![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
24-07-2015
ঈদে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না । আম্মার চিল্লাচেল্লিতে আর থাকতে পারলাম না । প্রায় এক বৎসর যাবৎ বড়িতে যাওয়া হয় না। ঈদের নামায পড়েই এয়ারর্পোট থেকে বলাকা বাসে ওঠে সোজা সায়দাবাদ । সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে নামতেই বিভিন্ন কাউন্টারের লোকজন আমাকে নিয়ে টানাহেছড়া শুরু করে। কোন এক উপায়ে তাদের উপদ্রপ থেকে বাচঁলাম । ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ সবসময়ই আমি শ্যমলী অথবা মামুন গাড়ি দিয়ে যাই । ভাবছিলাম সকালের বাসটা পাব কিন্তু ঈদের দিন সকালের কোন গাড়ি নাই । দুপুরের একটা বাস আছে তাও আবার সরারসরি সুনামগঞ্জ না, ঢাকা টু সিলেট । কি আর করা, শ্যামলী কাউন্টার থেকে ৪৭০ টাকা দিয়ে দুপুর আড়াইটার বাসের একটা টিকিট নিলাম । তখন প্রায় সকাল এগারোটা । একটানা আড়াই ঘন্টা কাউন্টারে বসে কাটালাম । দুপুর ২.৩৫ এ বাস আসল । তড়িঘড়ি করে বাসে ওঠে পরলাম । যাত্রাবাড়িতে একটু জ্যামের ফান্দে পরলেও এর পরে আর কোথাও জ্যামের সন্ধান মেলেনি । ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব প্রায় ৩৪৬ কি.মি. । এত দূরের রাস্তার অবসান ঘটিয়ে অবষেশে সন্ধা সাড়ে সাতটায় সিলেটের কদমতলী স্টেশনে বাস এসে থামে । গাড়ি থেকে নেমে সুনামগঞ্জের বাস ধরার চেষ্ঠা করছিলাম । কিন্তু ওখানকার রাস্তাঘাট সবই আমার অপরিচিত । তাই সিলেটে থাকা এক বন্ধুকে ফোন দিলাম । ও দরগাহ মাজারের পাশে থাকে । ফোনে সে আমাকে দরগাহ যেতে বলল , পরে যাবার ব্যবস্থা করে দিবে। কদমতলী থেকে একটা রিক্সা নিলাম, ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা নিল, ২০টাকা নাকি ও ব্যাটার ঈদের বকশিস । সামনে কীন ব্রীজ এখন....ওপার যেতে হবে। সিলেট রেলস্টশনে যাওয়ার পথে সকলেরই এই ব্রীজটার সাথে সাক্ষাত হয় । বৃটিশ পিরিয়ডের ব্রীজ, নামটাও এক বৃটিশের নামে । অনেকে এই ব্রীজকে কিং বীজ বলে ডাকে । ব্রীজের আশপাশটা সবসময় মানুষের ভীড় ও কোলাহলেপূর্ণ থাকে । ব্রীজে রিক্সা নিয়ে ওঠার সময় আরেক জনের সাহায্য লাগে রিক্সা ঠেলার জন্য, বিনিময়ে তাকে ৫ টাকা অথবা ২ টাকা দিতে হয় । যদিও আমি বিনা ঠেলায় ওপরে ওঠে গেলাম । ব্রীজ পেরিয়ে নামার সময় চোখে পড়ে ইয়াবড় একটা ঘড়ি । এই ঘড়িটাও বৃটিশ আমলের একটা স্থাপনা । চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার পার হয়ে প্রায় মিনিট বিশেক পর দরগাহ মাজারগেইট পৌছলাম, তখন ঘড়ির কাটায় রাত প্রায় ৮ টা । বন্ধুকে ফোন দিলাম, বলল ৫ মিনিট লেইট হবে আসতে । এই ফাকে মাজারে ঢুকে গেলাম । ২০০২ সালে আব্বা আম্মার সাথে এই মাজারে আমি প্রথম এসেছিলাম । আজ দেখি অনেক পরিবর্তন । মাজারের আশেপাশে সাধু, সন্যাসী ও পাগলদের অভাব নাই । প্রথমেই মাজার চত্বরের উত্তরদিকে গজার মাছের পুকুরে চলে যাই । আগে যখন মাজারে এসেছিলাম ৫ টাকা দিয়ে ছোট চিংড়ি মাছ কিনে গজার মাছকে খাইয়েছিলাম । একসময় এই পুকুরে ৭শ’রও বেশি গজার ছিল । ২০০৩ সালে পুকুরে বিষ প্রয়োগের ফলে অধিকাংশ মাছ মারা যায় । এখন এই পুকুরে প্রায় শতেকখানেক মাছ টিকে আছে । যাইহোক অন্ধকারে কোন মাছ চোখে পরে নি। মাজারের পূর্ব দিকে একতলা ঘরের ভেতরে রাখা বড় তিনটি ডেকচির দিকে গেলাম । অনেকদিন আগে দেখেছিলাম এখনও সেই আগের মতই আছে । পুণ্যের উদ্দেশ্যে মানুষ এই ডেকচি গুলার মধ্যে অনেক টাকা পয়সা দান করে । মাজারের পশ্চিম দিকে রয়েছে অসংখ্য আদি কবরস্থান । রাতের বেলায় অন্ধকারে ভাল করে কোন কিছু দেখতে পারি নি । হঠাৎ বন্ধুর ফোন, সে অপেক্ষা করছে গেইটে । সেই প্রাইমারী কালের বন্ধু । অনেকদিন পর দেখা , আমাকে দেখা মাত্রই জড়িয়ে ধরলো । রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে এখন সুনামগঞ্জে যাওয়ার পালা । কিন্তু বন্ধু আমার কিছুতেই যেতে দিচ্ছে না । বন্ধু ডেন্টাল টেকনেশিয়ান । ও নিজে ডেন্টাল ল্যাব দিয়েছে । চলে গেলাম ওর ল্যাবে । তার ল্যাব সম্পর্কে কিছু জানলাম ও পুরো ল্যাবটা ঘুরে দেখলাম । ল্যাবের একটা রুমে বেডিং এর ব্যবস্থা আছে , ওখানেই রাতটা কাটাবো । গল্পগুজব করতে করতে রাত প্রায় ৪ টা বেজে গেল, তখন ঘুমিয়ে পরলাম । ঘুম থেকে ওঠে দেখি দুপুর সাড়ে বারোটা । কিন্তু তখনও মনে হয় না সকাল হয়েছে, চারদিকে অন্ধকার রাতের মত । আমি তো অবাক । পরে জানালা খুলে দেখলাম সুর্যের আলো খুব সহজেই রুমের ভেতরে ঢুকে না । দিনরাত সারাক্ষণ লাইট জালিয়ে রাখতে হয়......!!!! গোসল করে ফ্রেশ হলাম । সকালের নাস্তা দুপুরে করে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে কুমাড়গাও বাস্ট্যান্ট এর দিকে রওনা দিলাম । প্রায় ১০ মিনিটের অটো জার্নির পর বাস্ট্যান্টে পৌছলাম । তখন বেলা আড়াইটা । ওখান থেকে ৮০ টাকা দিয়ে একটা লোকাল বাসের টিকেট নিয়ে বাসে ওঠে পরলাম । বাসের সিটগুলা ভরাট হওয়ার পর বাস ছেড়ে দিল । ব্যাস এখন সোজা সুনামগঞ্জ । সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের দুরত্ব প্রায় ৬৫ কিমি । লোকাল বাস একটু পর পর থামে আর যাত্রী ওঠানামা করে । চোখে পরে কিছু নতুন আর কিছু পুরনো । ছাতক, গোবিন্দগঞ্জ, জাওয়া বাজার, পাগলা, দিরাই পার হয়ে অবশেষে বিকাল ৫টায় সুনামগঞ্জ নতুন বাসট্যান্ট পোছলাম । বাস থেকে নেমে ১০ টাকা ভাড়ায় একটা অটোতে ওঠলাম । অটোতে করে সুনামগঞ্জ পুরাতন বাসট্যান্ট পার হয়ে দোজা শপিং সেন্টারের সামনে এবং সাহারা ফার্মেসীর পাশে নামলাম । মাটিতে পা রাখার পর কিছুক্ষণ চারপারশটা ভাল করে দেখে নিলাম । দেখে যেন মনে হল শহরটা হাজার বছরের চেনা । এটা আমার শহর সুনামগঞ্জ । শহরটা অনেকটাই বদলে গেছে । দোজা শপিং সেন্টারের কাছ থেকে হেটে হেটে চলে গেলাম সোজা ট্রাফিক পয়েন্ট । খুব কাছেই টাউন হল মার্কেট । স্কুলে যাওয়ার সময় এই মার্কেটের ভিতর দিয়ে প্রায়ই যাওয়া আসা করতাম । এই মার্কেটে মোবাইল এক্সেসরিজ আর গান ডাউনলোডের রমরমা ব্যবসা । তাছাড়া এখানেই রয়েছে সুনামগঞ্জ বার্তার একটি প্রেস । মার্কেটের অনেকেই পরিচিত ছিল আমার । প্রথমে ঢুকতেই চোখে পরে বিআরটিসি র্স্পোটস, যেখান থেকে আমি একসময় ব্ল্যাংক সিডি কিনতাম । পাশেই হাসান মিডিয়া, ভিডিও এডিটিং ও প্রোডাকশনের দোকান । দেখা হল ভিডিও এডিটর সুজন ভাই ও ক্যামেরাম্যান তমাল ভাইয়ের সাথে । সুজন ভাইয়ের কাছ থেকে একসময় আমি ভিডিও এডিটিংয়ের সফটওয়্যার নিয়েছিলাম । টাউনহল মার্কেটের অলিগলি ঘুরে...বের হয়ে পূর্ব বাজারের দিকে..হাটা শুরু করলাম । হাতের বামদিকে সারি সারি ফলের দোকান । শহরের সর্ববৃহৎ ফলের মার্কেট এটি । আম,কাঠাল,আনারস,আপেল,কমলা, আঙ্গুর, প্রায় সব ধরণের ফলফলাদি পাওয়া যায় এখানে । এর বিপরীত পাশে দেখা যায় নাহার স্টেশনারী, মাছুম ট্রেডার্স, আলামিন ফার্মেসী, পূর্ব বাজার জামে মসজিদ, তার পরেই নূর ফার্মেসী, স্কুলে আসার সময় আমার বন্ধু রাব্বী নূর ফার্মেসী থেকে প্রায়ই তার বাবার জন্য ওষধ কিনত, তখন আমি তার সাথে থাকতাম । তারপর ঢুকে গেলাম বাজারের মধ্যে । এই শহরে তিনটি বাজার আছে । পশ্চিম বাজার, মধ্যবাজার, আর পূর্ব বাজার । পূর্ব বাজার সুনামগঞ্জের একটি সর্ববৃহৎ বাজার । দৈনন্দিন জীবনের প্রয়েজনীয় সবকিছুই পাওয়া যায় এখানে । রাস্তার দুপাশেই সারি সারি বিভিন্ন রকমের রকমারী দোকানের সমাহার । বাজারের এক গলির ভিতরে রয়েছে শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিওর মন্দির । পূজার সময় এই মন্দিরে আসতাম । বাজারের ভেতরের রাস্তা ধরে হেটে হেটে জেলখানার দিকে গেলাম । জেলখানার সবকিছুই তালা মারা, মনে হচ্ছে কেউ এটাকে আজীবনের জন্য সিলগালা করে দিয়েছে । বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় আটকে পরা খালাত ভাইকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল । কিন্তু সেই ইচ্ছা মুহূর্তেই মাটি হল । শুনেছি জেলখানাটা নাকি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে । জেল রোড ধরে হেটে হেটে সুনামগঞ্জ থানা ও পাবলিক লাইব্রেরী হয়ে সোজা পৌরবীপনীতে ঢুকে গেলাম । অনেকটা খালি মাঠের মত খোলা জায়গা, দুপাশে শুধু লাইব্রেরী আর লাইব্রেরী, আর সামনে মেইন রোড । পৌরবীপনীতে আমার অনেক স্মৃতি । একসময় অনেক সময় কাটাতাম এখানে । প্রথমেই চোখে পড়ে সেই বন্ধু লাইব্রেরী । হাইস্কুলে পড়াকালীন বেশীর ভাগ বই খাতা আমি এই লাইব্রেরী থেকেই কিনতাম । দুই নাম্বার গলিতে ঢুকলাম । আইডিয়াল লাইব্রেরী , পিনাক আর্ট, পরেই শফিক আর্ট । শফিক আর্ট সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় একটি আর্টের দোকান । শফিক আর্টের ঠিক উপরে জামিল কম্পিউটারের পাশে মায়ের দোয়া কম্পিউটার প্রিন্টার্স নামে একসময় আমাদের একটা দোকান ছিল । কিন্তু এখন আর নেই । তারপর ভেতরের ৩ নাম্বার গলিতে ঢুকলাম । ঢুকতেই চোখের সামনে পড়ল সেই ভিডিও গেইমটা .... ১ টাকার কয়েন দিয়ে একটার পর একটা খেলেই যেতাম । বেশিরভাগ আমি মোস্তফা গেইমটাই খেলতাম । অনেক সময় পার করে দিতাম ওখানে । সামনের দিকে মেইন রোডের পাশেই জালালাবাদ বেকারী এন্ড কনফেকশনারী । টিফিনের সময় স্কুল ভাগা দিয়ে বন্ধুরা মিলে এই বেকারীতে আসতাম, আর সিঙ্গারা, সমছা খেতাম । পৌরপিনীতে ঘুড়াঘুড়ির সময় পারাপার নামক কম্পিউটারের দোকানে হঠাৎ সেজুল ভাইয়ের সাথে দেখা । কখনও ভাবতেও পারিনি সেজুল ভাইয়ের সাথে এভাবে দেখো হয়ে যাবে । সেজুল হোসেন খুবই সিম্পল একটা নাম । কিন্তু এই সিম্পল নামটার আগে ও পেছনে অনেকগুলো টাইটেল লুকিয়ে আছে । সেজুল ভাই একাধারে বাংলাদেশের একজন তরুন কবি, গীতিকার, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নাট্যকার ও ফিল্ম নির্মাতা । বর্তমানে তিনি এটিএন নিউজের রিসার্চার হিসিবে কাজ করছেন । পারাপারে কবির সাথে অনেকক্ষণ আলাপচারিতা ও আড্ডা হল । তিনি খুব সাধারণ মানুষের মত, একজন মানুষের সাথে সহজেই মিশে যেতে পারেন । সেজুল ভাইকে আমি প্রথম দেখেছিলাম ভাদেরটেক মনিপুরীঘাটে, ২০১০ সালের দিকে ।
লেখক---------সোহানুর রহমান সোহান
©somewhere in net ltd.