নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেদিন বাসে

১০ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:২৪


মিরপুর থেকে ধানমণ্ডি যাচ্ছি। লেকের পাড়ে বৃষ্টি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সে ধানমণ্ডিতেই থাকে। আজ শনিবার। গতকাল ছুটি ছিল। গতকালকে সারাদিন আমরা ঘুরেছি। কিন্তু তার কঠিন এবং বাচ্চাসূলভ আবদার হলো, আজও তার সাথে ঘুরতে হবে। কলেজে আজ একটা অনুষ্ঠান ছিল। বন্ধু বান্ধবেরা বলেছিল আমি যেন সকাল সকাল কলেজে পৌঁছে যাই। ধানমণ্ডির বাসে উঠে হাসানকে কল করলাম। সে কল রিসিভ করলে বললাম, দোস্ত আমি আজ যেতে পারবো না।
সে হেসে বললো, বৃষ্টির জন্য?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
সে জ্ঞানীর মতো একটা শ্বাস নিয়ে বললো, প্রেম বড় মোহময় জিনিস। প্রেম বন্ধুদের সম্পর্ককেও হার মানায়। যা তাহলে দেখা করে আয়। কাল দেখা হবে তোর সাথে।

দারুসসালাম থেকে একটা মেয়ে বাসে উঠলো। আমার পাশের সিটটা খালিই ছিল। সে এসে সোজা আমার পাশের সিটটাতে বসে পড়লো। আমি তার দিকে ভালো করে তাকাতেই আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, আরে আপনি?

মেয়েটাকে আমি চিনি। সেদিন একটা কাজের জন্য উত্তরা গিয়েছিলাম। ফেরার পথে বাসের মধ্যে একটা হট্টগোল লেগে যায়। আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি বাসের কন্ট্রাক্টর মেয়েটার সাথে খুব বাজে ভাষায় কথা বলছে। আমি কন্ট্রাক্টরকে কিছু বলতেই তিনি বললেন, আরে দেখেন না মামা এই মহিলার কাছে একে তো ভাড়া নেই। সাথে কেমন চিল্লাচ্ছে দেখেন।
আমি মেয়েটার ভাড়াটা দিয়ে দিলাম। আমার গন্তব্য মিরপুর-১। আমি আমার গন্তব্যে নামতেই মেয়েটা আমার সাথে নেমে পড়লো। তারপর আমাকে থ্যাংকস বলে চলে গেল।

মেয়েটা অবাক হয়ে বললো, আপনি?
- সেদিন তো আপনার নামটাই জানা হয়নি।
- আমার নাম শ্রেয়া।
- নাইস নেম। আমি শ্রাবণ।
- দারুণ তো। শ্রাবণ শ্রেয়া।
- হুম।
- কোথায় যাচ্ছেন?
- ধানমণ্ডি।
- ও রিয়েলি?
- হ্যাঁ।
- আমিও ধানমণ্ডি যাচ্ছি।
- তাহলে তো ভালোই হলো। আমার আবার বাসে ঘুমানোর অভ্যাস আছে। আমি ঘুমিয়ে গেলে আপনি বরং ডেকে দিয়েন একটু। আর না ডাকলেও প্রবলেম নেই। কন্ট্রাক্টর মামাকে বলে রেখেছি।
- না না, সমস্যা নেই। আপনি ঘুমাতে পারেন।

শ্যামলীতে খানিকটা জ্যাম বাঁধলো। শ্রেয়া তার ব্যাগ থেকে দুইটা পটেটো চিপস বের করে একটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, নেন। জ্যামে পড়লে চিপস খেতে হয়।
- নো, থ্যাংকস।
- কী? ভয় পাচ্ছেন? অজ্ঞান টজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে যাবো?
- না না, সেটা না। আমি চিপস খাই না।
- তাহলে বিস্কুট কিংবা চকলেট?
- ওসবও খাই না।
- ওকে। না খেলেন। আমিই খাই। আর শোনেন, একদম আড়চোখে তাকাতে পারবেন না কিন্তু!
- ঠিক আছে।
- আর হ্যাঁ, আপনার ভাড়াটা কিন্তু আমি দিয়ে দেবো।
- কেন?
- বা'রে, সেদিন আপনি আমার ভাড়াটা দিয়ে দিলেন না?
- ও। ঠিক আছে।

জ্যাম ছাড়তে বেশ খানিকটা সময় লেগে গেল। জ্যামে পড়লে আমার আবার ঘুম পায়। জানালার কাছে বসেছিলাম। সিটে মাথা না দিয়ে জানালার কাঁচে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। কানের কাছে তখনও শ্রেয়ার চিপস খাওয়ার শব্দ হচ্ছে।
.
খানিকপর,
- মামা, এইযে মামা।
আমি ঘুম ঘুম চোখে চেয়ে দেখলাম কন্ট্রাক্টর মামা আমাকে ডাকছেন। আমি বললাম, জ্বী!
- লেকের সামনে চইলা আইছি। নামবেন না?
- ও হ্যাঁ। শ্রেয়া! শ্রেয়া কোথায়?

পাশে শ্রেয়া নেই। সে নেমে গিয়েছে। আমি মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, মামা এখানে একটা মেয়ে বসে ছিল। সে কোথায় গেল?
- হেই তো আসাদগেটে নাইমা গেছে।
- ও।
- মামা ভাড়াটা দেন।
- মেয়েটা ভাড়া দেয়নি?
- না।
- ওকে, দিচ্ছি।

আমি পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম মানিব্যাগ নেই। প্যান্টের ডান পকেটে একটা ছোট মোবাইল ছিল। সেটাও নেই। বাম পকেটে বড় ফোন ছিল। সেটা আছে।
- কী হইলো মামা, ভাড়া দেন।
- মামা মানিব্যাগ বাসায় ফেলে আসছি।
- সত্য কইতাছেন?
- না, মানিব্যাগ পকেট থেকে চুরি গেছে।
- ও, হেইডা কন। যান নামেন এখন। ভাড়া দিতে হবে না।

আমি বাস থেকে নেমে পড়লাম। প্যান্টের পেছনের পকেটটা কাটা। ব্লেডের টান মনে হচ্ছে। ভাগ্যেস পাঞ্জাবী পড়ে এসেছিলাম। নয়তো ইজ্জত যেত। লেকের গেটেই বৃষ্টি দাঁড়িয়ে ছিল। ভেতরে গিয়ে কথা বলার ছলে তাকে বাসের ঘটনাটা বললাম। সে বললো, ঐ মেয়েকেই তো তুমি উত্তরা থেকে ফেরার পথে বাসের ভাড়া দিয়ে সহযোগিতা করেছিলে!
- হ্যাঁ।
- সেদিন বাসের মধ্যে সে একটা হট্টগোল তৈরি করেছিল। রাইঠ?
- হ্যাঁ।
- কেন করেছিল, জানো?
- কেন?
- সেদিন সে বাসের অনেকের পকেট মেরে দিয়েছিল। আর হট্টগোলটা এজন্য করেছিল। যাতে সবাই তার দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আর তাকে নিরীহ একটা মেয়ে ভাবে।
- দারুণ বুদ্ধি তো তার?
- আমার পার্স থেকেও টাকা মেরে দিয়েছিল ঐ মেয়ে।
- বাব্বাহ, তুমিও তার শিকার হয়েছ?
- হুম। এখন ওঠো, চলো হাঁটি কিছুক্ষণ।
- চলো।

আমি আর বৃষ্টি হাঁটছি। হাঁটছি তো হাঁটছিই। হেঁটে হেঁটে রবীন্দ্র সরোবরের দিকে যাচ্ছি। আর ভাবছি, হায়রে শ্রেয়া! হায়রে আমার ভোলা মন। আর কখনো বাসের মধ্যে ঘুমানো যাবে না।
.
সেদিন বাসে
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: একদম বাংলা সিনেমা।

১০ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০৬

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: সিনেমার মতো।

২| ১০ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কন কি???

ভয়ংকর ব্যাপার স্যাপার!
নাহ! নারীকে আর অবলা নারী ভাবার দিন বুঝি শেষ হয়ে এলো ;)


গল্পে +++

১০ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০৫

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: একদম তাই।

৩| ১০ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

গল্প হলে ঠিক আছে !!
সত্য মিথ্যর মিশেল খাকে।
নাটক সিনেমায় এমন হলেও
বাস্তবতার সাথে মিলছে না।
দুইজনকে মুরগী বানালো একটা
মেয়ে সেই দুইজন আবার দুজনার
পরিচিত!! কেমন অদ্ভুত না !!

১০ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০৫

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: সত্য জিনিসগুলো অদ্ভূতই হয়। বাস্তবতার সাথে মেলে কম। কাল্পনিক জিনিসগুলো সহজেই মেলে।

৪| ১০ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯

পদ্মপুকুর বলেছেন: একদম বাংলা সিনেম (দুই)

৫| ১০ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চলমান জীবন । তবে আমরা শিক্ষা গ্রহন করি না

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.