নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ড. আনিসুর রহমান ফারুক, জন্ম বাংলাদেশে। একজন আজন্ম একাডেমিক। আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিষয়ে দুটি পিএইচডি অর্জন করে এখন আছি ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ভাসাতে, এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে। একাডেমিক গবেষণার পাশাপাশি এখন ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা আর লেখালেখির চেষ্টা করছি।

সংকীর্ণ হৃদয়

সংকীর্ণ হৃদয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

নবির সুন্নাত

০১ লা অক্টোবর, ২০২২ ভোর ৪:০২

যদি হিংসা করা পাপ হয়, ও নবি, আমি তো সেই পাপে পাপিষ্ঠ। আমি সেই প্রতিটি চোখকে হিংসা করি যার আপনাকে এক পলক দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো। আমি তো সেই বাতাসকে হিংসা করি, যা আপনার কন্ঠকে একদা বহন করেছিলো, যা আপনার ওই পবিত্র গালকে স্পর্শ করেছিলো। আমি সেই মাটিকে হিংসা করি, যার ওপর দিয়ে আপনার পা যুগল একদা হেঁটে গিয়েছিলো। এবং আমি স্বীকার করি, আমার অযাচিত পাপ, আমার সলজ্জ ভুলভ্রান্তি, আমার কদর্য মানবীয় দুর্বলতা সত্ত্বেও, আমি স্বীকার করি, আমি আপনাকে ভালোবাসি!
আমার এই স্বীকারোক্তি আমার না বলা কথার মতোই মূল্যহীন। আপনাকে তো কতোজনই ভালবেসেছেন, আমার থেকে কতো কতো মহান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, তাই আমার নীরবতা বা স্বীকারোক্তিতে এই পৃথিবীর কী যায় আসে?

আমাকে অনুমতি দিন, ও আমার ভালোবাসার প্রিয় মানুষ, এই কথা বলতে যে, আমি বই পড়ে আপনাকে জানিনি, চিনিনি। মসজিদে মসজিদে, ওয়াজ মাহফিলে আপনাকে নিয়ে যে চর্চা হয়, আপনার যে গুণকীর্তন হয়, সেখান থেকেও আপনাকে আমি চিনিনি। আপনার জীবন নিয়ে রচিত হাজার হাজার বই এর ভিড়েও আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি সেই মুহূর্তে আপনাকে চিনেছি, ঠিক যখন আমি আপনার প্রেমে পড়েছিলাম। জানেন, সেই মুহূর্তটি কখন ছিলো?

যেদিন আমি জানলাম, আপনি বলেছেন, তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো তাকে বলো যে, তুমি তাকে ভালোবাসো। এমন কথাও আপনি বলতে পারেন ১৪০০ বছর আগে, আমার কোনো ধারণাই ছিলো না। সেদিন থেকেই আমি আপনার প্রেমে পড়েছি। আপনি বুঝেছিলেন, ভালবাসার কী শক্তি! আর সেই শক্তি সবার মাঝে আপনি সঞ্চারিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজও, আমরা কতোজন, যারা আপনাকে ভালবাসি বলে দাবি করি, এই কথাটি আমরা আমাদের ভালবাসার মানুষকে বলেছি, ভালোবাসি!

আমি তো সেদিন থেকে আপনাকে চিনেছি, যেদিন জেনেছি, আপনি এতো বিনয়ী, আপনি এতোই মুখচোরা লাজুক স্বভাবের যে, আপনার বাসায় খানাদানার আয়োজনে লোকজন খাওয়ার পরও বহুক্ষণ বসে থাকে, কিন্তু আপনি, আল্লাহর নবি, তাদেরকে মুখ ফুটে বা আকার ইংগিতেও প্রস্থান করার কথা বলতে পারেন না। তখন আল্লাহ স্বয়ং আপনাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন: হে মু’মিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাদ্য প্রস্তুত হওয়ার আগেই আহারের জন্য নাবী-গৃহে প্রবেশ করনা। তবে তোমাদেরকে আহবান করলে তোমরা প্রবেশ কর এবং আহার শেষে তোমরা চলে যেও; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়না। কারণ তোমাদের এই আচরণ নাবীকে পীড়া দেয়, সে তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করে। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না। (আল আহযাব: ৫৩)

আমি তো সেদিন আপনাকে চিনেছি যেদিন আপনি বলেছেন, নিশ্চই নিজের সন্তানকে উত্তম ব্যবহার শেখানো, গরিবকে শস্য দান করার চেয়েও উত্তম। কিন্তু আপনাকে ভালোবাসার দাবিদার আমরা কি আপনার এই উপদেশ, এই মূল্যবোধ, এই উত্তম ব্যবহার আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দিয়েছি, দেওয়ার ন্যূনতম চেষ্টাটুকুও করেছি? আপনি আরও বলেছেন, অর্ধেকটা খেজুর দান করেও তোমরা নিজেদের জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারো। যদি তা-ও না থাকে, তবে সুন্দর করে কথা বলো।

আমি অবাক হয়েছি, বিস্ময়বোধ করেছি, যখন আপনি বলেছেন, অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা সবচেয়ে বড় জিহাদ। আমাদের নেত্রীস্থানীয় মানুষ, আমাদের ইসলামি নেতা, আমাদের শায়খরা, আমাদের ইমামরা, যারা আপনাকে ভালবাসার দাবিদার, তারা কী পেরেছে শাসকের সামনে সত্য কথা বলতে? সরকারের অন্যায় অত্যাচার অধর্মের ন্যূনতম প্রতিবাদ করতে?

আমি তো সেদিন আপনাকে চিনেছি, যেদিন আপনি বলেছেন, যে জ্ঞান অর্জনের খোঁজে বের হয়, সে আল্লাহর পথে বের হয়। কিন্তু আপনাকে ভালবাসার দাবিদার আমরা আপামর মুসলিমরা কি সেই জ্ঞান অর্জনের খোঁজে কোনোদিন বের হয়েছি? আজকে আপনার অনুসারীরাই এই পৃথিবীতে সবচেয়ে কম জ্ঞানের অন্বেষণ করে। আর তাই ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব সব আজ অন্যদের দখলে। আমরা আপনাকে ভালোবাসার দাবিদার।

ও নবি, আজ আপনাকে ভালবাসার দাবিদাররা আপনাকে অনুকরণ করতে চায়। আপনি কীভাবে ভাত খেতেন, কোথায় বসে, কীভাবে খেতেন, কবে কবে নখ কাটতেন, কী ধরনের পোশাক পড়তেন, কতো লম্বা দাড়ি রাখতেন, তা হুবহু অনুকরণ করতে চায়, কারণ তারা যে আপনাকে ভালোবাসার দাবিদার! আপনি নাকি কোন পথ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি গাছের ডাল ছিল তাই মাথা নিচু করে গিয়েছিলেন। পরে, আপনার মৃত্যুর পর, আপনার সাহাবিরা যখন ওই পথ ধরে যাচ্ছিলেন, তখন ওই গাছটি ছিলো না, তবুও সাহাবিরা মাথা নিচু হয়ে ওই রাস্তা পার হলেন। এই হলো ভালোবাসা। যখন আপনি নেই, তখনো আপনার স্মরণ আছে, তখনো আপনার চলনবলন সারা দুনিয়াব্যাপী কপি করা হচ্ছে। আপনার এইসব বাহ্যিক সৌন্দর্যকে আমরা জীবনের অংশ করে নিয়েছি। কারণ আমরা আপনাকে ভালবাসি। আপনার বাইরের সৌন্দর্যকে ভালবাসি। আপনার সুন্নাহ বলতে আমরা এটাকেই বুঝেছি। আপনার ভেতরের সৌন্দর্য কেউ দেখলোই না!

ও নবি, আপনার সৌন্দর্য তো আপনার ভেতরের সুন্দর মানুষটা। আপনার সুন্নাহ তো সেই সৌন্দর্য! এই সৌন্দর্য কি কপি করা যায়, অনুকরণ করা যায়? সৌন্দর্য তো কেবল অনুভব করা যায়, আর তাকে ভালোবাসা যায়। পৃথিবীর কোনো বই, কোনো অভিধান, কোনো ম্যানুয়াল কি মানুষকে সেই সৌন্দর্য শিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:১৪

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: স্বাগতম সামু ব্লগে।

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:২৭

সংকীর্ণ হৃদয় বলেছেন: ধন্যবাদ, পবিত্র।

৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:৩২

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: কমেন্ট পড়ে উত্তর দেওয়াটা ঠিক হচ্ছেনা। লক্ষ্য করবেন, আমাদের কমেন্টের উপরে একটি সবুজ বাটন থাকবে ঐ বাটন ক্লিক করলে নুতন একটি স্পেস চলে আসবে। তার মধ্যে প্রতিমন্তব্য লিখতে হবে। তখন তার রঙ হবে হাল্কা হলুদ। পাশাপাশি আঙুল চিহ্নিত স্থানে স্পর্শ করলে কমেন্ট লাইক করা হবে। ক্রসে হাত দিলে মন্তব্য ডিলিট হবে।

এই পোস্টটিনতুনদের সাহায্য করবে । আশাকরি পড়লে উপকৃত হবেন

০২ রা অক্টোবর, ২০২২ রাত ৯:৪৯

সংকীর্ণ হৃদয় বলেছেন: এবার!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.