নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস এম শাহনূর

কবি,লেখক ও গবেষক।

এস এম শাহনূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাইলাতুল কদর ও এর ফজিলত

১১ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:১১

লাইলাতুন’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। লাইলাতুল কদর এর অর্থ মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী, অতিশয় সম্মানিত।
লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত অত্যাধিক।
এই রাতকে শ্রেষ্ঠতম রাত বলা হয়।
লাইলাতুল কদর বা কদরের রাতে আমাদের
কি কি করণীয় ? ----
কুরআন ও হাদীসের আলোকে লাইলাতুল কদর রাতে আমাদের করণীয় হচ্ছে ----
(১) মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রত্যেক অভিভাবক নিজে রাত জাগবেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগরণে উদ্বুদ্ধ করবেন।
(২) সাধ্যানুপাতে তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ নামায লম্বা কিরাআত ও লম্বা রুকু সিজদা দ্বারা দীর্ঘক্ষণ যাবৎ আদায় করবেন। সিজদায় তিন বা ততোধিক বার সিজদার তাসবীহ পাঠ করে কুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত দু’আসমূহ পাঠ করবেন। এ মর্মে বিশুদ্ধ হাদীসও রয়েছে। অনেকে আবার খুব পেরেশান থাকেন যে, কদরের নামাযের নিয়্যাত কি হবে ? কোন-কোন সূরা দিয়ে নামায পড়তে হবে ? ইশার নামাযের পর থেকে নিয়ে ফযর পর্যন্ত যে নফল নামায পড়া হয়, তাকে বলা হয় কিয়ামুল-লাইল বা তাহাজ্জুদ। অতএব কদরের রাতে ইশার পর থেকে ফযর পর্যন্ত যত নামায পড়া হবে সে গুলোকে নফলও বলা যাবে অথবা তাহাজ্জুদও বলা যাবে। লাইলাতুল কদর উপলক্ষে নামাযের জন্য বিশেষ কোন নিয়্যাত নেই বা অমুক-অমুক সূরা দিয়ে পড়তে হবে এমনও কোন বাধাধরা নিয়ম নেই। অর্থাৎ যে কোন সুরা দিয়েই পরা যাবে।
(৩) অতীতের করীরা গুনাহ বা বড় পাপের জন্য একনিষ্ঠভাবে তাওবা করবেন ও অধিকরূপে ইস্তেগফার করবেন।
(৪) কুরআন মাজীদ পাঠ করবেন।(৫) পাপ মোচনসহ পার্থিব ও পরকালীন সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণের জন্যে বিনয়ী ভাবে একাগ্রচিত্তে দু’আ কবুলের প্রত্যাশা নিয়ে দু’আ করবেন। নিম্নের দু’আ বিশেষভাবে পাঠ করবেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়ুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী”।
ক্বদর শব্দের অর্থ : মহিমান্বিত,মহাত্ম বা সম্মান, এই মহাত্ম ও সম্মানের কারণে একে লাইলাতুল ক্বদর, তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। বারটি মাসের মধ্যে ফযিলতপূর্ণ মাস হল রমযান মাস। এই মাসের একটি রাত্র হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর। যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। লাইলাতুল কদরের রাত্রের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআনুল করিমে সূরাতুল ক্বদর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়েছে। অর্থঃ (১) নিশ্চয়ই আমি একে (পবিত্র কুরআনকে) নাযিল করেছি শবে ক্বদরে। (২) শবে ক্বদর সম্বন্ধে আপনি কী জানেন? (৩) শবে ক্বদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। (৪) এই রাত্রিতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। (৫) এটা নিরাপত্তা যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
, যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করবে আল্লাহ তার ইতোপূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারী) । লাইলাতুল কদর নির্দিষ্ট কোন্ রাত তা নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে এত ভিন্নমত রয়েছে যে তা ৪০-এরও বেশি মতামত পর্যন্ত পৌঁছেছে যেমনটি ‘ফাতহ আল-বারী’ তে উল্লেখিত হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সঠিক মতটি হল তা রমযান-এর শেষ দশকের বিজোড় রাতের কোন একটি। অর্থাৎ ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ রমজানের রাতগুলোর কোন একটি।
‘‘আয়েশাহ্ -রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা- থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“লাইলাতুল কদর রমযান-এর শেষ দশকের বিজোড় রাতে অনুসন্ধান কর।” [ বুখারী, মুসলিম ]
[১] এ রাতটি রমযান মাসে। আর এ রাতের ফযীলত কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। [২] এ রাতটি রমাযানের শেষ দশকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“রমাযানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।” (বুখারী)
[৩] আর এটি রমযানের বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“তোমরা রমাযানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ কর।” (বুখারী)
[৪] এ রাত রমযানের শেষ সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন রমাযানের শেষ সাত রাতের মধ্য তা অন্বেষণ করে।”
[৫] সম্ভাবনার দিক থেকে বিভিন্ন বর্ননা অনুযায়ি- ২৭ তম রাত যেমন জানা যায় তেমনি আবার ২৫,২৯,২১,২৩ রাতের কথাও জানা যায়।কারন
– মহিমান্বিত এ রজনীটি স্থানান্তরশীল। অর্থাৎ প্রতি বৎসর একই তারিখে বা একই রজনীতে তা হয় না এবং শুধুমাত্র ২৭ তারিখেই এ রাতটি আসবে তা নির্ধারিত নয়। আল্লাহর হিকমত ও তাঁর ইচ্ছায় কোন বছর তা ২৫ তারিখে, কোন বছর ২৩ তারিখে, কোন বছর ২১ তারিখে, আবার কোন বছর ২৯ তারিখেও হয়ে থাকে।
এ রাতের পুরস্কার লাভের আশায় কে কত বেশী সক্রিয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং কত বেশী সচেষ্ট হয়, আর কে নাফরমান ও আলসে ঘুমিয়ে রাত কাটায় সম্ভবতঃ এটা পরখ করার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা এ রাতকে গোপন ও অস্পষ্ট করে রেখেছেন। সে রাতের কিছু আলামত হাদীসে বর্ণিত আছে। সেগুলো হল :
(১) রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না। (২) নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না। (৩) মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে। (৪) সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে। (৫) কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন। (৬) ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে। (৭) সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত।
(সহীহ ইবনু খুযাইমাহ- , বুখারী, মুসলিম- ) রমাযানের শেষ দশ রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইবাদতের অবস্থা ছিল নিম্নরূপ : ১. প্রথম ২০ রাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ রাত জাগরণ করতেন না। কিছু সময় ইবাদত করতেন, আর কিছু অংশ ঘুমিয়ে কাটাতেন। কিন্তু রমাযানের শেষ দশ রাতে তিনি বিছানায় একেবারেই যেতেন না। রাতের পুরো অংশটাই ইবাদত করে কাটাতেন। সে সময় তিনি কুরআন তিলাওয়াত, সলাত আদায় সদাকা প্রদান, যিকর, দু‘আ ও তাওবাহ করে কাটাতেন। আল্লাহর রহমাতের আশা ও তার গজবের ভয়ভীতি নিয়ে সম্পূর্ণ খুশুখুজু ও বিনম্রচিত্তে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। ২. হাদীসে এসেছে সে সময় তিনি শক্ত করে তার লুঙ্গি দ্বারা কোমর বেধে নিতেন। এর অর্থ হল, রাতগুলোতে তাঁর সমস্ত শ্রম শুধু ইবাদতের মধ্যেই নিমগ্ন ছিল। নিজে যেমন অনিদ্রায় কাটাতেন তাঁর স্ত্রীদেরকেও তখন জাগিয়ে দিতেন ইবাদত করার জন্য। ৩. কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন। (মুসলিম-) । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে এ রাত কাটাতেন এর পূর্ণ অনুসরণ করাই হবে আমাদের প্রধান টার্গেট। এ লক্ষ্যে আমাদের নিুবর্ণিত কাজগুলো করা আবশ্যক : (ক) নিজে রাত জেগে ইবাদত করা এবং নিজের অধীনস্ত ও অন্যান্যদেরকেও জাগিয়ে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা। (খ) লম্বা সময় নিয়ে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়া। এসব সালাতে কিরাআত ও রুকু-সিজদা লম্বা করা। (গ) সিজদার মধ্যে তাসবীহ পাঠ শেষে দু‘আ করা। কেননা সিজদাবনত অবস্থায় মানুষ তার রবের সবচেয়ে নিকটে চলে যায়। ফলে তখন দু‘আ কবুল হয়। সিজদায় যদি দোয়া করেন প্রথমে সিজদার তাসবিহ-সুবহানা রব্বিয়াল আলা’ ৩ বার বা ততধিকবার পাঠ করে সিজদাহ অবস্থাতেই মাতৃভাষায় দোয়া করতে পারেন। আর এই সময়ের দোয়া কবুল হওয়ার খুব খুব সম্ভাবনা বেশি। তবে কোন ফরজ সালাতের সিজদাহ নয় ; শুধু নফল সালাতের সিজদাহ দোয়া করতে পারেন (ঘ) বেশী বেশী তাওবা করবে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়বে। ছগীরা কবীরা গোনাহ থেকে মাফ চাইবে। বেশী করে শির্কী গোনাহ থেকে খালেছ ভাবে তাওবা করবে। কারণ ইতিপূর্বে কোন শির্ক করে থাকলে নেক আমল তো কবুল হবেই না, বরং অর্জিত অন্য ভাল আমলও বরবাদ হয়ে যাবে। ফলে হয়ে যাবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। (ঙ) কুরআন তিলাওয়াত করবে। অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন অধ্যয়নও করতে পারেন। তাসবীহ তাহলীল ও যিকির-আযকার করবেন। তবে যিকর করবেন চুপিসারে, নিরবে ও একাকী এবং কোন প্রকার জোরে আওয়ায করা ছাড়া। এভাবে যিকর করার জন্যই আল্লাহ কুরআনে বলেছেন : “সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার রবের যিকর কর মনে মনে বিনয়ের সঙ্গে ভয়ভীতি সহকারে এবং জোরে আওয়াজ না করে। এবং কখনো তোমরা আল্লাহর যিকর ও স্মরণ থেকে উদাসীন হয়োনা।” (আরাফ : ২০৫) অতএব, দলবেধে সমস্বরে জোরে জোরে উচ্চ স্বরে যিকর করা বৈধ নয়। এভাবে সম্মিলিত কোন যিকর করা কুরআনেও নিষেধ আছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা করেন নি। যিকরের শব্দগুলো হল: সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি। (চ) একাগ্রচিত্তে দু‘আ করা। বেশী বেশী ও বার বার দু‘আ করা। আর এসব দু‘আ হবে একাকী ও বিনম্র চিত্তে কবুল হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে। দু‘আ করবেন নিজের ও আপনজনদের জন্য. জীবিত ও মৃতদের জন্য, পাপমোচন ও রহমত লাভের জন্য, দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতে নিচের এ দু‘আটি বেশী বেশী করার জন্য উৎসাহিত করেছেন : “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়ুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী”। অর্থ হল–
“ হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমার আধার, আর ক্ষমা করাকে তুমি ভালবাস। কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.