নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনিকা তুমি এমন কেন

০৯ ই জুন, ২০২০ ভোর ৫:৫৬

আম্মু হঠাৎ করেই কল করে বললো, আগামী সপ্তাহে আনিকার বিয়ে। তুই কাল কিংবা পরশুর মধ্যে বাড়ি চলে আয়।
আমি বললাম, আনিকা কে?
- তোর বড় মামার মেয়ে।
- ঐ পিচ্চি মেয়েটা?
- পিচ্চি মেয়েটা আর পিচ্চি নেই। সে তোর থেকেও বড় হয়ে গেছে।
- বললেই হলো নাকি? সেদিনও তাকে পুতুল নিয়ে খেলতে দেখলাম।
- অত কথা বাদ দিয়ে বাড়ি আসতে বলেছি, বাড়ি আয়।
- আসতেই হবে?
- তোর মামাতো বোনের বিয়ে। আর তুই আসবি না?
- ওকে কাল সন্ধ্যায় আমাকে বাড়িতে পাবে।

আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আম্মু কী বললো এসব? আনিকার বিয়ে মানে কী? তার বিয়ে হয়ে গেলে আমার কী হবে? আনিকা কি এই বিয়েতে রাজি? না না, সে রাজি হতে যাবে কেন? পাঁচ বছরের রিলেশন আমাদের। তার তো রাজি হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আর আনিকা এ সম্বন্ধে আমাকে কিছু বলেনি কেন? নাকি আম্মু আমাকে মিথ্যা বললো? নাহ, আমার মাথা কাজ করছে না। আমি আনিকাকে কল করলাম। সম্প্রতি করোনার ভাইরাসের কারণে কাউকে কল করলে সরাসরি কল না ঢুকে আগে অফিস থেকে করোনার সতর্কবাণী এবং করণীয় সম্বন্ধণীয় কথা বলে। তারপর কল ঢোকে। করোনার আলাপ শেষ হতেই শুনতে পেলাম, আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মুহুর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। একটু পরে আবার ডায়াল করুন।

এখন রাত এগারোটা বাজে। আমি বারান্দায় পায়চারি করছি। নাঈম ভাই আমাকে রাতের খাবার খেতে ডেকেছেন। আমি ভাইয়ের ডাক শুনেছি। টেনশনের কারণে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে না। তাই আর রুমে যাইনি। খানিকপর নাঈম ভাই বারান্দায় এসে বললেন, কোনো প্রবলেম?
আমি বললাম, না না ভাই। কোনো প্রবলেম না।
- আমার সাথে আবার কবে থেকে মিথ্যা কথা বলা শুরু করলে।
- ভাই আনিকার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। আম্মু কেবল কল করে জানালো।
- হাহাহা, এ তো খুশির খবর।
- ভাই আমি টেনশনে মারা যাচ্ছি। আর আপনি হাসছেন?
- আরে হাসবো না? কারণ বিয়েটা তোমার সাথেই হচ্ছে।
- মানে?
- আনিকাকে কল করো।
- করেছিলাম।
- তার ফোন বন্ধ, তাইনা?
- হ্যাঁ। কিন্তু আপনি জানলেন কী করে?
- পুরোনো অভিজ্ঞতা শ্রাবণ।
- ভাই আমার প্রচুর টেনশন হচ্ছে। যদি এমনটা না হয়?
- আরে কিচ্ছু হবে না। আসো, ভেতরে আসো। খেয়ে নাও।
- জ্বী ভাই।
- আরে এত মন খারাপ করার কী আছে? বললাম তো কিছুই হবে না।

আমি ভাতের মধ্যে আঙ্গুল নাড়াচ্ছি। নাঈম ভাই বললেন, বাড়ি যাচ্ছো কখন?
আমি বললাম, সকালে রওনা দেবো।
- গুড। এখন খাওয়া দাওয়া করে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখে লম্বা একটা ঘুম দাও। আর অযথা টেনশন করার কিছু নেই।
- জ্বী ভাই।
- শোনো, বিয়ে একটা সম্পর্কের বাঁধন। আর এটা কোনো ছেলেখেলা নয় যে, যখন যে যা খুশি তাই করতে পারবে।
- ভাই।
- ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আর আজকের তরকারিটা কেমন হয়েছে?
- ভালো।
- নতুন খালা রান্না করে গিয়েছেন।
- হুম।
- আগের খালা বলেছেন উনি নাকি আর আসতে পারবেন না। উনি গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। তাই নতুন একটা খালাকে দিয়ে গিয়েছেন।
- বেশ তো!
- হ্যাঁ, এবার দ্রুত খেয়ে ওঠো।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলাম। তারপর লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। আনিকার সাথে শেষ কথা হয়েছে গতকাল। সে তো তখন কিছু বলেনি আমাকে। নাকি গতকাল সে জানতোই না যে আজ তার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে! তার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল বাড়ি থেকে ঢাকা আসার সময়। মেয়েটা সেদিন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। তার টোল পড়া গাল দু'টির কথা বারবার মনে পড়ছে। আমি তার ঠোঁটে চুমু না খেয়ে তার সেই টোলের উপরে চুমু খেতাম। এতে মেয়েটা হাসতো। বলতো, সবাই তার প্রেমিকার ঠোঁটে চুমু খায়। আর তুমি আমার টোল পড়া জায়গাতে চুমু খাও কেন? উত্তরে আমি হাসতাম। কিছু বলতাম না।

রাত একটা বাজে। চোখে ঘুম নেই আমার। কখন সকাল হবে, কখন আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবো? ভাবছি আম্মুকে আরেকবার কল করে আনিকার বিয়ের ব্যাপারে আরেকটু ভালো করে জেনে নেই। কিন্তু আম্মু যদি প্রশ্ন করে বসে, ওর বিয়ে নিয়ে তোর এত মাথা ব্যথা কেন? তখন কী করবো? এসব ভাবতে ভাবতেই আম্মুকে কল করলাম। রিং হচ্ছে। রিসিভ হচ্ছে না। হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছে। গ্রাম তো আর ঢাকা শহর না যে, সেখানে মানুষ অনেক রাত অব্দি জেগে থাকবে। হঠাৎই নাঈম ভাই বলে উঠলেন, কী ব্যাপার শ্রাবণ? এখনো ঘুমাওনি?
আমি বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ ভাই। এইতো ঘুমাচ্ছি।
- হ্যাঁ ঘুমিয়ে পড়ো। তোমার আবার কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।
- জ্বী ভাই।

রাত পেরিয়ে যাচ্ছে। আমার চোখে ঘুম নেই। বারবার আনিকার মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ঐ মুখের দিকে তাকিয়েই আমি সারাটাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো। ভোর রাতের দিকে চোখে ঘুম ঘুম ভাব এলো। শরীর পুরো ছেড়ে দিয়েছে। চোখ দু'টো লেগে আসছে। তাকিয়ে থাকা বড় দায় হয়ে গিয়েছে। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল সাতটার দিকে নাঈম ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। আমি ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলাম, সকাল হয়ে গিয়েছে। তিনি বললেন, রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি তাইনা?
- কিভাবে বুঝলেন ভাই?
- তোমার চোখ দু'টো লাল হয়ে আছে।
আমি বিছানা থেকে উঠে বেসিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর বড় আয়নাটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যই চোখ দু'টো ভীষণ রকম লাল হয়ে রয়েছে।

আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে থাকলাম। নাঈম ভাই বললেন, একটু পরে যাও। রান্না হচ্ছে। খেয়ে তারপরে যাও। এতে জার্নি ভালো হবে। আমাদের মেসে তিনটা রুম। পূর্ব দিকের রুমটাতে আমি আর নাঈম ভাই থাকি। বাকি দুইটা রুমের এক রুম খালি পড়ে রয়েছে। আর আরেক রুমে দুইটা বড় ভাই থাকেন। অবশ্য মেসটা প্রথমে আমি আর নাঈম ভাই-ই ভাড়া নেই। সুতরাং মেসের মালিক আমি আর নাঈম ভাই। মেসে যারাই উঠুক, তারা সবাই আমাদের করা নিয়ম কানুন মানতে বাধ্য। ফাঁকা রুমটার জন্য কিছু টু-লেটও লাগানো হয়েছে। এই মাসের মধ্যে ঐ রুমটাও ভরাট হয়ে যাবে আশা করা যায়। তখন মেসের ভাড়াটাও অনেকটা কমে আসবে।

রান্না শেষ হতে হতে আটটা বেজে গেল। আমি দ্রুত খেয়ে নিয়ে নাঈম ভাইকে বলে বেরিয়ে পড়লাম। আসার সময় তিনি বললেন, দেখেশুনে যেও। আর ওখানে কী হয় জানাইও। ছয় ঘণ্টার পথ। রোডে কোনো জ্যামও নেই। তবুও আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন এই পথ শেষ হবার নয়। আমি আম্মুকে কল করলাম। আম্মু কল রিসিভ করে বললো, রওনা দিয়েছিস?
আমি বললাম, হ্যাঁ আম্মু রওনা দিয়েছি। আম্মু একটা কথা বলার ছিল।
- বল।
- ছেলে কী করে?
- কোন ছেলে?
- যার সাথে আনিকার বিয়ে হচ্ছে!
- পড়ালেখা করে।
- তাহলে একটা বেকার ছেলের সাথে মামা তার মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন কেন?
- এতে তোর সমস্যা কোথায়? আর তাছাড়া ছেলেটা বেশ নম্র, ভদ্র একটা ছেলে। পরিবারও খুব ভালো।
- ছাই ভালো। তুমি খোঁজ নিয়ে দেখো ওদের পরিবারে ঝামেলা আছে।
- কী?
- না না, কিছু না।
- হুম। আয় তুই। কল রাখলাম।

আম্মু কল রেখে দিলো। ছেলেটা নম্র, ভদ্র, পরিবার ভালো, তার মানে সত্যই কি আনিকা অন্যের হয়ে যাচ্ছে? না এ হতে পারে না। প্রয়োজনে আমি মামাকে গিয়ে আমাদের সম্পর্কের কথাটা বলবো। মামা রাজি না হলে দু'জনে পালিয়ে যাবো। তবুও আমি আনিকাকে হারাতে পারবো না।
.
পূর্বের মতোই আনিকার ফোন বন্ধ। তার কি আমার কথা একবারও মনে পড়ছে না? নাকি সে আমাকে কল করার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না? না, এমনটা তো হওয়ার কথা না। যত যাই হয়ে যাক সে তার ফোনটা অন্তত অন রাখে। কিন্তু আজ বন্ধ কেন? সেই কখন থেকে বাস চলছে। তবু যেন রাস্তা ফুরাচ্ছে না। মনের মধ্যে আমার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আম্মুকে ছাড়া কাউকে কল করতেও পারছি না। কেননা যাকে কল করে আনিকার কথা জিজ্ঞেস করবো। সেই উল্টাপাল্টা ভেবে বসতে পারে।

বিকেল গড়ালে বাড়ি পৌঁছালাম। বাড়ি গেটে ইয়া বড় একটা তালা ঝুলানো। আমি আম্মুকে কল করতেই আম্মু বললো, বাড়ি এসেছিস?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
- তোর বড় মামার বাড়িতে চলে আয়।
- কিন্তু আম্মু আমার তো ফ্রেশ হতে হবে।
- এখানে এসে ফ্রেশ হয়ে নিস।
- পারবো না। তুমি কাউকে দিয়ে চাবিটা পাঠিয়ে দাও।

আম্মু আর কিছু না বলে কল রাখলো। গেটের সামনে পায়চারি করছি। দশ মিনিট যায়, বিশি মিনিট যায়। কারো আসার কোনো নামগন্ধও নাই। একবার ভাবছি মামার ওখানে চলে যাই। আবার ভাবছি, নাহ! আরেকটু দেখি না, কেউ আসে কিনা। ঘড়ির কাঁটাতে সময় পঁয়ত্রিশ মিনিট অতিক্রম করলে অয়নকে দেখতে পেলাম। অয়ন আনিকার ছোট ভাই। এবার নাইন কিংবা টেনে পড়ে। হেলেদুলে গান গাইতে গাইতে আসছে। আমাকে দেখেই সে গান গাওয়া বন্ধ করে দিলো। তারপর কাছে এসে সালাম দিয়ে বললো, ভাইয়া আপনার চাবি।
- এতক্ষণ লাগলো তোর?
- ব্যস্ত ছিলাম ভাইয়া, তাই দেরি হয়ে গেল।
- কিসের ব্যস্ত?
- আপনি জানেন না?
- না।
- শুক্রবারে আপুর বিয়ে।
ছেলেটার মুখে দারুণ একটা হাসি ফুটে উঠলো। হাসি ফুটে উঠাই স্বাভাবিক। বোনের বিয়ে মানেই তো মজা। সে কি আর প্রেম ভালোবাসা বোঝে? যে, তার বোনকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে, আপু তোর কাউকে পছন্দ থাকলে আমাকে বলতে পারিস। আমি একটা ব্যবস্থা করবো।
আমি বললাম, সত্যই বিয়ে?
- হ্যাঁ।
- তোর আপু কোথায় এখন?
- রুমে বসে সাজুগুজু করে।
- কী?
- হ্যাঁ।
- বিয়ে তো আরও পাঁচদিন পর। তবে এখনই সাজুগুজু কেন?
- আজ সন্ধ্যায় নাকি ছেলের বাড়ি থেকে কারা আসবে!
- ও।
- ভাইয়া আমি এখন যাই।
- না না, কোথায় যাবি? আয় ভেতরে আয়। আমি ফ্রেশ হয়ে নেই। তারপর দু'জন একসাথে যাচ্ছি।

অটোতে বসে আছি দু'জন। আমি অয়নকে বললাম, ভাই মামা এখনই কেন তোর আপুকে বিয়ে দিচ্ছে। ওর তো পড়ালেখাই শেষ হয়নি।
- আমি কী জানি?
- তোর আপু তো একটা পিচ্চি মেয়ে। ও কি বিয়ে সম্বন্ধে কিছু বোঝে?
- তাইতো!
- আচ্ছা তোর আপুর ফোন বন্ধ কেনরে?
- কই? আমি আসার সময়ও তো দেখলাম সে কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে।
- ও। আচ্ছা যেই ছেলের সাথে তোর আপুর বিয়ে হচ্ছে, সেই ছেলেকে দেখেছিস?
- না ভাইয়া। তবে আপু দেখেছে। আব্বা একটা ফটো এনেছিল ঐ ছেলের।
- তোর আপু পছন্দ করে ফেললো?
- ফেলবে না? অনেক সুন্দর দেখতে নাকি ছেলেটা!
- আচ্ছা বলতো, আমি দেখতে কেমন?
অয়ন কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, উমমম, আপনিও সুন্দর।
- ঐ ছেলের থেকে কম না বেশি?
- তা কী করে বলবো? আমি কি ঐ ছেলেকে দেখেছি নাকি?

বাড়িটা নানান ধরনের রঙবেরঙের লাইট দিয়ে সাজানো। দেখে মনে হচ্ছে যেন আজই বিয়ে। আমি বাড়িতে ঢুকতেই আম্মু আমাকে বললো, এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো?
আমি বললাম, বিয়ে তো শুক্রবারে। কিন্তু তোমরা আজই কেন চলে এসেছো?
- বা'রে, আনিকা আমার মেয়ে না? আর মেয়ের বিয়েতে মায়েদের থাকতে হয় না?
- মেয়েটা তো পিচ্চি এখনো। তাকে এখনই কেন বিয়ে দেওয়া হচ্ছে?
- কে বলেছে তোকে আনিকা পিচ্চি? গিয়ে দেখ কত সুন্দর দেখতে হয়েছে!
- সুন্দর হয়েই কি পিচ্চি মেয়েটা বড় হয়ে গিয়েছে?

আম্মু আর কিছু বলল না। আমাকে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বলল, এটাতে আপাতত তুই থাকবি। লোকজন বেশি হয়ে গেলে তখন বের হয়ে যেতে হবে।
- কেন? লোকজনের থেকে কি আমার দাম কম?
- তুই নিজের লোক। আর লোকজন বলতে আনিকার বান্ধবীরা আসলে তখন তারা কোথায় থাকবে?
আম্মু আমাকে রুম দেখিয়ে দিয়ে সামনের দিকে পা বাড়াতেই আমি বললাম, আম্মু।
আম্মু পেছন ফিরে বললো, হ্যাঁ। কিছু বলবি?
- ছেলের বাড়ি থেকে নাকি আজ কারা আসবে?
- হ্যাঁ এসেছিল। তুই আসার একটু আগে চলে গিয়েছে।
- ও।

আমি রুমে ঢুকে ব্যাগটা রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। এই রুমটাতেই আমি আনিকাকে প্রথম তাকে পছন্দের কথা বলেছিলাম। সেদিন তার হাত ধরতেই সে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিল, ভাইয়া আমাকে যেতে দিন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে তার সাথে আমার একটা সম্পর্ক তৈরি হলো। আনিকা এখন অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। আর আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

চোখে ঘুম প্রচুর। একটু ঘুমানো প্রয়োজন। গতরাতে ঘুম হয়নি। বাসেও ঘুমাতে পারিনি। কিন্তু তার আগে আনিকার সাথে একবার দেখা করা দরকার। আমি বিছানা থেকে উঠে বসতেই চোখটা আমাকে ডেকে বললো, ভাই এখন একটু ঘুমিয়ে নে। পরে তোর আনিকার সাথে দেখা করিস। অগত্যা আমাকে ঘুমাতে হলো।

রাত ন'টা কি সাড়ে ন'টা বাজে। কেউ রুমের দরজায় নক করলো। আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলাম আম্মু দাঁড়িয়ে আছে।
- কিরে এত ঘুমালে চলবে? খেতে হবে না?
- হুম যাও। আসতেছি আমি।
- তাড়াতাড়ি আয়।

রুমের সাথেই এটাস্ট বাথরুম। আমি ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম। বাড়িতে লোকজন তেমন নেই। মামার বাড়ির ক'জন, আমার বাড়ির ক'জন। আর খালার বাড়ি থেকে খালা আর রুমকি এসেছে। রুমকি অয়নের সাথেই পড়ে। ডাইনিং টেবিলে সবাই একসাথেই খেতে
বসেছি। স্পেসটা অনেক বড় থাকায় অনেকের একসাথে খেতে কোনো অসুবিধা হয় না। সবাই এসেছে। কিন্তু আনিকাকে দেখছি না। আমি আম্মুর পাশে বসেছি। আম্মুকে বললাম, আনিকা কোথায়?
আম্মু বললো, সে এখানে এতো মানুষের মধ্যে বসে খেতে পারবে না। তার রুমে খাবার দিয়ে আসা হয়েছে।
- আম্মু।
- হু।
- খাওয়ার পরে কিছু কথা আছে। একটু বেলকনিতে এসো।

খাওয়া শেষ হলে আমি আর আম্মু বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। আম্মুকে বললাম, তোমরা যে আনিকাকে বিয়ে দিচ্ছো। এতে আনিকার মত আছে?
- মত না থাকলে কি এমনিতেই দিচ্ছি নাকি?
- কী?
- হ্যাঁ।
- ছেলের ছবি আছে তোমার কাছে?
- না। তোর মামার কাছে আছে।
- ফোন নাম্বার?
- না।
- আম্মু একটা কথা।
- তাড়াতাড়ি বল। আমার কাজ আছে।
এর মধ্যেই বড় মামি আম্মুকে ডাক দিলেন। আম্মু আমার কথা না শুনেই প্রস্থান করলো।
.
আম্মু বলেছিল আগামী সপ্তাহে বিয়ে। কিন্তু এসে দেখছি এই সপ্তাহের শুক্রবারেই বিয়ে। সবাই ঘুমাতে যাচ্ছে। অয়নকে সামনে পেতেই তাকে ডাক দিলাম। সে কাছে এলে বললাম, পিচ্চি ভাই সেই কখন তোদের এখানে এসেছি। অথচ তোর বোনকেই দেখা হলো না।
- দেখেন রুমে আছে।
- ঘুমিয়ে গিয়েছে?
- না। কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।
- ও। ঠিক আছে। তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
- আচ্ছা।

অয়ন চলে যেতেই আমি আনিকার রুমে নক করলাম। খানিকপর সে দরজা খুলতেই আমি ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আনিকা আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে। আমি দু'হাতে তাকে ধরে বললাম, এসব কী হচ্ছে আনিকা? তোমার বিয়ে মানে কী?
আনিকা চুপ করে আছে। আমি আবারও বললাম, আনিকা আমাদের পাঁচ বছরের রিলেশন। সেটা কি তুমি ভুলে গিয়েছো? আর তোমার ফোন বন্ধ কেন?
- শ্রাবণ আমাকে ছাড়ো।
আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। ছেড়ে দিতেই সে বললো, দেখো আমি বাবার অমতে তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।
- তোমার বাবাকে আমার কথা বলেছো?
- আস্তে কথা বলো। বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে তোমার কথা।
- তোমার বাবাকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলেছো?
- না।
- একবার বলতে তো পারতে।
- বাবার রাগ সম্পর্কে তো তুমি জানো। কখন কী করে বসে বলা যায় না।
- আমি মামাকে বলবো।
- না।
- কেন?
- বাবার হার্টের প্রবলেম। ডাক্তার বিশ্রাম করতে বলেছেন।
- আনিকা, এই আনিকা। তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে থাকতে পারবে?
- একসময় সব সয়ে যাবে।
- আমার কী হবে তাহলে?
- তুমিও অন্য কাউকে বিয়ে করে নিও।
- আনিকা।
- এখন যাও। রাত অনেক হলো। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে।
- ছেলের ফোন নাম্বার আছে?
- আছে।
- ছবি?
- হ্যাঁ।
- দেখি।

আনিকা ছেলেটার ছবি বের করে দেখালো আমাকে। দেখতে বেশ সুদর্শন। আনিকার থেকে ছেলেটার ফোন নাম্বার চাইতেই সে বললো, দেখো শ্রাবণ আমি চাচ্ছি না তুমি এর মধ্যে কোনো গণ্ডগোল পাকাও।
- গণ্ডগোল? আনিকা তুমি বুঝতে পারছো, এই বিয়ে মানে তুমি অন্যের হয়ে যাওয়া।
- হ্যাঁ বুঝতে পারছি।
আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমি আনিকাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। সে নিজেকে ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা করলো না। খানিকপর তাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে তার রুম থেকে বের হয়ে এলাম।
.
আনিকা তুমি এমন কেন
পর্ব-১
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: বেশ কিছু দিন আপনাকে ব্লগে দেখি নি।
আপনার গল্প মিস করেছি।

০৯ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪৩

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ভাইজান মার্চ মাসের ২৫ তারিখে বাড়ি এসেছি। এখনো ঢাকাতে যাওয়া হয়নি। এখানে ইন্টারনেট প্রবলেম। সাথে ওয়াফাই নেই। এজন্য ঢুকতে পারি না। আজ অনেক কষ্টে ঢুকেছিলাম। ভিপিএন ছাড়া কানেক্ট হচ্ছিল না। আর তাছাড়া নেট কেনারও একটা বিষয় রয়েছে। নেট কিনলেও ভালো মতো চালানো যায়। ঢাকায় গেলে আবার সক্রিয় থাকবো ইনশাল্লাহ।

২| ০৯ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: আমার জীবনে মেসবাড়ির অভিজ্ঞতা নেই।

লেখা ভালো হচ্ছে চালিয়ে যান।

০৯ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪৩

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান।

৩| ০৯ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:২৮

ইসিয়াক বলেছেন: বাহ! আপনাকে পেয়ে ভালো লাগলো। মনে মনে খুঁজছিলাম। যাক ভালো আছেন । ভালো লাগলো।
শুভকামনা।

০৯ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫২

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ভালোবাসা ভাইজান। দোয়া করবেন। আর সতর্ক থাকবেন।

৪| ০৯ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৫৬

নজসু বলেছেন:


গল্পটা পড়লাম। অনেক আবেগ দিয়ে লিখেছেন। প্রকৃত ভালোবাসা কখনো পর হয়না। আনিকার ভালোবাসা প্রশ্নের সম্মুক্ষীণ।
আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আর আমি যতোদূর জানি কাজিনদের মধ্যে বিয়েশাদী হলে সন্তান নাকি প্রতিবন্ধী হয়।

০৯ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৪

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান। তবে শেষ কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল

৫| ০৯ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:৪৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: উপভোগ্য লেখা। 

০৯ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৬

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান। আজ অনেকদিন আপনাদের সাথে কথা হলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.