নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি ও আপু

২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৫৭

বাড়িতে ভীষণ রাগারাগি করেছি আজ। করবো না? আমার প্লেটে দুই পিস মাংস। আর সিন্থুর প্লেট চার পিস। আম্মুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বললো, সিন্থিয়া তোর বড় না?
- হ্যাঁ বড়।
- এজন্যই ওকে ডাবল দিছি।
- হু! বড় না হাতি। ও কিসের বড়? এক বছরের বড় কোনো বড় হলো? আমাকে চার পিস দাও। আর ওকে দুই পিস।
- তুই বড় হ। তোকেও দেবো।
- আর কত বড় হবো?
অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি। বিয়ে সাদির বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। আর তুমি বলছো বড় হতে?

আমার এ হেন কথাবার্তা শুনে আপু আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। আমিও চোখ রাঙিয়ে ইশারায় বলে দিয়েছি, তুই তো বোন নামের শত্রু। তোর যে একটা ভাবি দরকার সেটা তো তুই আম্মুকে বলতে পারিস না। তাই বাধ্য হয়ে শেষমেষ আমাকেই বলতে হলো।
আম্মু গলা উঁচু করে আব্বাকে ডাক দিয়ে বললো, ওগো শুনছো। দেখে যাও তোমার ছেলে কত বড় হয়ে গেছে। শুনছো?
আব্বা আসার আগেই আমি ভাতসুদ্ধ প্লেট রেখে ভোঁ দৌঁড়। আমাকে আর পায় কে? আপু অনেকবার পেছন থেকে ডাকলো আমাকে। আমি পাত্তা দেইনি। কিছুদূর আসার পর মনে হলো, আপুর অমন ডাকার পেছনে টাকা পয়সার সম্পর্ক আছে। কারণ সে আমাকে ডাক দিলেই হাতে টাকা ধরিয়ে দেয়। গুটিগুটি পায়ে বাড়ির দিকে এগুলাম। বাবা মার চোখ ফাঁকি দিয়ে আপুকে ইশারা করতেই আপু উঠে এলো। তারপর হাতে নতুন চকচকে একটা দুইশো টাকার নোট দিয়ে বললো, বাইরে থেকে খেয়ে নিস। আমি পেছনে ঘুরতেই আপু আমার কান টেনে ধরে বললো, কোথায় যাওয়া হচ্ছে হ্যাঁ? আমার যে ভাবি লাগবে, সেটার কী হবে? আগে ভাবি এনে দে। তারপর যা।

পড়ে গেলাম মুছিবতে। আপু কান ধরে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল। দেখলাম আব্বা আম্মু দু'জনেই বসে আছে। আব্বা হুংকার ছেড়ে বললো, এই না হলে বাঘের বাচ্চা! আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। বাপকা বেটা। বল কবে বিয়ে করবি তুই?
আব্বার এমন কথা শুনে আম্মু চোখ পাকিয়ে তাকালো আব্বার দিকে। আব্বার শক্তপোক্ত গলা নিমিষেই কোমল নরম হয়ে গেল। বললো, মানে তোর কোনো পছন্দ টছন্দ আছে নাকি?
আম্মু রেগে গিয়ে বললো, এখনই কিসের বিয়ে হ্যাঁ?  ও তো এখনো বাচ্চাই রয়েছে। আগে বড় হোক। তারপর বিয়ে।
আপুও আম্মুর সাথে তাল মিলিয়ে বললো, ঠিক ঠিক। এখনই কিসের বিয়ে? আর ও কি ইনকাম করতে শিখেছে নাকি? ও তো এখনো আমার থেকে টাকা নিয়ে হাত খরচ চালায়।
আমি বললাম, হু তোমার টাকা নিয়ে হাত খরচ চালাই। এখনো বলো তুমি সেই টাকাটা কোথায় পাও? আব্বার থেকেই তো নাও। আর আব্বার টাকা মানেই আমার টাকা।
- আমি তোকে যেই টাকাগুলো দেই, সব আমার টিউশনির টাকা বুঝছিস?
- আমার বুঝাবুঝির অতো সময় নাই।
- কি? আমার মুখের উপরে কথা বলছিস তুই?
- কোথায় মুখের উপরে কথা বললাম?
- আজ থেকে তোকে টাকা দেওয়া বন্ধ। এক টাকাও পাবি না তুই।
- না পেলে নাই। কিন্তু তোর ব্যাগ থেকে টাকা হারিয়ে গেলে আমার কিছু করার নাই।

আম্মু বিকট স্বরে আওয়াজ তুলে বললো, এই ঘরে চোরের কোনো খানা নেই। বের হ এক্ষণই। বের হ।
আব্বাও বললো, খানা দানা দিয়ে চোর পুষবো না আমরা। বের হয়ে যা।
আপুও মুখ বাঁকিয়ে বললো, কোনো চোর আমার ভাই হতে পারে না।
আমিও একগাদা কথা শুনিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এলাম। কথার হেরফের হয়ে না হয় মুখ ফসকে একবার বিয়ের কথা বের হয়েই গিয়েছিল। তাই বলে! আর বিয়ে পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু শেষমেষ চোরের অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলো। আর জীবনেও ফিরবো না ঐ বাড়ি। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম চকচকে দুইশো টাকার একখনাটা নোট। আর টিস্যু পেপার। টিস্যু পেপারে নিচে একটা এক টাকার কয়েন।
.
দুপুর হয়ে গিয়েছে। কাছে ফোনও নেই। ফোনটাও বাড়িতে রেখে এসেছি। এদিকে খিদেও লেগে গিয়েছে। নতুন বের হওয়া চকচকে দুইশো টাকার নোটটা হাত ছাড়াও করতে পারছি না। ভাবছি বাড়ি ফিরে যাব কিনা। নাহ! বাড়ি যাওয়া যাবে না। যারা আমাকে চোর বলে অপবাদ দিয়েছে তাদের সামনে আর জীবনেও যাব না। আর জীবনেও দেখাব না আমার এই চাঁদ মুখখানা। এই দুইশো টাকা দিয়েই ব্যবসায় শুরু করে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখে যাব। সৃষ্টি হবে এক নতুন ইতিহাসের।

আমার থেকে একটু দূরে একটা ছেলে বসে আছে। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, হেই ব্রো হোয়াটসাপ?
পাত্তা দিলো না। বললাম, বাসা থেকে রাগারাগি করে বের হয়ে এসেছো?
ছেলেটা এবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনি জানলে কী করে?
- আমি সবই জানি। তোমার মনে এখন একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, তুমি একজন বড় বিজনেস ম্যান না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরবে না।
- হ্যাঁ তাই তো! কিন্তু আপনি এসব কী করে জানেন?
- আমি এটাও জানি তোমার এই বিজনেস ম্যান হওয়া সম্ভব না। তুমি বড়জোর একটা নামকরা ফকির হতে পারবে। যদি ফকির হতে চাও, তবে আমিই তোমাকে তোমার ক্যারিয়ার গঠনে হেল্প করতে পারি। এই নাও এক টাকা।
- ধুর মিয়া। আমি কি ফকির নাকি? বাড়িতে আমার জমিদারি পড়ে আছে। থাকেন মিয়া। আমার বিজনেস ম্যান হওয়া লাগবে না।
ছেলেটা উঠে চলে গেল।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। পেটের খিদেটা বেড়েই চলেছে। এদিকে চকচকে দুইশো টাকা হাতছাড়া করতেও মন চাইছে না। ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলাম। সন্ধ্যার বাতি জ্বালানো হয়ে বাড়িতে। আমি চুপিচুপি পায়ে বাড়িতে ঢুকতেই আপু বলে উঠলো, এদিকে আয়।
আমি অভিমান করে বললাম, চোরেরা কারো কথা শোনে না, কারো সাথে কথা বলে না।
সে বললো, চোরেরা কারো কথা শোনে না ঠিক আছে। তবে আমার লক্ষ্মী ভাইটা তো আমার কথা শোনে।
- বল কী বলবি?
- এদিকে না এলে কিভাবে বলবো?
আমি এগিয়ে গেলাম। সে বললো, সারাদিন তো কিছু খাস নাই মনে হচ্ছে।
- হু।
- কেন? টাকা দিয়েছি না তোকে?
- চকচকে টাকা খরচ করতে মন চায়নি। আর তাছাড়া দুইশো টাকার নোট। অত্র এলাকায় কারো কাছেই নেই।
- আয় আমার সাথে। খাবি আয়।
- খাবো না আমি।
- মুখটা তো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
- কী রান্না করেছে?
- গরুর মাংস।
- সত্যি?
- হ্যাঁ রে পাগল।
- তুই পাগল, তোর ভাই পাগল।
- হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার ভাই পাগল।

আপু আমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে ভাত মাংস এনে দিলো। আমি তাড়াহুড়ো করে সেসব খেয়ে চলেছি। আপু রুম থেকে বের হয়ে গেল। বললো, তুই খা আমি পানি নিয়ে আসি।
সারাদিন না খাওয়ার ফলে মনে হচ্ছে প্লেটসুদ্ধ খেয়ে ফেলবো। খানিকপর আমি লক্ষ্য করে দেখলাম দরজা ফাঁক করে অনেকগুলো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলতে যাব। ঠিক সেসময় সেই চোখগুলোর মানুষেরা বলে উঠলো, চোর আবার চুরি করতে এসেছে দেখছি।
.
আমি ও আপু
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা সুন্দর হয়েছে।
ভালো লিখেছেন।

২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৮

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪২

ওমেরা বলেছেন: মা , বাবা, ভাই , বোন এর চেয়ে বড় আর কোন সম্পর্ক কি আছে পৃথিবীতে , কত ভালোলাগা কত ভালোবাসা কত আনন্দ বেদনা জরিয়ে থাকা সম্পর্ক ।
এরকম লিখা পড়তে বেশ ভালো লাগে । আপনার লিখা বেশ ভালো হয়েছে ।

৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৭

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়। ভালোবাসা অবিরাম

৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ভাই-বোনের টক - মিষ্টি সম্পর্কের এক চমতকার দৃষ্টান্ত ।

৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৮

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: জি। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.