নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মৃত্যুর স্বাদ খুবই ভয়াবহ, নিঃশ্বাসেরও সন্নিকটে।

মো সিরাজুল ইসলাম

এম ডি সি

মো সিরাজুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গঙ্গাস্নানে পুন্য অর্জন- একটি পর্যালোচনা।

২৭ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৩৫

গঙ্গা নদীর উৎপত্তির ভৌগোলিক বিবরণঃ

হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হ্রদ থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি এবং হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্ছলের ঢাল বেয়ে ভারতবর্ষের আর্যভর্ত্ত(উত্তর প্রদেশ) সমভূমিতে প্রবেশ করে দক্ষিন-পূর্বমূখী প্রবাহ সৃষ্টি করে। গঙ্গার প্রবাহ পথে উত্তর দিক থেকে উল্লেখযোগ্য ১৪টি প্রবাহ এবং দক্ষিন দিক থেকে উল্লেখযোগ্য ৮/৯ টি প্রবাহ গঙ্গার প্রবাহের সাথে মিলিত হয়। এই মিলিত প্রবাহের ধারা রাজমহল পাহাড়ের পাশ দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করে। বাংলায় প্রবেশের পর কিছু দূর দক্ষিন-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পূর্বে দুই শাখায় বিভক্ত হয় যার প্রথম শাখা দক্ষিনমুখী প্রবাহ ভাগিরতী(হুগলী) নামে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। দ্বিতীয় শাখা পদ্মা নামে দক্ষিন-পূর্ব দিকে কিছু দূর পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমানা নির্দেশ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং দক্ষিন-পূর্ব দিকে কিছুদূর প্রবাহিত হওয়ার পর গোয়ালন্দের নিকট যমুনার সাথে মিলিত হয়ে পদ্মা নামেই দক্ষিন-পূর্ব দিকে চাঁদপুরের নিকিট মেঘনার সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ পূর্বক বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
গঙ্গার উৎপত্তি সম্পর্কে হিন্দু পৌরানিক উপাখ্যান বর্নিত বিবরণ নিম্নরূপঃ

প্রথম বিবরণঃ
দেবর্ষি নারদ একদা নানা রাগ-রাগিনীযুক্ত সঙ্গীত করেন। দেবর্ষির ত্রুটি নিবন্ধন সেই সকল রাগরাগিনীর তাল ভঙ্গ হয় কিন্তু নারদ তাহা বুঝিতে পারেন নাই। প্রত্যুত তিনি মনে করেইয়াছিলেন যে, আমি অতি আশ্চর্য্য সঙ্গীতজ্ঞান লাভ করিয়াছি। নারদের এই গর্ব খর্ব করিবার অভিপ্রায়ে উক্ত রাগরাগিনীগণ বিকলাঙ্গ নরনারীগণের আকারে পথগ্রান্তে পরিয়া রহিলেন। নারদ সেই পথ দিয়া যাইবার সময়ে তাহাদিগের অঙ্গবৈকল্যের কারণ জিজ্ঞাসা করায় তাহারা বলিলেন, “নারদ নামে একটি লোক আছে, সে মনে করে যে আমি সঙ্গীতশাস্ত্রে কত জ্ঞানই লাভ করিয়াছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঐ শাস্ত্রে তাহার বড় বেশি জ্ঞান নাই। আমরা রাগ রাগিনী; সে আলাপকালে আমাদের যে অঙ্গভঙ্গ করিয়াছে, অদ্যাপি তাহার সংশোধন হইতেছে না। ইহা শুনিয়া দেবর্ষি নারদ অহঙকারশূন্য হইলেন এবং অত্যন্ত দুঃখিত ভাবে জিজ্ঞেসা করলেন, “তোমাদের অঙ্গবৈকল্য মোচনের উপায় কি?” তাহাতে তাহারা বলিলেন যে, যদি মহাদেব স্বয়ং সঙ্গীত করেন তবেই আমরা পূনর্বার আমাদের পূর্ব অবস্থা প্রাপ্ত হইতে পারি। দেবর্ষি এই কথা শুনিয়া মহাদেবের নিকট গমন করিয়া তাহাকে আমূল বৃত্তান্ত নিবেদন করিলেন। মহেশ্বর শ্রবন মাত্র সন্মত হইয়া বলিলেন, “প্রকৃত শ্রোতা না থাকিলে আমি সঙ্গিত চর্চা করি না”। অতএব যদি জনৈক প্রকৃত শ্রোতা মিলাইতে পার, তবেই আমি তোমার অভিলাষ পূর্ণ করিতে পারি”। তখন নারদ বুঝিলেন যে, আমি তো গায়কের উপযুক্তই নহি, পরন্ততু এখন দেখিতেছি শ্রোতারও উপযুক্ত হইতে পারিলাম না। যা হোক, অগ্রে উপস্থিত কার্য্য সম্পাদন করা আবশ্যক, পশ্চাৎএ বিষয়ে যাহা হয় করা যাইবে। এইরুপ বিবেচনা করিয়া তিনি মহাদেবকে বলিলেন, “এ জগতে সঙ্গীতের প্রকৃত শ্রোতা কে কে হইতে পারেন, আপনি নির্দেশ করুন, আমি তাহাদিগকে এই স্থলে আনয়ন করিতেছি”। মহাদেব উত্তর করিলেন, “সংপ্রতি এই ব্রহ্মান্ডে প্রকৃত সঙ্গীত-শ্রোতা দেখিতে পাইতেছি না; তবে ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে আনয়ন করিতে পারিলে এক্রুপ হইলেও হইতে পারে।“ এতশ্রবনে দেবর্ষি অশেষ সাধনায় ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে তথায় অনয়ন করিলেন, মহাদেব সঙ্গীত করতে আরম্ভ করিলেন, এবং কিয়ৎকালের পর দৃষ্ট হইলে যে, বিকৃতাঙ্গ রাগরাগিণীগণ সুস্বাঙ্গ হইয়া তথায় উপস্থিত হইয়াছেন। মহাদেব যে সঙ্গীত করিলেন, ব্রহ্মা তাহার প্রকৃত মর্মগ্রহনে সমর্থ হইলেন না; বিষ্ণু কিয়দ্দুর পর্য্যন্ত যাহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন তাহাতেই তিনি দ্রবীভূত হইয়া গেলেন।

ব্রহ্মা সঙ্গিতে একাগ্র হইতে পারেন নাই, এ কারন তিনি স্বীয় কমণ্ডলুতে দ্রবীভূত বিষ্ণুকে গ্রহণ করিতে লাগলেন। সেই দ্রবীভূত বিষ্ণুই গঙ্গা নামে খ্যাত। ইহার বহু কাল পরে কপিল মুনির শাপে সগরবংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হইলে ভগীরত পূর্ব পুরুষগনের উদ্ধারমানসে কঠোর তপশ্চরনে ব্রাহ্মাকে তুষ্ট করিয়া তাহার নিকট হইতে গঙ্গাকে প্রাপ্ত হোন। ব্রহ্মার কমণ্ডুলু হইতে পতনকালে দেবাদিদেব মহাদেব ইহাকে মস্তকে ধারণ করেন। পরে ভগীরতের স্তবে তুষ্ট হইয়া ইহ্যাকে বিন্দুসরোবরে ত্যাগ করেন। সেখান হইতে ইনি সপ্তধারায় প্রবাহিত হন; তন্মধ্যে হ্লাদিনি, পাবনী ও নলিনী নামে তিন ধারা পূর্ব দিকে ও সীতা, সিন্ধু ও কুচক্ষু নামে তিন ধারা পশ্চিম দিকে গমন করেন। এবং এক ধারা ভগীরতের পশ্চাদ্গামিনী হইয়া ভাগীরথী নামে খ্যাত হইয়াছেন। করিবর ঐরাবত ইহাকে ধারণ করিতে প্রয়াস পাইলে, ইনি তাহাকে স্রোতে ভাসাইয়া মৃতবৎ করেন এবং পরে দয়া করিয়া তাহাদের ছাড়িয়া দেন। হিমালয়ের গোমূখী নামক স্থান দিয়া তিনি ভারত বর্ষে প্রবেশ করিয়াছেন। পথে জহ্নমনির জজ্ঞভূমি প্লাবিত করিয়া তাহার জজ্ঞদ্রব্য ভাসাইয়া লইয়া যাওয়ায় মুনিবর কুপিত হইয়া সমস্ত গঙ্গা জল পান করিয়া ফেলেন। পরে ভগীরতের ও দেবগন্ধরবাদির স্তবে তুষ্ট হইয়া জানুর বিদারণ পূর্বক(মতান্তরে কর্ণপথ দিয়া) ইহাকে মুক্তি দান করেন। তদবধি গঙ্গা জহ্নমনির কন্যাস্থানীয়া হইয়া জাহ্নবী নামে খ্যাত হোন। অনন্তর অব্যাহতভাবে ভগীরত প্রদর্শিত পথে প্রবাহিত হইলে ইহার পূত সলিলস্পর্ষে সগরসন্তানগনের মুক্তি হয়।

দ্বিতীয় বিবরনঃ
একদা গঙ্গা ব্রহ্মার নিকট হইতে প্রত্যাগমন করেতেছেন, এমন সময় পথে অভিশপ্ত বসুগনের সহিত ইঁহার সাক্ষাৎ হয়। তাহাদিগের স্তব ও অনুনয় বিনয়ে তুষ্ট হইয়া তিনি স্বয়ং মানবী রূপে তাহাদিককে গর্ভে ধারণ করিয়া তাহাদিগকে শাপ হইতে মুক্ত করিতে স্বীকৃতা হোন। অতঃপর মানবী বেশে শান্তনু রাজার পত্নী হইয়া তাহাকে এইরূপ প্রতিজ্ঞা পাশে আবদ্ধ করেন যে, ইহার ইচ্ছানুরূপ কার্যে তিনি ব্যাঘাত দিতে পারিবেন না, ব্যাঘাত জন্মাইবার চেষ্টা করিলেই উনি অন্তর্হিতা হইবেন। শান্তনুর ঔরষে ইহার ক্রমে আটটি পুত্র জন্মে। পুত্র জন্মিবা মাত্র ইনি তাহা জলে নিক্ষেপ করেন। এই রূপে সাতটি পুত্র নিক্ষিপ্ত হইলে পর, অষ্টম পুত্রের নিক্ষেপ কালে শান্তনু ইহার কার্য্যে ব্যাঘাত দিয়ে পুত্রটিকে রক্ষা করিতে বলেন। পুত্র রক্ষা পাইল বটে, কিন্তু ইনি আর শান্তনুর বার্য্যা রহিলেন না; পুত্র দেবব্রত কে( ভীষ্ম, কুরু-পান্ডব্দের দাদা) লইয়া অন্তর্হিতা হইলেন। অতঃপর দেবব্রত উপযুক্ত বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে, গঙ্গা তাহাকে শান্তনুর নিকট অর্পন করিয়া প্রস্তান করিলেন।

তৃতীয় বিবরণঃ
গঙ্গা গিরিরাজ হিমালয়ের জৌষ্ঠ্যা কন্যা, তৎপত্নী মেনকার গর্ভে ইহার জন্ম। দেবগনের চেষ্টায় মহাদেবের সহিত ইহার বিবাহ হয়। মহাদেবের অদর্শনে শোকাভিভুতা মেনকা ইহাকে সলিল্রুপিনী হইবার অভিশাপ প্রদান করেন। তদবধি উনি জল রুপে ব্রহ্মার কুমুণ্ডুলুতে বাস করতে থাকেন।
উক্ত বর্ননার বাকী অংশ প্রথম বিবরনীর অনুরূপ।

উপসংহারঃ

উক্ত তিনটি মিথ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, গঙ্গা নদীর উৎপত্তি এবং প্রবাহ মর্ত্যলোকের আকুতি(এই ধরাতে জীবন দানে সসাগরাপৃথিবীরূপে মর্ত্যবাসীর আশীর্বাদ) স্বরূপ এবং স্বর্গের করুণারূপে দেবতাগনের প্রসাদ স্বরুপ গঙ্গার পৃথিবীতে আগমন। এই গঙ্গার জলে স্নান করলে মানুষ্যজন্মের সকল পাপ তিরুহিত হয়।

উপরের বর্ণিত উপাখ্যান অনুযায়ী গঙ্গার স্নানে এইরূপ পুণ্য অর্জন গ্রহণ করা যাইতে পারে কিন্তু প্রাকৃতিক কারনে হিমালয়ের গোঙ্গোত্রী হ্রদ থেকে নির্গত গঙ্গার ক্ষেত্রে তা বাস্তব এবং বিজ্ঞান সন্মত নহে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৫১

সোনাগাজী বলেছেন:



রূপকথা সব সময় উপভোগ্য, কিন্তু উপমহাদেশের জীবন কঠিন, ইহা রূপকথার মতো নয়।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:১৮

মো সিরাজুল ইসলাম বলেছেন: Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.