নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিত্যাক্ত বাড়ি

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৩১

পরিত্যাক্ত বাড়ি
পর্ব-৬
.
সময়টাও দুপুর, সূর্যটাও একেবারে ঠিক মাথার উপরে। শুনেছি এই সময়ে ভূত প্রেতাত্মারা নাকি বাইরে বের হয়। এতগুলো বয়স্ক গ্রামবাসীদের একসাথে দেখে ভয় ঢুকে গেলো আমার ভেতরে।
তারা কি কিছু বলবে আমাকে?
নাহ! তাদের দেখেতো সেরকম মনে হচ্ছেনা।  তারা প্রেতাত্মা হতেই পারেনা। ক্রমেই তারা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। বিষয়টা আমার কাছে সুবিধার মনে হলোনা। ভাবতেছি পেছন দিকে দৌড় দিবো কিনা! যদি দৌড় দিই তাহলে আবার আরেক সমস্যাই পড়তে হবে। লোকগুলো যদি প্রেতাত্মা না হয়ে মানুষই হয় তবে তো পরে তারা জিজ্ঞেস করবে, আমি দৌড় দিয়েছিলাম কেন?
ভাবতে ভাবতেই তারা একেবারে আমাদের কাছে এসে গেলো। আমি অনুপমকে ইশারা দিয়ে বললাম দৌড় দিবো কিনা। কিন্তু সে আমার ইশারাটায় বোঝেনি। লোকগুলো আমাদের কাছে এসে খুবই ভদ্রতার সহিত জিজ্ঞেস করলো, বাবা তোমাদের বন্ধুরা নাকি ঐ পোড়া বাড়িতে ঢুকে সেখান থেকে গায়েব হয়ে গেছে? আমি লোকগুলোর কথার কোন উত্তর দিলাম না। তবে আমার ধারণাই ঠিক ছিলো। আশিক, সোমা এবং ফাহিম, এরা তাহলে ঐ পোড়া বাড়িতেই গেছে। কিন্তু হঠাৎ এই বয়স্ক লোকগুলো আমাদের এই কথা জিজ্ঞেস করলো কেন? এর উত্তরটা আমি নিজে নিজেই ভাবতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার ভাবাভাবির অন্তে লোকগুলো বলে উঠলো, তোমাদেরকে আগেই বলা হয়েছিলো যে, তোমরা ঐ বাড়িটির ধারের কাছেও যেওনা। কিন্তু তোমরা কি করলে?
তোমরা আমাদের কথাকে বিশ্বাস না করে, উপেক্ষা করে উল্টো আমাদেরই জ্ঞান দিতে বৈঠক ডেকেছিলে। আমরা মূর্খ হতে পারি, আমরা কুসংস্কারে বিশ্বাসি হতে পারি। কিন্তু এই কুসংস্কারই যদি সত্যি হয় তবে আমাদের বিশ্বাসে কোন ভুল নেই। তোমরা বলেছিলে, ভূত প্রেত বলতে কিছু নেই। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি ভূত প্রেত সবই আছে। আর তার চাক্ষুষ প্রমাণ ঐ জমিদার বাড়িটি। আজ পর্যন্ত সেখানে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ গিয়েছে, কিন্তু কেউই আর ফিরে আসেনি। প্রথম যেদিন আমার ছোট ছেলে হারিয়ে যায়, সেদিন আমি তাকে খুঁজতে গিয়ে একজনের থেকে জানতে পারি আমার ছেলেকে নাকি সে ঐ পরিত্যাক্ত বাড়িটির পাশে খেলা করতে দেখেছে। সাথে তার বন্ধুরাও ছিলো। শুধু আমার ছেলেই নয়, প্রায় অনেকের ছেলে সেদিন গ্রাম থেকে উধাঁও হয়ে যায়। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ঐ পোড়া বাড়িতে যাবো। দেখবো সেখানে আমাদের ছেলেরা আছে কিনা। কিন্তু যাওয়ার পথে বাঁধা পেয়ে আমরা আর সেদিকে এগোইনি।
লোকটি অনর্গল কথাগুলো বলেই চলেছে। আমি লক্ষ করে দেখলাম লোকটির চোখে পানি। শুধু ঐ লোকের চোখেই পানি তা কিন্তু নয়। সবার চোখেই পানি। আমি কথা বলা লোকটির উদ্দেশ্যে বললাম, তো চাচা আপনারা কিসের বাঁধা পেয়েছিলেন মানে কি এমন দেখে সেখানে আর যান নি? নাকি আপনারা তখন জানতে পেরে গিয়েছিলেন যে, ওখানে জমিদার এবং তার স্ত্রীর আত্মা থাকে?
লোকটি তখন কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, বাবা সে অনেক কথা। তুমি শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে যাবে।
তখন আমি বললাম, চাচা কোন সমস্যা নেই,  আমি শুনতে পারবো। আপনি বলুন।
লোকটি তখন আমাকে আর অনুপমকে বললো, আসো আমাদের সাথে। আমি আর অনুপম লোকগুলোর সাথে যাচ্ছি। তারা রাস্তার ধারে ঘাস জন্মানো উঁচু জায়গা দেখিয়ে বললো, এখানে বসো তোমরা।
আমি আর অনুপম বসে পড়লাম সেখানে। সাথে সেই বয়স্ক লোকগুলোও বসলো। বসার পরে কিছুক্ষণ নিরবতা চলতে থাকলো সবার মাঝে। আর সেই নিরবতাকালীন সময়ে আমি এই বয়স্ক লোকগুলোর হঠাৎ করে আমাকে এসব কথা বলার কারণটা জানতে চেষ্টা করলাম আর জেনেও ফেললাম। আমাকে এসব কথা বলার পেছনে কারণ একটাই। আর সেটা হলো, এখন পর্যন্ত যা হয়েছে তা তো হয়েছেই। আর যেন কোনো কিছু না হয়। মানে আমার বন্ধুরা এবং গ্রামবাসীর ছেলেমেয়েরা যারা ঐ পোড়া বাড়িতে গিয়ে উধাঁও হয়েছে, তারা তো আর কখনো ফিরে আসবেনা। কিন্তু আর কেউ যেন ঐ বাড়িতে না যায় সেজন্যই লোকগুলো আমাকে আর অনুপমকে এসব কথা বলছে।
.
আমরা সবাই রাস্তার ধারে ঘাসের উপরে বসে আছি। এবার ঐ বয়স্ক লোকগুলোর মধ্যে থেকে একজন লোক বলতে শুরু করলো "আমরা যখন আমাদের ছেলেমেয়েদের খুঁজতে ঐ বাড়িটির দিকে যাচ্ছিলাম ঠিক তখন আমাদের গ্রামের মুন্সি আমাদের পথ আঁটকে দাঁড়ালো।"
লোকটা মুন্সির কথা বলতেই আমি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, এই মুন্সিটা আবার কে? তখন লোকটি বললো, তুমি তাকে  চিনবেনা বাবা। মুন্সি আমাদের গ্রামের সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি। ওর সাহসের তারিফ না করলেই নয়। বেদম সাহসের অধিকারি সে। আবার চতুর লোকও বটে। সে যখন আমাদের ঐ বাড়িতে যেতে নিষেধ করলো তখন আমরা ভাবলাম সে এতো সাহসী লোক হওয়া স্বত্ত্বেও যখন নিষেধ করছে, তখন হয়তো আমাদের সেখানে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। কিন্তু আমাদের মনও সাঁই দিচ্ছিলো না। মুন্সি আমাদের বারবার নিষেধ করছিলো ঐ বাড়িটিতে না যেতে। তবুও আমাদের মধ্যে থেকে আশরাফ মিয়া আর সাহেদ ব্যাপারি এই দুইজন তাদের ছেলেকে ফিরে পাবার জন্য মুন্সির কথা অমাণ্য করে বাড়িটির ভেতরে যায়। আর আমরা তখন বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকি, কখন তারা আসবে!
কিন্তু মিনিট যায়, ঘন্টা যায়, ঘন্টার পর ঘন্টা যায়, তবু তারা দুজন ফিরে আসেনা। তাদের ফিরে না আসতে দেখে আমরাও যখন বাড়িটির দিকে পা বাড়ালাম, ঠিক তখন ঐ মুন্সি আমাদের আবার নিষেধ করলো, আমরা যেন ঐ বাড়িটিতে না যাই। পরে আমরা আর সেখানে যাইনি। আমাদের ছেলেমেয়েদের কোন হদিসও আর পাইনি।
তাই আমরা চাইনা যে, আর কেউ ঐ পোড়া বাড়িতে যাক, কেউ অকালে প্রাণ হারাক। আমাদের ছেলেমেয়ে চলে যাওয়ার পর থেকে আমরা আমাদের গ্রামের সব বাচ্চাদের নিষেধ করে দেই, কেউ যেনো ওদিকে না যায়। তারপর থেকে আর কেউ ওদিকে যায়নি। কিন্তু একমাস আগে আমাদের গ্রামের রহমান সাহেব শহর থেকে তার ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ঘুরতে আসে। আহা, বেচারার কপালটাও খারাপ ছিলো, তার ছেলে মেয়ে দুজনই ঐ বাড়িটির মধ্যে থাকা প্রেতাত্মাদের স্বীকার হয়। রহমান সাহেব লোকটি বেশ অদ্ভুত। মানুষের মনের কথা বোঝার ক্ষমতা রাখে সে। তার ছেলেমেয়ে হারিয়ে যাওয়া স্বত্ত্বেও তার মনে বিন্দু মাত্র শোক দেখিনি। সে খুব ধৈর্যশীল এবং খুব শক্ত প্রকৃতির লোক। আমাদের মতো সে এতো সহজেই কান্না করে না। আমি মাঝে মাঝে খেয়াল করে দেখি লোকটি প্রায় প্রতিদিন বিকেলবেলা ঐ বাড়িটির আশেপাশে ঘুরঘুর করে। হয়তো তার ছেলেমেয়েকে ফিরে আবার আশায়!
.
"সংক্ষেপে সেই বয়স্ক লোকগুলো আমাদের পুরো ঘটনাটা বলে। লোকগুলোর কথা শুনে আমার মনে ভয় জাগ্রত হতে থাকে। তাহলে কি আমার ঐ বাড়িটিতে যাওয়া হচ্ছেনা? যদি আমি এই লোকগুলোর কথা না শুনে অন্যদের মতো ঐ পোড়া বাড়িতে গিয়ে আর ফিরতে না পারি তখন কি হবে আমার! সবকিছু গোলমাল মনে হচ্ছে আমার কাছে। প্রথমে পুরো ব্যাপরটাকে একদম পরিষ্কার মনে হয়েছিলো। কিন্তু এই লোকগুলোর কথাতে এখন আর কোনো কিছুই পরিষ্কার মনে হচ্ছেনা।
তবুও আমাকে যেতে হবে সেখানে। আশিক, সোমা আর ফাহিমকে উদ্ধার করতে হবে। ম্যাডামকে যে আমি কথা দিয়েছি, আশিক এবং অন্যদেরকে উনার কাছে ফিরিয়ে আনবো।"
সেই রাস্তার ধারের ঘাসের উপর বসেই এসব ভাবছি আমি। বয়স্ক লোকগুলো মাত্রই উঠে চলে গেলো। লোকগুলো যেতেই আমি অনুপমকে জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত এই মুন্সি নামের লোকটিকে কি চিনিস তুই? অনুপম আমার প্রশ্ন করার সাথে সাথে উত্তর দিলো, চিনবোনা কেন? একেবারে ভালো করেই চিনি। লোকটি আসলেও চতুর বটে।
এই মুন্সি লোকটিকে দেখলেই না আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।
অনুপমের মুখে মুন্সি নামের লোকটির কথা শুনে আমার মনে কৌতুহল জাগলো লোকটিকে দেখার। কে এই মুন্সি? লোকটা সাহসী আবার চতুর। তাহলে তো একবার  দেখতে হবে লোকটিকে! আমি অনুপমকে বললাম, তাহলে বল কে এই মুন্সি?  যে ঐ পরিত্যাক্ত বাড়িটিতে যেতে বাধা প্রদান করেছিলো?
অনুপম আমার প্রশ্নের উত্তরে যা বললো, তা বেশ অকল্পনীয়। আবার বেশ হাস্যকরও বটে। আমি খানিকটা হেসে নিয়ে ওকে বললাম, বেশি কথা না পেঁচিয়ে সোজা সাপটা বলে ফেল, কে এই লোকটি? আমার এই কথাটা শুনে অনুপমও একগাল হেঁসে নিলো। তারপর সে বলতে শুরু করলো, ঐ যে সেদিন আকবর সাহেবের বাড়ির গেটের ওপাশ থেকে যে লোকটি আড়ি পেতে আমাদের কথা শুনছিলো। আর তুই আমাকে বলেছিলি যে, আমি ঐ লোকটিকে দেখেছি কিনা! আবার আরেকদিন যে লোকটি তোর হাসি মাখা কথাতে ভয় পেয়েছিলো, আর আজকে যে লোকটি আমাদের সামনে প্রানখোলা হাসি দিয়ে চলে গেলো। সেই লোকটিই এই মুন্সি।
অনুপমের কথা আমার বিশ্বাস হচ্ছিলোনা। কেননা ঐ লোকটি তো নিতান্তই ভিতু। সে আবার সাহসী হলো কবে? তবুও লোকটিকে একটু চোখে চোখে রাখতে হবে। এ পর্যন্ত শুধু রহমান সাহেবকে চোখে চোখে রেখে জানতে পেরেছি, রহমান সাহেব লোকটি একদম ভালো মানুষ। বাকি আছে আর মাত্র তিনজন। মুন্সি, আকবর সাহেব আর হাবিলদার। এর মধ্যে হাবিলদার আর মুন্সিকে আমার বেশ সন্দেহ লাগে। আকবর সাহেবকে তেমন একটা সন্দেহ লাগেনা, তবে উনি কি কাজ করেন এটা নিয়ে আমার মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে। আর উনি প্রায় সারাদিন বাড়িতেই  থাকেন, রাত হলেই বেড়িয়ে পড়েন। আবার কিছুক্ষণ বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। তো, আকবর সাহেব এই রাতের বেলা কিসের ব্যবসা করেন? শুনেছি উনি নাকি একজন বড় ব্যবসাদার। কিন্তু কিসের ব্যবসা উনার, তা ঠিক জানিনা।
এতো বড় বাড়ি, এতো এতো জমিজমা, খামার, বাগান, এসব তাহলে কিভাবে করেছেন উনি? রাতের বেলা কিছু সময় ব্যবসা করে? নাকি অন্যকিছু?
আর ঠিক এইজন্যই এই আকবর সাহেবও আমাদের সন্দেহের কাতারে।
.
যথারীতি আমি আর অনুপম আকবর সাহেবের বাড়িতে ফিরে গেলাম। দেখলাম ম্যাডাম কান্না করছেন, তবে নিরবে। থেকে থেকে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের কোণে জল জমা হলে সেটা মুছে নিচ্ছেন। অন্যরা কেউ বিষয়টা খেয়াল না করলেও আমি করেছি। আমি ম্যাডামের কাছে এগিয়ে যেতেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলেন। ম্যাডামের কান্নাটা আমাকে বুকে বিষাক্ত তীরের মধ্যে বিধতে লাগলো। কি বলে ম্যাডামকে স্বান্ত্বনা দিবো, সেটা আমার অজানা। তবুও আমি ম্যাডামকে স্বান্ত্বনা স্বরুপ বললাম "ম্যাডাম আপনি কান্না করবেন না, চিন্তা করবেন না, একটু ধৈর্য ধরুন সব ঠিক হয়ে যাবে। নিজেকে শক্ত করুন, নিজের প্রতি মনোবল হারাবেন না। "
এবার ম্যাডাম আমাকে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরে বললেন, শ্রাবণ আমি এখন কি করবো বল? আশিকের বাবা মাকে আমি কি বলবো? সোমা আর ফাহিমের বাবা মাকেই বা কি বলবো? কিছু একটা কর তুই, কিছু একটা কর।
আমি অনুপমকে ইশারা করে বললাম, চল আগে কিছু খেয়ে নিই। তারপর আবার বের হতে হবে। আমরা সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করলাম। কিন্তু ম্যাডাম একটু দানা পানিও মুখে নিলেন না। খাওয়া শেষে আমি আর অনুপম আবার বেরিয়ে পড়লাম। এবার আমাদের লক্ষ হলো প্রথমত মুন্সিকে অনুস্মরণ করা। সে কখন কি করে, কোথায় যায়, এসব জানা। আর সিদ্ধান্ত নিলাম, যা করার আজকের মধ্যেই করতে হবে। যত দেরি করবো ততই বিপদে পড়তে পারি।
.
আমরা মাত্রই আকবর সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয় বড় পথটাতে উঠেছি। ঠিক তখনই দেখলাম মুন্সি বেশ হন্তদন্ত হয়ে পূর্বদিকে ছুটে চলেছে। তাকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে দেখে আমাদের কাজটা সহজ হয়ে গেলো। আমরা ভেবেছিলাম, প্রথমে মুন্সিকে খুঁজে বের করতে হবে এবং তারপর তাকে অনুস্মরণ করতে হবে। কিন্তু না, আমাদের তাকে খুঁজতে হলোনা। আমরা মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে গেলাম।
অনুপম আমাকে জিজ্ঞেস করলো, শ্রাবণ মুন্সি এতো হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছে? আমি কিছুসময় নিরব থেকে অনুমাণ করলাম যে, সে কোথায় যেতে পারে!  আর পূর্ব দিকে তো জঙ্গল, সেখানে একমাত্র থানা ছাড়া অন্যকিছু তো নেই। তাহলে কি মুন্সি ঐ থানাতেই যাচ্ছে? যদি আমার অনুমাণ ভুল না হয়, তবে আমি বলতে পারি সে থানার দিকেই যাচ্ছে।
আমি অনুপমকে বললাম, সে বোধ হয় থানার দিকে যাচ্ছে। থানার কথা শুনে অনুপম আমাকে জিজ্ঞেস করলো, এই অবেলায় তার থানাতে আবার কিসের কাজ? এই গ্রামের তো কারোরই থানা পুলিশের কোন প্রয়োজন পড়েনা। তারা তাদের নিজ নিজ সমস্যা নিজেরাই সমাধান করে। তবে মুন্সির আবার কি হলো যে, সে এতো দ্রুত পায়ে হেঁটে কোনো দিকে না তাকিয়ে থানার দিকে ছুটে চলেছে? অনুপমের কথাটা আমার মাথায় নাড়া দিলো। আসলেও তো তাই! মুন্সির আবার থানাতে কিসের কাজ?
'অনুপম দ্রুত চল, ওকে অনুস্মরণ করতে হবে। কোন মতেই ওর পিছু ছাড়া যাবেনা।' অনুপমকে কথাটি শুধু বলতে বাকি। অমনিই অনুপম আমার সাথে হাঁটা ধরলো মুন্সিকে অনুস্মরণ করে। আমরা মুন্সির থেকে বেশ খানিক দুরুত্ব বজায় রেখে পিছে পিছে যাচ্ছি। যাতে করে সে আমাদের টের না যায়। থানা পেতে এখনো প্রায় মিনিট বিশেক লাগবে। ক্রমেই তার হাঁটার গতি  বাড়তে থাকলো। এক প্রকার দৌড়ের  উপরেই সে  ছুটে চলেছে। আমরাও কম কিসে? সে যদি চল্লিশ বছরের বুড়া হয়ে দৌড়াতে পারে, তবে আমরা কেন পারবোনা।
.
অনেক্ষণ হাঁটার পর আর দৌড়ানোর পর হঠাৎ করেই মুন্সি থেমে যায়। থানা এখনো প্রায় মিনিট পাঁচেকের পথ। কিন্তু হঠাৎ করেই মুন্সি এখানে থেমে গেলো কেন? তার থেমে যাওয়া দেখে আমরাও থেমে গেলাম।
তার থেকে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে আড়ি পেতে থাকলাম আমরা। অামি মুন্সির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। সে কি করছে সেটা জানার চেষ্টা করছি আমি। কিন্তু তাকে এমন কোনো কিছুই করতে দেখলাম না যে, তাকে আমরা সন্দেহ করবো। সে একটা গাছের গুড়ির উপরে গিয়ে বসলো। তাকে কোন কারণ ছাড়া এভাবে জঙ্গলের মাঝে বসে থাকতে দেখে বেশ খটকা লাগলো আমার। কোন কারণ ছাড়া,  উদ্দেশ্য ছাড়া তার মতো চতুর লোক এখানে বসে থাকবে কেন? নিশ্চয় কোনো না কোনো গুপ্ত কারণ আছে তার এই বসে থাকার পেছনে। আর কোন কারণ যদি নাই থাকবে তাহলে সে এত দ্রুত হন্তদন্ত হয়ে এখানে আসবে কেন?
আমি আর অনুপম অপেক্ষা করতে থাকলাম, দেখি মুন্সি মিয়া কি করে? আর কি জন্য সে এই জঙ্গলে এসেছে?
.
এক ঘন্টা যায়, দু'ঘন্টা যায়। কিন্তু আমরা মুন্সিকে সন্দেহজনক কিছুই করতে দেখলাম না। অনুপম আমাকে বললো, চল চলে যাই। এখানে থেকে কোন কিছু জানতে পারবো বলে মনে হয়না। আর মুন্সিকে আমরা সন্দেহই বা করবো কেন? সে তো তাকে সন্দেহ করার মতো এমন কোন কাজই করেনি। শ্রাবণ তুই যা ভাবছিস সেটা সত্য নাও হতে পারে। এমনও হতে পারে যে, গ্রামবাসীর কথাই ঠিক। ঐ বাড়িতে জমিদার এবং তার স্ত্রীর আত্মারাই ঘুরাফেরা করে। মুন্সি আর হাবিলদারকে ঐ বাড়িটির আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতে দেখা মানে এই নয় যে তারা কোন অপকর্ম করছে।
- অনুপম! তুই কি বললি আবার বল? (আমি)
- কই কি বললাম! (অবাক হয়ে বললো অনুপম)
- তুই কি যেন বললি যে, হাবিলদার এবং মুন্সিকে ঐ বাড়িটির আশেপাশে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়?
অনুপম আমার দিকে বিস্ময় চোখে চেয়ে বললো, হ্যাঁ দেখা যায়। তো?
- কিছুনা, তুই চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাক। কোন কথা বলবিনা। শুধু দেখতে থাক কি হয়! আমার ধারণা যদি ভুল না হয়, তবে আমি যা ভেবেছি সেটাই হতে চলেছে। (আমি)
- কি ভেবেছিস তুই?
- চুপ, একদম চুপ। শুধু দেখতে থাক।
অনুপম আমার কথায় একদম চুপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ বাদে আমি যা দেখলাম তাতে আমার ধারণা বা অনুমাণ যেটাই বলেন, সেটা আবার সঠিক প্রমাণিত হলো।
.
অপেক্ষা করুন সপ্তম পর্বের।
.
আপনাদের মতামত আশা করছি, কেমন লাগছে গল্পটা? সপ্তম পর্বেই কি গল্পটা শেষ করবো? নাকি আরো পর্ব বাড়াবো?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.