নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের কন্ঠস্বর

শুধু আওয়াজ নয়, চিৎকার চাই....

সময়ের কন্ঠস্বর

বর্তমান সময়ের কন্ঠস্বর

সময়ের কন্ঠস্বর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসিফ মহি বা বাস্তবের অন্য কারো সহিত এই গল্পের কোন সম্পর্ক নাই...

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:০৭

আসিফ মহি বা বাস্তবের অন্য কারো সহিত এই গল্পের কোন সম্পর্ক নাই...



সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক যে ছিল আজব দেশ। সে দেশে ছিল শুধুই ছাগলের পাল। অন্য কোন প্রানী সে দেশে টিকিতে পারিত না। হয় ছাগলের দল তাদের এলাকা ছাড়া করিতো, নয়তো মারিয়াই ফেলিতো, অথবা অন্য প্রানীটারে ছাগলে রুপান্তর করিয়া তাহাদিগের সাথে থাকিবার অনুমতি দিত। এভাবেই চলিতেছিল সব। কূপমন্ডুকেরা যেমন কুয়াটিকেই ভাবিত সমুদ্র, তেমনি এই ছাগলের পালও ভাবিত, তাহাদের এই ছাগলল্যান্ডই বুঝি দুনিয়ার একমাত্র সভ্যস্থান, বাকিরা সবাই অসভ্য জংলী, ধর্ম-কর্ম মানে না, ছাগলমার্কা আইন কানুন মানে না, তাহারা আবার সভ্য হয় নাকি! ছাগলে কিনা খায় এ প্রবাদটা প্রচলিত থাকিলেও এই ছাগলরাজ্যের ছাগলেরা শুধু ঘাসই খাইত। ঘাস ছাড়া অন্য কিছু তারা কখনো খাইয়া দেখে নাই, খাওয়ার অনুমতিও তাই ছিল না। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সমৃদ্ধ ঘাস খাইয়া তাদের মধ্যে বুদ্ধি-শুদ্ধিও ম্যালা বিকশিত হইয়াছিল(!)



যাহাই হোক, হঠাৎ এই ছাগলরাজ্যে এক বিপরীতধর্মী প্রানীর আবির্ভাব ঘটিল। দেখিতে শুনিতে ছাগলের মতোই ছিল, তাই বাকি ছাগলেরা তারে হটাইবে কি হটাইবে না এই নিয়া দন্দে লিপ্ত ছিল, তাই সে টিকিয়া গেল। এই প্রানীটা কিন্তু ঘাস খাইত না। গোপনে গোপনে সে বিজ্ঞান সম্মত আহারে অভ্যস্ত ছিল। এইটুকুতে থাকিলে চলিত, কিন্তু তাহার মতিভ্রম ঘটিল, সে ভাবিল, একলাই খাইব, উহাদিগকে দিবনা! তাই সে তাহার সহিত যাহাদের খাতির ছিল তাহাদেরও বিজ্ঞানসম্মত আহার নিয়া জ্ঞান দান করিতে লাগিল। উহারা যে কদাচ বিজ্ঞান সম্মত আহার লইয়া ভাবে নাই, তাহা নহে, কিন্তু এই প্রাণীটার মত যুক্তি দিয়া বিবেচনা করে নাই পুর্বে।



তাই উহার অনেক ভক্ত জুটিয়া গেল। ইহারা সবাই বিজ্ঞানসম্মত খানায় অভ্যস্ত হইতে লাগিল। কেহবা বুঝিয়া, কেহবা হুজুগে মাতিয়া। যাহারা বুঝিয়া খাইতেছিল তারা ঠিকই ছিল, যাহারা হুজুগে মাতিয়াছিল তাহারা ঘটাইল অঘটন। তাহারা নতুন প্রানীটিকে বিভিন্নভাবে আবদার করিল, এই ছাগলল্যান্ডের সমস্ত ছাগলকেই বিজ্ঞানসম্মত খানায় অভ্যস্ত করিতে হইবে। অবুঝের দল বুঝিল না, সারা জীবন ঘাস খাইয়া যাহারা অমিত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হইয়াছে, তাহাদিগকে ঘাসের অপকারিতা বুঝায় এমন প্রাণী দুনিয়াতে পয়দা হইতে বিবর্তনের হিসাবে আরো কয়েকশো বছর লাগিবে! যাহাই হউক, নতুন প্রাণীটি তাহাদের অনুরোধে ঢেঁকি গিলিল। সে উন্মুক্ত প্রান্তরে দাঁড়াইয়া ঘোষণা দিল, ভাইসব, তোমরা ঘাস খাইয়ো না। বরঞ্চ বিজ্ঞান সম্মত খানা খাও, উহা অধিক গ্রহনযোগ্য ও যুক্তিসঙ্গত। সুযোগ পাইয়া ঘাস সম্পর্কে দু’একখানা বদনাম করিতেও ছাড়িল না। ঘাস বিষয়ক কিছু কৌতুক বাজারে প্রচলিত ছিল, সেইসব কমবেশী সবাই কিছু না কিছু জানিত, কিন্তু গোপনে। আজ সে ভরা মজলিসের ভেতর সেসব কৌতুক প্রকাশ্যে আবৃত্তি করিয়া শুনাইল।



প্রান্তরে হুলুস্থুল পড়িয়া গেল। এতদিন যারা ঘাস খাইয়া, ঘাস বেঁচিয়া জীবনধারন করিতেছিল, তাহারা প্রতিবাদে মুখর হইয়া উঠিল। তাহাদিগের অন্তরাত্মা কাঁপিয়া উঠিল, সবাই বিজ্ঞান সম্মত খানায় অভ্যস্ত হইলে ঘাস খাইবে কে, তাহারা ব্যাবসা করিবে কাহার সাথে, সংসার চলিবে কি করিয়া! জন্মাবধি তাহারা ঘাস দেখিয়া, ঘাস খাইয়া বড় হইয়াছে, বড় হইয়া ঘাস বেঁচিতেছে, এ ছাড়া অন্য কিছু তো তাহারা ভাবিয়া দেখে নাই! অতএব, যেকোন উপায়ে এই প্রাণীটিকে দমাইতে হইবে। প্রথমে যুক্তি দিয়া চেষ্টা করিল। যুক্তিতে বিজ্ঞান সম্মত খানার সহিত ঘাস পারিয়া উঠিল না, উঠার কথাও না। তাহারা তখন ব্যক্তিগত আক্রমণে মন দিল। যেহেতু প্রানীটি দেখিতে ছাগলসদৃশ, আবার ছাগলও নহে, তাহাকে কি বলিয়া গালি দিলে শান্তি হইবে তাহারা ভাবিতে পারিতেছিল না। হঠাৎ একজন ইউরেকা বলিয়া লাফাইয়া উঠিল! সবাই আগ্রহ ভরিয়া তার দিকে দৃষ্টিপাত করিতে সে শশব্যস্ত হইয়া গম্ভীর স্বরে বলিল, ইহা দেখিতে ছাগলের ন্যায়, কিন্তু ছাগল নহে। অতএব ইহা একটি খাসী! ছাগজনতা জয়ধ্বনি পূর্বক প্রান্তরে সেই প্রানীটির উদ্দেশ্যে চেচাইয়া বলিল, ওহে, তুমি ত একটি খাসী বটে!

প্রানীটি থতমত খাইল! কথা হইতেছিল ঘাস নিয়া, এর মধ্যে খাসী আসিল কেন! এদিকে প্রানীটির ভক্তদের ভেতর সত্যিকার অর্থেই কিছু খাসী ছিল! তাহাদের অন্তরে কাঁপন ধরিল, এখন যদি তাহাদের সত্যিকার পরিচয় ফাঁস হইয়া যায়! তাই তাহারা সুযোগ বুঝিয়া দল পাল্টাইয়া বিপক্ষে অবস্থান নিল, এবং ছাগজনতা অপেক্ষা অধিক ডেসিবেলে স্বরযন্ত্র কাঁপাইয়া খাসী খাসী রব তুলিল। বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যে অভ্যস্ত বাকিরা এমতাবস্থায় নিরবতাই শ্রেয় মনে করিয়া নিশ্চুপ রহিল।



যথারীতি এ খবর ছাগরাজ্যের শাসনকর্তার কর্ণে পৌছিল। ছাগরাজ্যের নির্বাচনকে সামনে রাখিয়া কর্তা তখন আবার ঘাসখোরদের খুশী রাখায় সচেষ্ট, কেননা এই ঘাসখোরেরাই তাহাকে ভোট দিয়া নির্বাচিত করে, নির্বাচনে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানের অনেকাংশও আসে এই ঘাসব্যবসায়ীদের নিকট হইতে। তাই তিনি অনতিবিলম্বে সবাইকে তলব করিলেন।



ঘাসব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে একজোট হইয়া ঘাস রক্ষা কমিটি গঠন করিয়াছে, সেই কমিটির সাথে একমত হইয়াছে কিছু ঘাসান্ধ ঘাসখোর। তাহারা সকলে মিলিয়া গেল ফরিয়াদ জানাইতে। সেখানে তারা ঘাসরক্ষায় একত্রিশ দফা দাবি পেশ করিল। যাহার সারমর্ম এই যে, প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘাসের নামে বদনাম করিয়া এই প্রানী তাহাদিগের ঘাসানুভুতিতে তেব্র আঘাত হানিয়াছে। যাহা কিনা ঘাসংবিধানের পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, সে ঘাস নিয়া বহু অশ্রাব্য কৌতুকও রচনা করিয়াছে। আপামর ঘাসখোর জনতা ইহা কিছুতেই মানিবে না, শাসন কর্তা যদি এর প্রতিকার না করেন তবে সকলে মিলিয়া আন্দোলন করিয়া তাহাকে পদচ্যুত করিবে।



কর্তা দেখিলেন অবস্থা বেগতিক। তিনি বলিলেন, তাইত, যেখানে আমরা সকল প্রকার কার্যপ্রণালী আরম্ভ করি ঘাস খাইয়া, ঘাসংবিধানের শুরুতেও ঘাসের ছবি অলঙ্কৃত রহিয়াছে, সেখানে সে কোন সাহসে ঘাসের বদনাম করে! উপস্থিত সবাইকে আমি জোর গলায় বলতে চাই, আমিও একজন নিষ্ঠাবান ঘাসখোর, সকাল বিকাল আমি নিয়মিত ঘাস খাই। অতএব এ অন্যায়ের শাস্তি হইবেই। সমবেত ছাগজনতা সমস্বরে কহিল, ঘাসাবমাননাকারীর ফাঁসী চাই। জনতায় আত্মগোপনকারী খাসীরা, যারা কিনা এককালে হুজুগে মাতিয়া সেই বিজ্ঞানসম্মত খানায় অভ্যস্ত ছিল, তারা চিল্লাইয়া কহিল, সেই খাসীটার ফাঁসী চাই। আমরা জানি সে কুথায়! কর্তা হুকুম জারি করিলেন, উহাকে ধরিয়া আনিয়া খোঁয়াড়ে ভরা হউক। জনতা কর্তার নামে জয়ধ্বনি করিয়া প্রস্থান করিল। কর্তাও পরম প্রশান্তিতে গোঁফে তা দিতে দিতে আসন্ন নির্বাচনের স্বপ্নে ডুব মারিলেন।



যাইহোক, সেই থেকে অদ্যবধি সেই বিপরীত চিন্তার অধিকারী প্রানীটি, ছাগলদিগের ভেতর থাকিয়া, ছাগলসদৃশ হইয়াও যে কিনা চিন্তাশক্তির প্রয়োগ ঘটাইয়া নিজেকে আলাদা প্রমান করিতে পারিয়াছিল, খোঁয়াড়ে বন্দী রহিয়াছে। যখনই কেহ তাহার মুক্তির জন্য কোন পদক্ষেপ নিতে উদগ্রীব হয়, অমনি তার এককালের ভক্ত, ছুপাখাসীবৃন্দ তাহাদের গুপ্ত পরিচয় প্রকাশ হইয়া পড়ার ভয়ে শোরগোল তোলে, না না মুক্তি চাই না, খাসীর মুক্তি চাই না। লম্পটেরা জামিন পাক, খুনের আসামী মুক্তি পাক, কিন্তু খাসী একটি অভিশাপ। উহার জামিন চাই না। যাহারা উহার জামিন দাবি করে উহারাও খাসী! এইভাবে, নানা প্রকারে তাহারা তার মুক্তি আন্দোলন ভন্ডুল করার চেষ্টা করিয়া বেড়ায়।



শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছাগরাজ্যে ঘাসের আবাদ বৃদ্ধি পাইয়াছে। ছাগজনতা আগের তুলনায় অধিক হারে ঘাস খাইতেছে সম্ভবত ইদানীং, এবং তাদের শাণিত বুদ্ধিমত্তাকে আরো শাণিত করিতেছে। ঘাস ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ফুলিয়া ফাঁপিয়া উঠিয়াছে। ঘাসখোর জনতাও আগের তুলনায় শান্তিতে আছে বলিয়া শুনিতে পাই। কেহই এখন আর তাহাদিগকে ঘাসের অপকারিতা নিয়া জ্ঞান প্রদান করে না।



বিজ্ঞান অবশেষে হার মানিয়াছে ঘাসের কাছে......

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.