নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিত্যাক্ত বাড়ি

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭

পরিত্যাক্ত বাড়ি
পর্ব-৫
.
লোকটির মুখেও প্রাণখোলা হাসি। এই লোকটির হাসির কারণটাও ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। এদিকে ম্যাডাম, আশিক আর অন্যরা সবাই কোথায় গেছে সেই চিন্তাতে আমি বিভোর। আর এই সময় লোকটি এখানে প্রাণখোলা হাসি দিচ্ছে। তার এই হাসিটা কেন যেন আমার শরীরে বিধলো। মোটেও পছন্দ হচ্ছিলোনা তার এই হাসিটা আমার।
আমি অনুপমকে বললাম, চল এখান থেকে। ম্যাডাম আর অন্যদের খুঁজে দেখি। ইশ! আজকে সবাই একসাথে ঘুরতে বের হয়েছে আর আমরা দুজন ফাকিতে পড়ে গেছি। তবে আমাদের বেড়ানোর মতো তাদের বেড়ানোটা মোটেও বেশি আনন্দের হবেনা। আমার সাথে যারা আজ পর্যন্ত ঘুরতে বেড়িয়েছে তারা কেউ না কেউ এমন কিছু দেখেছে আমার সাথে থেকে যা তারা আগে কখনো দেখেনি। এইতো প্রায় কয়েকমাস আগের কথা। আমি তখন গ্রীষ্মের ছুটিতে বাবা মায়ের সাথে নানীর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার কয়েকটা মামাতো ভাই ছিলো। যে আমাদের সবার থেকে বড় ছিলো, তার নাম অয়ন। আর যে ছোট ছিলো তার নাম সিহাব। আর আমি ছিলাম এদের দুজনের থেকেও ছোট। ওরা দুজন আমাকে খুব করে পঁচাতো। তবে আমি তেমন কিছুই বলতাম না ওদের। আমি ছোট বলে তারা আমাকে দিয়ে প্রায় সব কিছুই করাতো। বলতো, শ্রাবণ ওটা নিয়ে আয়তো, এটা করতো। ওখানে যাস না, এখানে যাস না। এরকম অনেকিছুই বলতো। তবুও আমি বিরক্ত হতাম না। আমাকে কোন প্রকার বিচলিত হতে না দেখে ওরা একসময় আমাকে আর বিরক্ত করতোনা।
সেদিন ভোরবেলা হঠাৎ সিহাব আমাকে ডাক দিয়ে বললো, শ্রাবণ.. শ্রাবণ... এই শ্রাবণ ওঠ ওঠ। আমি হুড়মুড় করে উঠে পড়লাম তার ডাক শুনে। এই অসময়ে তার এমন করে ডাকার কোন মানেই হয়না। একরাশ রাগ আর বিরক্তি নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কিছু বলবে ভাইয়া? সে তখন বললো, আরে কিছু বলবোনা মানে? কিছু বলার জন্যই তো তোকে এই ভোরবেলায় ডেকেছি। আমি বললাম, তাহলে কি বলবে বলে ফেলো। আমার ঘুম পাচ্ছে খুব। ঘুমাবো আমি।
- আরে বাবা একটু পরে ঘুমাও না। আমার সাথে একটু এসো এদিকে।
আমি সিহাবের কথার মধ্যে কিছু একটা টের পেলাম। আজকে সে আমাকে তুমি করে বলছে। নিশ্চয় কোন ঘাপলা আছে। তার নিঃশ্বাসটা বেশ ভারি। কথাও বলছে থেমে থেমে। কিন্তু কেন? আমি ওর পিছু পিছু গেলাম। ও আমাকে ওদের বাড়ির দক্ষিণ দিকটাতে নিয়ে গেলো। সেখানেও একটা ঘর রয়েছে। সেই ঘরে অয়ন থাকে। সিহাব আমাকে বললো, তুই চুপিচুপি আমার সাথে ভাইয়ার ঘরে ঢুকে পড়। যেনো কেউ দেখতে না পায়। আমি সিহাবের কথা শুনে আবার অবাক হলাম। এই মাত্র সে আমাকে তুমি করে ডাকলো আর এখন আবার তুই করে ডাকছে। ব্যাপারটা কি!
আমি বললাম, যদি অয়ন ভাইয়া দেখে ফেলে, তবে? সে একটা ছোটখাটো হাসি দিয়ে বললো, আরে অয়ন ভাইয়ার কথাতেই তো তোকে ডাকতে গেছিলাম। কয়েকদিন ধরে একটা জিনিস আমাদের খুব জ্বালাচ্ছে। আমরা ভয়ের কারণে ঠিক সেটার কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা। বাবা মাকেও বলতে পারছিনা কথাটা।
ওর মুখে ভয়ের কথা শুনতেই আমার মনে এক প্রকার কৌতুহল জাগলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে। তখন অয়ন ভাই আমাকে বললো এদিকে আয়। আমি অয়ন ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম। সে আমাকে তার ঘরের ছোট্ট একটা ফুটো দেখিয়ে বললো, এইখান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখ। আমি তার কথামতো ঐ ছোট্ট ফুটো দিয়ে বাইরে তাকালাম। বাইরে তাকাতেই আমার চোখটা আটকে গেলো তাদের পুকুর পাড়ের বড় আমগাছটার দিকে। আমগাছের সাথে কিছু একটা আছে, সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কি আছে, সেটা স্পষ্ট না। অয়ন ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কিছু দেখলি? আমি ফুটো দিয়ে ওদিকে তাকিয়েই উত্তর দিলাম, ভাইয়া দেখলাম। কিন্তু একটু ভালোভাবে দেখতে হবে। তা নাহলে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা ওখানে কি রয়েছে!
এবার অয়ন ভাই আর সিহাব দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে কি যেন ইশারাতে বলাবলি করলো। তারপর সিহাব আমাকে তাদের পুকুরপাড়ের দিকে যে জানালাটা আছে সেখানে নিয়ে গেলো। আমি খেয়াল করে দেখলাম, জানালাটা বেশ শক্ত করে আটকানো। যেন কেউ সহজে খুলতে না পারে। আমি সিহাবের থেকে এর কারণ জানতে চাইলাম। কিন্তু সিহাব কোন উত্তর দিলোনা। তবে আমি অনুমাণ করলাম, তারা হয়তো কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে। আর তার জন্যও এই জানালাটা একেবারে বন্ধ করে রেখেছে।
জানালা খোলা শেষ হলে সে আমাকে বললো, এবার দেখ তো! আমি জানালা দিয়ে উঁকি মারলাম। দেখলাম ঐ আমগাছটার সাথে হেলান দিয়ে সাদা কাপড় পড়ে কে যেন একেবারে চুপচাপ নিঃশব্দ পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটুও নড়ছেনা কথাও বলছেনা। আমি তখন বুঝে গেলাম সিহাব কেন এই জানালাটা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিলো! গাছটার উপরে তাকাতেই আমি সব বুঝে গেলাম, আসলে কি চলছিলো ওখানে। অয়ন ভাইকে বললাম, ভাইয়া তোমার কাছে টর্চ লাইট আছে? সে বললো, আছে। আমি তাকে টর্চ লাইট আনতে বলে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সিহাব আমার এমন হাবভাব দেখে বললো, তুই কি বাইরে যাবি? আমি শুধু বললাম, শুধু আমি না তুই এবং অয়ন ভাইয়াও যাব। অয়ন টর্চ নিয়ে চলে এলো। আমি অয়ন আর সিহাবকে সব শিখিয়ে দিলাম। এও বললাম যে, কোন প্রকার গাফিলতি যেন না হয়! ওদের দুজনকে আমি গাছটি থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে বললাম। আর আমি সোজা গিয়ে গাছের নিচে দাঁড়ালাম। আমার গায়ে কালো একটা গেন্জি থাকায় অন্ধাকারে আমাকে দেখাই যাচ্ছিলোনা। আমি গাছের নিচ থেকে একটু গলাটা ঝেড়ে রুমালটা মুখে দিয়ে কন্ঠস্বর মোটা করে বড়দের কন্ঠে বললাম, কি ভাই ভালোই তো বুদ্ধি আপনার। তা এই কাজ কবে থেকে শুরু করলেন? আমার কথা গাছের উপরে থাকা আম চোর ব্যাক্তিটি হুড়মুড় করে গাছে থেকে নেমে এলো। এসেই আমার পা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, চাচা আমি কিছু করিনি, আমি কিছু করিনি। আমি ব্যাক্তিটির দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম এটা অয়নদের পাশের বাড়ির আব্দুলের ছেলে রাশেদ। ওর মুখে চাচা ডাক শুনে আমি অতি কষ্টে আমার হাসিটা চেপে ধরে রাখলাম। ওর মুখে চাচা ডাক শুনে আমি আজ বুঝতে পারলাম, চোর ধরা পড়লে ভাইকেও বাপ ডাকে। আমি রাশেদকে বললাম, ভাই আপনে কিছু করেন নি সেটা আমি জানি। তো চলুন আমগুলো গুছিয়ে নিন। আপনাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আসি। সে আমগুলো গুছিয়ে ব্যাগে ভরে সাদা কাপড়ে জড়ানো ম্যানি কুইনটি হাতে নিলো। আমি বললাম চলুন এবার। আমার কথা শুনে রাশেদ বেশ অবাক হয়েছে এটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সে আমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করতে পারছেনা।
আমগুলো নিয়ে কিছুদূর এগোতেই আমি অয়ন আর সিহাবকে ইশারা করলাম। আর সাথে সাথে তারা বেরিয়ে এলো। তারা আমার একটা ডাকের অপেক্ষাতেই ছিলো।
বেরিয়ে এস সোজা তারা রাশেদকে বেঁধে ফেললো। ঘটনার অাকস্মিকতায় রাশেদ বেশ ভয় পেয়ে গেলো। সে আমার দিকে তার চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তার চোখের ভাষাটা আমি জানি। সে বলছে, এটা কি হলো ভাই? আমি তার চোখের ভাষার সেই প্রশ্নটার সরাসরি জবাব দিলাম, বারেবারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এবার তুমি খেয়েছো ধরা, চলে যাবে এবার তোমার প্রাণ।
.
.
আমি লোকটির অমন বিশ্রী হাসি দেখে সেখান থেকে ছোট ছোট পায়ে সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ঠিক তখনই অনুপম আমাকে ডাক দিয়ে বললো, শ্রাবণ শোন। আমি ঘুরে তার কাছে গেলাম। লোকটি ততক্ষণে সামনের দিকে হাঁটা ধরেছে। তার কাছে যেতেই সে আমাকে বললো, তুই গতরাতে বলেছিলি না যে, গেটের ওপাশ থেকে হঠাৎ কে যেন চলে গেলো। আর আমি তাকে দেখেছি কিনা?
আমি উত্তর দিলাম, হ্যাঁ বলেছিলাম তো।
ঠিক তখনই আমার মাথায় এলো, এই লোকটই কি সেই লোকটি? আমি তাড়াতাড়ি করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলাম না। লোকটি চলে গিয়েছে।
আমি অনুপমকে বললাম, চল দেখি ম্যাডাম আর ওরা কোথায় গেছে। আমি আর অনুপম হাঁটছি সামনের দিকে। হঠাৎ করেই অনুপম আমাকে বলে উঠলো, দোস্ত এই লোকের হাসিটা কিন্তু আমার কাছে কেমন যেন সন্দেহজনক লাগলো। আবার তুই খেয়াল করলে দেখতে পাবি ঐ হাবিলদারের মুখেও কিন্তু বেদম হাসি ছিলো। আমি অনুপমের কথাটা তেমন একটা মাথায় নিলাম না। কারণ ওর বলা কথাটি আমি অনেক আগেই ভেবে ফেলেছি। সামনে তিন রাস্তার একটা মোড়। একটা রাস্তা সোজা এই গ্রাম ছেড়ে শহরে দিকে গেছে, আর একটা এখান থেকে ঐ পোড়া বাড়িটির দিকে। আর তৃতীয়টাতে আমরা দাঁড়িয়ে। এটাকে রাস্তা বললে ভুল হবে, মেঠো পথ বলা যেতে পারে। সেখান থেকে আমরা হাতের ডান দিকের পথটা ধরে এগোচ্ছি। ঠিক সেসময় হঠাৎ ম্যাডাম আর পিচ্চিরা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। যদিও আমিও পিচ্চি।
ম্যাডামের চোখে পানি, সাথে ভয়। কিছু তো একটা হয়েছে এটা আমি শিওর। ম্যাডামকে বলতে যাবো, কি হয়েছে ম্যাডাম!
কিন্তু আমার বলার আগেই ম্যাডাম বলে উঠলেন, শ্রাবণরে আমি এখন কি করবো? কান্না জুড়ে দিয়েছেন ম্যাডাম। আমি উনার এমন অবস্থার কারণটা উপলব্ধি করলাম। হ্যাঁ অামার ধারণাটাই ঠিক ছিলো। আশিক নেই। আমি একবার সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম। আরো দুইজন নেই। হয়তো ম্যাডাম সেটা লক্ষ করেন নি। আশিক, সোমা আর ফাহিম এই তিনজনই নেই। ঘটনাটা পরিষ্কার করে জানার জন্য আমি ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে ম্যাডাম? ম্যাডাম কান্না করতে করতে উত্তর দিলেন, তোমার স্বপ্নটাই ঠিক ছিলো। আমি চাইনি আশিককে একাকী ঘুরতে দিতে। আশিক যখন আমাকে বললো, ম্যাডাম আমি একটু বাইরে ঘুরতে যাবো। তখন আমি তোমার কথা বলেছিলাম। আমি বলেছিলাম, শ্রাবণ আসুক তারপর তার সাথে ঘুরতে যাস। কিন্তু সে তখন শোনেনি আমার কথা। তাই আমি ওর সাথে সোমা আর ফাহিমকে পাঠালাম। কিন্তু দেখো তবুও আশিক নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো। আচ্ছা শ্রাবণ, আশিক ঐ পোড়া বাড়িতে যায়নি তো? আমি ম্যাডামকে বললাম, আপনি লক্ষ করলে দেখবেন সোমা আর ফাহিমও কিন্তু নেই। তারাও আশিকের সাথে নিরুদ্দেশ হয়েছে। আমার এ কথা শুনে ম্যাডাম এবার সবার দিকে তাকালেন। তাকিয়েই তিনি আরও অবাক হলেন। আসলেও তো তাই। সোমা আর ফাহিমও নেই।
আমি ম্যাডামকে বললাম, তারা কিছু বলে যায়নি? তারা কোথায় গেছে বা কোথায় যাচ্ছে! ম্যাডাম কান্না কান্না চোখে না সূচক মাথা নাড়লেন। আর বললেন, ওরা শুধু এটুকু বলে গিয়েছিলো, ওরা বেড়াতে যাচ্ছে। আচ্ছা শ্রাবণ ওরা ঐ পোড়া বাড়িতে যায়নি তো? আমি ম্যাডামকে এই কথার কোন উত্তর দিলাম না। কারণ আমি জানি আশিক ঐ পোড়া বাড়িতেই গেছে। আমি শুধু ম্যাডামকে স্বান্ত্বনা স্বরুপ বললাম, আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আশিক, সোমা, ফাহিম, এরা সবাই ফিরে আসবে। আপনি এদেরকে নিয়ে আকবর সাহেবের বাড়িতে যান আমি আর অনুপম একটু পরে আসছি। ম্যাডাম ভয়ার্ত কন্ঠে বললেন, তোমরা আবার হারিয়ে যাবেনা তো? আমি খানিক হেঁসে বললাম, আপনি চিন্তা করবেন না।
.
আমি অনুপমকে বললাম, দোস্ত রেডি থাকিস। আগামীকাল আমরা ঐ পোড়া বাড়িতে যাবো। আমি আর অনুপম ধীরে ধীরে হাঁটছি আর কথা বলছি। হঠাৎ তখন আমার মনে হলো কে যেন আমাদের পিছু পিছু আসছে। আমি পেছনে তাকালাম দেখলাম কেউ নেই। আবার হাঁটতে থাকলাম দুজনে। এবারও মনে হলো কে যেন আমাদের পেছন পেছন আসছে। আমি এবার পেছন দিকে তাকানোর আগেই পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো, বাবা দেখোতো আমার ছেলে মেয়ে সেখানে আছে কিনা? আমি এবার পেছনে তাকিয়ে অবাক থেকে অধিক অবাক হলাম। লোকটি জানলো কেমন করে যে, আমরা ঐ পোড়া বাড়িটিতে যাবো! লোকটির ছেলে মেয়ে হারিয়েছে প্রায় দেড় মাস হবে। আমি টপিক পাল্টিয়ে বললাম, চাচা আপনার স্ত্রী কি এসেছে এখানে। লোকটি খানিক চুপ থেকে উত্তর দিলো, না এখনো আসেনি। তবে চলে আসবে। আর শোনো যেকোনো প্রকার সাহায্যের দরকার হলে আমাকে বলবে। সেটা টাকা পয়সা হোক কিংবা এমনি কোন শারীরিক সাহায্য হোক। আমি লোকটির কথায় ছোট্ট করে শুধু 'হুম' বললাম। আমি একবার বলতে চাচ্ছিলাম, আচ্ছা চাচা আপনি কি বিশ্বাস করেন ভূত বলতে কিছু আছে? কিন্তু একটি কারণে বলতে পারলাম না। কারণ এই লোকটিও আমাদের সন্দেহের কাতারে। লোকটির মধ্যে অদ্ভুত একটা গুন আছে। আর সেটা হলো, লোকটি মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে।
তবে শুধু আমার কথায় কেন? অন্য সবার কথাও তো বোঝার কথা। কিন্তু অন্য সবারটা না বুঝে শুধু আমারটা বোঝে কিভাবে? বড় অদ্ভুত। আমি আর অনুপম লোকটির সাথে আর কোন কথা না বাড়িয়ে পেছন দিকের পথ ধরলাম। আমরা আকবর সাহেবের বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছি মাত্র। ঠিক তখনই লোকটা আবার বলে উঠলো। তুমি খুব চঞ্চল। একমাত্র তুমিই পারবে ঐ পোড়া বাড়িটির আসল রহস্য উদঘাটন করতে।
"আচ্ছা, এখানে আসল রহস্য আসলো কোথা থেকে? আর 'আসল রহস্য' কথাটি দ্বারা উনি কি বোঝাতে চাইছেন? তাহলে কি উনিও আমার মতো বিশ্বাস করেন যে, ঐ পরিত্যক্ত, পোড়া বাড়িটিতে কোন ভূত নয় বরং অন্যকিছু আছে!" মনে মনে বললাম কথাটা আমি।
নাহ! এই লোকটিকে এখন থেকে চোখে চোখে রাখতে হবে। এই লোকটি আসলে কে? সে কি আসলেও কোন মানুষ নাকি অন্যকিছু সেটা আমার দেখতে হবে। এর আগেও লোকটিকে চোখে চোখে রাখার কথা বলে আর রাখা হয়নি। প্রথমত এই লোকটি, দ্বিতীয়ত হাবিলদার আর তৃতীয়জন হলো ঐ হাসি দেওয়া লোকটি, এই তিনজকে একটু ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এই তিনজনকেই প্রায় সময় ঐ পরিত্যক্ত বাড়িটির আশেপাশে দেখা যায়। হাবিলদার না হয় তার দায়িত্ব পালন করে রহমান সাহেব অর্থ্যাৎ ছেলেমেয়ে হারানো লোকটি না হয় তার ছেলেমেয়ে হারানোর জন্য সেখানে যায়। কিন্তু এই তিন নম্বর লোকটি কি করতে সেখানে যায়? তার কি ভয় করেনা? সবাই তো জানে সেখানে গিয়ে যে একবার বাড়িটির মধ্যে ঢোকে সে আর কখনো ফিরে আসেনা। তবে তারা যায় কেন?
আর এখন পর্যন্ত ঐ লোকটির কোনো হদিশ পেলাম না। যে লোকটিকে সেদিন রাতে কালো কোট পড়ে ঐ পোড়া বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছিলাম। লোকটির গায়ে একটা শাল চাদরও ছিলো। কিন্তু কে সেই লোকটি?
এই চারজন ছাড়া আর কাউকেই তো দেখিনা ঐ বাড়িটির কাছে যেতে। গ্রামের সব মানুষ বলে বাড়িটি পরিত্যক্ত, পোড়া বাড়ি। সেটা একটা অভিশপ্ত বাড়ি। বাড়িটিতে নাকি জমিদার আর তার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটেছিলো আগুনে পুড়ে। আর তার পর থেকেই নাকি বাড়িটিতে প্রতি রাতে আগুনের লাভা দেখা যায়। গ্রামবাসীর এ কথাটিও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তাদের এসব কথা শুনলে মাঝে মাঝে মনে হয়, ঐ বাড়িটিতে সত্যি সত্যিই কোন ভূত টূত আছে। এখন থেকে প্রতি রাতে খেয়াল রাখতে হবে বাড়িটিতে কি হয়। গ্রামবাসীর থেকে যখন বাড়িটি সম্বন্ধে কোন কিছু শুনি তখন আমার মনের মধ্যেও ভয় ঢুকে যায়। অনেকদিন আগে আমার সেই মামাতো ভাই অয়ন আমাকে বলেছিলো, শ্রাবণ তোর সাহসটা একটু বেশি। তবে সে সাহস আবার অপরিচিত কোন জায়গাতে গিয়ে দেখাতে যাস না যেন। তবে সেদিন আর রেহায় পাবিনা।
অয়ন ভাইয়ের এই কথাটি মনে পড়তেই আমার মনে হাজারও ভয় এসে বাসা বাধতে শুরু করলো। আমি দোটানায় পড়ে গেলাম, ঐ পোড়া বাড়িতে আমার যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা। যদি না যায় তাহলে তো ঐ বাড়ি সম্বন্ধে কিছুই জানতে পারবোনা। একদিকে ভয়ও কাজ করছে অন্যদিকে মনে হচ্ছে বাড়িটিতে ভূত, প্রেত্মাতা বলতে কিচ্ছু নেই।
আমরা আকবর সাহেবের বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করেছি। আর মাত্র মিনিট দশেক হাঁটলেই বাড়িতে পৌছে যাবো। এমন সময় কিছু গ্রামবাসী আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। গ্রামবাসীগুলো সবাই বয়স্ক। প্রায় সবার বয়সই ৫০ পেরিয়ে গেছে। তাদের সবাইকে আমাদের দিকে আসতে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। সাথে ভয়ও পেলাম। সময়টাও দুপুর, সূর্যটাও একেবারে ঠিক মাথার উপরে। শুনেছি এই সময়ে ভূত প্রেতাত্মারা নাকি বাইরে বের হয়। এতগুলো বয়স্ক গ্রামবাসীদের একসাথে দেখে ভয় ঢুকে গেলো আমার ভেতরে।
তারা কি কিছু বলবে আমাকে?
.
.
অপেক্ষা করুন ষষ্ট পর্বের।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৭

বিজন রয় বলেছেন: আপনার এই সিরিজ সময় নিয়ে পড়তে হবে।

পোস্ট দিতে থাকুন।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৩৩

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.