নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিত্যাক্ত বাড়ি

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৫৬

পরিত্যাক্ত বাড়ি
পর্ব-৯
.
আমি চোখ দুটো ডলে আবার তাকালাম। দেখলাম, নাহ! কোনকিছুই তো ভুল নয়। সব সত্যি।  তাহলে কি আমার এতোদিনের সব অনুমানগুলোই ঠিক ছিলো? হয়তো তাই!
আমার একদম বিশ্বাস হচ্ছিলোনা যে, এরকম কখনো হতে পারে। আমরা কেউ নিরাপদ নই। আমাদের নিরাপদ স্থানে উঠতে হবে। আমরা মানুষের উপরের রুপ দেখেই তাকে বিবেচনা করে তার সম্বন্ধে কোন কিছু না জেনেই তাকে বিশ্বাস করে বসি। আর এটাই আমাদের বড় একটা ভুল।
অনুপম আমাকে বললো, দোস্ত দেখেছিস এবার?
আমি মাথাটা নেড়ে বললাম, হুম দেখেছি। কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব? আমরা ভুল কিছু দেখছিনা তো?
অনুপম আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো, তুই নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছিস না?
আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তাকে বললাম, তবুও আমি সন্দিহান। কারণ উনি এ কাজটা করতেই পারেন না। উনি তো অনেক ভালো মানুষ। আমাদের থাকার জায়গা দিয়েছেন, খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আবার অন্যদিকে উনি তো আমাদের স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আলম সাহেবের বন্ধু। আর শাহ আলম সাহেবের বন্ধু হয়ে উনি এই জঘন্যতম কাজটা কখনোই করতে পারেন না।
আমার কথায় অনুপম এবার পুরো রেগে গেলো। তবুও সে তার রাগকে কোনমতে চেপে রেখে আমাকে বললো, কাউকে না জেনে তার সম্পর্কে যেমন খারাপ মন্তব্য করা উচিত নয়! ঠিক তেমনি ভালো প্রসংশা করাটাও উচিত নয়। বুঝেছিস?
আমি মাথা ঝাঁকালাম। সে আরো বললো, তুই আমাকে যে কাজটা দিয়েছিলি সেটা করে দিয়েছি। এখন বাকিটা তোর উপরে!
আমি অনুপমকে বললাম, অনুপম শোন।
সে আমার দিকে ঘুরে তার দৃষ্টিগোচর করলো। আমি বললাম,  আচ্ছা ঐ কালো কোট পড়া লোকটি তো অন্য কেউও হতে পারি। আমরা শুধু শুধু আকবর সাহেবকে সন্দেহ করছি কেন? আর উনি এ গ্রামের সবচেয়ে সম্মানিত এবং ধনী ব্যক্তি।  উনার মতো এ গ্রামের অনেকেরই ওরকম কালো কোট থাকতে পারে। আর তার মানে এই নয় যে ঐ বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিই এই আকবর সাহেব।
অনুপম আমার কথা শুনে একগাল হেসে বললো, তোর বুদ্ধি হঠাৎ করে এতো লোপ পেলো কিভাবে? তুই না সত্যান্বেষী হতে চাস, তুই না সব সময় সত্যকে জানতে চাস? তবে আজ, এই মুহূর্তে তুই আসল সত্যটাকে নিজের চোখে দেখেও কেন বিশ্বাস করতে পারছিস না? এর থেকে আর কি প্রমাণ লাগবে তোর? তুই তো নিজের চোখেই দেখলি, বাড়িটির সামনে যে তিনটি লোক কথা বলছিলো তাদের মধ্যে একজন ছিলো এই কালো কোট পড়া লোকটি।  আর তোর বোধ হয় এখন এটাও মনে নেই যে,  এই লোকটিকেই কিন্তু তার সাথে থাকা দ্বিতীয় লোকটি স্যার বলে সম্বোধন করেছিলো। এখনও  কি তুই বিশ্বাস করবিনা যে, এই লোকটিই হলো ঐ বাড়িটির সামনে কালো কোট পড়ে থাকা সেই  লোকটি? আর ঐ কালো কোট পড়ে থাকা লোকটি এই লোক তথা আমাদের আশ্রয়দাতা আকবর সাহেব?
অনুপমের কথাগুলো আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো। অনুপম এই কথাগুলো বলার আগেই অর্থ্যাৎ যখন সে আমাকে আকবর সাহেবের বাড়িটির গেটের দিকে লক্ষ করে বলেছিলো, দোস্ত দেখ দেখ ওদিকে দেখ। আমি তখন সেদিকে তাকানো মাত্রই অবাক হয়েছিলাম। বিশ্বাসও করেছিলাম, তবে আংশিক। আর এখন অনুপমের কথা শুনে আমি পুরোপুরি সিউর হলাম যে, তখন ঐ ভূত ভুত বলে চিৎকার করা লোকটিই এই আকবর সাহেব, ঐ বাড়িটির গেটের সামনে মুন্সি এবং ঐ দ্বিতীয় লোকটির সাথে আলোচনাকারী লোকটিই হলো এই আকবর সাহেব।
আমি এই বিষয়টা জানতে পেরে অবাক থেকে অধিকতর অবাক হচ্ছি। তাহলে কি সত্যিই ঐ পরিত্যাক্ত বাড়িতে কোন আত্মা নেই, কোন ভূত প্রেত নেই?
আমি অনুপমকে বললাম, দোস্ত তুই আসলেও অনেক বুদ্ধিমান। তোর দ্বারাই সবকিছু সম্ভব। তুই বড় হয়ে অনেক বড় একজন ডিটেক্টিভ (গোয়েন্দা) হতে পারবি।
দেখলাম সে এখনো রেগে আছে। রাগি স্বরেই সে বললো, রাখ তোর গোয়েন্দাগিরি। এবার কি করবি সেটা বল?
আমিও তখন চিন্তা করছিলাম, কি করা যায়। শুধু ভূত হলে তো সমস্যা ছিলোনা, কিন্তু এই ভূতটা মানুষভূত হয়েই তো আরো সমস্যাই পড়ে গেলাম। একে তো আমরা ছোট মানুষ, তার উপর সবার চোখে আমরা কম বুদ্ধিসম্পন্ন। কেউ আমাদের এসব কথা বিশ্বাস করবেনা। যদি কেউ করে, তবে সেই লোকটি ঐ রহমান সাহেব ছাড়া আর কেউ না।
আমি অনুপমকে বললাম, রহমান সাহেবকে এ ব্যাপারে কালকে জানাতে হবে। একমাত্র সেই আমাদের সাহায্য করতে পারবে।  আর সে ছাড়া কেউ আমাদের এই কথা বিশ্বাসও করবেনা।
.
আমি আর অনুপম আকবর সাহেবের পিছু পিছু বাড়ির মধ্যে ঢুকলাম। আকবর সাহেব একবার এদিক সেদিক তাকিয়ে অতি দ্রুত তার ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলেন। উনার এদিক সেদিক তাকানোর কারণটা ছিলো,  তাকে কেউ দেখে ফেললোনা তো! এমনটা।
তিনি খুব ঘেমে ছিলেন সেই মুহূর্তে। সেটা তার বারবার কপালের ঘাম মোছা দেখেই বুঝে ফেলেছিলাম। আর উনি ঘামেন প্রচুর সেটা আমি আগে থেকেই খেয়াল করেছিলাম। আর ঐ  পরিত্যাক্ত বাড়িটির গেটের সামনে যে উনিই ছিলেন সেটা আমি উনার এই ঘাম মোছা দেখে আরো একটু সিওর হলাম।
আমি আর অনুপম আমাদের ঘরটাতে ঘুমাতে গেলাম। ঘরে ঢুকতেই দেখি ম্যাডাম এখনো জেগে আছেন। আমাদের ঘরে ঢুকতে দেখে ম্যাডাম বললেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে তোমরা?
আমি ম্যাডামের কথার উত্তর দিতে যাবো, ঠিক সেসময় অনুপম বলে উঠলো, ম্যাডাম আমরা সব কিছু জেনে গেছি।
অনুপমের কথা শুনে ম্যাডাম বললেন, কি জেনে গেছো তোমরা? অনুপম আবার ম্যাডামের কথার উত্তর দিতে যাবে ঠিক তখন আমি অনুপমকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, কিছুনা ম্যাডাম।
ম্যাডামও আর বাড়তি কোন কথা বললেন না। একবার জিজ্ঞেসও করলেন না যে, কি এমন জেনে গেছি আমরা! তিনি শুধু বললেন, আসো খেয়ে নাও। তারপর ঘুমিয়ে পড়ো। ম্যাডামের এমন নিঃশ্চুপ আচরণ তথা কথাবার্তা দেখে বুঝলাম, তিনি এখনো বেশ চিন্তার মধ্যে আছেন। হয়তো তিনিও কিছু খান নি!
আমি আর অনুপম খেতে বসলাম। ম্যাডাম আমাদের পাশে বসে রইলেন। অনুপম এমনিতেই খুব ক্লান্ত। তার শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝড়েছে। তার ক্ষুধাও লেগেছে খুব। খাবার সামনে পেতেই সে গপগপ করে খেতে শুরু করলো।
আমি ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাডাম আপনি খেয়েছেন? ম্যাডাম কোন উত্তর দিলেন না। আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে দেখি, তিনি এক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তবে উনার মনটা রয়েছে অন্যখানে। আমি আবার ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাডাম খেয়েছেন কিনা!  তিনি আমাদের দিকে তাকিয়েই  আনমনে উত্তর দিলেন,  হুম খেয়েছি। তোমরা খেয়ে নাও। আমি জানি ম্যাডাম এখনো খায় নি। তাই ম্যাডামকে বললাম, আপনিও খেয়ে নিন আমাদের সাথে।
বলতে না বলতেই ম্যাডাম আমাদের সাথে খেতে বসলেন। খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। ঠিক তখন ম্যাডাম আমাকে বলে উঠলেন, শ্রাবণ তুই আশিক, সোমা আর ফাহিমকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়। ওদের ছাড়া আমাদের কখনো বাড়ি ফেরা হবেনা বোধ হয়। আমি বাড়ি গিয়ে ওদের বাবা মাকে কি জবাব দিবো? সেদিন যদি তোর কথা শুনতাম তাহলে আমাকে আজ এই দিনটা দেখতে হতোনা। আমি কখনো ভাবতেও পারিনি তোর স্বপ্নটা এই ভাবে সত্য হয়ে যাবে। এখন একমাত্র তুই-ই এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ দিতে পারিস। কিছু একটা কর শ্রাবণ, কিছু একটা কর।
ম্যাডামের চোখ দুটো আবার জলে ভরে উঠলো। আমি আর অনুপম গিয়ে শুয়ে পড়লাম। এখন আমি আর ম্যাডামের সাথে ঘুমাইনা।
শুয়ে শুয়ে আমি অনুপমকে বলছি, দোস্ত তখন আকবর সাহেব ঐ বাড়িটির সামনে থেকে দৌড় দিলেন কেন? আর ভূত ভূত করেই বা চিৎকার করলেন কেন তখন? উনাকে এখন এই মুহূর্তে বাড়িতে ঢুকতে দেখে তো মোটেও চিন্তিত মনে হলোনা। তবে একটু ঘেমে গিয়েছিলেন মাত্র। আর ঐ বাড়িটির উপরে ছায়া মূর্তিই বা আসলো কি করে? ওটাও কি কোন ফাঁদ?  নাকি ওটা সত্যি?
অনুপম আমাকে বললো, সময় যাক ক্রমেই আমাদের কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখন ঘুমিয়ে পড়। আমি চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
পরদিন সকালে অনুপমের ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার। সে আমাকে সেই কখন থেকে নাকি ডেকে চলেছে। আর এদিকে নাকি আমার কোন খোঁজই নেই। আমি ধড়ফড় করে উঠে বললাম, কিরে এতো সকাল সকাল চিল্লাছিস কেন? তখন সে আমাকে বললো, তোকে এ নিয়ে প্রায় ৫০ বারের বেশি ডেকেছি। কিন্তু তুই তো বেপাত্তা।
আমি ঘুম ঘুম চোখে, একটু রাগের ভাব নিয়ে মুখে, বললাম "কেন ডাকছিস আমাকে? ঘুমাতেও দিবিনা নাকি? গতকাল রাত বারোটার দিকে শুয়েছি, সেটা তোর মনে নেই?"
সে বললো, মনে থাকবেনা কেন? আর এতো সকাল সকাল তোকে ডাকার পেছনেও একটা কারণ আছে। এমনি এমনি তোকে ডেকেছি নাকি?
আমি একটা হাই তুলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কি সেই কারণ?
সে আমাকে বললো,  এদিকে আয়।
সে এতক্ষণ জানালার পাশে দাঁড়িয়েছিলো। আমিও তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তার পাশে দাঁড়াতেই সে আমাকে হাতের ইশারা করে বললো, ওদিকে দেখ। তাহলে তুই কিছু একটা বুঝতে পারবি।
আমি অনুপমের কথা মতো তার দেখানো দিকে তাকালাম। দেখলাম, আকবর সাহেব পথের ধারে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। লোকটি পেছন দিকে হওয়াতে ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না লোকটি কে হতে পারে! তবে লোকটির সাথে একটা সাইকেল আছে।
অনুপম আমাকে জিজ্ঞেস করলো, চিনতে পেরেছিস ঐ সাইকেল বাহী লোকটাকে?
আমি মাথা নাড়িয়ে "না" সূচক উত্তর দিলাম। সে বললো, আরে গাধা ওটা ঐ হাবিলদার। আচ্ছা যাইহোক, এবার তুই এটা বল যে, তারা কি বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা করতে পারে? এতো সকাল সকাল আকবর সাহেবই বা কেন হাবিলদারের সাথে কথা বলছেন?
এবার আমি একটু বোঝার চেষ্টা করলাম, তারা কি নিয়ে আলোচনা করতে পারে! নিঃশ্চয়ই কালকে রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে। কিন্তু কালকে রাতের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করলে তো মুন্সি অার ঐ দ্বিতীয় লোকটি থাকবে তার সাথে। হাবিলদারের তো থাকার কথা নয়? তবে কি অন্যকোন বিষয় নিয়ে?
আমাকে আমার এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। আমি দেখলাম আকবর সাহেব হাবিলদারের কাছে চিঠির মতো কিছু একটা দিলেন। আমার ধারণা সেটা হয়তো ঐ ঢাকা শহরের শফিক সাহেবের কাছে পাঠাবে। হাবিলদার চিঠিটা নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
এইটুকু দেখার পর অনুপম আমাকে জিজ্ঞেস করলো, দোস্ত কি বুঝলি?
আমি বললাম, এখনো তেমন কিছু বুঝিনি। তবে এটা বলতে পারি যে, আকবর সাহেবের উদ্দেশ্য পূরণ হতে আর বেশি দেরি নেই।
আমার মুখে উদ্দেশ্য পূরণের কথা শুনে অনুপম আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কিসের উদ্দেশ্য পূরন হতে দেরি নেই?
আমি বললাম, তোর এই উত্তরটা জানতেও বেশি দেরি নেই। তুই শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাক। আর দেখতে থাক কি কি ঘটে!
.
সকাল দশটার দিকে খাওয়া দাওয়া করে আমি আর অনুপম রহমান সাহেবের সাথে কথা বলতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হচ্ছি।  ঠিক তখন পেছন থেকে আকবর সাহেব আমাদের ডাক দিলেন। আমি জানতাম উনি আমাদের ডাক দিবেন। আমি আর অনুপম দাঁড়িয়ে পড়লাম।
তিনি বললেন, বাবারা কোথায় যাচ্ছো তোমরা?  আমি খুব ভদ্রতার সাথে উত্তর দিলাম, এইতো চাচা একটু ঘুরতে বের হই আরকি!
এবার তিনি আমাকে কিছু উপদেশ দিতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, তোমরা ঘুরতে যাও আর যেখানে যাও ঐ পরিত্যাক্ত  জামিদার বাড়িটির দিকে যেওনা।
আমি তার এই কথাটা শুনে তাকে প্রশ্ন করলাম, কেন চাচা? ঐ বাড়িতে কি আছে?
তিনি বললেন, কি আছে সেটা আজ পর্যন্ত কেউ ঠাহর করতে পারেনি। তবে তোমরা হয়তো শুনেছো, সেখানে কোন মানুষ গেলে সে আর কখনো ফিরে আসেনা।
আমরা মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম। তিনি আরো বললেন, উদাহরণ স্বরুপ তোমরা তোমার বন্ধুদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা খেয়াল করতে পারো
আকবর সাহেবের এসব কথা শুনে আমি মনে মনে বলছি, বেডা তুই তো বেশ চতুর লোক বটে? গ্রামের লোকে কয়, মুন্সি নাকি এ গ্রামের সবচেয়ে বড় চতুর। এখন দেখি তার চেয়ে বড় চতুর তুই।
তিনি আমাদের এও বললেন যে, তোমরা ভুলেও ঐদিকে যেওনা। আমি এবার আকবর সাহেবকে একটু বাজিয়ে দেখতে কিছু প্রশ্ন করলাম। বললাম, চাচা আমরা আমাদের বন্ধুদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটা পুলিশকে জানালে কেমন হয়?
আমার কথা শুনে আকবর সাহেব হো হো করে হেঁসে উঠলেন। যেন আমি কোন হাসির কথা বলেছি! তিন বললেন, ভূত প্রেতাত্মার কাছে পুলিশের অভিযান চলবে তো? ভূত কিন্তু বাপকেও ছাড়েনা। আমি বললাম, আমাদের গ্রামের পুলিশদেরকে এ বিষয়ে একবার জানিয়ে দেখতে পারি। তারা তো আর এসব ভূত প্রেতে বিশ্বাসী না। আমার ধারণা তারা আমাদের  বন্ধুদের ফিরে পেতে সাহায্য করবে।
আমার এই কথাতে আকবর সাহেব খানিকটা বিচলিত হলেন। তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। আমাকে ধমক দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি খানিকটা জোড় গলাতেই বললেন, পুলিশ কেন, পুলিশের বাপ আসলেও ওখান থেকে রেহায় পাবেনা। আমি মনে মনে বলছি, বেডা মানুষ পাচারের কাজ করো, আর এখন পুলিশের কথা বলাতেই ঘাবরে গেলে! তোমার এলাকার পুলিশকে বশ করিয়েছো ভূতের ভয় দেখিয়ে। আর যেই না আমাদের এলাকার পুলিশের কথা বললাম। আর তখনই তুমি আকাশ থেকে পড়লে! বেডা তোমার কপালে শনিই আছে।
আমি তার ধমক শুনে ভয় পেয়েছি, এমন একটা ভাব নিয়ে বললাম "তাহলে কিভাবে আমরা আমাদের বন্ধুদের উদ্ধার করবো?
তখন তিনি বললেন, তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করার একটাই রাস্তা,  আর সেটা হলো ঐ বাড়িতে যাওয়া। আমি আকবর সাহেবের কথাতে মনে মনে না হেসে পারলাম না। তিনি এই মাত্র বললেন যে, বাবারা তোমরা যেখানেই ঘুরতে যাওনা কেন, তবে ঐ পোড়া বাড়িতে যেওনা।
আর এখনই আবার তিনি কথা ঘুরিয়ে সেখানে যাওয়ার কথা বলছেন। কি চালাক গো তুমি সাহেব! তোমার এসব কীর্তি,  এসব উদ্দেশ্য আমি অনেক আগেই ধরে ফেলেছি। তুমি যা ভাবছো তা কখনো সম্ভব না। তোমার ব্যবস্থা করতেই আমরা এখন বের হচ্ছি।
আকবর সাহেব কথাটি বলা মাত্রই অনুপম বলে উঠলো, চাচা আপনি না এই মাত্র বললেন যে "ঐ বাড়িতে তোমরা কেউ যেওনা"। তবে এখন আবার কেন সেখানে যেতে বলছেন। আচ্ছা যেতেই যখন বলেছেন, তখন চলুন আপনিও আমাদের সাথে যাবেন। ম্যাডামকেও ডাক দিই। উনাকেও সঙ্গে নিই। অনুপমের কথা শুনে তিনি একেবারে বোকা সেজে গেলেন। আমাদের উপদেশ দিতে এসে, নিজেই উপদেশ হয়ে গেলেন। তিনি আর কোন কথা বাড়ালেন না। সোজা তিনি তার ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।  আমি আর অনুপম দুজন বেরিয়ে পড়লাম রহমান সাহেবের সাথে দেখা করা এবং কথা বলার উদ্দেশ্যে।
.
দুজন হাঁটছি তবে নিঃশব্দ পায়ে। নিরবতা ভেঙে অনুপম আমাকে বললো, দোস্ত তোর অনুমান একদম ঠিক ছিলো। আকবর সাহেব আসলেও একটা চতুর লোক। তবে বুদ্ধিমান নয়।
আমি বললাম, বুদ্ধিমানও বটে। তবে আমাদের কাছে নয়। তিনি চেয়েছিলেন আমাদের সবাইকে ঐ বাড়িতে ঢুকিয়ে তার কার্য হাসিল করতে। যত মানুষ বাড়বে, ততই তার অর্থ আয় হবে। তিনি দেখলেন যে আমরা দুজন একটু চঞ্চল প্রকৃতির, আমাদের উপর উনার বলা কথাটা কার্যকর হয়ে গেলেই উনার লাভ। উনি বর্তমান অবস্থা থেকে আরো উচ্চতর স্থানে পৌছবেন। টাকা পয়সার পরিমাণ বাড়বে। গ্রামে এখন তার যেমন প্রভাব, এর চেয়েও বেশি প্রভাব হবে। আর আমাদের দুজনকে ওখানে ঢোকাতে পারলেই তো তিনি আর বাকি সবাইকেও ঢুকিয়ে দিতে পারবেন, সেটাও আবার কোনো ঝামেলা ছাড়াই।
আমার কথা বলার মাঝে অনুপম আমাকে আরেকটি কথা বলে উঠলো। কথাটা মন্দ নয়। আমি এ ব্যাপারে কখনো ভেবেই দেখিনি। যদিও কথা প্রসঙ্গে একবার ম্যাডাম বলেছিলেন কথাটি। কিন্তু আমি তখন কথাটাকে কানেই নিইনি। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে কথাটা অনেক কাজে দেবে।
অনুপম বললো, দোস্ত আমাদের শাহ আলম সাহেবকে একবার এ বিষয়ে জানানো দরকার। উনি আমাদের এ ব্যাপারে খুব ভালো সাহায্য করতে পারবেন এবং উনি উনার সহৃদয়ানুভব বন্ধুর আসল রুপটাও দেখতে পারবেন। আজকেই আমরা স্যারের উদ্দেশ্য চিঠি লিখবো,  কি বলিস তুই?
আমি সায় দিলাম তার কথায়।
.
এর মাঝে মাঝে আমি আর অনুপম হাঁটতে হাঁটতে রহমান সাহেবের বাড়ির কাছে চলে এসেছি প্রায়। এখন রহমান সাহেবকে বাড়িতে পেলেই হয়। আর না পেলে তো আবার খুঁজতে হবে। তবে সে প্রায় সবসময়ই বাড়িতে থাকে, শুধু বিকেলটা ছাড়া। কারণ এই বিকেলটাতে সে ঐ পোড়া বাড়িটির কাছে যায়। সেখানে যে তার দুটো ছেলেমেয়ে আকাশ আর মেঘা রয়ে গেছে।
আমরা তার বাড়ির মধ্যে ঢুকতে যাবো ঠিক সেই মুহূর্তে পেছন থেকে কেউ একজন আমাদের ডাক দিলো। কন্ঠে তার অস্থিরতা ছিলো। যেন সে আমাদের কিছু একটা বলতে চায়। আর সেটা বলতে পারলেই সে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।
আমি আর অনুপম পেছনে তাকাতেই বড় ধরনের একটা শকড্ খেলাম। আমরা এই সময়ে এই লোকটিকে এখানে আশা করিনি। কিন্তু লোকটিকে দেখে এখন বেশ সহজ সরল মনে হতে লাগলো। তার মধ্যে আর আগের সেই চতুরতা নেই। তবে সাহসটা ঠিকই আছে।
লোকটি আর কেউ নয়, এই গ্রামেরই সেই বেদম সাহসী এবং বড় চতুর ব্যক্তি মুন্সি।
কিন্তু হঠাৎ করে মুন্সি এখানে কেন? আর আমাদের কাছেই বা কি চায়?
.
অপেক্ষা করুন দশম পর্বের। আর দশম পর্বেই গল্পটির সমাপ্তি টেনে দিবো ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ সবাইকে আমার সাথে থাকার জন্য।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০০

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

গল্প পড়ে দেখতে হবে! আপাতত হাজিরা দিয়ে গেলুম! শুভেচ্ছা রইল!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.