নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিত্যাক্ত বাড়ি

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮

পরিত্যাক্ত বাড়ি
পর্ব-২
.
এবার লোকটি যা বললো সেটা শোনার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
সে পানের পিকটা ফেলে বাম হাতের পিঠ দিয়ে ঠোঁটটা মুছে বলতে শুরু করলো...
ঐ পূর্ব দিকে একটা জমিদার বাড়ি আছে। বাড়িটা বেশ ৫০০ বছরের পুরোনো। বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে আগাছা ভর্তি হয়ে অাছে। ভিতরটাও একেবারে নিরব। পুরো বাড়িটা যেন সবসময় ঝিম মেরে থাকে। বাইরে থেকে বাড়িটাকে বেশ সুন্দরই লাগে দেখতে। কিন্তু ভেতরটা যে কতটা সুন্দর সেটা এখন পর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি। অবশ্য ৫০ বছর আগের কিছু লোকদের মুখে থেকে শোনা যায়, বাড়িটা নাকি একেবারে পাগল করার মতো।
কিন্তু....
বৃদ্ধ লোকটি এবার "কিন্তু" বলে চুপ হয়ে গেলো। কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারছেনা। আমরা তখন বৃদ্ধের থেকে ঐ বাড়িটির গল্পটা শোনার জন্য আকুল আবেদন মাখা চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে। সে প্রায় পাঁচমিনিট পর কথা ঘুরিয়ে ম্যাডামকে উদ্দেশ্য করে বললো, মা তোমরা এখানে থাকবে কোথায়? ম্যাডাম লোকটির কথার উত্তর না দিয়ে বললেন, চাচা আপনি কিন্তু বাড়িটি সম্বন্ধে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলেন। কিন্তু কেন?
লোকটি এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, চলো যেতে যেতে বলছি। আমি আকবর সাহেবের বাড়ির পাশেই থাকি।
লোকটির এই কথাটা শুনে আমরা পুরো অবাক হয়ে গেলাম। লোকটি জানলো কি করে যে আমরা আকবর সাহেবের বাড়িতে যাচ্ছি?
আমরা সবাই লোকটির পিছে পিছে হাঁটতে থাকলাম। লোকটিকে বেশ রহস্যময় লাগছে আমার কাছে। আমি আশিকের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলাম। সে অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে জিজ্ঞাসু ভাব নিয়ে তাকালো। আমি তাকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে আবার হাঁটতে শুরু করলাম। বেশ লম্বা একটা সময় হাঁটার পর লোকটি হঠাৎ দাড়িয়ে গেলো, সাথে আমরাও। এবার লোকটি পিছনে ঘুরে আমাদের দিকে হয়ে বললো, ঐ যে ঐদিকে দেখুন। আমরা সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে লোকটির দেখানো দিকে তাকালাম। দেখলাম অনেক বড় একটা বাড়ি, তবে অনেক পুরোনো। বাড়িটাতে যাওয়ার পথটাও নেই। চারিদিকে লতাপাতা, আগাছায় জর্জরিত। মনে হচ্ছে এই বাড়িটার আশেপাশেও কেউ যায়না। গেলে তো অন্তত বাড়িটাতে যাওয়ার পথটাতে এসব আগাছা জন্মাতো না। আমাদের থেকে প্রায় অনেক খানি দূরে বাড়িটা। বাড়িটার পেছন দিকের আকাশটাতে ঘন কালো মেঘেরা খেলা করছে। আর সেই কারণে বাড়িটাকে বেশ অদ্ভুত ভয়ংকার দেখাচ্ছে। আমার মনের মধ্যে বেশ কৌতুহল জমা হচ্ছে। বাড়িটার ভেতরে ঢোকার প্রবল ইচ্ছা জাগছে মনে। আমি আশিকের দিকে ইশারা করে বললাম, তারও কি আমার মতো একই ইচ্ছা হচ্ছে নাকি। সেও আমাকে ইশারায় উত্তর দিয়ে জানালো, তারও বাড়িটির ভেতরে যেতে মন চাইছে। আমি আর আশিক দুজনের ইচ্ছার কথা একে অপরের সাথে শেয়ার করছি ইশারাতে। হঠাৎ লোকটি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, বাবা তোমরা কখনো বাড়িটির দিকে যেওনা।
লোকটির কন্ঠটা বেশ ভারি ভারি লাগলো।
কিন্তু কেন যাবোনা? লোকটি যেতে নিষেধ করছে কেন? আমি লোকটিকে জিজ্ঞেস করতে যাবো, কেন যাবোনা ওদিকে! কিন্তু আমার প্রশ্নটা ম্যাডামই করলেন। লোকটি বললো, সে অনেক কথা। শুধু এটুকু বলছি যে তোমার কখনো ভুলেও বাড়িটির দিকে যেওনা। আর গেলে অনেক খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে। লোকটির কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য আমরা থমকে গেলাম। কি আবোল তাবোল বলে এই লোকটি! মনে মনেই বললাম কথাটা আমি। কিন্তু কি করে যেন লোকটি জেনে গেলো আমার কথাটি। সে বললো, বাবা আমি আবোল তাবোল কিছুই বলছিনা। তোমরা হয়তো আমার কথাটিকে মজা ভাবছো। কিন্তু আমি মোটেও তোমাদের সাথে মজা করছিনা। আর মজা করবোই বা কেন? তোমরা তো আমার চেনা জানা নও।
আমি লোকটির কথাটাকে একটু ভাবতে চেষ্টা করলাম। আসলেও তো তাই! লোকটি শুধু শুধু আমাদের সাথে মজা করতে যাবে কেন? নিশ্চয়ই কিছু না কিছু গন্ডগোল আছে বাড়ির ভেতরে।
লোকটি এবার বলে উঠলো, বাবা তুমি ঠিকই ধরেছো। ঐ বাড়িটিতে গন্ডগোল আছে।
আমি এবার লোকটির কথায় বেশ অবাক না হয়ে পারলাম না। আমার মনে মনে বলা কথাটা লোকটি জানছে কিভাবে? আর লোকটির কথার মধ্যে কোন গ্রাম্য ভাষা নেই। বুড়ো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনো শুদ্ধ এবং তরতাজা ভাষায় কথা বলে।
আমি এবার লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, চাচা কি এমন আছে ঐ বাড়িটিতে? যার জন্য ওদিকে যাওয়া নিষেধ! লোকটি এবার আমাদের দিকে তাকিয়ে করুণ চোখে বললো, শুনতে চাও সেই ঘটনা? আমরা সায় দিলাম। লোকটি বললো, তাহলে চলো আমার সাথে।
.
লোকটির সাথে আবার হাঁটছি। এই বারবার হাঁটাহাঁটিটা আমার পছন্দ না। যদি লোকটি পরিচিত হতো, তাহলে কোন সমস্যাই ছিলোনা। তবে এবার আর বেশিক্ষণ হাঁটতে হলোনা। পথের ধারে একটা বড় আমগাছ। ঠিক তার নিচেই বাশ দিয়ে একটা বসার জন্য চরাট বানানো আছে। লোকটি গিয়ে সেখানে বসে পড়লো। আমরাও গেলাম তার সাথে।
এদিকে সকাল দশটা বেজে গেছে। আকবর সাহেবকে জানানো হয়েছিলো আমরা বেলা এগারোটায় উনাদের বাড়িতে পৌছাবো। হাতে এখনো এক ঘন্টা বাকি। আর যেহেতু এই লোকটি আকবর সাহেবের বাড়ি চিনে, তাহলে আর তাড়া কিসের? এই এক ঘন্টায় খুব দ্রুতই পৌছে যাবো সেখানে।
লোকটি তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে আরেকটা পান বের করে চিবাতে লাগলো। আমরা অধীর অাগ্রহ নিয়ে বসে আছি ঐ বাড়িটি সম্পর্কে তার থেকে কিছু জানার জন্য। পান চিবাতে চিবাতে লোকটি বললো, আমার দুইটা মেয়ে আর একটা ছেলে ছিলো। একটা মেয়ের বিয়ে দিয়েছি অনেক আগে। বাকি ছিলো আরেকটা মেয়ে। এই মাস খানেক হলো সে নিখোঁজ হয়েছে। বয়স তার ১৭,১৮। আর ছেলেটির বয়স বয়স হবে ১৬। আমার স্ত্রীর কথাতে আমি আমার বিয়ের প্রায় কয়েক বছর পর সন্তান নিই। আমার স্ত্রী চাইতো, সে আমাকে আগে বুঝবে তারপর আমার সাথে তার সম্পর্ক হবে, মিলন হবে। আমিও মেনে নিয়েছিলাম। আর এই কারণেই আমার মতো এই বুড়োর ছেলে মেয়েদের বয়স এখনো ২০ পেরোয় নি।
তো যাক সেসব কথা, এবার আসল ঘটনা বলি। মাসখানেক আগে আমি ঢাকা থেকে গ্রামে আসি। সাথে আমার ছোট মেয়ে আর ছেলেটাকেও নিয়ে আসি। আসার পথে এই পথ দিয়ে যখন বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকি, ঠিক তখনই আমার মেয়েটা বলে উঠলো, বাবা দেখো দেখো!
আমি আমার মেয়ের কথায় তার দেখানো দিকে তাকালাম। দেখলাম ঐ জমিদার বাড়িটিকেই দেখাচ্ছে সে। সে বললো, বাবা বাড়িটা তো অনেক সুন্দর! চলো বাড়ির ভেতরটাতে একবার ঘুরে আসি। আমি তখন তাকে বললাম, মা আগে বাড়িতে যাই। ফ্রেশ হয়ে পরে ঘুরতে যাবো। কিন্তু লম্বা ভ্রমণ করার ফলে আমি আর সেদিন তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হইনি। আমি তাকে বলেছিলাম, তুই তোর ভাইয়ের সাথে ঘুরতে যাস।
সন্ধার সময় আকাশের ডাকে আমার ঘুম ভাঙে। ছেলেটা বারবার আমাকে ডাকছে। তার ডাকাডাকিতে তখন ভয়ের আভাস ছিলো। মনে হচ্ছিলো কিছু একটা ঘটেছে। আমি ঠিক তখনও বুঝতে পারিনি যে, আমার মেয়েটা নিখোঁজ হয়েছে। আকাশ আমাকে বললো, বাবা মেঘা কই গেছে! আমি তখন তাকে বললাম, কেন? ও তোর সাথে যায়নি?
- আমার সাথে? আমার সাথে কোথায় যাবে? (আকাশ)
- মেঘা তো বলেছিলো ঐ জমিদার বাড়িটাতে ঘুরতে যাবে সে। আমি ওকে বলেছিলাম তোর সাথে যেতে।
- কি বলো বাবা?
- হ্যাঁ।
- কিন্তু মেঘা এখনো বাড়ি ফিরেনি কেন? ও তো সন্ধার সময় কখনো বাইরে থাকেনা। আর গ্রামে সন্ধা নামলেই চারদিক ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তো, মেঘার তো এই সময় বাইরে থাকার কোন মানেই হয়না।
ছেলের কথা শুনে আমার কোন টেনশনই হয়নি তখন। আমি ভেবেছিলাম হয়তো গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে সন্ধা হয়ে গেছে। সময় হলেই সে চলে আসবে। কিন্তু না, সে আসেনি। ঘড়ির কাঁটা দশটা পেরিয়েছে। তবু তার ঘরে ফেরার কোন নাম গন্ধও নেই। আমার মনে তখন বেশ ভয় কাজ করতে থাকলো। মেয়েটা গেলো কোথায়? আমাকে টেনশন করতে দেখে আকাশ আমাকে বললো, বাবা আমি একটা কথা শুনলাম গ্রামের মানুষজনের থেকে। সন্ধাবেলা আপুকে খুঁজতে বের হয়ে যখন তাকে খুঁজে পেলাম না। তখন এখানকার কিছু মানুষকে জিজ্ঞেস করলাম তারা আমার বোনকে দেখেছে কিনা। কিন্তু তারা যা বললো, তাতে আমার অনেক ভয় হতে থাকলো। আমার আপুর সাথে এমনটা হয়নি তো?
আমি আমার ছেলের কথা শুনে তার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম। সে বললো, বাবা গ্রামের কিছু মানুষ বলছিলো ঐ মাঠের ওপাশের বাড়িটাতে যে একবার যায় সে আর কখনো ফিরে আসেনা। আমাকে তারা বললো, দেখো তোমার বোন আবার ঐ বাড়িটাতে যায়নি তো? ঠিক তখনই আমার মনে হলো আপুর সেই কথাটি। গ্রামে এসে আপু বলেছিলো, সে ঐ বাড়িটাতে ঘুরতে যাবে। তাহলে কি সে সত্যিই ঐ বাড়িটাতে গিয়েছে? আমি গ্রামের লোকদের তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওখানে কি এমন আছে যার জন্য কেউ ওখানে গেলে আর ফিরে আসেনা? গ্রামবাসীরা আমাকে বললো, ওখানে নাকি জমিদার আর তার বউয়ের আত্মা থাকে। রাত হলেই নাকি সেখান থেকে অদ্ভুত সব আওয়াজ শোনা যায়। বাড়িটাতে আগুনের ফুলকি দেখা যায়।
.
একটুকু বলেই লোকটি চুপ হয়ে গেলো। আমরা লোকটির দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছি, তারপরে কি হলো সেটা শোনার জন্য। কিন্তু না, লোকটি কিছুই বলছেনা। সে মিনিট পাঁচেক চুপ করে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলো..
আমার ছেলেটার কথায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তাহলে কি আমার মেয়েটা ঐ জমিদার বাড়িতেই রয়ে গেছে? মনের মধ্যে তখন আমার ভয় নামক জিনিসটা মাথা নাড়া দিয়ে উঠলো। ঠিক তখনই কিসের যেন বিকট একটা শব্দ ভেসে এলো আমার কানে। আকাশ আমাকে বললো, বাবা শব্দটা কিসের।
আমিও ঠিক বুঝতে পারিনি শব্দটা কিসের। ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে দেখি, ঐ জমিদার বাড়িটা থেকে আগুনের ফুলকি উড়ছে। অন্ধকারের মধ্যে অমন একটা নির্জন নিস্তব্দ বাড়ি থেকে আগুনের ফুলকিটা আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে। সাথে কেমন যেন একটা ভয়ানক হাসির শব্দ ভেসে আসছে। এসব দেখে আকাশ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, বাবা গ্রামের মানুষ তো তাহলে ঠিকই বলেছিলো। তাহলে কি সত্যিই ওখানে জমিদার আর তার বউ থাকে? আর তারাই কি আমার আপুকে ধরে রেখেছে সেখানে?
আমি তখন ছেলেকে নিয়ে ঘরের মধ্যে এলাম। আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম, বাবা তুই টেনশন করিস না। মেঘা ওই পোড়া বাড়িতে একা একা কখনোই যাবেনা। হয়তো অন্য কোথায়ও গেছে। রাত হয়ে যাওয়ার কারণে হয়তো সে বাড়িতে ফিরতে পারেনি। দেখিস কাল সকালেই সে চলে আসবে। আমি আকাশকে ওটা বলে স্বান্ত্বনা দিলেও আমার মনের মধ্যে তখন অন্যকিছু উঁকি দিচ্ছিলো। আমার মনটা আমাকে যেন ডেকে ডেকে বলছিলো, রহমান সাহেব তোর মেয়ে অন্য কোথায়ও যায়নি। তোর মেয়ে ঐ জমিদার বাড়িতেই গেছে।
আমি তবু আমার মনকে নিজে নিজেই স্বান্ত্বনা দিয়ে বললাম, কিচ্ছু হয়নি আমার মেয়ের। সকাল হলেই সে বাড়িতে ফিরে আসবে।
সারারাত আমি আমার মেয়ের কথা চিন্তা করে ঘুমাতে পারিনি। ভাবছি সকাল হলেই হলেই ঐ বাড়িটাতে যাবো। কিন্তু গ্রামের লোকজনের জোড়াজুড়িতে যেতে পারিনি। তারা আমাকে কিছুতেই ভেতরে যেতে দিবেনা। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, সেখানে তো আর আমি একা যাচ্ছিনা। সাথে আমার ছেলেও যাচ্ছে। তবুও তারা নিষেধ করে আমাকে ওখানে যেতে। তারা বলে, আমরা এখানে আসার কিছুদিন আগে নাকি সপরিবারে পাঁচজন একসাথে ঐ বাড়িটিতে ঢুকে উধাঁও হয়ে যায়। আর তাদের আগেও অনেক বাচ্চা ছেলে, বুড়ো ওখান থেকে উধাঁও হয়েছে। ঐ পোড়াবাড়িতে যে একবার ঢোকে সে আর কখনো ফিরে আসেনা।
আর সেই থেকে আমি আর কখনো ঐ বাড়িটির ধারের কাছেও যাইনা। যদিও আমার মেয়েটার জন্য যেতে মন চায়। কিন্তু আকাশের অনুরোধের কারণে যেতে পারিনা।।
.
লোকটির চোখে পানি টলমল করছে। আমার আবার এসব পানি দেখলে অসহ্য লাগে। তার উপর আবার বুড়ো মানুষের চোখের পানি। তাদের চোখে পানি দেখলে আমার মনটাও কেঁদে ওঠে। ম্যাডাম লোকটিকে কি বলে স্বান্ত্বনা দিবে সেটা ভেবে পাচ্ছেন না। আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে আছি। ম্যাডাম যেন কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছেন। তাই আমি লোকটিকে বললাম, চাচা আপনি কাঁদবেন না। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। এবার লোকটি সত্যি সত্যিই কেঁদে ফেললো।
এদিকে ঘড়ির কাঁটা এগারোটা পেরিয়ে গেছে। আকবর সাহেবের বাড়িতে আমাদের পৌছানোর কথা ছিলো এগারোটায়। কিন্তু এখন এগারোটা বেজে তেইশ মিনিট। লোকটি বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখ দুটো মুছে আবার বলতে শুরু করলো...
তার কয়েকদিন পরেই আমার ছেলেটিও হঠাৎ করে উধাঁও হয়ে যায়। পরে গ্রামবাসীর থেকে জানতে পারি আকাশকে নাকি তারা ভর দুপুরে ঐ বাড়িটার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতে দেখেছে। আমার মনে শংঙ্কা জাগতে শুরু করলো। এবার কি তাহলে আমার ছেলেটারও একই অবস্থা হলো? সেও কি তার বোনের মতো হারিয়ে গেলো ঐ পরিত্যক্ত বাড়িতে?
এবার লোকটি আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যাওয়া একটা পথ দেখিয়ে বললো, ঐ পথেও মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু ঐ পথটা পার হয়ে যখন কেউ বাড়িটির মধ্যে ঢোকে, তখনই সে হারিয়ে যায় বিষাদ কালো বাড়িটির মধ্যে। আমি আমার ছেলেকে হারানোর পর থেকে এই গ্রামেই রয়ে গেছি। গ্রামে আসা হয়েছে মাত্র একমাস কয়েকটা দিন। আর এর মধ্যেই আমার সাথে যা ঘটলো, তাতে আমি একেবারে দূর্বল হয়ে পড়েছি। ঢাকা থেকে মমতা বারবার আমাকে ফোন দিচ্ছে, কিন্তু আমি রিসিভ করার সাহস খুঁজে পাচ্ছিনা। রিসিভ করলেই সে প্রথমে মেঘার কথা জিজ্ঞেস করবে। তখন আমি কি জবাব দিবো? মেঘা আর আকাশ চলে যাওয়ার পর থেকে আমি প্রায় সময়ই এদিকে ঘুরাঘুরি করি। আমি চাইনা আমার ছেলেমেয়ের মতো আর কারো সাথে এমনটা ঘটুক। আর তাই তোমাদেরকে আগে থেকেই এ বিষয়ে জানিয়ে রাখলাম। যাতে করে তোমাদের কারো সাথে এমনটা না ঘটে।
.
লোকটির মুখে এসব ঘটনা শুনে আমার বেশ কৌতুহল জাগলো মনের ভেতর। কি এমন আছে ঐ বাড়িতে, যার জন্য মানুষ উধাঁও হয়ে যায়! রাতের বেলা না হয় উধাঁও হতে পারে। কিন্তু দিনের বেলা কি করে হয়? দিনের আলোতে তো আর ভূত পেত্নী থাকেনা।
আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ম্যাডামের মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এটা উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হয়তো তিনি মনে মনে আমার সেই স্বপ্নের কথাটি ভাবছেন। তিনি ভাবছেন, আমার স্বপ্নটাই যেন সত্যি না হয়ে যায়। হলে তো কেলেংকারি হয়ে যাবে। আশিকের বাবা মাকে কি জবাব দেবেন উনি তখন?
লোকটি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আমাদের উদ্দেশ্যে বললো, আমি তোমাদের অনেক সময় নষ্ট করে ফেললাম। চলো এবার তোমাদের আকবর সাহেবের বাড়িতে পৌছে দিই। আমি তখন তৃতীয়বারের মতো আবার হাত ঘড়িটা দেখে নিলাম। বারোটা বাজতে চলেছে। সূর্য্যটা মাথার মাঝ বরাবর চলে এসেছে। সময়টা দুপুর, এই সময়েই নাকি লোকটির ছেলে উধাঁও হয়ে যায়। আমি পেছন ফিরে একবার ভূতুরে বাড়িটার দিকে তাকালাম। নাহ, বাড়িটা তো বেশ শান্তই মনে হচ্ছে! একবার ঢুকতে হবে বাড়িটির মধ্যে।
আমরা হাঁটছি লোকটির পিছু পিছু। লোকটি বারবার বলে চলেছে, তোমরা কেউ যেওনা ঐ বাড়িটিতে।
.
.
অপেক্ষা করুন তৃতীয় পর্বের।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২৩

ঋতো আহমেদ বলেছেন: বাড়িটিতে কি গিয়েছিলেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.