নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিত্যাক্ত বাড়ি

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪২

পরিত্যাক্ত বাড়ি
পর্ব-৪
.
লোকটার কন্ঠের মধ্যে কোন রস ছিলোনা। আমরা সবাই পেছনে তাকালাম। দেখলাম খাটো করে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। সাথে একটা সাইকেল। এক হাতে সাইকেল আর আরেক হাতে সিগারেট। দেখে মনে হলো পুলিশের লোক হবে। কারণ সেরকমই পোশাক ছিলো তার শরীরে। লোকটি আমাদের দিকে একটু এগিয়ে এলো। আমি অনুমান করতে লাগলাম, এই লোকটিই সেই হাবিলদার নয়তো? আমার অনুমান ভুল ছিলোনা। হাবিলদার আমাদের বললো কোথায় যাচ্ছো তোমরা? কথাটা সে একটু কড়া গলায়ই বললো। হাবিলদারের বয়স এই উর্ধ্বে গেলে চল্লিশ হবে। একে তো ছোট খাটো মানুষ তারপর উপর আবার কড়া গলা। বেশ হাসি পাচ্ছিলো তখন আমার। আমি বললাম, কই আর যাবো চাচা? এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম, তো এই বাড়িটা চোখে পড়াতে বেশ কৌতুহল জাগলো। তাই আরকি একটু ভেতরে যেতে চাইছিলাম। হাবিলদার লোকটি তার হাতে থাকা সিগারেটটা একটানে শেষ করে আমাকে বললো, এখানে ঢোকা নিষেধ। এখানে যারা একবার ঢোকে তারা আর কখনো ফিরে আসেনা। যাও এখান থেকে তোমরা। আমরা আর কোন কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম। আসার সময় আশিককে বোঝালাম, দেখ আশিক আমরা তোর এসব জেদের কারণে তোর বাবা মায়ের মুখে কথা শুনতে পারবোনা। এখন তোর কিছু হয়ে গেলে ম্যাডামের তো ক্ষতি হবেই, সাথে আমাদেরও হবে।
.
মাঠ পেরিয়ে মেইন পথটা ধরেছি মাত্র। ঠিক তখনই মনে হলো কে যেন অতি দ্রুত ঐ বাড়িটার মধ্যে ঢুকলো। আমি পেছনে পেছনে তাকাতে তাকাতে সে উধাঁও। কাউকেই দেখলাম না সেইখানে। তবে আমি শিওর যে, কেউ ঢুকেছে বাড়িটার মধ্যে। অনুপম, আশিক ওদেরকে জিজ্ঞেস করাতে ওরা বললো, ওরা কাউকেই দেখেনি।
দুপুর দুটা বাজে। আমরা পাঁচজন মিলে পুরো গ্রামটা একবার ঘুরে দেখার জন্য একে অপরের থেকে মত নিচ্ছিলাম। ঠিক সেসময় একজন অপরিচিত লোক আমাদের সামনে এলো। আমাদের সবাইকে একবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে নিয়ে একটু গলাটা ঝেড়ে বললো, আমি তোমাদেরকে দেখলাম তোমরা ঐ জমিদার বাড়িটির আশেপাশে ঘুরঘুর করছো। কিন্তু তোমরা কি জানো সেখানে কেউ গেলে সে আর কখনো ফিরে আসেনা?
আমি মৃদু স্বরে বললাম, জানি চাচা। লোকটি এবার একটু রাগের স্বরে বললো, তাহলে ওখানে কি করছিলে তোমরা? লোকটির রাগান্বিত ধমক শুনে আমার একটু ভয় হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কেন জানি আমার মনে হলো, লোকটিই আমাকে দেখে ভয় পেয়েছে। অামি অনুমান করে ফেললাম, বাড়িটির আশেপাশে আমাদের ঘুরাঘুরি করতে দেখে লোকটি বেদম ভয় পেয়েছে। তার মুখ দেখে এমন মনে হচ্ছে যেন, আমরা লোকটির কোন গুপ্ত রহস্য উদঘাটন করে ফেলবো। আর এটাই উপলব্ধি করতে পেরে হয়তো সে আমাদেরকে এরকম ধমকের সুরে ঐ বাড়িটিতে যেতে নিষেধ করছে।
কিন্তু এর আগে যারা আমাদের নিষেধ করেছিলেন তারা বেশ সুন্দর ভাবেই আমাদের বুঝিয়ে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু উনাদের সাথে এই লোকটির নিষেধের কোন মিল পেলাম না। আমার মনে সন্দেহের তীরটা আরও তীক্ষ্ণ হলো। আমার কেন জানি মনে হতে লাগলো ঐ পোড়া, পরিত্যক্ত বাড়িটিতে কোনো ভূত টুত নয় বরং অন্যকিছু আছে। যা মানুষের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমি এটুকু শুধু আমার অনুমানের দিক থেকেই মনে মনে ভাবে নিলাম। কিন্তু আমি ১০০% শিওর না। আমার ঢুকতেই হবে ঐ বাড়িটিতে। দেখতে হবে আসলেও সেখানে কোনো ভূত আছে কিনা। দেখতে হবে কিভাবে সেখান থেকে মানুষ উধাঁও হয়ে যায়!
আমি লোকটির দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি হাসি একটা ভাব নিয়ে বললাম, চাচা এই নিন। লোকটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি এটা? আমি স্বাভাবিক ভাবেই বললাম, আপনি নিশ্চয়ই জানেন কি এটা! দেখলাম আপনি খুব ঘামছেন, তাই ভাবলাম আপনাকে তো এই সামান্য সাহায্যটুকু করতে পারি। যতো হোক আপনি আমাদের ঐ বাড়িটিতে যেতে নিষেধ করে আমাদের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করেছেন। আমার কথাটা শুনে লোকটি কেমন করে যেন আমার দিকে তাকালো। এই তাকানোর মানেটা আমার বুঝতে কোন সমস্যাই হলোনা। লোকটি হয়তো ভাবছে, তার থেকেও আমি বড় চতুর। তার থেকেও আমি বড় খেলোয়ার। আমি লোকটির এমন হাবভাব দেখে কিছুটা শিওর হলাম, পোড়া বাড়িতে ভূতের নামে অন্যকিছু আছে। আর যার সাথে এই লোকেরও হাত আছে। লোকটি তার কপালের ঘামটা মুছে তাড়াতাড়ি চলে গেলো। আর একবারও পেছনে তাকালোনা।
লোকটি চলে যেতেই নাজমুল বলে উঠলো, দোস্ত লোকটি হঠাৎ করে অমন রেগে গেলো কেন? আর ঘামতেই বা লাগলো কেন? আমি বললাম, কিছুনা। হয়তো উনি কোন বিষয়ে টেনশনে আছেন। তাই হয়তো ঘামছেন।
এবার পাশে থেকে অনুপম আমাকে আরেকটি প্রশ্ন করে বসলো। সে বললো, দোস্ত লোকটি যখন আমাদেরকে ধমকের সুরে ঐ বাড়িটিতে যেতে নিষেধ করলো তখন তোর মধ্যে একটা হাসি হাসি ভাব দেখলাম। কিন্তু তখন ঠিক বুঝে উঠে পারছিলাম না তোর হাসিটার কারণ।
আমি বললাম, এখন বুঝতে পারছিস?
সে চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ এনে বললো, না এখনো বুঝতে পারিনি। তবে এটা বুঝতে পেরেছি তোর হাসি হাসি কথাতে লোকটা বেশ ভয় পেয়েছিলো। যেখানে লোকটির কথা শুনে আমাদেরই ভয় পাবার কথা ছিলো! কিন্তু লোকটার অমনভাবে ভয় পাবার কারণটা আমার কাছে স্পষ্ট না। আমি অনুপমের কথাতে বুঝতে পারলাম অনুপমের মাথাতে কিছু বুদ্ধি আছে। সে চেষ্টা করলেই একদিন গোয়েন্দা হতে পারবে। তার কোন কিছু বোঝার ক্ষমতাটা একটু হলেও আছে।
আমি মনে মনে ঠিক করলাম পোড়া বাড়িটিতে ঢোকার সময় অনুপমকে সাথে নিবো। আমরা দুইজন কোন এক সময় সুযোগ বুঝে সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়বো সবার চোখের আড়ালে। এখন শুধু অনুপমকে এ বিষয়ে বলতে হবে। সে আমার সাথে যেতে পারবে কিনা, নাকি সেও অন্যসবার মতো ভয় পাবে!
.
পরে আর কোথায়ও ঘুরাঘুরি না করে আমরা আকবর সাহেবের বাড়িতে ফিরে গেলাম। বাড়িতে ফিরতেই ম্যাডাম আমাদেরকে দেখে বেশ জোড়েই একটা ধমক দিলেন। আমি ম্যাডামের ধমকের কারণটা জানি। তিনি হয়তো দুপুর থেকে আশিককে কোথায়ও দেখতে পাননি, আর সেজন্যই এমন রাগভয়ে আছেন। কিন্তু ম্যাডাম আমার সাথে আশিককে দেখে আর কিছু বললেন না। তিনি জানেন আমি সাথে থাকলে আশিকের কোন ক্ষতি হবেনা। ম্যাডাম আমার উপর এটুকু আস্থা রাখেন।
আর ম্যাডাম ভালো করেই জানেন আমি যা অনুমান করি তার ৮০% ঠিক হওয়ার সম্ভানা থাকে। আমি ম্যাডামকে বললাম, ম্যাডাম আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আশিক আমার সাথে থাকলে ওর কোন ক্ষতি হবেনা। তবে হ্যাঁ, যখন কেউ বেড়াতে বের হবে তাদেরকে আমাদের মতো কয়েকজনকে একসাথে বের হতে বলবেন। আর সবাইকে নিষেধ করে দেন কেউ যেন ঐ বাড়িটির দিকে না যায়। ভূতের চেয়ে মানুষই বেশি ভয়ংকর। ভূতের হাত থেকে হয়তো রেহায় পাওয়া যায়। কিন্তু মানুষ নামক ভূতের হাত থেকে সহজে রেহায় পাওয়া যায়না।
আমার একথাটিকে কেউ তেমন গুরুত্ব দিলোনা। কিন্তু দেখলাম অনুপম আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে জানতে চায়ছে আমি আবার এখানে মানুষভূত পেলাম কোথায়! আমি এবার ম্যাডামের দিকে তাকালাম, দেখি ম্যাডাম কিছু বুঝতে পেরেছেন কিনা! আমি ম্যাডামের দিকে তাকাতেই ম্যাডাম আমাকে বলে উঠলেন, শ্রাবণ কি বললে তুমি? আবার বলোতো!
আমি যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। ম্যাডামও আমার কথাটাকে কানে নিয়েছেন। কিন্তু আমার কথাটার সঠিক অর্থটা উনি বুঝতে পারেন নি।
আমি বললাম, কই ম্যাডাম? কিছুনা তো! আমি আবার কি বলবো? ম্যাডাম এবার আমাকে কাছে ডেকে বললেন, তাহলে ঐ মানুষভূতের কথা বললে যে! মানুষভুত আবার কি? আমি আবার আগের মতোই উত্তর দিলাম, কিছুনা ম্যাডাম। তবে সময় হলে সবই জানতে পারবেন। যদি আমার অনুমাণটা ঠিক হয়।
আমি ম্যাডামের সাথে কথা বলছি ঠিক সেমসয় কে যেন মেইন গেটের পাশ থেকে কেটে পড়লো। আমি একটু উঁকি দিলাম, কিন্তু বুঝতে পারলাম না, কে ছিলো ওখানে? আর কেনই বা ছিলো? আমাদের কথাকে আড়ি পেতে শোনার কোনো কারণ নেই তো। তবে হ্যাঁ, আড়ি তো সেই পাতবে যে আমাদের নিয়ে ভয়ে আছে। যদি আমরা তার পুরো রহস্যের জাল উন্মোচোন করে ফেলি!
আমি অনুপমকে ইশারায় বললাম, তুই কি দেখেছিস গেটের ওপাশে কে ছিলো? সে আমাকে জানালো সে দেখেছে। ম্যাডাম আমাকে বললেন, শ্রাবণ তোমার কথা ঠিক ভালোভাবে বুঝিনা আমি। একেবারে পাকা পাকা কথা বলো তুমি। মনে হয় যেন একজন পাকাপোক্ত লোক কথা বলছে। তবে তোমার কথার মধ্যে কিছু একটা আছে, এটা আমি শিওর।
.
রাতের বেলা আকবর সাহেবের খাবার খাওয়ার ঘরে সবাই একই সাথে বসে খাবার খাচ্ছি। গত দিনের মতো আজও আকবর সাহেবের স্ত্রী আর ঐ কাজের মহিলাটি আমাদের খাবার পরিবেশন করছেন। রাত তখন নয়টা পার হয়ে দশটার দিকে ধাবিত হয়েছে। কিন্তু আকবর সাহেবকে দেখলাম না কোথায়ও। গতকাল বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু আজ আবার ঐ প্রথমদিনের মতো উনি বাড়িতে নেই। আমি খাচ্ছি আর ভাবছি, লোকটি এতো বড় একজন মানুষ। এতো বড় বাড়ি তার। মনটাও বেশ মহৎ। কিন্তু লোকটি পেশায় কি করেন? শুনেছিলাম তার নাকি এক্সপোর্টের অর্থ্যাৎ রপ্তানিমুখি ব্যবসা আছে। তবে সে ব্যবসা কি উনি এতোরাত ধরেও করেন নাকি?
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা সবাই আমাদের জায়গাতে চলে গেলাম। গতদিনের দিনের মতোই যথারীতি ম্যাডাম আমাকে আর আশিককে নিজের সাথে নিয়েই ঘুমালেন। আমার থেকে খানিক দূরে অনুপম ঘুমিয়ে। অনুপমকে আগে থেকেই আমি বলে রেখেছি, অস্বাভাবিক কিছু দেখলে যেন আমাকে ইশারা করে। আমিও জেগে আছি। আমি জানি আজকেও গতদিনের মতো কিছু একটা হবে। এবার নতুন কিছু না কিছু দেখা যাবে ঐ বাড়িটির মধ্যে থেকে।
মাত্রই চোখে ঘুমটা এসে ভীর করেছে, ঠিক তখনই শুনতে পেলাম অনুপম ফিসফিস করে আমাকে ডাকছে। আমি চুপিচুপি উঠে ওর কাছে গেলাম। ওর কাছে যেতেই ও আমাকে আমাকে ইশারায় বললো, ঐদিকে দেখ। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি ঠিক গতকালের মতো আজও ঐ পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে আগুনের ফুলকি উঠছে। তবে আজ কেন জানি সেই বিকট শব্দটা নেই। বাড়িটা একেবারে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আমার একবার মনে হতে লাগলো, ওখানে যা কিছু আছে সবকিছুই বোধ হয় আমার অনুমানের ভিতরেই থাকবে। আবার এটা মনে হতে লাগলো যে, সত্যি সত্যিই হয়তো কিছু একটা আছে ঐ বাড়িতে।
বেশি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি দুজন জানালার পাশে। আগুনের শিখা ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়লোনা আমার। আমি অনুপমকে বলে ঘুমাতে যাবো বলে যেইনা পা টা সামনের দিকে বাড়িয়েছি। ঠিক তখনই অনুপম আমাকে বললো, দেখ দোস্ত দেখ। ওটা কি?
আমি তাড়াতাড়ি করে তাকালাম সেদিকে, দেখলাম কালো কোট গায়ে দেওয়া একটা লোক ঐ পোড়া বাড়িটির পেছন দিক থেকে বৈরিয়ে আসছে। অন্ধাকারে লোকটির মুখের আকৃতিটা ঠিক ভালোভাবে বুঝতে পারলাম না। একটা দামি শালও তার কাঁধে ছিলো। শালটা লোকটির পিঠ বরাবর এক পাশ হয়ে অন্যদিকে নেমে গেছে। আমি দেখতে থাকলাম লোকটি কোথায় যায়। এরই মধ্যে আবার ঘটে বসলো আরেক ঘটনা। ম্যাডামের ঘুম ভেঙে গিয়ে ম্যাডাম আমাকে খুঁজতে লাগলেন। ততক্ষণে অামরা জানালার কাছ থেকে সরে পড়েছি। অনুপম তার জায়গাতে ঘুমানোর ভান ধরে শুয়ে আছে। আর আমি দরজা খোলার মতো একটা শব্দ করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি যাতে আমাকে দেখে এমন হয় যেন, আমি এইমাত্রই বাইরে থেকে আসলাম।
ম্যাডাম আমাক জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় গিয়েছিলে শ্রাবণ? আমি মাথা নিচু করে মিহি স্বরে উত্তর দিলাম, ম্যাডাম একটু প্রসাব করতে বাইরে গেছিলাম।
- আমাকে তো একবার ডাকতে পারতে!
- ম্যাডাম, দেখলাম আপনি ঘুমাচ্ছেন। তাই আর আপনাকে বিরক্ত করলাম না।
- আচ্ছা যাও শুয়ে পড়ো।
আমি চুপচাপ বাধ্য ছেলের মতো শুয়ে পড়লাম। কিন্তু আমার মনের মধ্যে কৌতুহল থেকেই গেলো, কে ছিলো ঐ লোকটা? নাকি ওটা কোন প্রেতাত্মা ছিলো! নাহ, প্রেতাত্মা হলে তো ঐ বাড়িটির বাইরে আসতোনা। বরং ভেতরেই থাকতো। ধুর, ম্যাডামের জন্য মিস হয়ে গেলো।
.
পরদিন সকালে আবার আমরা পাঁচজন বেরিয়ে পড়লাম গ্রাম ঘুরতে। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ রহমান সাহেবের সাথে দেখা। তার ছেলেমেয়ে হারানোর শোকটা এখনো যায়নি তার মধ্যে থেকে। তবে আজ কেন জানি লোকটাকে বেশ হাসিখুশি লাগছে। আমাকে দেখেই লোকটি আমাকে চিনতে পারলো।
- কেমন আছো বাবা?
- জ্বী চাচা, ভালো। আপনি?
লোকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
- আমার আর ভালো থাকা! তবে আজ আমার মনটা অনেক অানন্দিত।
- কেন?
- মমতা আসবে আজ ঢাকা থেকে।
মমতা লোকটির স্ত্রী।
- সেটাতো খুশির খবর।
- হ্যাঁ, কিন্তু....
- আপনার টেনশন হচ্ছে?
লোকটি মাথা নাড়লো। আমি বললাম
- টেনশনের কিছু নেই। যা হবার তা তো হয়েই গেছে।
লোকটি আর কোন বাড়তি কথা না বাড়িয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা পান বের করে খেতে খেতে চলে গেলো।
লোকটির পান খাওয়ার কোন জুড়ি নেই। বেশ ভালোই পান খেতে পারে। যাওয়ার সময় শুধু এটুকু বলে গেলো, তোমরা খবরদার কেউ ঐ জমিদার বাড়িতে যাবেনা। লোকটির কথায় আমার কেমন যেন তাকেও সন্দেহ হলো। ওখানে যেতে নিষেধের কথা আবার বারবার বলতে হয় নাকি। তবে এই লোকটিকে চেনা বেশ মুশকিল। গম্ভীর একটা ভাব নিয়ে কথা বলে। আমার মনের কথাটাও কিছুটা বুঝতে পারে। নাহ, এই লোকটি সম্পর্কে আমাকে আগে জানতে হবে। লোকটিকে এখন থেকে চোখে চোখে রাখতে হবে।
.
আমি অনুপমকে বললাম, দোস্ত একটু থানায় যেতে পারবি? সে বললো, কেন? থানাতে কেন? ওখানে আমাদের আবার কিসের কাজ?
আমি ওর হাতটা ধরে বললাম, চল আগে। গেলেই বুঝতে পারবি। কিছুদূর এগোতই হঠাৎ করে আশিক বলে উঠলো, শ্রাবণ আমি থানাতে যাবোনা। আমার একটু বাড়িতে ফিরতে হবে। তোরা থানাতে যা, আমি বাড়ির দিকে যাই।
- কেন? তোর আবার কি হলো? থানাতে যেতে তোর সমস্যা কি?
- না, এমনিতেই।
- আরে বল, কোন সমস্যা নেই।
- আমার চাপ এসেছে খুব।
এটা বলেই সে চাপের মিথ্যে অভিনয় করতে লাগলো। তার কার্যকলাপে আমার একটুও বুঝতে বাকি রইলোনা যে, সে বরং চাপের কারণে নয় অন্যকোনো কারণে বাড়িতে যেতে চায়ছে। কিন্তু ওকে তো আমি আর একা ছাড়তে পারিনা। তাই নাজমুল আর ফাহিমকে বললাম, তোরা ওকে বাড়ি নিয়ে যা। আমি আর অনুপম থানা থেকে আসছি।ওরা চলে গেলো আশিককে নিয়ে।
ওরা চলে গেলে আমরা থানায় গেলাম।
আমরা দুজন তো থানায় গিয়ে বেশ খানিকটা অবাক না হয়ে পারলামনা। থানাটা একটা জঙ্গলের মধ্যে। ভেতরে ঢুকে দেখি একজন ভুড়িওয়ালা লোক পুলিশের পোষাক পড়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে
শুয়ে আছে। সম্ভবত ইনিই অফিসার হবেন। আমি একটু কাশি দিলাম। পুলিশটা কাশির শব্দ শুনে ধচমচিয়ে উঠে পড়লেন। বললেন, কি চাই! আমি উনাকে বললাম, স্যার আমাদের কিছু তথ্য লাগবে ঐ পরিত্যক্ত বাড়িটি সম্পর্কে। এবার উনি কোন কথা বললেন না। খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন, ঐ বাড়ি সম্বন্ধে আমার কাছে কোন তথ্য নেই।
- আমি শুনেছি ঐ বাড়ি থেকে প্রায় সময়ই মানুষ উধাঁও হয়ে যায়। কিন্তু কেন? (আমি)
- সেটা কি করে বলবো? (পুলিশ)
- কেউ আপনার কাছে ঐ বিষয়ে কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি?
- হুম এসেছিলো। কিন্তু আমি তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি। আমি চাইনা অন্যের সাথে যা ঘটেছে, তা আমার সাথেও ঘটুক।
- ধন্যবাদ স্যার, আসি এখন। পরে কোন সাহায্য লাগলে আপনাকে জানাবো।
- অবশ্যই।
আমরা চলে এলাম থানা থেকে। লোকটি পুলিশ হওয়া স্বত্ত্বেও তার মধ্যে প্রচুর ভয় কাজ করছে, সেটা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো।
আমি আর অনুপম বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছি। ঠিক সেমসময় হাবিলদারের সাথে দেখা। হাবিলদার মনের সুখে সিগারেট টানতে টানতে সাইকেলে চড়ে গান গাইতে গাইতে থানার দিকেই যাচ্ছে। তার এমন খুশির কারণটা আমি অনুমাণ করতে পারলাম না।
বাড়ি ফিরে দেখি বাড়িতে কেউ নেই। আমি অনুপমকে জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত ম্যাডাম কই, আর বাকিরাই বা কই? সে কোন উত্তর দিতে পারলোনা। সে শুধু বললো, আমি তো তোর সাথেই ছিলাম এতক্ষণ। আকবর সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয়ে ম্যাডাম এবং বাকিদের খুজতে যাবো। ঠিক তখনই অচেনা একটি লোক, এর আগে যে লোকটি আমাদের ধমকের সুরে বাড়িটিতে যেতে নিষেধ করেছিলো এবং পরে আমার হাসি মাখা কথা শুনে ভয় পেয়েছিলো সেই লোকটি আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। লোকটির মুখেও প্রাণখোলা হাসি.....
.
অপেক্ষা করুন পঞ্চম পর্বের।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২৪

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.