নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন হলো এক কাপ গরম চা আর একটি জ্বলন্ত সিগারেটের মতো। গরম চা এক সময় জুড়িয়ে যাবে, সিগারেটের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।

পয়গম্বর

The woods are lovely, dark and deep, But I have promises to keep, And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep.---Robert Frost

পয়গম্বর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাসজীবন এবং আমার মা\'য়ের মমতা

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:০৯


বাংলাদেশে থাকতে আমার লাইফ-স্টাইল ছিল উরাধুরা। 'উরাধুরা' শব্দটা একটি চলিত বাংলা যেটিতে কিছুটা খামখেয়ালীপনা এবং মেজাজি ভাব রয়েছে। ইংরেজিতে যেটাকে বলে 'রাফ এ্যাণ্ড টাফ'। আমার জীবন-যাত্রা ওরকমটাই ছিল বলেই সঠিক শব্দচয়ন করার চেষ্টা করলাম। ঠিক কী রকম ছিল তার কিছু নমুনা দেওয়া যাক।

ছুটির দিন বেলা দু'টোয় ঘুম থেকে আধো জাগরণে বিছানায় হেলান দিয়ে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে হয়তো কাজের মেয়ে অণু'র তৈরি করা চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি। মা' এসে জিজ্ঞেস করলেন, "কী ব্যাপার! লাঞ্চ করবিনে?" সেই লাঞ্চ করতে করতে বিকেল পাঁচটা। এর মধ্যে অণু, মানে আমাদের কাজের মেয়ে এসে বার দশেক রিকোয়েস্ট করে গেল "ভাইয়া, ডিম ভাজি কিন্তু শুকায় যাইতাছে। তাড়াতাড়ি আসেন।" ফাইনালি মা এসে যখন হাতের খবরের কাগজটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে কড়া ধমক দিয়ে বিছানা থেকে তুললো, তখন আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে আমি নবাব সাহেব টেবিলে গিয়ে বসলাম।

টেবিলে বসেও সেই কি আমার নখরা। যদি সত্যিই আপনারা দেখতেন! চিৎকার করে বললাম, "খিচুড়ি এরকম ল্যাদা ল্যাদা হয়েছে কেন? আর আমি ডিম এ্যাত কড়া ভাজি খাই? এই অণু, আবার ডিম ভাজি কর্! আমি 'লাইটলি ডান' খাই কতবার বলবো? আর আমার গরুর কলিজা কই? এইসব ফালতু তরকারী দিয়ে কে খাবে?"

আমার চিৎকারের শব্দে মা আর কাজের মেয়ে পড়িমরি করে গরুর মাংস, মুরগির মাংস আরও যত রসনা বিলাসের খাদ্যদ্রব্য আছে, আমার সামনে এনে হাজির করতো। হেলেদুলে দুপুরের খাওয়া শেষ করে এঁটো প্লেটটা ওভাবেই টেবিলের ওপরে ফেলে রেখে কষ্ট করে আবার গিয়ে কোনমতে বিছানায় পড়ে টিভিটা অন করে ভারত-পাকিস্থান ক্রিকেট ম্যাচ দেখা শুরু করতাম।

আর আমার কাজের দিনগুলোতে ফিরতাম অনেক রাত করে। কখনও কখনও রাত বারোটা-একটা বেজে যেত। ঘরে ঢুকে দেখি সবাই বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। কিন্তু ঠিকই আমার জন্যে আমার মা'মণি রাতের খাবারটা টেবিলের ওপরে জালি দিয়ে ঢেকে রেখেছে। ক্ষুধার্থ পেটে কোনমতে হাত-মুখ ধুয়ে খাবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তাম। গোগ্রাসে গিলতাম মায়ের হাতের রান্না। এরপর এঁটো প্লেটগুলো ওভাবেই ফেলে রেখে সোজা বিছানায়। রোদেলা অপেক্ষা করছে ফোনে। ওর সাথে রাতে ফোনে কথা বলে তারপর ঘুমোতে হবে।

এই-ই ছিল আমার প্রায় প্রতিদিনের রুটিন।

মায়ের কথা কেন মনে পড়লো আজ? মনে পড়ার কারণ হলো কিছুক্ষণ আগে রান্না করছিলাম। পিঁয়াজ ছিলতে গিয়ে চোখের পানি-নাকের পানি এক হয়ে যাচ্ছিল।

এখন যদিও আমি পাকা রাঁধুণী। প্রায় সব পদের রান্নাই চটজলদি রাঁধতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়না। কিন্তু যখন প্রথম এসেছিলাম এই ঠাণ্ডার দেশে, এই টরন্টো শহরে, প্রথম দিনই পিঁয়াজ কাটতে গিয়ে আমার বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুলটা প্রায় দু'ভাগ করে ফেলেছিলাম। আর একদিন আলু কাটতে গিয়ে নিজের হাত ক্ষতবিক্ষত করে ফেললাম। নিজের অজান্তেই চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়েছিল সেই দিনগুলোতে। এরপর যে খাবার আমি রান্না করতাম, সেগুলোকে খাদ্যবস্তুর পর্যায়ে কোনভাবেই ফেলা যেতোনা। আর খাবার শেষে নিজের প্লেটসহ হাড়ি-পাতিল কে ধুবে? এখানে কী মা আছেন? নাকি অণু আছে? কাজেই ডিশ-ক্লিনিং থেকে শুরু করে সব ধরণের ক্লিনিং কাজ শেষ করে তবেই আমার ছুটি।

অবশ্য দেশ ছাড়ার আগে আমি কিছুদিন মায়ের স্টুডেন্ট হয়ে গিয়েছিলাম। জীবনে কোনদিন যেই আমি হেঁসেলে ঢুঁ পর্যন্ত মারিনি, সেই আমাকেই মা রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে শেখালো কিভাবে কড়াইতে তেল ঢালার আগে চুলার আঁচ কমিয়ে নিতে হয়। কিভাবে মাংস, মাছ আর সব্জির বিভিন্ন পদ রান্না করতে হয়। ঢাকা শহরের নীলক্ষেত থেকে সিদ্দিকা কবীরের রান্নার বইটা পর্যন্ত মা-ই কিনে দিয়েছিলেন যত্ন করে। কিন্তু যতই সিদ্দিকা কবীরের বই কিনে দেখে দেখে রান্না করিনা কেন, আমার মায়ের হাতের সেই অমৃতের স্বাদ কী বই দেখে পাওয়া যাবে?

এখনও যতই নিজে নিজে রান্না করিনা কেন, প্রায়ই রান্নার ফাঁকে মা'কে দেশে কল দিয়ে বসি। 'মাটন বিরিয়ানী' রান্নায় আমি সেই রকম পাকা। ওটার রেসিপিটা আমার ঠোটস্থ। তারপরেও ফোনে মা'কে জিজ্ঞেস করি, "মা, বলতো মাটন বিরিয়ানীতে কী কী মসলা দিব? মা হাসেন। বলেন, তোকে একই রেসিপি আর কতবার বলবো, বলতো? তোর মেমরি বলে কিছু নেই নাকি?" উত্তরে আমি বলি, "যতই রান্না করিনা কেন, তোমার মতো তো আর হয়না কোনদিন।" আমার কথা শুনে মা খিলখিল করে হাসেন আর হাসেন। এরপর খুব আগ্রহভরে আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রেসিপি বলেন। আমি হয়তো মন দিয়ে রেসিপি শুনিনা। কিন্তু আটহাজার মাইল দূর থেকে আমার জন্মদাত্রী মায়ের দরদভরা কণ্ঠের আওয়াজ শুনে নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে ওঠে।

ফেসবুকে আমি

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



শেষ লাইনটা ব্যতিত বাকীটুকু সুবিধা হয়নি

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৩

পয়গম্বর বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৪৭

শায়মা বলেছেন: সেই যে আমার মা
বিশ্ব ভূবন মাঝে তাহার নেই যে তূলনা....


মায়ের মত কারো রান্না হয় নাকি! হয় না .....


যাইহোক তো রোদেলা কই? তাকেও সাথে করে আনলেই তো এই ঝামেলা চুকে যেত ভাইয়া।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৪

পয়গম্বর বলেছেন: মায়ের রান্নার মতো রান্না আসলেই হয়না।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০৬

শুভ_ঢাকা বলেছেন: আমি আপনার লেখা সব সময়ই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। লেখার জন্য প্লাস (+++) রইলো।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৪

পয়গম্বর বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৪

জেন রসি বলেছেন: মায়েরা এমনই হয়। প্রবাস জীবনে মানুষ আপনজনদের খুব মিস করে। সে অনুভুতিটা আপনার লেখায় প্রতিফলিত হলো।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৪

পয়গম্বর বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

৫| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: বিদেশ গেলে পরিবারের সদস্যদের যেভাবে মিস করা হয় দেশে থাকলে তা বোঝা যায় না। বোঝা সম্ভবও নয়। তবুও জীবনের নিয়মে এসব মেনে নিতে হয়...

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৫

পয়গম্বর বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

৬| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনি তো আপনি , পেশাদার রাঁধুনী র রান্নাতে ও মা ‘য়ের স্বাদ নেই ...
বেশ লিখেছেন আমাদের দুই জীবনের ভিন্ন সুখের গল্প ।


লেখায় ভালোলাগা ।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৯

পয়গম্বর বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

৭| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:০৭

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আপনার কষ্ট, অভিমান, ভালোবাসা কোনটা বুঝতেই সমস্যা হয়নি। বিদেশ বিভূইয়ে আমি নিজেও আপনার মতো অভিজ্ঞ। মায়ের জন্য ভালোবাসা আর লিখার জন্য ধন্যবাদ জানবেন।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:২৫

পয়গম্বর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.