নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাইলেন্ট কিলার

১৪ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫৬

- অনু মা, কাল বিকেলে একটা ছেলে এসেছিল একটা কাজের খোঁজে। ছেলেটা দেখতে শুনতে খুব ভালো। তার সাথে কথা বলার পর মনে হলো, একটা কাজ তার খুবই প্রয়োজন। তাই বলছিলাম কী ছেলেটাকে আমাদের বাড়ি দেখাশোনার কাজ দেই। কী বলিস তুই?

অনামিকা তখন মর্নিং ওয়াকে বের হচ্ছিলো। অনামিকাকে তার বাবা ছোট্ট করে অনু বলে ডাকে। অনু জবাব দিলো, সেটা তোমার ইচ্ছা বাবা। আমি গেলাম। আম্মুকে বলো আম্মু যেন আমার জন্য নাশতা রেডি করে রাখে। আমি আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফিরবো।

অনু বাসা থেকে বের হতেই গতকালের সেই ছেলেটি এসে হাজির। আহম্মেদ খানকে সালাম দিয়ে ছেলেটি বললো, স্যার আপনি আজ আসতে বলেছিলেন।
আহম্মেদ খান বললেন, হ্যাঁ। তোমার পরিচয় পত্র নিয়ে এসেছো?
- জ্বী স্যার।
- গুড বয়। তুমি আজ থেকে আমার এই বাড়ির দেখাশোনা করবে।
- জ্বী স্যার।
- একটু পর আমার মেয়ে এসে তোমাকে পুরো বাড়িটার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে।
- জ্বী স্যার।

আহম্মেদ সাহেব ছেলেটার পরিচয়পত্রের ফটোকপি হাতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। ছেলেটার নাম হাসান। নামের আগে পিছে কিছু নেই।
.
অনু বাসায় ফিরলে হাসান তার থেকে বাড়ির বাহ্যিক দায়িত্বগুলো বুঝে নিতে লাগলো। যেমন, বাগান দেখাশোনা করা, গাড়ি মোছা, ছাঁদের ফুলের গাছগুলোতে পানি দেওয়া। সাথে কখন কে বাসায় ঢুকে, তার খবর রাখা।

কিছুদিনের মধ্যে হাসান "খান পরিবারের" সবার প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলো। এ বছরে অনামিকার স্নাতক শেষ হবে। আর সে তার বাবাকে বলে রেখেছে স্নাতক শেষ হলেই সে বিয়ে করতে চায়। তার বাবা তাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। কোনো ছেলেকে যদি তার পছন্দ হয়, সে যেন তার বাবাকে এসে বিষয়টা জানায়। কিন্তু অনামিকার তেমন কোনো ছেলেকেই পছন্দ হয় না।

সকালবেলা মর্নিং ওয়াকে বের হওয়ার সময় হাসান অনামিকাকে বললো, ম্যাডাম মর্নিং ওয়াকে যাচ্ছেন?
অনামিকা হাসানের কথার প্রত্যুত্তরে বললো, তুমি তো অনেক সুন্দর করে কথা বলো! এতদিন তো তোমার এই বিষয়টা আমার চোখে পড়েনি!
হাসান লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো। অনামিকা বললো, আরে আরে এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। পড়ালেখা জানো?
- ইন্টার পাশ ম্যাডাম।
- চলবে।
- ড্রাইভিং জানো?
- শিখেছিলাম একবার।
- গুড। চলো আজ ঘুরতে বের হবো। সাথে তোমাকে ড্রাইভিংটাও শিখিয়ে দেবো।
- কিন্তু ম্যাডাম, আপনি না মর্নিং ওয়াকে যাচ্ছেন?
- আজ যাবো না। তুমি একটু দাঁড়াও, আমি গাড়ির চাবিটা নিয়ে আসি।

অনামিকা ফিরে গিয়ে গাড়ির চাবিটা নিয়ে এসে বললো, চলো।
হাসান কিছুটা ইতস্তত করলে সে বললো, আরে এত লজ্জা পাচ্ছো কেন? আসো আমার সাথে। আজ তুমি ড্রাইভিং করবে। না পারলে আমি তো আছিই।

দু'জনে গাড়ি নিয়ে 'দিয়া বাড়ি'র দিকে রওনা দিলো। হাসানই ড্রাইভ করছে। অনামিকা বললো, তুমি তো খুব ভালোই চালাতে পারো।
- অনেক আগে শিখেছিলাম ম্যাডাম।
- আচ্ছা, তোমার পরিবারে কে কে আছে?
- আমি একাই ম্যাডাম।
- ও, বাবা মা উনারা কোথায় গিয়েছেন?
- মারা গেছে ম্যাডাম।
- ও, আর শোনো আমাকে এত ম্যাডাম ম্যাডাম করতে হবে না।
- জ্বী ম্যাডাম।
- আবার?

হাসান এবার চুপ করে রইলো। অনামিকা বললো, আজ থেকে তুমি আমাকে অনু বলে ডাকবে।
হাসান বললো, কিন্তু ম্যাডাম....
- কোনো কিন্তু নয়। যেটা বলেছি, সেটা শুনতে হবে। নইলে চাকরি থেকে বিদায় করে দেবো।
- না ম্যাডাম, আমি সব শুনবো। তবুও চাকরি থেকে বাদ দেবেন না।
- এইতো গুড বয়।

কিছুক্ষণ নিরবতার পর অনামিকা হাসানকে বললো, আচ্ছা তোমার পছন্দ সম্বন্ধে কিছু বলো।
- অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত্রি পছন্দ। যে রাত্রিতে আকাশে কোনো চাঁদ থাকবে না, থাকবে না কোনো নক্ষত্র। আমি একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে বাড়ির আঙিনায় চাঙ পেতে বসে থাকবো। সাথে জোনাকি পোকাদের সাথে কথা কবো।
- আর কিছু?
- ডোবার জলে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা।
- উঁহু, এমন পছন্দের কথা বলছি না। মানে তোমার কেমন জিনিস পছন্দ? কেমন রং পছন্দ?
- কালো এবং টকটকে লাল।
- টকটকে লাল কেন?
- যখন গ্রামে ছিলাম, তখন আমাদের পাড়ার এক বড় ভাই বিয়ে করে বাড়িতে বৌ নিয়ে এসেছিলেন। আর সেই বৌয়ের পরনে ছিল টকটকে লাল শাড়ি।
- ও, ভেরি ইন্টারেস্টিং। আর কালো?
- এইযে আমার গায়ের শার্টটা দেখেন। দারুণ না?

অনামিকা তার শার্টের দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ দারুণ। আচ্ছা কয়টা বাজে দেখো তো!
- ন'টা ম্যাডাম।
- তুমি কিন্তু আবারও ম্যাডাম বলছো।
- সরি।
- সরি কী?
- আর হবে না।
- আমার নাম ধরে ডাকো।
- অ অ অনু।
- আমার নাম অ অ অনু?
- না না।
- তাহলে ঠিক করে বলো।
- অনু।
- এইতো লক্ষ্মী ছেলে। এবার গাড়ি ঘুরাও। বাসার দিকে যেতে হবে।
- জ্বী।
- হাসান শোনো।
- জ্বী বলুন।
- আমাকে এখন থেকে তুমি করে বলবে। আর কথায় কথায় জ্বী জ্বী করবে না।
- জ্বী।
- মনে থাকে যেন। নয়তো চাকরি নট করে দেবো।
- আচ্ছা।
.
রাতে আহারের পর অনু তার বাবাকে বললো, বাবা আমি একটা ছেলেকে পছন্দ করি।
তার বাবা মুচকি হেসে বললেন, নাম কি? বাসা কোথায়? আর কী করে?
- হাসান, আমাদের বাড়ির কেয়ারটেকার।
- কী?
- হ্যাঁ বাবা।
- তুই ভেবে বলছিস তো?
- হ্যাঁ।
- ওকে।
- তবে এখনই বিয়ে করবো না। আগে আমার গ্র্যাজুয়েশন শেষ হোক।

অনামিকা ডাইনিং রুম থেকে উঠে তার নিজের রুমে চলে গেল। কয়েক মাস পর তার ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শুরু হবে। আর তারপরেই সে হাসানকে বিয়ে করবে।

পরদিন সকালে আহম্মেদ খান হাসানকে ডেকে পাঠালেন তারপর তার মেয়ের পছন্দ সম্বন্ধে হাসানকে জানালেন। হাসানের সংশয়, সততা, দায়িত্ববোধ সবকিছুই মনোমুগ্ধকর। অনুর বাবাও মনে মনে অনুর পছন্দকে গ্রহণ করলেন।
.
অনামিকার গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলে হাসান আর অনামিকার বিয়ের কার্য সম্পন্ন হলো। হাসান এখন আর বাড়ির কেয়ারটেকার নয়। বরং সে বাড়ির একজন মালিক। কেননা ভবিষ্যতে আহম্মেদ খানের এই বাড়ি-গাড়ি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, ব্যাংক-ব্যালেন্সের মালিক তো সেই হবে। আহম্মেদ খানের সবকিছুর উত্তরাধিকারী বলতে তার মেয়ে অনামিকা ছাড়া আর কেউ নেই। আর অনামিকা মানেই হাসান।

কোম্পানি থেকে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আহম্মেদ খান তার পরিবারকে নিয়ে কনভেনশন সেন্টারের উদ্দেশ্যে বের হতে যাবে। ঠিক তখন হাসান বললো, বাবা সবাই যদি অনুষ্ঠানে যাই, তবে বাড়ি দেখবে কে? তার চেয়ে বরং আপনারা যান। আমি না হয় আরেকদিন অন্যকোনো অনুষ্ঠানে জয়েন করবো।
অনামিকা তাকে কিছুতেই ছাড়তে চাইছিলো না। পরে অনামিকার মা বললো, হাসান ঠিকই বলেছে। একজনের বাড়ি থাকা উচিত। আর সে তো বলছেই, সে আরেকদিন অন্যকোনো অনুষ্ঠানে যাবে।

আহম্মেদ খান তার পরিবারকে সাথে নিয়ে গাড়িতে করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। খানিক দূরে যেতেই একটা বিকট আওয়াজ করে তাদের গাড়িটা ব্লাস্ট হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির মধ্যে থাকা সকলে মারা গেল।
এদিকে হাসান হাসতে হাসতে বললো, তোমাদের পিছে সময়টা একটু বেশিই ব্যয় হলো। অন্যদের পিছে তো মাত্র এক মাস সময় দিতাম।
.
সাইলেন্ট কিলার
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৪২

বিজন রয় বলেছেন: বাণিজ্যিক সিনেমার গল্পের মতো।
আকর্ষণ আছে, রেশ নাই।

১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:২৮

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: জ্বী ভাইজান

২| ১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:০৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: কিছু হল।
শেস টা ভাল ভাবেও হতে পারত।

১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:২৮

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: চেষ্টা করবো আগামীতে

৩| ১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: তামিল মুভি আপনার পছন্দ?

১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৪২

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: হ্যাঁ, মাঝে মাঝে দেখি।

৪| ১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ লেখা ।

১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৪৩

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.