবাদ প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীতে শংকরাচার্যের অদ্বৈতবাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায় এবং মাধবাচার্য দ্বৈতবাদ প্রচার করেন। একাদশ শতকে অন্যতম সংস্কারক রামানুজ বেদ ও বেদান্তের শিক্ষাসমূহকে সরলীকরন করে মানুষকে শিক্ষা দেন। তিনি শংকরাচার্যের অদ্বৈতবাদ ও মাধবাচার্য দ্বৈতবাদের সমন্বয়ে বিশিষ্ট দৈতবাদের প্রচার করেন। এ সময়ে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেমরুপ যৌনাবেদনের অতি মানবীয় ব্যাখ্যার ধরনটি পরে ভক্তিবোধ কাব্যধারাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং সমসাময়িক অন্যান্য মিথের ন্যায় ভারতীয় মিথগুলিতেও যৌন আবেদন ভক্তিমিশ্রিত হয়ে গীত হতে থাকে। যৌন কার্য্যে ও বর্ণনায় ভক্তিভাব যুক্ত হয়ে কামসূত্রে রুপ নেয় যার পাষাণ চিত্ররূপ বৌদ্ধ ও জৈন ভিক্ষু কর্তৃক একাদশ শতকে নির্মিত অজন্তা, ইলোরা এবং খাজোরাহোর বৌদ্ধ ও জৈন গুহা মন্দিরগুলোতে দৃষ্ট হয়।

সপ্তম শতাব্দীতে আরবদের কর্তৃক সিন্ধু, মুলতান ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিজয় অভিযান পরিচালিত হয়। এ অধিকার বেশীকাল স্থায়ী হয়নি। সিন্ধু অভিযানের পূর্বে ও পরে মুসলমান পীর মাশায়েকগন আরব ব্যবসায়ীদের সহিত এদেশে আগমন করেন। তাঁরা নিরাকার আল্লাহ্‌র উপাসনা, মানুষে মানুষে সাম্য ও ভাতৃত্বের অনুপম আদর্শ প্রচার করেন। প্রায় তিনশত বছর পর গজনীর সুলতান সুবক্তগীনের পুত্র সুলতান মাহমুদ উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৭ বার অভিযান পরিচালনা করেন। তিনিও ভারতে কোন রাজ্য গড়ে তুলেননি। তার অভিযানগুলি মুলতঃ ধন-রত্ন লাভের আশায় নতুবা প্রতিশোধ গ্রহনের নিমিত্তে পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে ঘোর রাজ্যের সুলতানের ভাই ও তাঁর সেনাপতি মুহাম্মদ ঘুরি লাহোর অধিকার করেন এবং তারাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথিরাজ ও রাজপুতদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেন। তাঁর কৃতদাস ও সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লিতে রাজধানী স্থাপন করেন ফলে ভারতে সুলতানশাহী আমল আরম্ভ হয়। ক্রমে মুসলমানেরা উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিন ভারতে বিজয় অভিযান পরিচালনা করেন। মুসলমানেরা এদেশে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন ক্ষমতা এবং সমতা। ব্রাহ্মণ্যবাদের কবলে এদেশের সিংহভাগ নিম্ন শ্রেনীর জনতা তখনও ছিল অস্পৃশ্য ও ঘৃনীত। মুসলমানের সাম্যবাদে আকৃষ্ট হয়ে এবং রাজনৈতিক আনুকূল্য পাওয়ার আশায় নিম্ন বর্নের হিন্দু থেকে অধিক সংখ্যায় ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে থাকে। এরুপ ধর্মান্তরবোধে রামানুজসহ ধর্ম সংস্কারকের আবির্ভাব ঘটে।

বিভিন্ন ধর্মের মর্মকথা ও শিক্ষা নিয়ে বেশ কিছু সংস্কারকের আবির্ভাব ঘটে। উত্তর-পশ্চিম ভারতের কবীর, শেখ ফরিদ, গুরুনানক এবং বঙ্গদেশের চৈতন্যদেব তাঁদের অন্যতম। নানক প্রথম জীবনে কবিরের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। নানক সকল ধর্মের হৃদয়ঙ্গম করতে ব্যাপক ভ্রমণ করেন। তিনি মধ্য এশিয়া, মক্কা-মদিনা, তুরষ্ক হয়ে গ্রীস, সিংহল এবং বাংলা-আসাম সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমন করেন। ভ্রমন শেষে তিনি তাঁর ধর্মমত প্রচার করেন, যা ‘শিখ’ ধর্ম নামে পরিচিত। শিখদের ধর্মগ্রন্থ “গ্রন্থ সাহেবে” গুরুনানক সহ দশ জন গুরুর বাণী, কবির, শেখ ফরিদসহ ৫ জন মুসলমান ও ১৪ জন হিন্দু ভগত ও সাধু-সন্তের সংশোধিত রচনা এবং ১৭ জন হিন্দুচারন কবির রচনা সন্নিবিশিত আছে। শ্রী চৈতন্যদেব বাংলায় বৈষ্ণব ধর্মের পূনর্জাগরণ ঘটান ভজন সংগীতের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি ভারতে সুফীবাদের আবির্ভাব ঘটে। মুসলিম সুফীবাদের প্রধান ধারাটি ইরাক-পারস্য ধারার অনুরূপ। বাকি মুসলিম সুফী এবং হিন্দু সাধকের ধর্ম সমন্বয়কের ভূমিকায় দেখা যায়। এ থেকে বাউল শ্রেনীর উদ্ভব হয়। বাউল নামক চারণ কবিগন রুপকের মাধ্যমে ধর্মীয় আবেগ প্রকাশ করে থাকেন। আবার রাজনৈতিক কারনেও কোন কোন শাসক ধর্মের সমন্বয়ের চেষ্টা চালান। এমনি একজন হলেন সম্রাট আকবর যিনি “দ্বীন-ই-এলাহী” ধর্মমত প্রচার করেন। এসময়ে মোজাদ্দেদ-ই-আলফে-সানীর মত কিছু মুসলমান সংস্কারকের আবির্ভাব ঘটে।

বাংলা-ভারতে ইউরোপীয় জাতিগনের আগমনে এদেশের মানুষ পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতার সংস্পর্শে আসেন। খ্রীষ্টান মিশনারীগনও এ সুযোগ কাজে লাগান। ফলে এদেশে বেশ কিছু লোক বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও আদিবাসীদের মধ্যে থেকে খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়। এখানেও রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক আনুকুল্যের বিষয় থাকেতে পারে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত একটি দল এদেশবাসী ও তাদের সব চিন্তা ও কর্মে ত্রুটি দেখতে পান। আবার একদল শিক্ষিত লোক হিন্দু ধর্মের সংস্কারে তৎপর হয়ে উঠেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, কেশব চন্দ্র সেন প্রভৃতি মনিষীগনের চেষ্টায় “ব্রহ্মসমাজ” গড়ে উঠে। রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মত কতিপয় মহান ব্যক্তির চেষ্টায় হিন্দু সমাজের বিধবা বিবাহ প্রচলন এবং সতীদাহ তথা সহমরণ ও অনুমরণ প্রথার বিলুপ সাধিত হয়। রামকৃষ্ণ পরমংসদেব নিজে কালীভক্ত ছিলেন তবে সকল ধর্মের প্রতি তিনি সম্মান/সহমর্মিতা পোষন করতেন। তাঁর অন্যতম শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ সালে “শিকাগো পার্লামেন্ট অব রিলিজিয়ন” সম্মেলনে হিন্দুধর্মের মহত্ব তুলে ধরেন। ফলে পাশ্চাত্যে বিশেষ করে আমেরিকায় একদল হিন্দু অনুসারীর সৃষ্টি হয়।

ভারতীয় উপ মহাদেশে মুসলিম জনগোষ্ঠী ৫০ কোটির মত। মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন শাখা প্রশাখার অনুসারী কিছু কিছু থাকলেও সুন্নী মতাদর্শের অনুসারী সিংহভাগ। বৃটিশ পিরিয়ডের মধ্যভাগে ওহাবী মতবাদে দীক্ষিত সৈয়দ আহম্মদ বেরলবী কর্তৃক ভারতে ওহাবী মতবাদের প্রচলন হয়। পরে তা রাজনৈতিক রুপ নিয়ে বৃটিশ ব্রিরুধী সশস্ত্র বিপ্লবে রূপ নেয়। বাংলা-ভারতে হাজী শরীয়তুল্লাহ কর্তৃক “ফরায়েজী” আন্দোলন সুচনা হয়। মুসলিম জাগরণের আগ্রদূত হিসাবে জামালুদ্দিন আফগানী কর্তৃক ভারত ও মুসলিম বিশ্বে “প্যানইসলামীজম” আন্দোলন, স্যার সৈয়দ আহমেদ কর্তৃক “আলীগর আন্দোলন” মাওলানা শওকত আলী ও মাওলানা মোহাম্মদ আলী কর্তৃক “খেলাফত আন্দোলন” গড়ে উঠে। এ ছাড়াও মহাকবি আল্লামা ইকবাল, জাষ্টিস সৈয়দ আমির আলী প্রভৃতি মনিষীগন লেখনীর মাধ্যমে এদেশে ইসলামের পূনর্জাগরণে যথেষ্ঠ অবদান রাখেন। ধর্মীয় ষড়যন্ত্রের ফসল গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী কর্তৃক এদেশে আহম্মদীয়া বা কাদিয়ানী গ্রুপের সৃষ্টি হয়। অবশ্য তারা নিজেদেরকে আহম্মদীয়া মুসলিম আল-জামায়াত বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তেমনি আহম্মদ রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস। আধুনা ইসলামী আকীদায় কিছু ভ্রান্ত মতবাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কিছু ইসলাম প্রিয় জ্ঞ্যানীব্যক্তি এসব ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে নিরলস প্রচেষ্টা আব্যাহত রেখেছেন।

উপমহাদেশের জনগনের মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণ পূর্বাপেক্ষা বেশী সচেতন। মুক্তমন ও চিন্তার মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও একদেশদর্শিতাও কম নয়। প্রতিটি ধর্মে বিশেষ করে হিন্দু এবং মুসলিম ধর্মের অনুসারীর মধ্যে নরম ও চরম চিন্তার লোক রয়েছে। ফলে সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কবি সুফি মোতাহার হোসেনের ভাষায়ঃ
“জাতিতে জাতিতে ধর্মে নিশিদিন হিংসা ও বিদ্বেষ
মানুষে করিছে ক্ষুদ্র বিষাইছে বিশ্বের আকাশ
মানবতা মহা ধর্ম রোধ করি করিছে উল্লাস।“

আমরা চাই সকল ধর্মের শান্তিপূর্ন সহাবস্থান। সংবাদ ও প্রচার মাধ্যমগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সংঘাত নয় বরং একটি সুন্দর ও শান্তিময় পৃথিবী যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপহার দিতে পারি এর জন্য এখন থেকে আমাদের সকলের যত্নবান হতে হবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি পড়ে আরাম পাওয়া গেল না। খুব বেশি রসকষহীন।

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪০

নতুন বলেছেন: অনেক কিছুই জানতে পারলাম....

কিন্তু ভাষার ব্যবহার বেশ কঠিন তাই পড়ে আরাম পাওয়া গেলো না। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.