নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেহে নয়, মনেই প্রেম হয়

১০ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:৩৭

অর্পা, ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। শুধু ক্লাস নয়। অত্র কলেজের মধ্যেই সে সুন্দরী একটা মেয়ে। শাওন তার ক্লাসমেট। সে অনেকবার অর্পার সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। কেননা অর্পা যে সুন্দরী, সেটা সে জাহির করতেই কাউকে পাত্তা দিত না। শাওন তার পিছে আঠার মতো লেগে থাকতো। তবুও কাজ হতো না।

অর্পা সেদিন কলেজের সামনে রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিতে গিয়ে দেখলো, সে তার পার্স বাসাতে ফেলে এসেছে। এদিকে রিকশাওয়ালাও দাঁড়িয়ে আছে। আর অর্পা শুধু এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। রিকশাওয়ালা বারবার বলছে, আফা ভাড়াটা দেন। আমার যাইতে হইবো।
অর্পা তার ফোন বের করে তার বান্ধবীদের কল করলো। কিন্তু কেউ কোনো রেসপন্স করলো না।

শাওন একটু দূরে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে বিষয়টা লক্ষ করছিল। সে চায়ের কাপটা রেখে দোকানদারকে বিল মিটিয়ে অর্পার কাছে গিয়ে বললো, আমি কি সাহায্য করতে পারি?
সে কোনো জবাব দিল না। শাওন পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করে রিকশাওয়ালাকে বললো, ভাড়া কত?
রিকশাওয়ালা বললো, চল্লিশ টাকা মামা।

খানিকবাদে রিকশাওয়ালা প্রস্থান করলে সে অর্পাকে বললো, টাকাটা কিন্তু এমনি এমনি দেইনি। পরে অবশ্যই টাকাটা শোধ করে দেবেন।
অর্পা কিছু না বলে কলেজের মধ্যে ঢুকে গেল।
.
সম্প্রতি শাওন লক্ষ করছে অর্পা তার দিকে মাঝে মাঝেই তাকিয়ে থাকে। শাওন ভাবলো, হয়তো সে মেয়েটার মনে ধরেছে। তাই সে নিজে থেকেই তার সাথে কথা বলতে গেল। কিন্তু কে জানতো হিতের বিপরীত হবে? অর্পা ভরা ক্লাসে তার সাথে বাজে ব্যবহার করলো। শাওন বুঝে উঠতে পারলো না, মেয়েটি এমন করলো কেন।

হয়তো সে সুদর্শন নয় বলেই মেয়েটি এমন করলো। কেননা একটা সুন্দরীর সাথে একটা অসুন্দর ছেলেকে দেখলে লোকে কী বলবে! তাই হয়তো অর্পা তার সাথে এমন বিহেভ করলো।

ক্লাস শেষে যে যার যার মতো বাসায় চলে যাচ্ছে। স্যারদের সাথে শাওনের একটু ভালো খাতির থাকায় সে প্রতিদিনই সবার পরেই বাসায় যায়। ক্লাস ফাঁকা হয়ে গেলে শাওন দেখলো অর্পা মেয়েটি তখনো ক্লাসে রয়ে গিয়েছে। সে ক্লাস থেকে বের হতে যাবে, ঠিক তখনই অর্পা তাকে ডাক দিয়ে বললো, শাওন আ'ম সরি।
সে কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে চাইলে মেয়েটা আবারও বললো, শাওন আ'ম রিয়েলি সরি। দেখো, তখন মেজাজটা একদমই ভাল ছিল না আমার।
শাওন চলে গেল।
.
গতকাল রাহাদের সাথে অর্পার ব্রেকাপ হয়েছে। রাহাদ, অর্পা, শাওন সবাই একই ক্লাসে পড়ে। রিলেশনের ছয় মাস যেতে না যেতেই রাহাদ অর্পাকে শারীরিক রিলেশনের জন্য ইঙ্গিত দেয়। বেশ কিছুদিন ধরেই এরকম ইঙ্গিত দেয়।  যার কারণে সে রাহাদের সাথে রিলেশন ব্রেকাপ করে।

অথচ এই ব্রেকাপের বশবর্তী হয়েই সে আজ শাওনের সাথে বাজে ব্যবহার করলো। অবশ্য এখানে শাওনের কোনো দোষ নেই। কেননা, অর্পা যদি কিছুদিন যাবৎ তার দিকে না তাকাতো, না হাসতো, তবে সে কখনই তার সাথে কথা বলতে যেত না।
.
অর্পা তার ডিপার্টমেন্টের স্যারদের থেকে শাওনের ফোন নাম্বার কালেক্ট করলো। রাতের আহার শেষে সে শাওনকে কল করলো। কল রিসিভ হলে সে কথার শুরুতেই শাওনকে সরি বললো। শাওন ফোন রাখতে চাইলে অর্পা বললো, প্লিজ ফোনটা রেখো না। একটু কথা বলার সুযোগ দাও আমাকে।
শাওন তার অমন আকুতি মিনতি গ্রহণ করে বললো, সুযোগ দিলাম।
- দেখো, আমি সত্যই সরি। আমার মাথাটা তখন একদমই ঠিক ছিল না। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।
- আর কিছু বলবেন?
- মাফ করে দিয়েছো?
- আর কিছু বলার থাকলে বলুন, নয়তো ফোন রাখুন। ঘুমাতে হবে।

অর্পা ফোন রাখলো। এই প্রথম সে লক্ষ করলো, শাওন ছেলেটা অনেক সুন্দর করে কথা বলে। তার কথার মধ্যে একটা মায়া আছে। সেদিন কলেজের সামনে তাকে রিকশার ভাড়াটা দিয়ে সাহায্য করলো, পক্ষান্তরে সে একটা ধন্যবাদ প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু তাকে সেদিন ধন্যবাদটা দেওয়া হয়নি। অথচ ছেলেটি তার সাথে কথা বলতে চাওয়ার অপরাধে সে তার সাথে বাজে ব্যবহার করলো। অর্পা নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে। ছেলেটির সাথে তার এমন করা মোটেও উচিত হয়নি।
.
কলেজে শাওনের তেমন কোনো বন্ধু নেই। শাওনের পরিচিত বলতে ডিপার্টমেন্টের স্যার-ম্যাডামেরা এবং সুকান্ত নামের একটা হিন্দু ছেলে আছে। অর্পা সুকান্তের সাথে কন্ট্রাক করে শাওনের পছন্দ অপছন্দ সম্বন্ধে অবগত হয়ে নিজেকে শাওনের পছন্দমতো উপস্থাপন করার চেষ্টা করতে লাগলো। শাওন নীল শাড়ি পছন্দ করতো। অর্পা প্রায় দিনই নীল শাড়ি পড়ে কলেজে যেত। শাওন কাঠগোলাপ পছন্দ করতো। সে প্রায় দিনই খোঁপায় কাঠগোলাপ গুঁজে কলেজে যেত।

অন্যান্য দিনের মতো আজও সে নীল শাড়ি, কাঠগোলাপ পড়ে কলেজে এসেছে। বিষয়টা শাওনের নজর এড়ায়নি। সে প্রায়ই অর্পার এমন চালচলন খেয়াল করে। অর্পা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও শাওনের অনিচ্ছার জন্য সে কথা বলতে পারে না, এটাও শাওন বুঝতে পারে।

শেষ ক্লাসে স্যার এসে বললেন, আমরা আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে শিক্ষা সফরের আয়োজন করেছি। যারা যেতে ইচ্ছুক, তারা শাওনের কাছে নিজেদের নাম, ফোন নাম্বার এবং চাঁদার টাকাটা জমা দেবে।
.
ক্লাস শেষে ক্লাসের প্রায় নব্বই শতাংশ ছেলেমেয়ে তাদের ফোন নাম্বার এবং নাম লেখা দিল। অনেকে টাকা জমা দিল। আবার অনেকে বললো আগামীকাল দেবে। ধীরে ধীরে ক্লাস ফাঁকা হতে থাকলো। সবাই চলে গিয়েছে। শুধু শাওন, সুকান্ত, অর্পা আর একটা ছেলে রয়ে গিয়েছে। সুকান্ত শাওনকে বললো, দোস্ত রুহানও আমাদের সাথে শিক্ষাসফরে যেতে চায়। কিন্তু ওর পক্ষে চাঁদার টাকাটা পুরোপুরি পরিশোধ করা সম্ভব না।
শাওন বললো, রুহান ভাই। আপনার টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আপনি যাচ্ছেন আমাদের সাথে। আপনার টাকা পয়সা এবং ওখানকার সকল খরচ আমার।
রুহান তার ফোন নাম্বার দিয়ে চলে গেল। রুহান চলে যেতেই অর্পা শাওনের কাছে গিয়ে বললো, তোমার খুব ভাব, তাই না?
উত্তরে শাওন তেমন কিছু বললো না। সে নাম লিস্ট করা খাতাটা তার ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগটা পিঠে ঝুলাতে ঝুলাতে বললো, দেখুন মানুষকে সম্মান করতে শিখুন। আর মানুষকে মানুষ মনে করুন। সবাই ঐ উপরওয়ালার সৃষ্টি। কারো বাহিরটা দেখে কাউকে বিচার করবেন না। সবাই তো আর আপনার মতো এতটা সুন্দর না। কিন্তু তারাও তো মানুষ।

অর্পা দাঁড়িয়ে রইলো। শাওন আর সুকান্ত ক্লাস থেকে প্রস্থান করলো।
.
সন্ধ্যার সময় অর্পা শাওনকে কল করলো। শাওন মুচকি হেসে কলটা রিসিভ করলো। কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর অর্পা বললো, কেমন আছো শাওন?
শাওন তাকে না চেনার ভান করে বললো, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আপনি কে?
অথচ অর্পার ফোন নাম্বার সে খুব যতন করে "সুন্দরী" লিখে সেভ করে রেখেছে।
অর্পা বললো, তুমি এখনো আমাকে ক্ষমা করোনি তাই না?
- ও, আপনি!
- আচ্ছা আমি কি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না?
- এই প্রশ্নটা আপনি আপনার নিজেকেই করুন।
- শাওন একটা কথা বলার ছিল।
- বলুন।
- কাল কলেজে এসো। তখন বলবো।
- ঠিক আছে।

পরদিন কলেজে গেলে সে শাওনকে ভরা ক্লাসে প্রপোজ করলো। শাওনসহ ক্লাসের সবাই হতবাক। সে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার হাত থেকে ফুলটা নিলো। এরই মধ্যে ক্লাসে স্যারের আগমন ঘটায় পরবর্তী ঘটনাটা আর দেখা হলো না কারো।
.
বিকেলে শাওন নিজেই অর্পাকে কল করলো। অর্পা আহ্লাদিত হয়ে কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই শাওন বলে উঠলো, দেখুন আপনি নিশ্চয়ই মজা করছেন আমার সাথে। আর আমি মজা ব্যাপারটা একদমই পছন্দ করি না।
অর্পা বললো, শাওন আমি মজা করছি না। তোমার কথা বলা, চাল-চলন, ব্যবহার, এক কথায় তোমার সবকিছু আমাকে মুগ্ধ করেছে। প্লিজ ফিরিয়ে দিও না আমাকে।
- এ সম্ভব না মিস অর্পা। আপনি কোথায় আর আমি কোথায়? আপনার সাথে আমাকে একদমই মানাবে না।
- আমি একটা সুন্দর মনের মানুষ চাই। সুন্দর চেহারার নয়। আর হ্যাঁ, তুমি নিজেকে যতোটা অসুন্দর মনে করো। তুমি কিন্তু ঠিক অতোটাও অসুন্দর নও। তুমি যথেষ্ট সুন্দর একটা ছেলে।
- আমি নিজেকে কখনই অসুন্দর মনে করি না। আমি কেবল নিজেকে আপনার অযোগ্য একজন মনে করি।
- আমি এই অযোগ্যকেই যোগ্য করে নেবো।
- পারবেন না।
- একবার সুযোগ দিয়ে তো দেখতে পারো।
- ওকে, দিলাম।
.
অর্পার সাথে শাওনের একটা রিলেশন তৈরি হয়ে গেল। সুকান্ত সবসময় শাওনকে উৎসাহ দিতো। বলতো, দোস্ত তোদের দু'জনকে না দারুণ মানাবে। আর তুই কিন্তু আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গিয়েছিস।
শাওন হাসতো। কেননা সে নিজেও জানে, সে দিন দিন আগের থেকে বেশ সুন্দর হয়ে যাচ্ছে। লোকে তাহলে ঠিকই বলতো, প্রেমে পড়লে অসুন্দর ছেলেটিও সুন্দর হয়ে যায়।

শিক্ষা সফরের দিন অর্পার পাশের সিটটা শাওনের জন্য বরাদ্দ করা হলো। অর্পা যথেষ্ট ধনী পরিবারের মেয়ে। তার বাবা সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। কিন্তু অর্পা কখনো নিজেদের গাড়িতে করে কলেজে যেতো না। সে প্রতিদিন রিকশা করেই কলেজে যেতো। রাহাদের সাথে ছয় মাস রিলেশন থাকার পরেও রাহাদ জানতো না যে, তার বাবা সেনাবাহিনীর অফিসার। কিন্তু শিক্ষা সফরের দিন যখন দুইটা বডিগার্ড তার সাথে এলো। তখন সবাই বুঝতে পারলো অর্পা যথেষ্ট ধনী পরিবারের মেয়ে।
পরে জানতে পারলো অর্পার বাবা সেনাবাহিনীর অফিসার।

বাস চলছে আপন গতিতে। অর্পা শাওনের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। সামনের দিকে কিছু ছেলেমেয়ে তখনো হৈ-হুল্লোর করছে। শাওন অর্পার দিকে তাকিয়ে দেখলো, নিষ্পাপ একটি মুখ। ঘুমালে তাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে। সে তার কপালের উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিলো।
.
শিক্ষা সফরের সবটা সময় অর্পা শাওনের হাত ধরে ছিল। যেন, হাত ছাড়লেই শাওন হারিয়ে যাবে। আর শাওনও তার এমন সঘন প্রেমে মুগ্ধ হলো।
.
নিয়ম করে ঘুরতে যাওয়া, দামি রেস্টুরেন্টে না বসে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা ফুচকা খাওয়া, কখনো কখনো গভীর রাতে ঢাকা শহরের পিচঢালা পথে গন্তব্যহীন হেঁটে চলা। বৃষ্টি এলে দু'জনে একসঙ্গে ভেজা, এ যেন গভীর প্রেমের পূর্বলক্ষণ।
.
অনার্স থার্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আজ তাদের রিলেশনের এক বছর পূরণ হলো। রাত তখন একটা বেজে পাঁচ মিনিট। শাওন অর্পার বাসার সামনে গিয়ে তাকে কল করলো। কয়েকবার রিং হতেই অর্পা রিসিভ করলো। শাওন বললো, এইযে মিষ্টি মেয়ে একটু নিচে আসতে পারবে?
অর্পা বিছানার উপর উঠে বসে বললো, এতরাতে?
- আসো না একটু।
- না, আব্বু দেখলে খবর হয়ে যাবে।
- কিচ্ছু হবে না। তুমি এসো।
- হবে হবে।
- বলছি তো কিচ্ছু হবে না।
- না, আমি যেতে পারবো না।
- ওকে। তাহলে আমি যেমন তেমন করে দেয়াল টপকে তোমাদের বাসার মধ্যে ঢুকতেছি।
- এই না না। আমি আসছি।
- হুম, কুইক এসো।

অর্পা চুপিচুপি বাসা থেকে বের হয়ে গেটের কাছে আসতেই মোজাম্মেল চাচা বললেন, মামনি এতরাতে কোথায় যাও?
- বা.. বা.. বাইরে চাচা।
- ছেলেটা কে? পছন্দ করো?
- জ্বী.. জ্বী.. জ্বী চাচা।
- ভয় পেতে হবে না। যাও। তোমাদের বয়সটা একসময় আমাদেরও ছিল।

মোজাম্মেল চাচা গেট খুলে দিলেন। অর্পা বাইরে বের হতেই দেখলো রাস্তা উপরে মোমবাতি জ্বালিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা "I Love You Arpa"
পাশেই একটা গাড়ির সামনে শাওন দাঁড়িয়ে আছে। অর্পা তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, আই লাভ ইউ টু শাওন।
শাওন বললো, চলো এখন?
- কোথায়?
- আরে চলো না আগে।
- এই গাড়ি কার?
- আমার।
- তোমার?
- হ্যাঁ, আমার?
- কিন্তু.....
- কোনো কিন্তু নয়। আগে চলো আমার সাথে।

অর্পার মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গেল। শাওনও আবার রাহাদের মতো নয় তো! গভীর রাত, নির্জন রাস্তা, একটা প্রাইভেট কার। একলা দু'জন মানুষ। এই মুহুর্তে শাওনকে তার কেমন যেন অপরিচিত অপরিচিত মনে হচ্ছে। সে তার বাসার গেটে ফিরে গিয়ে মোজাম্মেল চাচাকে বলে বের হয়ে এলো। তারপর গাড়িতে উঠে বসলো।

অর্পা বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে, শাওন আমরা কোথায় যাচ্ছি?
শাওন কোনো উত্তর করেনি। অর্পা তার ফোন বের করে চুপিচুপি তার বান্ধবীর ফোন একটা টেক্সট করলো, দোস্ত আমি এখন এই মুহুর্তে শাওনের সাথে আছি।
শাওন বললো, ভয় পাচ্ছো অর্পা? কাকে টেক্সট করলে? আমার উপর তোমার আস্থা নেই?
অর্পা ভাঙা গলায় বললো, না.. না... না আসলে সেটা নয়।
- এই একটা বছরে আমাকে এই চিনলে তুমি?
- সরি শাওন।
- দেখো, তুমি ভাবছো তোমার সাথে খারাপ কিছু করবো আমি। যদি এটা ভেবে থাকো, তবে তুমি ভুল ভাবছো। যদি এমনটাই করতাম। তবে অনেক আগেই করতে পারতাম।

অর্পা চুপ করে আছে। শাওন একটা বাড়ির সামনে এসে ব্রেক কষলো। গাড়ির হর্ণ বাজাতেই একটা লোক গেট খুলে দিল।
অর্পা জিজ্ঞেস করলো, এটা কার বাড়ি?
শাওন বললো, আগে ভেতরে চলো। তারপর বলছি।

দু'জনে গাড়ি থেকে নামলো। ডুপ্লেক্স বাড়ি। বাহিরটা বেশ চমৎকপ্রদ। কিন্তু অর্পার মনের ভয়টা একদমই কাটছে না। শাওন তাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই তার মা বলে উঠলো, এতক্ষণ লাগলো আমার বৌমাকে নিয়ে আসতে?
পাশে থেকে তার বাবা বললো, তোমাকে যখন নিয়ে এসেছিলাম। তখন তো এর চেয়েও বেশি সময় লেগেছিল আমার।

অর্পার চোখ দু'টো ছলছল করছে। তার মধ্যে থাকা অজানা ভয়টা ততক্ষণে উড়াল দিয়েছে। সামনে একটা কেক, চারিদিকে মোমবাতি সাজানো। শাওন সবগুলো মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে লাইট নিভিয়ে দিলো। অতঃপর তার আর অর্পার রিলেশনের বর্ষপূর্তি উদযাপন করলো।

শাওন অর্পাকে তার বাবা মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে অর্পাকে নিয়ে তার বাসার পথে রওনা দিলো। গাড়ির মধ্যে অর্পা শাওনকে বললো, ওটা তোমাদের বাড়ি?
- হ্যাঁ কেন?
- কিন্তু তোমাকে দেখে তো বুঝার উপায় নেই যে, তুমি একজন ধনী পরিবারের সন্তান।
- সাদামাটা থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
- আর এজন্যই তোমাকে ভালোবাসি।

শাওন অর্পাকে তার বাসা সামনে নামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অর্পা গেটের কাছ থেকে ফিরে এসে শাওনকে জড়িয়ে ধরলো। অতঃপর তার ঠোঁটে একটু ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে দৌঁড়ে বাসার মধ্যে ঢুকে গেল। অর্পা রুমে গিয়ে শাওনকে টেক্সট করার পর শাওন তার বাসার দিকে রওনা দিলো।
.
অর্পা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা বাজে। তার চোখে এখন আর ঘুম নেই। আজকের দিনটার কথা সে কোনোদিন ভুলবে না। সে ভাবছে, শাওন এত ধনী পরিবারের ছেলে হয়েও তার মধ্যে কোনো বাজে স্বভাব নেই। কিন্তু ছেলেটা বড্ড চতুর। কেননা সে এই একটি বছরে একবারও তার বাসার ঠিকানা বলেনি। অবশ্য বলবেই বা কেন? সে তো কখনো শাওনের ঠিকানা জানতেই চায়নি।
.
অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হলে দুই পরিবারের সম্মতিতেই তাদের দু'জনের বিয়ে হলো। বাসর রাতে শাওন অর্পাকে বললো, এইযে সুন্দরী মেয়ে তোমার থেকে যে চল্লিশ টাকা পাই। সেটা কে দেবে?
অর্পা মুচকি হেসে বললো, সেই চল্লিশ টাকা যদি অন্যভাবে শোধ করি। তাহলে কি চলবে মহাশয়?
- আপনার প্রবৃত্তি ম্যাডাম।

অতঃপর অর্পা তার ঋণটা আদর দিয়ে শোধ করে দিলো।
.
দেহে নয়, মনেই প্রেম হয়
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:০৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বর্তমানে এমন প্রেম বিরল

১১ ই জুন, ২০২০ ভোর ৫:২৯

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: জ্বী ভাইজান। তবে মন ঠিক থাকলে সম্ভব।

২| ১১ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:০৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বর্তমানে এমন প্রেম বিরল

১৪ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫৩

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: জ্বী ভাইজান

৩| ১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫১

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ভালোই লিখেছেন, চালিয়ে যান।

১৪ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫২

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি লক্ষ্য করেছেন- আপনার প্রায় সব লেখাতেওই একই রকম থিম। একটু পরিবর্তন আনুন।

১৪ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫২

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: জ্বী ভাইজান। আ'ল ঠ্রাই

৫| ১১ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন:
"চমত্কার প্রেমের গল্প" -

১৪ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫১

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ভাই

৬| ১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:১২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভালই গোছানো লেখা।

১৪ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫০

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.