নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিত্যাক্ত বাড়ি

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:১৬

পরিত্যাক্ত বাড়ি
পর্ব-৭
.
কিছুক্ষণ বাদে আমি যা দেখলাম তাতে আমার ধারণা বা অনুমাণ যেটাই বলেন, সেটা আবার সঠিক প্রমাণিত হলো।
সূর্যটা ডুবতে শুরু করেছে। চারদিকে ধীরে ধীরে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। ঠিক সে সময় জঙ্গলের অপর পাশের পথটা থেকে একটা খাটো করে লোক মুন্সির দিকে এগিয়ে আসছে। আবছা আলোর কারণে খাটো লোকটিকে ঠিক চিনতে পারলাম না। তবে লোকটি কি যেন একটা সাথে নিয়ে আসছিলো। আমরা যথেষ্ট দূরে অবস্থান করাতে লোকটির সাথে আনা জিনিসটাকে ভালোভাবে দেখতে পারছিলাম না। যখন লোকটি মুন্সির কাছে আসলো তখন আমার কাছে সবকিছু পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো।
লোকটিকে চিনতে পেরে অনুপম আমাকে বললো, আরে এটা তো হাবিলদার। কিন্তু ও এখানে এই সময়ে মুন্সির সাথে কি করছে?  অনুপমের মতো আমিও ভাবছি, হাবিলদারের সাথে মুন্সির সম্পর্ক কি? আর মুন্সিই বা হাবিলদারের সাথে কেন এই নির্জন জায়গায় দেখা করতে আসলো? একের পর এক প্রশ্নের উদয় হতে থাকে আমার মনে। অনুপম আমাকে বললো, শ্রাবণ আমরা এখন কি করবো? এখানেই এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো, নাকি? চল একটু এগিয়ে গিয়ে শোনার চেষ্টা করি ওরা কি নিয়ে আলোচনা করে! অনুপমের কথা মতো একটু সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। ওরা ঠিক যেখানে বসে আলোচনা করছিলো, ঠিক তারই পেছনে আমি আর অনুপম অবস্থান করলাম। আমরা অনেক সতর্কতার সাথে ওদের দুজনের মধ্যেকার আলোচনা শুনতে চেষ্টা করি।
ওদের দুজনকে দেখে আমার মনে হতে লাগলো যে, ওরা দুজন অনেক টেনশনের মধ্যে আছে। আমার অনুমাণ অনুযায়ী ওদের টেনশনটা এমন "ওরা কোনো একটা কাজে আটকে গেছে, আর তার থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পেতেই ওদের এই সন্ধার সময় জঙ্গলের মধ্যে আসা।"
.
আমি আড়ি পেতে আছি, আমার কানটাও বেশ সজাগ। একটু  টু-শব্দ হলেও সেটা আমার কানে পৌছাবে। প্রায় অনেক্ষণ পর যখন তাদের শরীর থেকে ঘামটা পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে, ঠিক তখন মুন্সি হাবিলদারকে বলে উঠলো "কি জন্য ডেকেছো তাড়াতাড়ি বলো। আমার আবার দ্রুত জায়গায় ফিরতে হবে।"
এবার হাবিলদার তার শার্টের পকেট থেকে একটা খাম বের করে বললো, এটা দেখো। ঢাকা থেকে শফিক সাহেব পাঠিয়েছেন।"
মুন্সি তার থেকে খামটা নিয়ে চোখের পলকে তার প্যান্টের পকেটে পুরে নিলো। একবার খুলেও দেখলোনা কি লেখা আছে তাতে! সে আবার হাবিলদারকে জিজ্ঞেস করলো, আর কিছু? " হাবিলদার মাথা নেড়ে বললো, না আর কিছুনা। তবে চিঠিটার উত্তর খুব দ্রুত পাঠাবে।  চিঠি লিখে আমার কাছে দিলেই হবে। আমি পৌছে দিবো।
ওদের কথা বার্তা শুনে অনুপম আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ওরা কিসের চিঠি নিয়ে কথা বলছে? আর ওদের কথা বলার ধরনটা কিন্তু আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। নিশ্চয়ই কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে ওদের।
আমি অনুপমের কথার কোন জবাব না দিয়ে বললাম, অনুপম দেখ দেখ, সামনে তাকিয়ে দেখ।
আমার কথা শুনে অনুপম দ্রুত সামনের দিকে তাকালো। আমি বললাম, কিছু দেখতে পাচ্ছিস? সে কিছুক্ষণ ভেবে বললো, কই না তো? কি দেখতে পাবো!
আমি অনুপমের দিকে তাকিয়ে একটু রাগি চোখেই বললাম, আরে ওদিকে দেখ। অনুপমকে আমি মুন্সির হাতের দিকে তাকাতে বললাম।
সে মুন্সির হাতে দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ এবার দেখেছি। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব?
আমি অনুপমকে তার প্রশ্নের উত্তরটা দিতে যাবো ঠিক সেসময় মুন্সির কথা শুনে আমার অনুমাণটা আরো প্রখর হয়ে গেলো। এখন সবকিছু আমার কাছে ঠিক আগের মতোই পরিষ্কার। কিন্তু আমাকে সত্যটা বের করার জন্য সাহায্য করবে কে? আমার বলা কথা বিশ্বাসই বা করবে কে? এ গ্রামের সবাই তো ভূত প্রেতে বিশ্বাসী।
আমি অনুপমকে বললাম, দোস্ত আমাকে এই ভয়ংকর সত্যটা উদঘাটন করতে সাহায্য করবে কে? আমি একা তো এটা করতে পারবোনা। কারো সাহায্য দরকার আমার।  তা না হলে এদের সব কাজ একেবারে সফলভাবে হয়ে যাবে।  এরা কোন বাঁধা ছাড়ায় তাদের কাজটা সম্পন্ন করবে।
অনুপম আমার কথা শুনে অবাক চোখে আমার মুখপানে চেয়ে থাকে। আমি তাকে একটু ধাক্কা দিয়ে বললাম, কিরে এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?
সে বললো
- তুই কি বলছিস, সেটা আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। কিসের সত্য উদঘাটন করবি? আর কিই বা হয়েছে এমন?
- সবকিছু ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা কর। কেউ কোন কথা বললে সেটাকে ভালোভাবে শুনে সেই কথাটার অর্থ জানার চেষ্টা কর। তবেই বুঝতে পারবি আমার বলা সকল কথার মানে।
- নাহ! তোর কথা আমি এখনো ঠিক বুঝতে পারলাম না।
- থাক তোর আর বুঝতে হবেনা। আমি তোকে যা যা বলবো সেগুলো ঠিকমতো শুনলেই তুই সবকিছু বুঝতে পারবি। তবে এর জন্য দিন কয়েক তোকে অপেক্ষা করতে হবে। আর শোন আগামীকাল বোধ হয় পরিত্যাক্ত বাড়িতে আমাদের যাওয়াটা আর হবেনা।
- কেন?
- সময় হলেই জানতে পারবি।
.
আমি আর অনুপম কথা বলতে বলতে খেয়ালই করিনি যে মুন্সি বাড়ির দিকে হাঁটা ধরেছে। আর ওদিকে হাবিলদার থানার দিকে। অনুপম আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমরা এখন কাকে অনুসরণ করবো? আমি বললাম, এখন কাউকেই অনুসরণ করতে হবেনা। রাত নেমে এসেছে, আমাদেরকে বাড়িতে ফিরতে হবে। আর যা করার সব কালকে করতে হবে। আজকের মতো আপাতত আর কিছুই করতে হবেনা। কালকে তুই শুধু আমাকে সাহায্য করবি। আর চিন্তা করিস না, কোন কঠিন কাজে বলবোনা। যা কঠিন কাজ, তা করা হয়ে গেছে। যদিও সামনে এগুলোর থেকেও বড় একটা কঠিন কাজ বাকি আছে! তবুও সেটাকে আমি কঠিনভাবে নিচ্ছিনা।
আমরা দুজন মুন্সির পিছে পিছে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। তিন মাথার পথটা থেকে একটা পথ শহরের দিকে, একটা পথ আকবর সাহেবের বাড়ির দিকে আর একটা ঐ পরিত্যাক্ত বাড়িটির দিকে চলে গেছে। শহরের দিকে যে পথটা গেছে, মুন্সির বাড়ি ঠিক সেদিকেই। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, মুন্সি এই রাতের বেলাতে নিজের বাড়ির দিকে না গিয়ে ঐ পোড়া বাড়িটির দিকে যাচ্ছে। পোড়া বাড়িটির দিকে ওকে যেতে দেখে অনুপম আমাকে বলে উঠলো, দোস্ত দেখ দেখ মুন্সি কোথায় যেন যাচ্ছে। অনুপমের কথাতে আমি মুন্সির দিকে খেয়াল করলাম।
হ্যাঁ, তাইতো! কিন্তু কোথায় যাচ্ছ সে? আর ওদিকে তো ঐ পোড়া বাড়িটি ছাড়া অন্যকিছু নেই। তাহলে কি সে ঐ পোড়া বাড়িটির দিকেই যাচ্ছে? আমার মনে বিভিন্ন ধরনের ভাবনা উঁকি দিতে থাকে।
এখন এই মুহূর্তে তাকে অনুসরণ করতে না চাওয়া স্বত্ত্বেও অনুসরণ করতে হচ্ছে।  আমি খেয়াল করে দেখলাম, সে খুব খোশ মেজাজে আছে। হাসি খুশি একটা ভাব বিরাজ করছে তার মধ্যে। তার চলার ভঙ্গিও বেশ খানিকটা পাল্টে গেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন সে এ গ্রামের একজন মাতবর।
খুশির পরিমাণ এতোটাই যে, মনে হচ্ছে চাতক পাখির মতো সে অনেকদিন পর পানি পান করে তার তৃষ্ণা মিটালো। আমি আর অনুপম কিছুদূর যেতেই খেয়াল করলাম আরো বেশ কয়েকজন, না না বেশ কয়েকজন না, হাতে গোনা দুজন ব্যক্তিও ঐ বাড়িটার দিকে যাচ্ছে। তবে এই দুজন লোককে চেনা বড় দায়। একেতো রাত্রিবেলা। আবার লোকদুটোর গায়ে কালো পোশাক। অন্ধাকারে একেবারে মিশে গেছে তারা। আমরা ধীরে ধীরে এগোচ্ছি মুন্সির সেদিকে।  ভেতরে ভয়ও কাজ করছে। তবে সে ভয়টা কোন ভূত প্রেতকে নিয়ে নয়। বরং মানূষ ভূতকে নিয়ে। একদিন ম্যাডামকে আমি মানুষ ভূতের কথা বলেছিলাম। আর এতে তিনি বেশ অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মানুষ ভূত আবার কি? সেদিন আমি ম্যাডামকে বলেছিলাম, সময় হলে সব জানতে পারবেন।
ম্যাডামকে বলা সেদিনের সেই কথাটা সবার সামনে প্রকাশ করতে আর বেশি সময় বাকি  নেই।
এই মানুষ ভূতগুলোকে ধরতে হবে। আমি আর অনুপম মুন্সি আর সেই লোকগুলোর থেকে বেশ খানিক দুরুত্ব নিয়ে একটা ঝোপেড় আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। তারপর লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে থাকলাম কি হয়! যদিও আধাঁর চারিদিকে, তবুও কিছু না কিছু তো উপলব্ধি করতে পারবো। দেখলাম তারা ঐ পোড়া বাড়ির গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর চারিদিকে একবার তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে হোহো করে হেসে উঠলো। তাদের হাসিটা যেন একেবারে ভূতের হাসির মতো। আর প্রথম প্রথম আমি তাদের এই হাসি দেখেই ভেবেছিলাম হয়তো এই পোড়া বাড়িতে সত্যি সত্যিই ভূত আছে। এই হাসির রহস্য তো উদঘাটন হলো। কিন্তু ঐ বিকট শব্দটা কিসের ছিলো তাহলে? আর ঐ আগুনের ফুলকিই বা কিসের?
.
মুন্সির সাথে যে দুজন লোক বাড়িটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, তাদের মধ্যে আবার একজন বয়স্ক লোকও আছে। লোকটির গায়ে কালো কোট। আর লোকটা যে বয়ষ্ক সেটা আমি তার কন্ঠ শুনেই বুঝতে পেরেছি। রাতের পরিবেশটা নির্জন, নিঃশব্দ, নিস্তব্দ হওয়ার কারণে তাদের ফিসফিস করে কথা বলাটা খুব সহজেই আমি শুনতে পেলাম। ঐ বয়স্ক করে কালো কোট পড়া লোকটি মুন্সির উদ্দেশ্যে বলছে, মুন্সি মিয়া চিঠি পেয়েছো?
আমি আধারের মধ্যেও দেখতে পেলাম মুন্সি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো। এবার লোকটি মুন্সির থেকে চিঠিটা নিয়ে পড়তে শুরু করলো। তবে লোকটা বেশ চতুর। সে শব্দ করে না পড়ে চুপচাপ পড়তে লাগলো। খানিক পর যখন পড়া শেষ হলো, তখন তার সাথে আসা দ্বিতীয় লোকটি বললো, স্যার কি পড়লেন? কি লেখা ছিলো চিঠিতে?
আমি ঐ লোকটির মুখে স্যার বলা শুনে খানিকটা অবাক হলাম। অনুপমের দিকে তাকিয়ে দেখি সেও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আমিই অনুপমকে জিজ্ঞেস করতে যাবো যে, এই স্যার আবার কে? কিন্তু আমার জিজ্ঞেস করার আগেই অনুপম আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো কথাটা। আমি অনুপমকে তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললাম, তুই কি কিছু বুঝতে পারছিস?  সে জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে বললো, কি বুঝবো? আমি আবার বললাম, কিছুই বুঝতে পারছিস না? এখানে কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে? আর এই বাড়িটির আসল রহস্যই বা কি?
অনুপম মাথা চুলকিয়ে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক চেয়ে থেকে বললো, হুম কিছুটা অনুমাণ করতে পেরেছি। এই বাড়িটিতে কোন ভূত প্রেত কিছুই নেই। এই বাড়িটির পেছনে যে গুপ্ত রহস্য আছে, তার সব মূলে রয়েছে এই লোকগুলো। তারা মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে বাড়িটিকে সবার সামনে পরিত্যাক্ত বানিয়েছে।
আমি অনুপমের বিচক্ষণতা দেখে বললাম, বাহ বাহ তোর অনুমাণও দেখি ভুল নয়। তোর এই অনুমাণ করাটায় দেখিস একদিন তোকে বড় কিছু করাতে সাহায্য করবে। তুই চেষ্টা করিস গোয়েন্দা হওয়ার। তোর মধ্যে আমি সেই প্রতিভা দেখতে পাই। অনুপম আমার কথায় খানিকটা লজ্জা পেলো বটে। কিন্তু সে উল্টো আমাকে বললো, আমার এই সামান্য অনুমানেই যদি আমি গোয়েন্দা হওয়ার আশা করি। তবে তো তুই অলরেডি গোয়েন্দা হয়ে গেছিস।
আমি আর অনুপম কিছু সময় এভাবে একে অপরের সাথে কথা বলার সময় হঠাৎ করেই পোড়া বাড়িটি থেকে একটা ভয়ংকর আওয়াজ ভেসে আসে। আমি আওয়াজটা শোনা মাত্রই ভড়কে যাই। এই এরকম ভয়ংকর আওয়াজ তো আমি কখনো শুনিনি। আওয়াজটা শুনে যখন আমি আর অনুপম বাড়িটির দিকে তাকাই, তখন আমরা বেশ অবাক হয়ে যাই। কারণ বাড়িটির সামনে মুন্সি এবং ঐ যে লোক দুটো ছিলো তারাও ঐ ভয়ংকর আওয়াজ শুনে বেশ ভয় পেয়েছে। আর তাদের ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা আমি তখনই জানতে পারলাম যখন দেখলাম তারা বাড়িটির কাছ থেকে প্রাণপ্রণে ছুটে পালাচ্ছে। আর পালানোর সময় ঐ বৃদ্ধ লোকটি বলে উঠলো, ভূত ভূত ভূত। লোকটির মুখে ভুত শব্দ শুনে আমারও বেশ ভয় ঢুকে গেলো মনের মধ্যে। তাহলে কি সত্যিই এই পোড়া বাড়িতে ভূত আছে?
নাহ! কিছুই মাথায় আসছেনা আমার। এতক্ষণও সবকিছু পরিষ্কার ছিলো। কিন্তু ঐ বয়স্ক গ্রামবাসীগুলোর মতো এই লোকটিও আবার আমার সবকিছুতে জল ঢেলে দিলো। আমি ভেবেছিলাম সব রহস্যের উদঘাটন করে ফেলেছি প্রায়। কিন্তু এই মুন্সি আর লোকদুটোর কথা শুনে সবকিছু গোলমেলে হয়ে গেলো।
অনুপম ঐ লোকটির দৌড়ানো আর তার মুখে ভূতের কথা শুনে ভয় পেয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছে। আর সেটা যখন আমি খেয়াল করলাম তখন সে আমাকে বলে উঠলো, শ্রাবণ চল দ্রুত চল এখান থেকে। আমাদের এক মুহূর্তও এখানে থাকাটা ঠিক হবেনা। অনুপমের চোখে মুখে ভয়ের প্রতিমা ফুটে উঠেছে। বেদম আকারের ভয় পেয়েছে সে। আমি যে ভয় পাইনি, তা কিন্তু নয়। আমি এখানে একা থাকলে এতক্ষণে ছুটে পালাতাম। কিন্তু অনুপমের জন্য একটু সাহস থাকায় দৌড় দিলাম না।
অনুপম আমার হাত ধরে টান দিয়ে বললো চল এখান থেকে। আমি চলে আসতে যাবো ঠিক সেসময় আরেকটি জিনিস আমার চোখে পড়লো। আমি অনুপমকে মুখে কিছু না বলে ইশারাতে বললাম, ওদিকে দেখ। সে আমার দেখানো দিকে তাকাতেই যেখানে দাঁড়িয়েছিলো সেখান থেকে একহাত পিছিয়ে এলো। সে বললো, ওটা কিরে শ্রাবণ?
আমিও ভাবছিলাম ওটা কি হতে পারে? এই বাড়ির জমিদার এবং তার স্ত্রীর আত্মা নয় তো? না না এসব আত্মা টাত্মা হতে যাবে কেন? এসব তো সব কুসংস্কার। এসবে বিস্বাস করা যাবেনা।
অনুপম আবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ওট কি রে?
আমি খেয়াল করে দেখলাম সে খুব ঘামছে। তার  পিঠে হাত দিয়ে দেখলাম সে ঘামে পুরো ভিজে গেছে। আমি তাকে বললাম, দোস্ত আমিও ভাবছি ওটা কি হতে পারে!
সে এবার আমার অার কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে বললো, আচ্ছা ওটা এই বাড়ির জামিদার এবং তার স্ত্রী নয় তো?
আমি বললাম, ওটা জমিদার আর তার স্ত্রী হতে যাবে কেন? ওটা তাদের আত্মা হতে পারে।
আমার মুখে আত্মা কথাটি শুনে অনুপম আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে বললো, তুই এসব ভূত প্রেত, আত্মা টাত্মাতে বিশ্বাস করিস?
আমি অনুপমের কথার বিপরীতে বললাম, শোন মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে হয়। তা না হলে একেবারে উপরে চলে যেতে হয়। বেশি সাহস দেখাবি তো ওদের শিকার হবি। আর তুই মাত্রই বললি যে, আমি এসব ভূত প্রেতে বিশ্বাসি কিনা! শোন তাহলে, এই ভূত প্রেতও কিন্তু কুসংস্কারের মধ্যে পড়ে। আর সেই কারণে এসবে বিশ্বাস করার কোনো মানেই হয়না। তবে একটা কথা বলে রাখি, মাঝে মাঝে এসবে বিশ্বাসও করতে হয়।
.
আমি আর অনুপম দৌড়াচ্ছি আরা উপরের ঐ কথাগুলো বলছি। যখন আমরা বাড়িটি থেকে মেইন পথটাতে উঠেছি, তখন অনুপম হঠাৎ করেই পথের উপরে ধপাস বসে পড়ে। তার হঠাৎ করে এমন বসে পড়াতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম খুব। অনুপমের আবার কিছু হয়ে গেলোনা তো? আমিও তার সাথে বসে পড়লাম পথে। দেখলাম সে প্রচুর হাপাচ্ছে। পুরো শরীর তার ঘামে এতোটাই ভিজে গেছে যে, তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে এই মাত্রই গোসল করে আসলো। আমি ওকে ডাক দিলাম, ও আমার ডাকে সাড়া দিয়ে মুখ তুলে আমার পাণে চেয়ে বললো, দোস্ত আগে একটু জিরিয়ে নিই। তারপর বাড়ির দিকে যাবো। আমি অনুপমকে কথা বলতে দেখে একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললাম। যাক তবে,কিছু হয়নি অনুপমের।আমি ওর চিন্তাতে বেশ ভড়কে গেছিলাম।যদি ওর কিছু হয়ে যেতো? তখন কি করতাম আমি?
অনুপম ঘাসের উপর গা টা এলিয়ে দিয়ে বললো, দোস্ত তুই কি সত্যিই এসব ভূত প্রেতে বিশ্বাস করিস না? আমি ওকে বললাম, তুই একটু বিশ্রাম নে। পরে এ বিষয়ে কথা বলি। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা।  আমার থেকে শুনবেই, আমি ওসব বিশ্বাস করি কিনা!
আমি যদিও ওসবে বিশ্বাস করিনা। কিন্তু নিজের চোখের সামনে দেখলে কে না বিশ্বাস না করে থাকতে পারে! আমি  অনুপমকে বললাম যে, আমি ওসব ভূত প্রেতে বিস্বাস না করলেও নিজের চোখে যখন দেখেছিলাম তখন কি করে অবিশ্বাস করি?
আমার কথা শুনে অনুপম তার চোখ দুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো কি দেখেছিস তুই নিজের চোখে? এই জমিদার বাড়ির ভূত?
আমি বললাম, আরে নাহ, আমি ঐসব ভূত প্রেত দেখেছি গ্রামে।  যার খপ্পড়ে পড়ে অনেক মানুষেরই প্রাণ গেছে। তবে ওসব ভূত প্রেত নাকি কোন কারণ ছাড়া কাউকে বিরক্ত করেনা। আর সেই কারণেই আমি টেনশনে আছি।
অনুপম আমার কথা বলার মাঝে বলে উঠলো, কিসের টেনশন?
আমি বললাম, যদি ঐ পরিত্যাক্ত বাড়িতে সত্যি সত্যি কোন ভূত থেকে থাকে, তবে ওরা আমাদের জন্য বিরক্তবোধ হলে  আমরাও ওদের খপ্পড়ে পড়তে পারি। 
তোকে আমার নিজের চোখে দেখা একটা কাহিনী বলি, যেটা শুনলে তোর সব ভয় কেটে যাবে এবং নতুন করে আবার ভূত প্রেতের উপর তোর বিশ্বাস চলে আসবে। তখন তুই যেখানে সেখানে ভূতের অবয়ব দেখতে পাবি।
অনুপম আমাকে বললো, আচ্ছা তুই বলতে থাক। আমি শুনতে থাকি কি এমন তোর সত্য ভূতের কাহিনী!
আমি অনুপমকে বললাম, তুই আগে উঠে বস। তারপর বলি। সে আমার কথামতো উঠে বসলো। আমি তাকে বলতে শুরু করলাম.....
.
অপেক্ষা করুন অষ্টম পর্বের।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২৬

ঋতো আহমেদ বলেছেন: পড়তে পড়তে হয়রান। আরো আছে !?

০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৮

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: জ্বী ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.