![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুহাম্মদ সোহেল চৌধুরী, সত্যকে আকড়ে ধরে, জীবনকে রঙ্গিন করে, আজীবন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান।
দূর থেকে দেখলে সবুজের মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র লাল লাল বৃত্ত দেখে ঠাঁহর করা দুরূহ জিনিষগুলো আসলে কি? দূরত্ব কমার সাথে সাথে একসময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব। আগাছা আর লতা-পাতা গুল্মে ভরা বিলের পানিতে শত সহস্র লাল শাপলা। এ যেন শাপলার রাজ্য। লতা-পাতা গুল্মে ভরা বিলের পানিতে শত সহশ্র লাল শাপলা হার মানিয়েছে সূর্যের আভাকেও। বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্তে উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম। গ্রামের নামেই বিলের নাম “সাতলা বিল”। তবে শাপলার রাজত্বের কারণে সেটি এখন শাপলা বিল নামেই বেশি পরিচিত। প্রকৃতির বুকে আঁকা এ যেন এক নকশি কাঁথা। চোখজুড়ানো এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের শাপলার বিলে। উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম ও পাশের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে এ বিল।
স্থানীয়দের কাছে এই বিল পরিচিতি পেয়েছে, শাপলার বিল হিসেবে। বিলের মোট আয়তন জানা নেই স্থানীয়দের কারোরই। কারো দাবি কয়েকশ হেক্টর, কারো দাবি কয়েক হাজার বিঘা নিয়ে এ বিল। স্থানীয়দের কাছে ‘শাপলার বিল’ নামে পরিচিত এ বিলে ঠিক কতো আগে থেকে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করে সে তথ্যও পাওয়া না গেলেও স্থানীয় বয়স্কদের কাছ থেকে জানা যায় জন্মের পর থেকেই, এভাবে শাপলা ফুটতে দেখেছেন তারা। এ বিলে তিন ধরনের শাপলা জন্মে। লাল, সাদা ও বেগুনি রঙয়ের। বিলে লাল শাপলার আধিক্য থাকলেও সাদা শাপলার কদর বেশি। সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে এবং লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধী কাজে ব্যবহৃত হয়।
শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-শবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুন অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুন বেশি। তিনি আরো বলেন, শাপলা চুলকানী ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। তাছাড়া ডায়াবেটিস, বুক জ্বালা, লিভার, ইউরিনারী সমস্যার সমাধানসহ নারীদের মাসিক নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি ১’শ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, এ্যাশ ৮.৭ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলো, ক্যালোরি- প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ০.৫২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.৩২, ড্রাই মেটার ৮.৪, ক্রুড আমিষ ১৬.৮, ক্রুড ফ্যাট ২.৮ ক্রুড ফাইবার ৬২.৩, নাইট্রোজেন ৩৫.৪, সোডিয়াম ১.১৯, পটাশিয়াম ২.২৩ ভাগ। ঐতিহাসিক কাল থেকেই শাপলার ফল (ঢ্যাপ) দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ ভাজা যায়। যেটি গ্রামগঞ্জে ঢ্যাপের খৈ বলে পরিচিত। মাটির নিচের মূল অংশকে (রাউজোম) আঞ্চলিক ভাষায় শালুক বলে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিল-ঝিল-হাওড়-বাঁওড়-পুকুরের পানি যখন কমে যায় তখন শালুক তুলে খাওয়া হত, তা খেতেও বেশ সু-স্বাদু। তবে আমাশয়ের জন্য এটি খুবই উপকারী। লাল শাপলার কদর থাকলেও এটি রান্না করতে অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হয়। লাল শাপলা সরাসরি রান্না করার পরেও কিছু কালচে রং থাকে। তাই রান্নার আগে এটিকে সিদ্ধ করে নিতে হয়। স্থানীয় কয়েক কৃষক জানান, কিছুদিন ধরে কেউ লাল শাপলা তুলছে না। তাই লাল শাপলা এতো বেড়ে গেছে। ফলে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে এখানকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখছেন
বরিশালের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিলের কথা ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য স্থানে, বিশেষ করে শহরে ইট পাথরে বন্দি জীবন কাটানো মানুষ প্রশান্তির আশায় ছুটে আসে এ বিলে। মনোমুগ্ধকর এ বিল দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন। ফলে দিন-দিন এ এলাকার এক দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে ‘শাপলার বিল’ শীত মৌসুমে পর্যটকের ভিড় বাড়ে। এ বিলের শাপলা দিয়ে অনেকেই সাবলম্বী হয়ে উঠছেন। বছরের একটা বড় সময় তারা অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছে এ এলাকার কয়েকশ পরিবার। এদের অনেকেই বিল থেকে শাপলা তুলে তা বিক্রি করছেন স্থানীয় বাজারে। এ ছাড়াও এ বিলের শাপলা বরিশাল, পিরোজপুর, ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানের বাজারে সরবারহ করা হয়। ১৫ থেকে ২০টি শাপলা একত্রে আঁটি বেঁধে ৩ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি হয়। কেউ কেউ দিনভর শাপলা তুলে দিন প্রতি ২ থেকে ৩শ টাকা আয় করেন। আগে এ বিলে প্রচুর শাপলা জন্মালেও এখন আগের মতো অবস্থা নেই। দিন-দিন পলি পড়ে বিল ভরাট হতে থাকায় পানি কমে যাচ্ছে, ফলে আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে শাপলার উৎপাদন। এছাড়া বিলের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণে শাপলার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তবে বিলের মাছ চাষের স্থানে শাপলা জন্মালেও সে শাপলা তুলে আনতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। তাছাড়া খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয়গুলো শুকিয়ে রাখার কারনে শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে। তাই সাতলার ঐতিহ্যবাহী শাপলার বিলকে টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে অনুকূল পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:০০
সোহেল চৌধুরী বলেছেন: সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। নতুন কিছু ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। সময় পেলে সাতলার বিলে ঘুরে আসবেন।
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:০৮
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: খুব ইচ্ছে আছে সাতলা বিলে যাওয়ার
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:০০
সোহেল চৌধুরী বলেছেন: সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। নতুন কিছু ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। সময় পেলে সাতলার বিলে ঘুরে আসবেন।
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৩০
জুন বলেছেন: এই দিগন্ত বিস্তৃত লাল শাপলার দল আমাকেও মুগ্ধ করেছিল টান্গুয়ার হাওর যেতে তাহিলপুরে ।
আপনার লেখায় একটা নতুন জায়গার নাম জানা হলো ।
+
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১৪
সোহেল চৌধুরী বলেছেন: এক বার ঘুরে আসেন তাহলে জানতে পারবেন লাল শাপলার রাজ্য কোথায়?
৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৪০
সুমন কর বলেছেন: আরো কিছু ছবি দিতে পারতেন।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯
সোহেল চৌধুরী বলেছেন: সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। নতুন কিছু ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। সময় পেলে সাতলার বিলে ঘুরে আসবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৪৪
আলগা কপাল বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট। আরও কিছু ছবি থাকলে আকর্ষণীয় হতো।