![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমস্যাটা সমাজের না, কোন রাজনৈতিক দল কিংবা সহিংস পরিস্থিতিরও না। সমস্যাটা হলো আমাদের ছোটবেলা থেকে পেয়ে আসা 'শিক্ষায়/শিক্ষা ব্যাবস্থায়'। মূল সমস্যাটা আমাদের গোড়াতেই গেঁথে আছে, সমাধান আসবে কোথা থেকে? ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয়-"পড়ালেখা করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে", আমাদের বলা হয় না-"জ্ঞান বৃদ্ধি করে যে ভালো মানুষ হয় সে।" বাল্যকাল থেকেই আমাদের অন্তরে গেঁথে দেয়া হয় লোভ-লালসা, ভালো মানুষ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা না। পাঠ্য বইয়ের বিষয়বস্তু বাচ্চা বুঝুক আর না বুঝুক তাকে পড়া গলধঃকরন করতেই হবে। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও এর ছাড় নেই। স্কুলের বাচ্চাদের চকোলেট দৌড় প্রতিযোগিতার মত বিশ্ব-বিদ্যালয়গুলো সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে রাখবে আর আমরা দৌড় দিয়েই যাব। বিদ্যা কেবল গিলেই গেছি আমরা, অন্তরে আর এর প্রতিস্থাপন হয়ে উঠেনি। আজ যে নাস্তিককে দেখে নাক সিটকাই, কেন তার এত অবিশ্বাস তা খুঁজতে যাইনা। প্রকৃত ধর্মের শিক্ষা আমাদের কেবল স্কুল আর কলেজেই দিয়ে আসা হয়, বিশ্ব-বিদ্যালয়গুলোতে না। অথচ ভার্সিটির জীবনেই আমাদের যত অবিশ্বাস জন্মে। ২০ এর পরের বছরগুলো আমাদের দ্বিধার সময়, অথচ এই সময়টাতেই ভালো মানুষ হওয়ার যথেষ্ট শিক্ষা পাই না আমরা। বরং আমাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার উপদেশ দেয়া হয়, কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে যে কোন অসাধু পথ অবলম্বন করা যাবে না তা আমাদের সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়না, গেঁথে দেয়া হয়না অন্তরে যেন জীবনের কোন অবস্থাতেই সেটা ভুলে না যাই।
'ক্ষমতা' ভয়াবহ একটা ব্যাপার। হিংসা, অহংবোধ, নিজেকে বড় ভাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষার মত "জটিল সমস্যা"র মূলগুলোর সাথে মোকাবেলা করার মত যথেষ্ট শিক্ষা আমরা পাইনা। আমাদের শেখানো হয়না রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল। ক্যাম্পাসে সিনিয়র হওয়া মানেই র্যাগ দিতে হবে, 'দোস্ত তোরে মারছে? আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন। ওরা চাপাতি নিয়া আসলে আমরা বন্দুক নিয়া যামু'... অন্যের/রাজনৈতিক দলগুলোর দোষ ধরতে পারদর্শী কিন্তু নিজেদের ভুলগুলো না। আমাদের যতটুকু ক্ষমতা আছে তার কতটুকু সঠিক ব্যবহার করছি এবং এটা নিয়ে কতটুকুই বা ভাবছি তা কদাচিৎ এর বাহিরে চিন্তায় আসছে না।
আমাদের সমস্যাটা হচ্ছে আমরা ভালোবাসতেই জানি না, ভালোবাসতে শেখানো হয় না আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে; যতটুকুও বা শেখানো হয় তাও বিষয়বস্তু গলধঃকরন তুলনায় নগণ্য। তাই তো আজও প্রাপ্ত বয়স্ক গ্র্যাজুয়েট হয়েও আমরা ভালোবাসা বলতে কেবল নারী-পুরুষের সম্পর্ক ভেবে নিয়ে মনে মনে একদফা হেসে নেই। পাওলো কোয়েলহো একদা দারুন একটা কথা বলেছিলেন-"Love itself can move a mountain." শুধুমাত্র এই একটা লাইনের প্রকৃত অর্থ যদি আমরা আমাদের অন্তরে বিদ্ধ করে নিতে পারতাম আমাদের জীবনের ইতিহাসটাই বদলে যেত। আজ যে ছেলে একটা মেয়ের ওড়না ধরে টান দিল, তার বাসায় বোন আছে কিনা এই প্রশ্ন তোলা সম্পূর্ণ নিরর্থক, কেননা যদিও বা তার বোন থেকে থাকে এবং তার বোনের সাথে ভুল কিছু ঘটেও থাকে, সে তার 'ক্ষমতা'র দাপট দেখিয়ে অনেক কিছু করে বেড়াবে কিন্তু এর মানে এটা নয় যে সে তার বোনকে ভালোবাসে, এটা কেবল একটা টান যা এক সাথে অনেক বছর থাকার ফলে চলে আসে। কারন যে হৃদয় ভালোবাসার প্রকৃত মানে বোঝে, সে হৃদয় সম্মান করতে জানে। আর যে হৃদয় সম্মান করতে জানে সে হৃদয় নিজেকে সকল অন্যায় থেকে বিরত রাখতে জানে। আজ যারা একে অন্যের উপর ক্ষমতার প্রভাব ফেলতে পারছে, মানুষ হয়ে অন্য মানুষের উপর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালাতে দ্বিধাবোধ না করে আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে, মূলতঃ তাদের অভ্যন্তরীণ ভালোবাসা অনেক আগেই মরে গেছে, তাদের ভেতরকার দানবের কাছে তাদের বিবেক হেরে গেছে। কারন তারা কখনই ব্যাক্তির মধ্যকার দানবের সাথে মোকাবিলা করার উপযুক্ত শিক্ষা পায়নি। তারা কেবল টাকা আর ক্ষমতাই চিনে এসেছে। তাই আফসোসটা আমাদের শিক্ষা আর শিক্ষা ব্যাবস্থার। কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক তা কেবল আমাদের বলেই গেল আর আমরা কেবল শুনেই গেলাম, অন্তরে আর গাঁথা হলো না। কি করে গাঁথা হবে? সেই ছোটবেলা থেকেই তো আমাদের মনে কেবল 'বাড়ি-গাড়ি আর ক্ষমতার' স্বপ্নই দেখিয়ে গেল আর আমরা কেবল টাকার পিছনেই ছুটে গেলাম, ভালো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন আর দেখলাম না।
ছাত্র-সে লীগ হোক, দল বা শিবির হোক আর যাই হোক, তার হাতে কলমের পরিবর্তে চাপাতি কেন? তার অন্তরে ভালোবাসার পরিবর্তে ক্ষমতার লোভ কেন? রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আগে নিজেদের স্বার্থ কেন? সত্যিকার অর্থে আমাদের কাছে ব্যাক্তিস্বার্থ প্রাধান্য কেন? এর উত্তর এখন আর খুঁজে লাভ নেই, কারণ সমস্যা গোড়াতেই থাকা অবস্থায় একে উগড়ে ফেলা হয়নি, এখন শিকড় গজিয়ে এটা বটগাছে পরিণত হয়েছে। তাই আফসোস আমাদের ছোটবেলা থেকে পেয়ে আসা শিক্ষা/শিক্ষা ব্যাবস্থাকে, যে শিক্ষা আমাদের সভ্য জাতির খেতাব তো দিয়েছে কিন্তু এই সভ্যের আড়ালের কালো অসভ্য দানবকে দমন করতে পারেনি।
২| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৫৮
শারমিন নদী বলেছেন: আপনার লেখাটি খুব ভালো লেগেছে, বিশেষ করে 'ব্যক্তির মধ্যকার দানব' যার সাথে মোকাবেলা করার চেষ্টাও করি না।তাইতো,শিকরসহ বট গাছ উপরে ফেলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছি।