নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কথা- পর্ব ৯৫
"প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বীয় কর্মবৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ থাকিবে।"
সূফী সাধক আনোয়ারুল হক।
পৃথিবীর জীবন যাপনের উপযোগী করে নির্দিষ্ট সময় ধরে স্রষ্টা মানব চিন্তনদেহ গঠন করেন যেমন মাতৃগর্ভে, মৃত্যু পরবর্তী জীবন যাপন উপযোগী মানব চিন্তনদেহ তেমনই গঠন করে থাকে ব্যক্তির কর্ম এই পৃথিবী গর্ভে। এ বিষয়ে যাঁরা উপযুক্ত জ্ঞানার্জন পূর্বক জীবন যাপন করেন,তাঁরাই অগ্রগামী সফলকামী। প্রত্যেক ব্যক্তির চিন্তন দেহই তার কর্মবৃত্তের পৃথিবী। ব্যক্তির জীবন ব্যক্তির কর্মের উপর নির্ভর করেই গড়ে ওঠে। আমার ভবিষ্যতের জীবন যেমন বর্তমান কর্মের উপহার, তেমনই আমার বতর্মান জীবন আমারই অতীত কর্মের উপহার। মানুষ যে সকল বৃক্ষাদি নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করেন, সেই বৃক্ষেরই লতাপাতা, ফুলফল, ছায়ায় গড়ে ওঠা পরিবেশে আবদ্ধ থেকেই তারা জীবন ধারন করে থাকেন। এপ্রসঙ্গে প্রবাদ আছে,"যেমন কর্ম তেমন ফল।" অর্থাৎ যে যেমন কর্ম করে, সে তেমন ফল ভোগ করার সুযোগ পায়।
পারিপার্শিক সবকিছুর কার্যক্রমের প্রভাব থেকেই গড়ে ওঠে আমাদের পরিবেশ। এই পরিবেশের প্রভাব থেকেই সৃষ্টি হয় বিভিন্ন পরিস্থিতি। ব্যক্তি পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল হয় তখন যখন তার শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনে সক্ষমতা থাকেনা। পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল জীবন যাপন হলো অনাস্হাপূর্ণ পরাধীন জীবন। আর শান্তিপূর্ণ স্বস্থিতির উপর প্রতিষ্ঠিত জীবন যাপন হলো আস্হাপূর্ণ স্বাধীন জীবন। বিশ্বাস ব্যক্তিকে অধীন সৃষ্টি সত্ত্বা থেকে মূক্ত করে স্বাধীন স্রষ্টা সত্ত্বার সান্বিদ্ধলাবে শক্তি যোগায়। আর অবিশ্বাস ব্যক্তিকে অধিন সৃষ্টি সত্ত্বার সাথে যুক্ত করে বন্দি জীবন যাপনে আবদ্ধ রাখে।
যারা দূরদর্শী না তারা গবেষণা ব্যতীত অন্যের উপর নির্ভর করেই দুরের বিষয়ে ধারণা লাভ করে থাকে। আর এই ধারণা নির্ভর কর্মের উপর কেউই আস্হার সাথে পথ চলতে পারেনা। আস্হা অর্জনের জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতার দরকার হয়। কর্ম করেই অর্জিত হয় বাস্তব অভিজ্ঞতা তথা আত্মবল। আর প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে কর্মে এক পর্যায়ে ব্যক্তির আত্মবল জাগ্রত হয়। আর কর্মবৃত্ত হলো ব্যক্তির অর্জিত আত্মবলের বলয়। এই বলয়ে থাকে ব্যক্তির চাহিদা,রুচি,পছন্দ, প্রশিক্ষণ,অনুশীলন, উপলোব্ধি, অভিজ্ঞতা,আস্হা,বিশ্বাস ইত্যাদি আত্মবল। আবার এসব আত্মবলের প্রভাব ধনাত্মক না হলে ব্যক্তির কর্ম করার উপলোব্ধি ও আত্মবল দুর্বল হতে থাকে। ফলে ব্যক্তি আস্হার সাথে কর্ম করতে পারেনা। এমতাবস্হায় ব্যক্তির আস্হা, বিশ্বাস ক্ষীণ ও লোপ পেতে থাকে। এমতাবস্থায় আস্হা- বিশ্বাসের অভাবে ব্যক্তি স্বীয় কর্মবৃত্তের মাঝে সৎ সাহস ও সত্যের সন্ধান লাভ করতে পারেনা।
একই কর্ম বারংবার অনুশীলন করার মাধ্যমে ব্যক্তির অভ্যাস নামক কর্মবৃত্ত তথা আত্মবল গড়ে ওঠে। অভ্যাস থেকেই অভিজ্ঞতা, আস্থা, বিশ্বাস,স্বভাব এই সকল আত্মবলের বলয় তথা ব্যক্তির এক এক ধরনের কর্মবৃত্তের বলয় গড়ে ওঠে। আর কর্মবৃত্ত ঘিরেই গড়ে ওঠে নানান ব্যক্তির নানাবিধ জীবন জীবিকার ক্ষেত্র। চাষি,জেলে, তাঁতি, কামার,কুমোর,মুচি, মুটে, মজুর ইত্যাদি নানান পেশাজীবীর মানুষ হিসেবে স্বীয় কর্মবৃত্তের কর্মে আবদ্ধ থাকে। তাই প্রসঙ্গতই সূফী সাধক আনোয়ারুল হক বলেন,"প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বীয় কর্মবৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ থাকিবে।"
শিক্ষা ও অনুশীলন থেকেই অর্জিত হয় ব্যক্তির অভ্যাস ও অভিজ্ঞতা। আর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত হয় ব্যক্তির আস্হাশক্তি। যা ব্যক্তিকে ভয়-ভীতিশুণ্য সন্দেহমূক্ত জীবন দান করে থাকে। আর পারিপার্শিক সহযোগিতা তথা গুরুর আদেশ- উপদেশ - নিষেধ অনুসরণ পূর্বক লক্ষ্যকেন্দ্রিক পথ চলার মাধ্যমেই ব্যক্তির লক্ষ্যকেন্দ্রিক কর্ম করার আত্মবল জাগ্রত হয়। এ জাগ্রত আত্মবলই ব্যক্তির আস্হাশক্তির স্থিতি বলয় গঠন করে। কর্মের মাধ্যমে সৃষ্ট অভ্যাসের বলয় হলো ব্যক্তির সন্দেহ ও ভয়ভীতি শুণ্য নতুন এক প্লানেট। কর্মের এই প্লানেটের মাঝে অবস্থান করেই ব্যক্তি নিরাপদ শান্তিপূর্ণ সাফল্যের জীবন যাপন করতে সক্ষম। তাই যে সব কর্মাভ্যাসের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সফল্যের জীবন ধারণ করা যায়, হাক্কানী চিন্তনপীঠ অনুসারে সেই সব শান্তিপূর্ণ সফল্যের কর্মই হলো মানবতার কর্ম। আর মানবতার আচরণই হলো "মানব ধর্ম"।
সৌরজগতে যেমন ভুমন্ডল,জলমন্ডল,বায়ুমন্ডল, আলোকমন্ডল,তাপমন্ডল এসব নানান মন্ডলের সুনির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদনের জন্য কর্মবৃত্ত রয়েছে, মানব দেহেও তেমনি সুনির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন কর্মবৃত্ত রয়েছে। এসব কর্মবৃত্তগুলো হলো- খদ্য সংবহণতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র, রক্ত সংবহণতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ইত্যাদি। আলো-আধাঁরের সৌরজগতে যেমন জানা-অজানা শুভ- অশুভ নানান কর্ম বলয়ের প্রভাবে জীবজগত প্রতিপালিত হয়, মানব জীবনও তেমনি জ্ঞান ও অজ্ঞতার নানান জানা-অজানা ভালো- মন্দ কর্মবৃত্তের প্রভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। ভাল কর্মের কর্মবৃত্তের বলয়ে পারস্পারিক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভাব জগতের যে সকল শুভ শক্তির প্রভাবে পারস্পারিক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে সেগুলো হলো- কৃপা, ক্ষমা,ভালোলাগা, ভালোবাসা,সম্মান-শ্রদ্ধা-শ্নেহ, প্রেম,ভক্তি, বিশ্বাস ইত্যাদি। এসব শক্তিকে বলা হয়, মানবিক শক্তি। আর মন্দ কর্মের কর্মবৃত্তের বলয় গড়ে তুলে যেসব অশুভ শক্তি, সেগুলো হলো - লোভ,ক্রোধ, হিংসা, ইর্ষা,সন্কীর্ণতা, মোহ,মদ, মাৎসৌর্য ইত্যাদি। এগুলোকে বলা হয়, অমানবিক শক্তি।
মহান স্রষ্টা এই বিশ্ব প্রকৃতিকে সুনিপুন কারুকার্যের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির নিয়মানুযায়ী দেখা যায়, "প্রকৃতির সবল স্বস্থিতি দুর্বল পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিপরিতভাবে বলা যায়, "সবল পরিস্থিতি দুর্বল স্বস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে"। স্বস্থিতি হলো আস্হার সুতিকাগার। আর পরিস্হিতি হলো অনাস্থার সুতিকাগার। দুর্বল আস্থাহীনেরা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে থেকে স্বীয় কর্মবৃত্ত গড়ে তুলে। আর সবল আস্থাবান ব্যক্তিরা স্বীয় পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে স্বস্থিতি তথা আস্থার সাথে নিজ নিজ কর্মবৃত্তের মাঝে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করে থাকেন।
আমরা যখন যেখানে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন তথা বসবাস কিম্বা কর্ম করে থাকি, সেখানেই কার্যকর থাকে আমাদের স্বস্থিতি বলয়। এই শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন উপযোগী স্বস্থিতির প্রভাব যতক্ষণ পরিবেশের সাথে খাপখেয়ে থাকে, ততক্ষণই হলো আমাদের স্বাভাবিক পরিবেশ। স্বাভাবিক পরিবেশের প্রভাব ব্যক্তিকে আস্থাপূর্ণ বলয় গড়ে শান্তিময় জীবন গড়তে সহযোগিতা করে। এ আস্থার বলয় সুরক্ষিত রাখে ব্যক্তির শান্তির পরিবেশ। এই শান্তির পরিবেশেই উদ্জীবিত হয় ব্যক্তির পরম পূজনীয় বিশ্বাসের বীজ। বিশ্বাসের বীজ ক্রমেই পরম প্রতিপালকের অপার কৃপায় লালিত হয়ে স্বাধীন স্রষ্টার সাথে সংযোগ ও সম্পর্ক স্থাপনের বাহন হয়। সফলকামীরা সর্বদাই স্রষ্টার সাথে বিশ্বাসের শক্তিতে পারস্পারিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে শান্তি ও আনন্দদায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে জীবন যাপন করতে সচেষ্ট থাকেন।
আর পরিস্থিতির প্রভাবে ব্যক্তি যখন পরিবেশের সাথে খাপখেয়ে চলতে পারেনা তখন গড়ে ওঠে অস্বাভাবিক পরিবেশ। এ অস্বাভাবিক পরিবেশের প্রভাবেই ব্যক্তির অনাস্থার জীবন গড়ে ওঠে। অনাস্হার জীবনেই সঞ্চারিত হতে থাকে অশান্তির উত্তাপ। আর অশান্তির পরিবেশেই জন্ম নেই ব্যক্তির অবিশ্বাসের ভ্রুণ। এভাবেই আসফল ব্যক্তিদের অবিশ্বাসের ভ্রুণ দুর্বল হীণ চরিত্রের সাথে ক্রমেই সংযোগ সৃষ্টি করে ব্যক্তিকে হীণ কর্মবৃত্তের মাঝে আবদ্ধ রাখে। এবিষয়ে সূফী সাধক আনোয়ারুল হক যথার্তই বলেন,," প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয় কর্মবৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ থাকিবে। " তাই অসফল ব্যক্তিরা সর্বদাই স্রষ্টার সাথে অনাস্হা ও অবিশ্বাসের সম্পর্কে আবদ্ধ থেকে নিরানন্দের মাঝে হতাশা ও ঝুঁকিপূর্ণ আশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে জীবন যাপন করে থাকে। আর সফল ব্যক্তিরা লাভ করেন মহা আনন্দের নির্ভিক শান্তিময় জীবন।
সাধারণ জনতা, বিজ্ঞানী,সূফীসাধক-অলিআল্লাহগণ কিংবা আল্লাহর কর্মবৃত্ত সততই ভিন্ন ভিন্ন থাকে। সুচণায় শিক্ষানবিশের কর্ম পদ্ধতি আর শিক্ষকের কর্মপদ্ধতি এক থাকেনা। সাধারণ জনতা বিজ্ঞানের চশমা ব্যবহার করে অনেক অজানাকে জানতে পারেন, আর অদেখাকে দেখতে পান। আবার জানা যায়, অলিআল্লাহ-সূফীসাধকগণের সাধনালব্ধ সক্ষমতার চশমায় বিজ্ঞানের নানা অজানা জগতের চিত্রপট দর্শন করাও সম্ভব হয় । আর আল্লাহই হলেন সকল সৃষ্টি জগতের প্রতিপালনকারী মহান শক্তিধর স্রষ্টা।
এটা প্রমাণিত যে সৃষ্টি জগতের সকল বস্তুর বলয় গড়ে ওঠে শক্তির সাথে সংযোগ স্হাপন করে। কাজেই পার্থিব শক্তির বলয়ের সাথে সৌর শক্তির বলয়ের সংযোগ থাকে এবং সৌর শক্তির বলয়ের সাথে কস্মিক শক্তির বলয়ের যোগাযোগ থাকে। আবার বলা হয় স্রষ্টাই সকল শক্তির আধার। তাই বলা যায়, স্রষ্টার ক্ষমতাই সৃষ্টি জগতের সবকিছুই ক্ষমতাবান হয়ে স্বীয় কর্মবৃত্তে মাঝেই জীবন যাপন করে থাকে। এবিষয়ে সূফী সাধক আনোয়ারুল হক বলেন," আমি আছি তোমার মাঝে তুমি আছ বিশ্বজুড়ে, আর তুমি আছ আমার মাঝে আমি আছি বিশ্বজুড়ে।"
©somewhere in net ltd.