নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিত্যাক্ত বাড়ি

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯

পরিত্যাক্ত বাড়ি
পর্ব-৩
.
আমরা হাঁটছি লোকটির পিছু পিছু। লোকটি বারবার বলে চলেছে, তোমরা কেউ যেওনা ঐ বাড়িটিতে।
অল্প কিছুক্ষণ হাঁটার পর আমরা আকবর সাহেবের বাড়িতে পৌছালাম। সেখানে পৌছানোর পর লোকটি চলে গেলো। আমরা আকবর সাহেবের বাড়ির চারপাশটাতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। বাড়ির পিছন দিকেও একটু উঁকি মারলাম। বাড়িটা বেশ পরিপাটি। বাড়ির পিছনে একটা বাগান। তার পাশে বড় একটা পুকুর। বাড়ির গেটে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ লাগানো। আমার জীবনে দেখা এটাই সবচেয়ে সুন্দর বাড়ি। আমরা ভেতরে যেতেই আকবর সাহেব বেড়িয়ে এলেন। আমাদের দেখে তার চিনতে কোন অসুবিধায় হলোনা যে, আমরা তার বন্ধুর পক্ষ থেকে এসেছি। তিনি আমাদের একটা বড় ঘর দেখিয়ে দিয়ে বললেন, তোমরা ঐ ঘরটাতে থাকবে। কোন অসুবিধা হলে আমাকে জানাবে।
ম্যাডাম আমাদেরকে সাথে নিয়ে সেই ঘরের দিকে গেলেন। ঘরটাও বেশ সুন্দর। অনেকখানি জায়গা সেখানে। ঘরের মধ্যেও আবার আলাদা একটা ঘর আছে।
ম্যাডাম আমাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা সবাই ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর আমরা সবাই একসাথে চারপাশটা ঘুরতে বের হবো। কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই আশিকের চোখে ম্যাডামের চোখ পড়লো। আর তখনই ম্যাডাম যেন নিঃশ্চুপ হয়ে গেলেন। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা ম্যাডামের। উনার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। ঘুরতে বের হলে যদি আশিকের কিছু হয়ে যায় তখন কি হবে! এটা ভাবতেই চুপ হয়ে গেলেন তিনি। কেউ না বুঝলেও আমি ঠিকই বুঝতে পারলাম বিষয়টা। আমি মনে মনে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছি আশিককে কোথায়ও একা যেতে দিবোনা আমি। যখন আমি কোথায়ও যাবো, ঠিক তখনই তাকে সাথে নেবো। তাছাড়া তাকে একাকী কোথায়ও যেতে দেবোনা।
.
সবার ফ্রেশ হওয়া শেষ হলে ম্যাডাম আমাকে ডেকে বললেন, শ্রাবণ তোমার কথাটাই যদি সত্যি হয়ে যায় তখন কি হবে? আমি বললাম, আপনি কোথায়ও কাউকে একা যেতে দেবেন না। কেউ যদি ঘুরতে বের হয়, তবে সে যেন তিন চারজনের সাথে বের হয়। আর সবাইকে ঐ বাড়িটির দিকে যেতে নিষেধ করে দিন।
আমি যদিও ম্যাডামকে মুখে বলছি, ঐ বাড়িটিতে যেতে নিষেধের কথা। কিন্তু আমারও মন চাচ্ছে বাড়িটির ভেতরে কি আছে সেটা দেখার। আস্ত মানুষ উধাঁও হয়ে যায় সেখান থেকে। আর আজ পর্যন্ত কেউ কিছু উদঘাটন করতে পারলোনা। এটা কেমন কথা? আসলেও বোধ হয় এখানকার মানুষ সব নিরক্ষর। আর তা নাহলে একটা আজগুবি কথাকে কেউ বিশ্বাস করে? এখানকার পুলিশ প্রশাসন কিছু করেনা কেন? নাকি এখানে কোন পুলিশ প্রশাসনই নেই? নাকি তারা থেকেও নেই? তারাও কি অন্যসব গ্রামবাসীর মতো ঐ বাড়িটিকে ভয় পায়? অনেক প্রশ্ন উদয় হতে থাকে আমার মনে। আমি বিশ্বাস করি প্রেতাত্মা আছে, তবে দিনে দুপুরে প্রেতাত্মার ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেন সন্দেহ জনক লাগলো।
.
বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে সবাই ঘুরতে বের হলাম। ম্যাডাম আমাদেরকে নিয়ে সব জায়গাতেই ঘুরে বেড়ালেন। কিন্তু ঐ পোড়া বাড়ির ধারের কাছেও গেলেন না। আমরা পোড়া বাড়ি থেকে অন্যদিকের অন্যপাশে ঘুরাঘুরি করলাম। যেখান থেকে ঐ বাড়িটিকে দেখতে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনায় নেই। বিকেলে ঘুরাঘুরির পর আমরা যখন বাড়িতে ফিরছিলাম, ঠিক তখন আমি খেয়াল করলাম ঐ পোড়া বাড়িটার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে বেশ চেনা চেনা মনে হলো, কিন্তু ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না লোকটা কে? আর হ্যাঁ, কোথায়ও ঘুরতে গেলে মাত্র একটি পথ দিয়েই যেতে হয়। আকবর সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয়ে যে পথটা সোজা শহর এবং এই গ্রামের বাইরের দিকে গেছে সেই পথটার ঠিক বেশ খানিক দূরেই ঐ পরিত্যক্ত, পোড়া বাড়িটা। অবশ্য ঐ বাড়িটাতে যদি যাই, তবে এই পথটা থেকে সোজা না গিয়ে মাঠের মধ্যে দিয়ে সরু একটা পথ ধরে যেতে হবে। সেই সরু পথটা আবার সোজা ঐ পোড়া বাড়িটার ঠিক পেছন দিক দিয়ে ঘুরে ওপাশ হয়ে আবার এই মেইন পথটার সাথে মিলিত হয়েছে।
আমি যে একটা লোককে ঐ বাড়িটার পাশে দেখেছি, এটা আমি ছাড়া আর কেউ দেখেনি। ম্যাডাম সেদিকে তাকাতেই ভয় পাচ্ছেন। তাই তিনিও বিষয়টা খেয়াল করেন নি। যে লোকটিকে দেখলাম আমি ঐ বাড়িটির পাশে তার মাথায় একটা গামছা পেঁচানো ছিলো। আর আমি সেই গামছাটা কোথায় যেন দেখেছি। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছিলাম না তখন।
.
আকবর সাহেবের বাড়িতে ফিরে এসে সবাই যার যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে খাবার নিয়ে। প্রচুর খাবারের আয়োজন করা হয়েছে আমাদের জন্য। আকবর সাহেব লোকটি বেশ ধনী এবং অনেক বড় মনের, এটা বলতেই হবে। কিন্তু সেসময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তার বউ এবং বাড়ির একটা কাজের লোক আমাদের খাবার পরিবেশন করলেন।
জুই, ফাহিম, নাজমুল, সোমা, ফারিয়া, অনুপম এরা কয়জন আবার খাবার খেতে পটু। ম্যাডামের অনুমতি না নিয়ে তারা বেশ তৃপ্তি সহকারে খেয়ে যাচ্ছে। শুধু আমি আশিক আর ম্যাডাম খাচ্ছিনা। আমি খেয়াল করে দেখলাম ম্যাডাম কিছু একটা নিয়ে বেশ চিন্তার মধ্যে আছেন। আমি ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাডাম আপনার কি হয়েছে? আপনাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? উত্তরে ম্যাডাম কিছুই বললেন না।
আমি খাচ্ছিনা দেখে আশিকও খাচ্ছেনা। আর এটাকেই বলে বন্ধুত্ব। আশিককে ইশারায় খেতে বললাম। তারপর আমিও খেতে শুরু করলাম। প্রচুর ক্ষুধা লাগায় নিমিষেই খাবার গুলো শেষ করে বাকিদের খাবারে ভাগ বসালাম। খাওয়া শেষ হলে ম্যাডামের কথায় গ্রামের নিরক্ষর মানুষদেরকে আকবর সাহেবের বাড়ির উঠানে একত্রিত করার একটা ব্যবস্থা করা হলো। এতে গ্রামের অনেকেই আমাদের সাহায্য করলেন। সন্ধাবেলা যখন আকবর সাহেবের বাড়ির উঠানে নিরক্ষর মানুষদেরকে নিয়ে আমরা বসে আছি। ঠিক তখন আমার চোখ দুটো একজনের চোখের দিকে আটকে গেলো। লোকটি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো এতক্ষণ। আমি তার দিকে তাকাতেই সে চোখ নামিয়ে ম্যাডামের কথার দিকে মনযোগ দিলো। ম্যাডাম সবাইকে শিক্ষার ব্যাপারে অবগত করছেন। প্রথমে তিনি কুসংস্কার দূরীকরণের পথে নামলেন। কারণ গ্রামের প্রায় সবাই নিরক্ষর, যারা কিনা এখনো কুসংস্কারে বিশ্বাসি।
আমি ম্যাডামের বলা কোন কথায় শুনছিনা। আমি শুধু ঐ লোকটির দিকে তাকিয়ে আছি। লোকটিও বারবার আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। আর আরেকটা বিষয় হলো এই লোকটির মাথায়ও গামছা পেঁচানো। ঠিক ঐ পরিত্যক্ত বাড়ির পাশে মাথায় গামছা পেঁচানো যে লোকটিকে দেখেছিলাম তার মতো। আমার মনের মধ্যে সন্দেহ জাগলো, এই লোকটি ওখানে কি করছিলো? এই লোকটিই তো আমাদের ঐ বাড়ির দিকে যেতে নিষেধ করেছিলো।
কিন্তু আমাদের নিষেধ করে উনি কেন গেলেন ঐ বাড়িটির কাছে?
হ্যাঁ, আপনারা যা ভাবছেন সেটাই। এই লোকটি আর কেউ নয়। এই লোকটিই ঐ লোক, যে আমাদেরকে তার ছেলে এবং মেয়ের ঐ বাড়িতে উধাঁও হয়ে যাওয়ার ঘটনা শুনিয়েছিলো।
.
গ্রামের প্রায় বেশিরভাগ লোকই ম্যাডামের কোন কথাকেই মাথায় নিলোনা। তার ভুত, প্রেতাত্মাতে বিশ্বাসি। তারা কিছুতেই কুসংস্কার নামক অন্ধকুঠির থেকে বের হতে চাচ্ছেনা। তারা যদি এসব কুসংস্কার থেকে বের হতে না পারে, তবে তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌছাবে কি করে? আমি খেয়াল করে দেখলাম, রহমান সাহেব অর্থ্যাৎ ঐ লোকটি মিটিমিটি হাঁসছেন। তার হাঁসার অর্থটা আমার কাছে এমন মনে হলো যে, সে গ্রামের মানুষদের কার্যকলাপে বেশ মজা পেয়েছে। আবার মনে মনে খুশিও হয়েছে। সে চাচ্ছেনা যে গ্রামের মানুষ কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাক, তারা সত্যকে বিশ্বাস করুক।
সবাই যখন চলে গেলো বাড়ি থেকে, তখন আমি একটু সাহস নিয়ে লোকটির কাছে গেলাম। সাথে অবশ্য ম্যাডাম, আকবর সাহেব আর আমার বন্ধুরাও ছিলো। তাই কোন ভয় পেলাম না আমি। যখন লোকটিকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো ঠিক তখনই লোকটি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, বাবা তুমি খুব চঞ্চল। একটু এদিকে এসো। আমি লোকটির কথায় তার সাথে একটু আড়ালে গেলাম। তখন লোকটি আমাকে বললো, তোমাকে কেন এদিকে আসতে বললাম তুমি কি সেটা জানো? আমি উত্তরে না সূচক মাথা নাড়ালাম। লোকটি তখন বলতে শুরু করলো, তুমি বিকেলে ঐ পোড়া বাড়ির পাশে যাকে দেখেছিলে, সেই লোকটি আমিই ছিলাম।
তোমার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে আমি কেন ওখানে গিয়েছিলাম! আসলে আমার ছেলেমেয়ে দুটো হারানোর পর ওদের জন্য আমার মনটা কেঁদে কেঁদে ওঠে। তাই আমি একটু সময় করে বিকেলবেলা সেখানে ঘুরাঘুরি করি। অবশ্য সেখান দিয়ে কেউ তেমন যাওয়া আসা করেনা, শুধু থানার একটা হাবিলদার ছাড়া।
আমি লোকটির মুখে হাবিলদারের কথা শুনে তাকে কোন প্রকার সংকোচ না করেই প্রশ্ন করলাম, চাচা থানার হাবিলদার কেন ওদিকে যায়। তখন সে বললো, বাবা থানা থেকে ঐ হাবিলদারকে বাড়িটি দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি এবার একটু বোকার মতো একটা ভাব ধরে বললাম, দেখি হাবিলদারের সাথে একদিন পরিচত হয়ে ঐ বাড়িটিতে যাবো। আমার এই কথা শুনে লোকটি আমাকে অনুরোধ করে বললো, বাবা তুমি যেওনা ওখানে। তুমি আমার ছেলের মতো। তাই বাবা হিসেবে তোমাকে অনুরোধ করবো ওখানে না যেতে।
আমি এবার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা চাচা আপনার কাছে তো আপনার ছেলেমেয়ের ছবি অাছে তো, তাইনা? লোকটি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। আমি বললাম, চাচা ছবি দুটো কি আমাকে একটু দিবেন? লোকটি এবার আমাকে আর কোন প্রশ্ন না করে তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে দুটো ছবি বের করে দিলো। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার কাছেই ছিলো ছবিগুলো? লোকটি এবার শুধু একটু হাসলো মাত্র। আমি তাকে তার ছেলেমেয়ে হারানোর ব্যাপারে পুলিশের সহযোগীতার কথা জিজ্ঞেস করলাম। এতে লোকটি খুব সহজ করেই উত্তর দিলো, পুলিশও নাকি ওসব ভুত প্রেত্মাতে ভয় পায়। তাই তারা লোকটির কেস নেননি।
লোকটির সাথে কথা বলা শেষে লোকটি চলে যাওয়ার সময় আমাকে বললো, বাবা তুমি অনেক বিচক্ষণ এবং চঞ্চল। নিজের খেয়াল রেখো, আসি। লোকটি চলে গেলে আমি আবার বাড়ির মধ্যে ফিরে আসি।
আমাকে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে দেখে ম্যাডাম এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ম্যাডামের চোখে পানি চিক চিক করছে। দু'এক ফোটা গাল বেয়েও পড়ছে। "ম্যাডাম আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে কেন?" এটার অনুমান করে আমি জানতে পারলাম, আমাকে কিছুসময় না দেখতে পেয়ে ম্যাডাম
বড় টেনশনে ছিলেন। আর সেজন্যই উনি এরকম করছেন।
আমার অনুমান যে মিথ্যে নয়, সেটা সম্পর্কে সঠিক হওয়ার জন্য ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাডাম আপনি এমন করছেন কেন? ম্যাডাম এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখটা মুছে বললেন, কই ছিলি এতক্ষণ তুই?
হুম, আমি ঠিকই ধরেছিলাম। আমার অনুমাণ কখনো মিথ্যে হয়না।
.
গ্রামে আবার সন্ধা হলেই চারিদিক নিঃশ্চুপ, নিস্তব্দ হয়ে যায়। আকবর সাহেবের বাড়ি থেকে সবাই চলে যেতে যেতে প্রায় রাত আটটা বাজে।
রাতের খাওয়া শেষে ম্যাডাম আমাদেরকে নিয়ে ঘুমাতে গেলেন। সবাই যে যে যার যার মতো ঘুমালো। কিন্তু আমি আর আশিক ম্যাডামের সাথে ঘুমালাম। আমরা নিজে থেকে ম্যাডামের সাথে ঘুমাতে চাইনি। ম্যাডামই আমাদেরকে উনার সাথে নিলেন।
রাত তখন দশটা বাজবে বাজবে ভাব। আমার চোখে প্রায় ঘুম চলে এসেছে। ঠিক তখনই একটা বিকট শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। আমি ধচমচ করে উঠে পড়ি বিছানা থেকে। ম্যাডাম আর আশিক ঘুমাচ্ছে। আমি একটু উঠে গিয়ে জানালার পাশে গেলাম। জানালার পাশে যেতেই আমার শরীর জুড়ে ভয়ের হাওয়া বিস্তার করলো। জানালা খুলতেই দেখি ঐ পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িটি আমার জানালা বরাবর। বাড়িটি দিয়ে আগুনের ফুলকি বাতাসের সাথে সাথে আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে। এই ঘটনা দেখে সত্যি সত্যি এবার আমার মনে ভয় ঢুকে গেলো। আমি তাড়াতাড়ি করে জানালা থেকে সরে এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম। তারপর আর কোনকিছু না ভেবে চুপচাপ ম্যাডামের পাশে শুয়ে পড়লাম।
সকালে যখন ঘুম ভাঙলো তখন তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশটা হাতে নিয়ে বাড়ির বাইরে গেলাম। নাহ! এবার তো ঐ বাড়িটিকে বেশ শান্তই মনে হচ্ছে। তাহলে রাতে কি হয়েছিলো বাড়িটির মধ্যে? আর ঐ বিকট শব্দই বা কিসের ছিলো? শব্দটা এমন হয়েছিলো, যেন কোনো মরা ব্যক্তিকে পুড়ানোর সময় তার মাথাটা ফাটলে যেমন শব্দ হয় ঠিক কেমন। এসব কিছু হওয়া স্বত্ত্বেও বাড়িটির মধ্যে ঢোকার ইচ্ছাটা আমার বিন্দু মাত্রও কমলোনা।
আমি ব্রাশ হাতে করে বাড়িটির দিকে তাকিয়ে আছি তখন অনুপম আর সোমা এসে আমাকে বললো, শ্রাবণ জানিস কালকে রাতে একটা জিনিস দেখেছি আমরা। আমি তাদের কথা শুনে অনুমান করে ফেললাম, তারা ঐ বাড়িটির সম্বন্ধেই কিছু বলবে। আর হলোও তাও। অনুপম বললো, দোস্ত আমি তখন অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভাবছিলাম তোকে ডাক দিবো। কিন্তু তুই ম্যাডামের সাথে থাকার কারণে ডাকতে পারিনি। সোমা তো ভয়ে আমাকে.....
ওকে কথাটা পুরোটুকু শেষ করতে না দিয়ে আমি বললাম, তুই, ফাহিম আর নাজমুল রেডি থাকিস। দুপুরে আমরা ঐ বাড়িটির কাছে যাবো। আর কাছে থেকে একবার বাড়িটিকে দেখে আসবো।
আমার কথা শুনে অনুপম প্রথমে না না করলেও পরে যেতে রাজি হলো। আমি ওকে বললাম, ম্যাডাম যেন কোনভাবেই আমাদের ওখানে যাওয়ার বিষয়টা জানতে না পারে। সোমাকেও নিষেধ করে দিলাম। দুপুরে আমরা পাঁচজন মাঠটা পেরিয়ে সরু পথটা ধরে সোজা বাড়িটির সামনে গেলাম। বাড়িটিকে কাছে থেকে দেখে বেশ অবাক হলাম আমি। লোকে বলে এটা নাকি পোড়া বাড়ি! রাত হলে এই বাড়ি থেকে আগুনের লাল আভা বের হয়। কিন্তু বাড়িটাতো মোটেও পোড়া বাড়ি নয়। আমরা বাড়িটার এদিক ওদিক ঘুরে দেখছি। দুপুর বেলাতে তেমন কেউ আসেনা এদিকে, আর যে আসে সে নাকি উধাঁও হয়ে যায়। অনুপম আমাকে বললো, শ্রাবণ কইরে? কিছুই তো হচ্ছেনা আমাদের সাথে! এখানে আসলে নাকি সবাই উধাঁও হয়ে যায়। কিন্তু কই, আমরা হচ্ছিনা কেন? পাশে থেকে ফাহিম বললো, বাইরে থেকে বোধ হয় কেউ উধাঁও হয়না। ভিতরে যেতে হবে, তারপর দেখতে হবে কি হয়! ওরা ভেতরের দিকে পা বাড়াতেই আমি ওদের পিছন থেকে টেনে এনে বললাম, এখন যাওয়ার দরকার নেই। সময়মতো আমিই তোদের নিয়ে যাবো। কিন্তু আমার কথাতে আশিক মত দিলোনা। সে ভেতরে ঢুকবেই।
আমাদের যত ভয় এই আশিককে নিয়ে। কিন্তু এই আশিকই আমার কথা না শুনে ভেতরে যেতে চাওয়াতে আমি তাকে একটু দূরে ডেকে বোঝালাম। তাকে বললাম, তুই কি জানিস তোকে কেন আমি সবসময় আমার সাথে সাথে রাখি? আশিক কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে উত্তর দিলো, না তো। কেন?
আমি এবার তাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। তাকে এও বললাম যে, তুই কখনো আমাদের না বলে একা কোথায়ও বের হবিনা। সে উল্টো আমাকে জ্ঞান দিতে লাগলো। বললো, আরে স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় নাকি? আমি তখন তাকে বললাম, তুই ভুলে যাস না আশিক, আমার স্বপ্ন কিন্তু ৯৯% সত্যি হয়। উদাহরণ স্বরুপ তাকে আমি রিমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা সেই ভিনদেশিদের ছোট্ট ছেলেটির কথা বললাম।
রিমা আশিকের চাচাতো বোন। তাদের বাড়িতে একবার ভিনদেশি কিছু লোক বেড়াতে আসে। ঠিক সেদিন রাতে আমি ঐ ভিনদেশিদের নিয়ে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি। পরদিন আমার স্বপ্নের কথাটা ভিনদেশিদের জানালে তারা এবং রিমাদের বাড়ির লোকজন সহ আশিকও হাসতে থাকে। আমার কথাকে তারা সেদিন বিনোদন হিসেবে নিয়েছিলো। আর ঠিক সেদিনই বিকেলবেলা ঐ ভোনদেশিদের ছোট্ট ছেলেটি পুকুরে ডুবে মারা যায়!
আশিক আমার কথাটা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, আরে সেদিন না হয় হঠাৎ করেই হয়েছিলো দুর্ঘটনাটা। তাই বলে যে আজকেও হবে, সেটা তো নয়। আমি এবার আশিককে বেশ কড়া গলায় বললাম, দেখ আশিক সবসময় সবকিছু ভালো লাগেনা কিন্তু আমার। তোর বাবা মা ম্যাডামকে কি বলেছিলেন সেটা তোর মনে আছেনা? আশিক মাথা ঝাঁকালো। আমি বললাম, তাহলে তুই কি চাস তোর কারণে ম্যাডামের ক্ষতি হোক?
আমি তাকে এসব কথা বলা স্বত্ত্বেও সে আমার কথা গ্রাহ্য না করে বাড়ির ভেতরে যেইনা ঢুকতে যাবে ঠিক সেসময় পেছন থেকে একটা লোক আশিককে ডাক দিলো। লোকটার কন্ঠের মধ্যে কোন রস ছিলোনা। আমরা সবাই পেছনে তাকালাম.....
.
অপেক্ষা করুন চতুর্থ পর্বের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.