নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিত্যাক্ত বাড়ি

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:২৬

পরিত্যাক্ত বাড়ি
পর্ব-১
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
আজ স্কুলে গিয়ে দেখলাম ম্যাডাম স্কুলের সব ছাত্র ছাত্রীদের সাথে কি যেন আলোচনা করছেন। আমি একটু দেরি করে যাওয়াতে ম্যাডাম বললেন, কি ব্যপার শ্রাবণ? তোমার আজ স্কুলে আসতে দেরি হলো কেন! আমি একটু মুচকি হেসে ম্যাডামকে বললাম, আসার সময়
রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। উঠে দেখি আমার শার্টে ময়লা হয়ে গেছে। শার্ট টা পাল্টাতে গিয়েই দেরি হয়ে গেলো। সরি ম্যাডাম।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই সবাই হোহো করে হেসে উঠলো। এরা সবাই এক একটা হারামি। যেকোনো সিরিয়াস ব্যপারেও এরা হাসে। আবার মজার বিষয় হলে তো কোনো কথায় নেই। এইতো সেদিন ম্যাডাম আমাকে বলেছিলেন, শ্রাবণ তুমি বড় হয়ে কি হতে চও। উত্তরে আমি শুধু বলেছিলাম, আমি বড় হয়ে গোয়েন্দা হতে চাই। তখন সবার কি হাসি! মনে হচ্ছিলো সবাইকে ধরে পিডাই খানিক সময়। কিন্তু আমি স্কুলের সবার থেকে ছোট বলে কারো সাথে কোন কিছুতেই পেরে উঠিনা। তবে একটা দিক আমার সবচেয়ে ভালো লাগে। স্কুলের সবার থেকে ম্যাডাম আমাকেই সবচেয়ে বেশি আদর করেন। এতে সবাই অবশ্য হিংসে করে আমাকে।
.
ম্যাডাম আমাকে বললেন, শ্রাবণ তুমি এদিকে এসে বসো। আমি ম্যাডামের পাশে গিয়ে বসলাম। ম্যাডাম আমাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলেন, আগামী কোরবানীর ঈদের পরই আমরা সবাই শিক্ষা সফরে যাবো। আমাদের কাজ হবে শিক্ষা সফরে গিয়ে প্রকৃতির রুপ রস সম্বন্ধে জানা এবং সেখানকার মানুষদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌছে দেওয়া। আমরা সবাই তখন ম্যাডামের কথায় সম্মতি পোষণ করলাম। আমার মধ্যে তখন যে কি আনন্দ কাজ করছিলো, সেটা আমি বোঝাতে পারবোনা। আমার আবার দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে খুব ভালো লাগে।
আমাদের সম্মতি পেয়ে ম্যাডাম বললেন, তোমরা তোমাদের বাবা মাকে এ ব্যাপারে জানিয়ে রাখবে। যাতে করে তখন কোন অসুবিধা না হয়। আর সব খরচাদি আমি নিজেই বহন করবো।
ম্যাডামের কথাতে আমরা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম। খানিক সময় পর আমি ম্যাডামকে বললাম, ম্যাডাম আমরা কোথায় ঘুরতে যাবো? মানে আমাদের সফরটা কোথায় হবে?
তখন তিনি বললেন, পরে তোমাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
.
আমরা গ্রামের একটি ছোট খাটো স্কুলে পড়ি। আর ম্যাডামই একমাত্র আমাদের পাঠদান করেন। বর্তমান সময়ের মতো তখন আমাদের পড়ালেখা করার মতো তেমন কোন ভালো স্থান ছিলোনা। আবার একাধিক স্যার, ম্যাডামও ছিলোনা। আমাদের গ্রামের শাহ আলম সাহেব একটা ফাঁকা জায়গা দেখে সেখানে আমাদের পড়ালেখা করার জন্য একটা স্কুল তৈরি করে দেন। স্কুল, বই খাতা, বোর্ড, যত প্রকার খরচ আছে তিনিই সব বহন করেন। লোকটা বেশ ভালো। আমার দেখা মতে উনিই একজন ব্যক্তি, যিনি কিনা তার টাকা পয়সার অহংকার দেখান না কাউকে। একেবারে সাদামাটা চলাফেরা করেন তিনি। গ্রামের সবাই তাকে খুব ভালোবাসে।
আমি ম্যাডামকে একবার বলতে চেয়েছিলাম, উনাকে কি সাথে নিবেন? কিন্তু বলতে পারিনি। তবে উনি আমাদের সাথে গেলে খুব একটা মন্দ হবেনা। বরং বেশ ভালোই হবে।
.
স্কুল ছুটি দিলে আমি বাড়িতে এসে মা বাবাকে বললাম বেড়াতে যাওয়ার কথা। মা প্রথমে না না করলেও পরে বাবার কথাতে রাজি হলো। বাবা, মাকে বলে, ওর মতো ছোট বয়সে আমি পুরা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছি। আর ও ঘুরতে যাবেনা, এটা কখনো হয়? বাবার কথা শুনে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছেটা আমার আরো প্রবল হলো। কিন্তু মা বললো, ও তো এখনো অনেক ছোট। মাত্র ১৩ বছর বয়স। এতো ছোটকালে ওর কোথাও বেড়াতে যেতে হবেনা।
আমার বাবা সবসময়ই আমার পক্ষে কথা বলে। তিনি মাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন যে, তারা স্কুল থেকে যাচ্ছে আর তাদের সাথে তাদের ম্যাডামও থাকবে।
কোরবানীর ঈদ আসতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। সেদিন ম্যাডাম আমাদের সবাইকে জানিয়ে দিলেন বেড়াতে যাওয়ার স্থানটির কথা। দক্ষিণ অঞ্চলের কোন এক জমিদার বাড়ি আমাদের গন্তব্য। জমিদার বাড়ির কথা শুনতেই আমার মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। আমি কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাডাম সেখানে কি এখনো কোনো জমিদার থাকে কিনা। কিন্তু তিনি যা বললেন তাতে আমার খুশির পরিমাণটা আরো বেড়ে গেলো। আজ থেকে ৫০ বছর আগে থেকেই নাকি বাড়িটা খালি পড়ে আছে। সচরাচর কেউ তেমন বাড়িটিকে ব্যবহার করেনা। বাড়ির সবকিছু এখন প্রায় একটা গুহার মতো জঙ্গলের ন্যায় হয়ে আছে। তিনি আরো বললেন, আমাদের সফরটা হবে সেই বাড়িটিকে ঘিরে নয় কিন্তু। আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকবে সেখানকার অশিক্ষিত, নিরক্ষর মানুষের মাঝে পড়ালেখার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। শুনেছি সেখানে নাকি প্রায় ৯৯% মানুষই নিরক্ষর। আর বাকি যে ১% আছে তারা থেকেও নেই। কারণ তারা সবাই শহরে থাকে। আর হ্যাঁ শুনো তোমরা, আমি বলেছিলাম না যে আমিই তোমাদের সব খরচ বহন করবো! ম্যাডামের কথাতে আমরা সমস্বরে উত্তর দিলাম, হ্যাঁ বলেছিলেন।
এবার তিনি বললেন, শিক্ষা সফরের যাবতীয় সব খরচ সভাপতি নিজেই বহন করবেন। আমি ম্যাডামকে বললাম, আচ্ছা ম্যাডাম আংকেলও কি আমাদের সাথে যাবেন? উত্তরে তিনি না সূচক উত্তর দিলেন। তবে উনি নাকি টাকা পয়সা, খাবার দাবার এসবের সবকিছুর খরচ দিবেন। এক কথায় নিজে উপস্থিত না হয়ে যতটুকু সাহায্য করা যায় আরকি!
কিছুক্ষণ নিরবতা চললো ক্লাসরুমে। ছোটখাটো ছিমছাম স্কুলের ছোট্ট একটা রুমের নিরবতা মানে পুরো স্কুলই নিরব হয়ে যাওয়া। ম্যাডাম আমাকে এবার একটা দায়িত্ব বুঝে দিলেন। যে যে বেড়াতে যাবে, তাদের সবার নাম লিস্ট করতে বললেন আমাকে। আমরা প্রায় ২০ জন ছিলাম। তার মধ্যে থেকে আশিক নাকি বেড়াতে যেতে পারবেনা। তার নাকি কিছু সমস্যা আছে। আমি তার সমস্যার কারণ জানতে চাইলে সে বলে, তার বাবা মা নাকি দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে দেবেনা। সে নাকি তাদের বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। যদি কিছু হয়ে যায় তার! এই ভয়ে তার বাবা মা কোথায়ও যেতে দিবেন না। ওর কথা শুনে আমি ওর মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললাম, ঐ বেডা আমাকে তোর কি মনে হয়? আমি কি আমার বাবা মায়ের একটিমাত্র সন্তান না? শুধু তোর বাবা মাই তোকে ভালোবাসে, আমার বাবা মা আমাকে বাসেন না?
পরে আশিকের বাবা মাকে রাজি করাতে তাদের বাড়িতে যাই আমরা। আশিকের মনটা বেশ কালো হয়ে ছিলো। ম্যাডাম তার বাবা মাকে কিছু সময় বোঝানোর পর তারা রাজি হলেন আশিককে যেতে দিতে। আর তখনই আশিকের কালো কালো মুখখানা আলোই পরিণত হলো। তবে তার বাবা মা ম্যাডামকে একটা কঠিন শর্ত জুড়ে দিলেন। তারা বললেন, আশিকের কিছু হয়ে গেলে নাকি সবকিছুর জন্য ম্যাডাম দায়ী থাকবেন। সবকিছুর ভার ম্যাডামকেই নিতে হবে। ম্যাডাম কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে গেলেন তাদের কথা শুনে। হায়রে, বলে কি!
.
বেড়াতে যাওয়ার আগের দিন আমি সবাইকে লিড দিতে শুরু করলাম। এই ধরুন, অমক জিনিস নিতে কেউ ভুলিস না। যাওয়ার দিন এটা সাথে নিস, ওটা সাথে নিস। এরকম নানা কথা বলতে লাগলাম সবাইকে উদ্দেশ্য করে। আমার এমন পাকাপোক্ত লিড দেওয়া দেখে ম্যাডাম হাসি থামাতে পারলেন না। আমার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললেন, তুই জীবনে অনেক বড় কিছু হতে পারবি। আর হ্যাঁ, স্কুলের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি চঞ্চল ছিলাম। একে তো সবার ছোট, আবার সবার থেকে একটু বেশিই চঞ্চল। সবাই আমার কোন কথাকে ফেলতে পারতোনা। কারণ আমার কথা ফেলার কারণে অনেক বিপদে পড়ার কাহিনি আছে। তাই তারা সবাই আমাকে মেনে চলে।
আমি, জুই, আশিক, ফাহিম, নাজমুল, সোমা, ফারিয়া, অনুপম, এই কয়জন আমারা একে অপরের প্রাণ যেন। এরা সবাই আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝেনা। তারা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছে, ঘুরতে গেলে আমি যেখানে যেখানে যাবো। তারাও নাকি আমার পিছে পিছে সেখানে সেখানে যাবে। কারণ তারা সবাই মিলে একত্রে বের হলে যা দেখতে পারবেনা, তা আমি একাই দেখতে পারবো।
.
পরদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম ভাঙে আমার হঠাৎই একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙে যায়। ঘুমের মধ্যে দেখলাম, আমরা বেড়াতে গিয়েছি বিশ জন। ম্যাডামসহ একুশজন। কিন্তু একসময় আমি লক্ষ করলাম কে যেন আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু কে নেই? এটা ভাবতেই আমার মনে হলো, আরে আশিক কই গেলো! সে তো সবসময় আমার সাথেই থাকে। কিন্তু সে গেলো কোথায়? হাজার খুঁজাখুঁজি করলাম আমি। শুধু আমি না সবাই।
ম্যাডাম তো বেশ হন্তদন্ত হয়ে খুঁজছেন আশিককে। আমি লক্ষ করে দেখলাম ম্যাডামের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। আমি তখন ম্যাডামের কাছে গিয়ে বললাম, ম্যাডাম আপনি চিন্তা করবেন না। আশিককে খুজে বের করার দায়িত্বটা আমার উপর ছেড়ে দেন। তবুও তিনি যেন স্বস্তি পাচ্ছেন না। ম্যাডামের চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম আমি। ভয়ের পরিমাণটা তার বেড়েই চলেছে। তিনি কোন কুল পাচ্ছেন না। আশিক কোথায় গেলো, কিভাবে গেলো, এসবে তিনি বেশ চিন্তিত। কিন্তু তার থেকে বেশি চিন্তিত আশিকের বাবা মাকে নিয়ে। কি জবাব দিবেন তিনি তার বাবা মাকে? ম্যাডাম চিন্তা টেনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর আমাকে বলতে থাকেন, শ্রাবণ তুই কিছু একটা কর, কিছু একটা কর।
আর ঠিক তখনই আমার ঘুমটা ভেঙে যায়। কি করবো আমি? যাই হোক সময় মতো ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিলো। না হলে যে আমরা কি প্যারায় পড়তাম! তা শুধু আমিই উপলব্ধি করতে পারছি। আমি খেয়াল করে দেখলাম আমার পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। আশিকের উধাও হয়ে যাওয়াতে শুধু ম্যাডামের না, আমারও চিন্ত হচ্ছিলো। সে যে আমার একটা ভালো বন্ধু।
আজকে সকাল হলেই আমরা খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে পড়বো। কিন্তু ভোর রাতে অমন স্বপ্নটা দেখে আমার আর বেড়াতে যেতে মন চাইছেনা। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ম্যাডামকে বলবো স্বপ্নের ঘটনাটা। এবার না গিয়ে আগামীবার না হয় বেড়াতে যাবো।
সকালবেলা মাকে বললাম খাবার দিতে। আমি তখনও বেশ চিন্তার মধ্যে আছি। মাদুরে বসে খাবারে হাত বুলাচ্ছি শুধু। ভোরবেলার স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই আমার ক্ষিদে হারিয়ে যাচ্ছে। যেমন করই হোক বেড়াতে যাওয়াটা বাতিল করতে হবে। একবার ভাবছি মাকে বলি বিষয়টা। কিন্তু ভয়ে বলতে পারলাম না। একে তো মা আমাকে বেড়াতে যেতে দেওয়ার বিপক্ষে। আবার যদি এই ঘটনাটা বলি তাহলে আর জীবনেও আমাকে বেড়াতে যেতে দিবেনা। যা বলার ম্যাডামকেই বলতে হবে। সকাল দশটায় আমাদের যাত্রা শুরু হবে। সবাই হয়তো স্কুলে গিয়ে হাজির হয়ে গেছে। শুধু আমিই যাইনি। অবশ্য দ্রুত না যাওয়ারও একটা কারণ আছে। প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র গুছাতে গুছাতে একটু দেরি হয়ে যায় আমার। আমি ২০ মিনিট দেরিতে স্কুলে পৌছাই। স্কুলে যেতেই ম্যাডাম আমাকে বললেন, কি ব্যপার শ্রাবণ? তোমাদের সবাইকে সাড়ে নয়টায় এখানে উপস্থিত থাকতে বলেছিলাম। আর তুমি কিনা সাড়ে দশটায় আসলে! আমি ম্যাডামের কথাতে কোন কান দিচ্ছিনা। শুধু উনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে অাছি। আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ম্যাডাম আমাকে বললেন, কি হয়েছে তোমার, এতো ঘামছো কেন তুমি? আর ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি কোন সংকোচ না করে ম্যাডামকে বললাম, ম্যাডাম একটা কথা ছিলো।
- বলো।
- একটু এদিকে আসেন।
আমি ম্যাডামকে একটু দূরে ডেকে ভোর রাতের সেই স্বপ্নের ঘটনাটা বললাম। আমার কথা শুনে ম্যাডাম তখন হাসতে হাসতে শেষ। আমি উনাকে এও বললাম যে, আমার দেখা স্বপ্ন কিন্তু মিথ্যে হয়নি কোনদিন। এর আগেও একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম। আর সেটা বাস্তবেও ঘটেছিলো। এবার উনি একটু সিরিয়াসলি নিলেন আমার কথাটা। আমাকে অভয় দিয়ে তিনি বললেন, তুমি কোন চিন্তা করোনা। ওরকম কিছুই হবেনা। আর আমি আছি তো তোমাদের সাথে। তোমরা সবাই সবসময় আমার সাথেই থাকবে। আমাকে না বলে কেউ কোথাও যাবেনা।
ম্যাডামের কথায় তবুও আমার ভয়টা কাটলোনা। আমি জানি ঘটনাটা ঘটার সম্ভাবনা ৯৯%। কিন্তু ম্যাডামের কথার বিপরীতে আর কোন কথা বললাম না। একরাশ চিন্তাকে মনের মধ্যে চেপে রেখে যাত্রা শুরু করলাম। চুপচাপ গাড়িতে বসে আছি। কারো সাথেই তেমন কোন কথা বলছিনা। আমি শুধু আশিককে দেখছি। ছেলেটার মনে আজ অপার আনন্দ। দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া তার অনেকদিনের ইচ্ছা। কিন্তু আমার টেনশন হচ্ছে তাকে নিয়ে। নাহ! আমি সবসময় তার পাশেই থাকবো, তার সাথেই থাকবো। তার কোন ক্ষতি হতে দেবোনা।
রাতে গাড়ি থামিয়ে আমরা একটু বিশ্রামের জন্য গাড়ি দাড় করালাম। ছিমছিমে পরিবেশ। একেবারে নিরবতা বিরাজ করছে চারিদিকে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। গাড়ির ড্রাইভারও ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে সেও খুব ক্লান্ত। আমরা অপেক্ষায় আছি তার ঘুম ভাঙার।।ঘুম ভাঙলেই আমাদের আবার যাত্রা শুরু হবে। সবাই মোটামোটি ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু আমি, ম্যাডাম আর আশিক জেগে আছি।
আমি ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাডাম
কখন পৌছাবো আমরা। তিনি বললেন, কাল সকালের মধ্যেই পৌছে যাবো।
.
রাতে কখন গাড়ি ছেড়েছিলো সেটা আমার খেয়াল নেই। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি। যখন ঘুম ভাঙলো তখন আমি দেখি আমি গাড়ির মধ্যেই শুয়ে আছি। সবাই যে যার যার মতো একে একে নামছে গাড়ি থেকে। ম্যাডাম আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, শ্রাবণ আমরা আমাদের গন্তব্যে এসে গেছি। চলো, নামো গাড়ি থেকে। ফ্রেশ হয়ে নাও।
আমরা এখনই বের হবো জমিদার বাড়ি ঘুরতে। আর সেখান থেকে সোজা আকবর সাহেবের বাড়ি যাবো। আমি ম্যাডামকে বললাম, এই আকবর সাহেব আবার কে? তখন তিনি বললেন, আমাদের স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আলম সাহেবের বন্ধু। আমি ভাবলাম, যাক ভালোই হলো। একটা তো থাকার জায়গা হলো!
.
সবে মাত্র গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরেছি। কিছুদূর যেতে না যেতেই একটা বৃদ্ধ লোক আমাদের পথ আটকে দাঁড়ালো। ম্যাডাম লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, কিছু বলবেন? লোকটি জবাবে মাথা নাড়লো। লোকটি আমাদের সবার দিকে একবার তাকিয়ে ম্যাডামকে বললো, মা এই বাচ্চাদের নিয়ে তুমি বোধ হয় ঘুরতে এসেছো তাইনা? ম্যাডাম হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলেন। লোকটি তার গলার স্বরটা একটু টান টান করে আমাদের সবাইকে বললো
- বাবারা তোমরা একটু নিজেদের খেয়াল রেখো। একা একা কখনো কোথাও যাবেনা। বিশেষ করে ঐ পূর্ব দিকটাতে।
ম্যাডাম লোকটিতে জিজ্ঞেস করলেন
- কেন, কি আছে ঐ পূর্বদিকে।
লোকটি তখন কোন কথা না বলে তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা পান বের করে চিবাতে চিবাতে বললো
- আমি বলছি তোমরা ওদিকে যেওনা।
- কিন্তু কেন যাবোনা চাচা?
এবার লোকটি যা বললো সেটা শোনার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
সে পানের পিকটা ফেলে বাম হাতের পিঠ দিয়ে ঠোঁটটা মুছে বলতে শুরু করলো....
.
.
অপেক্ষা করুন দ্বিতীয় পর্বের।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭

বিজন রয় বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।

শুভকামনা রইল।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১

ভাইয়ু বলেছেন: হ্যাপি ব্লগিং৷ শুভকামনা জানবেন

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৪০

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা।

৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৩৩

স্রাঞ্জি সে বলেছেন:


হ্যাপি ব্লগিং......


প্রতিমন্তব্য করার জন্য সবুজ চিহ্নে ক্লিক করেন।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:১৩

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা, শিখিয়ে দেওয়ার জন্য

৫| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৫৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: হ্যাপি ব্লগিং......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.