![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সোলাইমান ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড পাকনামি সব কর্মকান্ড করে অার এজন্য বাসার সবাই ওকে পন্ডিত বলে ডাকে।
মাত্র একবছর বয়স এরপরও তার এসব অদ্ভুত সব কাজ-কারবার যেন বড় মানুষের মতন।
একদিন অামি অামার বিছানায় ঘুমিয়ে অাছি, সকালে সে হঠাৎ কোথা থেকে এসে হাজির, সে আমার গায়ের কাঁথা ধরে টানাটানি করতে শুরু করলো, কিন্তু কেন বুঝলাম নাহ, পরে দেখলাম সে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে কোলে উঠতে চায়। একটু পর কোল থেকে নেমে বিছানার উপরে উঠে সিলিং ফ্যানের ছুইচ বন্ধ করে আবার অন করে আবার লাইট বন্ধ করে অন করে তারপর সিলিং ফ্যানের দিকে তাকায় যে ঐটা বন্ধ হয়েছে কিনা, কে শিখালো এগুলা ওকে? মাঝে মাঝে বাসার মটরের ছুইচও অন করে বসে থাকে। আমিতো দেখে অবাক, বাসার সবাইকে ডেকে দেখালাম যে ও এমনটা করলো, আসলে কেউ একজন এমনটা করেছে সেটা ও দেখেছে আর দ্রুত মাথায় সেইভ করেছে।
আমি যখন সকালে বেসিনের সামনে কফ ফেলি ও সেটা দেখে ঠিক আমার মত কেরে খকখক করে আবার বেসিন পর্যন্ত উঠতে পারে না বলে ডাইনিং এর চেয়ার টা ধাক্কা দিয়ে টানতে টানতে বেসিনের কাছে নিয়ে আসে তারপর কফ ফালায়, আসলে কিন্তু কোন কফ নাই, হাহাহাহ । তারপর আমার ব্রাশ করা দেখে এখন সেও ব্রাশ করবে, আমার ব্রাশ নিয়ে টানাটানি শুরু করে তারপর সোলাইমান এর আম্মু এসে ওর ব্রাশ দেয় তারপর সেও ব্রাশ করে।
সকালে আমি যখন পত্রিকা পড়ি সোলাইমানও এসে আমার মত করে পত্রিকা পড়ে কিন্তু সে শব্দ করে পত্রিকা পড়ে, কি পড়ছে কেউ জানেনা এমনকি কি পড়ছে সে নিজেও জানেনা কিন্তু বিজ্ঞদের মত সে যে পত্রিকা পড়ছে সেটা সবাইকে বুঝিয়ে দেয়।আবার বড়দের মত করে পত্রিকার পাতাও সে উলটাতে জানে আস্তে আস্তে করে, পাতা যেন না ছিড়ে যায় সেটাও খেয়াল করে, ওরে বাপরে বাপ।
তারপর টিভির রিমট হাতে নিবে, সেই যন্ত্রটার লাল ছুইচ কোথায় সেটা সে খুজে দেখবে তারপর টিপ দিয়ে টিভি আন করার চেষ্টা করবে কয়বার তারপর সেটা অন করবে, কিন্তু সে তার প্রিয় চ্যানেল দূরন্ত ঘুরিয়ে দিতে পারেনা, কিন্তু চমৎকার ভাবে দেখালো সবাইকে যে সেও টিভি অপারেট করতে জানে, কে শেখালো এগুলা? বড়দের কাছ থেকেই সে শিখেছে, কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যপার হচ্ছে সে সব কিছু পুংখানুপুংখ ভাবে মনে রাখতে পারে প্রতিটা বিষয়।
অনেক ছোটবেলা থেকেই সোলাইমান টিসু খেয়ে ফেলতো, কারন ওর মুখ থেকে লালা পড়তো বেশী তাই ওর বাবা-মা মুখ মুছে দিতো বলে ও ভাবতো এটা মনে হয় খাবার জিনিস, তাই সে সাদা কোন জিনিস দেখলেই ভাবতো টিসু আর সেটা খেয়ে ফেলতো।
বাচ্চারা এমনিতেই যা পায় সেটাই মুখে দিয়ে খেয়ে ফেলে, আমি অনেক দিন সোলাইমান এর মুখ থেকে টিসু বের করেছিলাম।
সোলাইমান যখন এক বছরের কাছাকাছি ও তখন বারান্দায় গিয়ে ফুলের টব অন্যান্য টব থেকে মাটি খেতো চুপিচুপি, আমরা বাসার সবাই বেশ আবাক হতাম যে এটাতো বড়রা কেউ করতো না কাউকে দেখেওনি, তবে ও কেন এটা করে? আসলে বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে এমনটাই স্বভাব, প্রতিটি বাচ্চারা'ই এমনটা করে, আমরাও ছোটবেলাতে মাটি খেয়ে বড় হয়েছি।
আমি যখন আমার পিসির সামনে বসে কাজ করি ও তখন এসে হাজির হয়, এসে আমার মতো কি-বোর্ডের বোতামলো চাপতে থাকে, তাও আবার এক আঙ্গুল দিয়ে একসাথে অনেক গুলা বোতাম, কি লেখা উঠলো তাতে তার দরকার নাহ, বাট সে যে কম্পিউটারও চালাতে জানে সেটাও বুঝাতে বাকি রাখে না। আমিও ওকে কম্পিউটার কি-বোর্ডের বোতাম চাপতে দেই। তখন বাসার সবাই এসে দেখে পন্ডিতমহাশয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী এখন মহা ব্যস্ত। কম্পিউটার টেবিলে উঠে মাউস ধরে নাড়াচারা করবে, আবার রাউটারের লাইট ধরবে আঙ্গুল দিয়ে,তার মনে প্রশ্ন কি এই জিনিসটা? আবার রাউটারের এ্যাটেনা ধরে নাড়াচারা করবে পন্ডিতরে মত।
তারপর সে আমার হেডফোনটা হাতে নেবে এবং খুব পারদর্শীর মত করে মাথায় দিয়ে তার কানে লাগাবে, শুনবে কোন শব্দ আসে কিনা? আমিও কোন কিছু প্লে করে দিই, শব্দ না আসলে আবার হেডফোনটার প্লাগ হাতে নেবে তারপর কম্পিউটার পিসির লাল-সবুজ এর এ্যাডাপটার-এ ঐ প্লাগ ইনপুট দিতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না, তখন আমি ঠিকমত লাগিয়ে দেই। আমি তাে দেখে অবাক, সে আমার এতো কিছু খেয়াল করলো কখন। এক পন্ডিতমহাশয় আমাদের বাসায় জন্মগ্রহন করেছে, আলহামদুলিল্লাহ।
বাসার সবার মাঝেমাঝে সোলাইমান কে চেষ্টাম্যান বলে ডাকে, সে সব কিছু চেষ্ট করে দেখবে, কিছু পারুক বা না পারুক সে একবার হলেও চেষ্টা করবে, আগে চেয়ারে উঠতে পারতো না, আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করতো, এক সাইডে দাড়িয়ে অন্য প্রান্তে দুই হাত দিয়ে টান দেয় তারপর পেটটা চেয়ারের উপর ভর করে আস্তে ধাক্কা দেয় আবার হাত দিয়ে টান দিয়ে চেয়ারে সহঝে উঠে পরে, বাহ দারুন। ছোটবেলায় মনেহয় আমরাও এমনটা করতাম, আমি মনে মনে তাই ভাবি।
চেয়ারে ওঠারপর সে আমার রিডিং টেবিলে উঠবে তারপর আমার পেনপট থেকে কলম নিবে তাও আবার লাল রং এর কলম তার চাই'ই চাই, কলমের ক্যাপ খুলবে তারপর আবার সেই ক্যাপ লাগানোর চেষ্টা করবে, যখন দেখে সে ক্যাপ লাগাতে পারেনা তখন পত্রিকা, সাদা কাগজ বা সামনে যা পাবে তাতেই হিবিজিবি হিবিজিবি দাগাতে থাকবে।
বাসায় কেউ এলে দৗেড় দিয়ে ড্রয়িং রুমের দরজার কাছে দাড়াবে, মনে হয় যেন সে নিজেই দরজা খুলবে বড়দের মত, যে কেউ আসুক না কেন সে তার কোলে উঠবে, তাকে নিয়ে আবার বাহিরে যেতে বলে আঙ্গুল দেখিয়ে, আবার কলিংবেল এর ছুইচ টিপ দিয়ে শব্দ করবে। আমিও তাকে কোলে উঠিয়ে সুজোগ করে দেই কলিংবেল বাজানোর জন্য। মাঝে মাঝে চেষ্ট করে সিড়ির উপর দিকে ঊঠতে, আমি বলি দেখি সে কি করে পারে নাকি ঊঠতে, কয়েক কদম দিয়ে সে উঠেও যায়, সে আসলে শুধু উপরের সিড়িতে ঊঠতে পারে বাট নিচের দিকে নামতে পারে নাহ। সে আসলে চেয়ারে ওঠার টেকনিকটা অবলম্বন কর। সে যে আসলে'ই অনেক টেলেন্ট তা বলার অপেক্ষ রাখে নাহ।
আমাদের বাসার সবাইকে একদিন সোলাইমান অবাক করে দিয়ে কথা বলে, সে কোন শব্দ উচ্চারণ করতে পারে নাহ, সে বাবা, মা, আম্মু, আব্বু কোন ডাক ই সে ডাকতে পারে নাহ কিন্তু সে ঐদিন "আল্লাহ" বল্লে সাবার সবাই সত্যি'ই অনেক আশ্চর্য হয়, আর এটাই সোলাইমান এর জীবনের প্রথম শব্দ, মুখের প্রথম ডাক, সুবহানাআল্লাহ।
প্রিয় পাঠক সোলাইমান এর জন্য সবাই দোয়া করবেন আশা করি, সোলাইমান আমার ছোট ভাইয়ার ছেলে।
ইনশাআল্লাহ ও যেন বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হয়, ও বড় হয়ে যেন কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার হতে পারে অথবা পাইলট হতে পারে অথবা কোন বিজ্ঞানী হতে পারে যেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোন কাজে লাগে।
©somewhere in net ltd.