নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শ্রাবণে বৃষ্টি নামে
পর্ব-৪
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
এর মাঝে কে যেন রুমের দরজায় নক করলো। আমি বৃষ্টিকে বললাম, তুই বস। আমি খুলে দিচ্ছি।
সে বললো, না। তোর উঠতে হবে না। আমিই খুলেই দিচ্ছি। বৃষ্টি দরজাটা খুলতেই নাঈম ভাই রুমে প্রবেশ করলেন। তারপর আমাকে এই অবস্থায় দেখে তিনি বৃষ্টিকে বললেন, কী হয়েছে ওর?
বৃষ্টি বললো, কাল বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধিয়েছে।
আমি ভাইকে বললাম, আমি কিন্তু ভিজতে চাইনি। ও আমাকে জোর করে ভিজিয়েছে।
বৃষ্টি রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কী? আমি জোর করে ভিজিয়েছি? ওকে আর বলবো না ভিজতে।
নাঈম ভাই বৃষ্টিকে বললেন, ঔষুধ খেয়েছে ও?
- না, রুটিটা খাওয়ার পরে ঔষুধ খাবে।
- ঔষুধ আছে?
- হ্যাঁ, নিচ থেকে আনিয়েছি।
- গুড।
- আচ্ছা ভাইয়া এখন তাহলে আমি আসি।
- না না, কোথায় যাচ্ছো? তুমি নিশ্চয়ই এই অবুঝ শিশুটাকে খাইয়ে দিচ্ছিলে। তো খাওয়ানো শেষ না করে গেলে কি হবে?
আমি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে লজ্জা পেয়েছে। সে বললো, ভাইয়া এখন তো আপনি এসে গিয়েছেন। এখন আমি যাই।
নাঈম ভাইকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে চলে গেল। সে গেলে ভাই আমাকে বললেন, বাহ! প্রেম তো দারুণ জমে উঠেছে।
আমি বললাম, দোয়া করবেন ভাই। বিয়ের পরেও যেন আমাদের প্রেমটা এমনই থাকে।
- নিশ্চয়ই। আর এখন রুটিটা খেয়ে ঔষুধগুলো খেয়ে নাও। আজ যে পহেলা বৈশাখ, সে খবর কি রাখো? তোমাকে কাল বললাম না যে, আজ আমি ঢাকাতে ব্যাক করছি? একমাত্র বৈশাখে দু'জন ঘুরবো বলে।
- জ্বী ভাই।
আমি রুটি আর ঔষুধ খেয়ে বিছানাটা ঠিক করে উঠে দাঁড়ালাম। দেখলাম মাথাটা একটু ঘুরছে। নাঈম ভাই বললেন, এখন একটু ঘুমাও। কেবল মাত্র সকাল এগারোটা বাজে। এখন ঘুমিয়ে বিকেল তিনটায় উঠবে। দেখবে তখন পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠবে।
আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। মাথাটা হালকা হলেও দাঁড়ালে কিছুটা চক্কর দিচ্ছে। গতকাল বৃষ্টিতে ভেজার পূর্বে বৃষ্টিকে বললাম, তোর জ্বর এলে তোকে দেখতে পাবো না আর।
আর আজ কিনা আমারই জ্বর এলো। আমার এসেছে, বরং ভালোই হয়েছে। ওর এলে ওর জন্য আমারও এসে যেত।
বিকেলে ঘুম ভাঙলে নাঈম ভাই বললেন, এখন কেমন বোধ করছো?
আমি বললাম, ভালো। একদম ভালো।
- ঘুরতে যেতে পারবে তো?
- হ্যাঁ।
- বৃষ্টি এসেছিল ঘণ্টা খানেক আগে। তারপর তোমাকে ঘুমাতে দেখে সে চলে গেল। আর যাওয়ার সময় বলে গেল তোমার ঘুম ভাঙলে যেন তুমি তাকে কল করো।
আমি সাথে সাথে আমার ফোনটা হাতে নিয়ে বৃষ্টিকে কল করলাম। সে রিসিভ করে বললো, এখন কেমন আছিস?
আমি বললাম, মোটামুটি। তবে একেবারেই সুস্থ না।
- ঘুরতে যেতে পারবি?
- না, নাঈম ভাই এসেছেন। উনার সাথে ঘুরতে বের হবো।
পাশে থেকে নাঈম ভাই বলে উঠলেন, আমার সাথে ঘুরতে হবে না। তোমরা দু'জনই যাও।
বৃষ্টি বললো, আমরা তিনজন একসাথে ঘুরলে কেমন হয়?
- মন্দ হয় না।
- তাহলে তুই আর নাঈম ভাই রেডি হতে থাক। আমি উপরে আসছি।
আমি "আচ্ছা" বলে ফোন রাখলাম। নাঈম ভাই বললেন, সমস্যা নেই। তোমরা দু'জনই ঘুরতে বের হও। আমি বরং সাজ্জাদকে কল করি।
- না ভাই। বৃষ্টি বললো আমরা তিনজন একসাথে ঘুরবো। সে তৈরি হতে বললো।
- আমি থাকলে তোমরা ঘুরে মজা পাবে না।
- এই কথাটা কিন্তু সেদিন রাতে হাঁটার পূর্বেও বলেছিলেন। অথচ আপনি থাকাতে আমাদের মনে একটু সাহস সঞ্চার হয়েছিল। আপনি রেডি হয়ে নিন। আমরা তিনজন একসাথেই ঘুরবো।
মিনিট বিশেক পর বৃষ্টি ছাঁদে এসে আমাদের রুমে নক করলো। আমি দরজা খুলে দিলাম। দেখলাম সে হলুদ শাড়ি পড়ে এসেছে। কপালের মাঝখানে, না না একটু ফাঁকে একটা কালো টিপ। টিপটা বোধ হয় আমি ঠিক জায়গায় বসিয়ে দেবো বলেই সে ইচ্ছে করে ওভাবে বসিয়েছে। হাতে লাল নীল কাঁচের চুড়ি। খোঁপায় কাঠগোলাপ। নাঈম ভাই একবার তাকিয়েই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। কেননা রূপবতীদের রূপের আলোয় সব পুরুষই তার 'আপনাকে' ভুলে যায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমি যেন চোখের সামনে সাক্ষাৎ নয়া বৃষ্টিকে দেখছি। এত সুন্দর কেন সে? নাকি সে আমার মনের রাজ্যের রাজকুমারী বলেই এমনটা মনে হচ্ছে! আমাকে অপলক তাকিয়ে থাকতে দেখে সে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, রেডি?
পাশে থেকে নাঈম ভাই বললেন, হ্যাঁ। আমরা রেডি।
আমি তখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। কী বলে কথা শুরু করবো, সেটাই ভুলে গিয়েছি। সুন্দরী কেউ সামনে থাকলে সহজ কথাও কঠিন হয়ে যায়।
.
লাভরোডে আজ অনেক মানুষের সমাগম। এর মধ্যে না বসা যায়, না হাঁটা যায়। বৃষ্টি বললো, চল সামনের দিকে যাই। ওদিকে ফাঁকা আছে।
আমি আর বৃষ্টি পাশাপাশি হাঁটছি। নাঈম ভাই পেছনে। হঠাৎই আমার প্যান্টের পকেটে থাকা ফোনটা কেঁপে উঠলো। আমি বের করে দেখলাম নাঈম ভাই একটা টেক্সট করেছেন "তোমাদের দু'জনকে দারুণ মানিয়েছে। হলদে শাড়ির মেয়ে, খয়েরি পাঞ্জাবীর ছেলে, দারুণ!"
আমি পেছনে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম। তারপর টেক্সট করলাম, ধন্যবাদ ভাই।
বাসা থেকে বের হওয়ার পর এখন পর্যন্ত বৃষ্টির সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি। সে আমাকে এমন চুপচাপ থাকতে দেখে বললো, কিরে একদম চুপ হয়ে গেলি যে? কথা বলছিস না কেন?
- ভয় হচ্ছে।
- কিসের ভয়?
- তোকে এত পরিমাণে সুন্দর লাগছে যে, আমি তোর সাথে কথা বলতেই ভয় পাচ্ছি। না জানি কী বলতে গিয়ে কী বলে ফেলি!
- আমি কিন্তু রেগে আছি তোর উপর।
- কেন কেন?
- আমার দিকে তাকা।
- তাকালাম।
- এবার আমাকে একটু পর্যবেক্ষণ কর।
- করলাম।
- কোনো ত্রুটি পাইলি?
- ও হ্যাঁ। ওয়েট টিপটা আমি ঠিক করে দিচ্ছি।
- এতক্ষণ পর? তোর ঠিক করতে হবে না যা। আমি নিজেই পারি।
- আমি করে দিলে কি সমস্যা?
- এতক্ষণ করিসনি কেন?
- ঐযে বললাম, ভয়ে।
- হুর। আমি কোনো হিংস্র প্রাণী নই হ্যাঁ? আমি তোর প্রেমিকা। আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি মানেই তুই। আর তুই মানেই আমি।
হঠাৎই পেছন থেকে কেউ আমাকে ধাক্কা দিলো। আমি পেছনে ঘুরতেই দেখলাম। নাঈম ভাই তার ডান হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর হাত বেয়ে রক্ত ঝড়ছে। ভাইয়ের পাঞ্জাবীর হাতের অংশটা ছিঁড়েও গিয়েছে।
আমরা রাস্তার বাঁ পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। আমি ডান পাশে ছিলাম। আর বৃষ্টি ছিল আমার বাঁ পাশে। হঠাৎই একটা রিকশা পেছন থেকে এলোপাথারিভাবে দ্রুত গতিতে আমাদের দিকেই আসছিল। আমি যেখানে ছিলাম। তাতে রিকশাটা এসে আমাকে ধাক্কা দিতো। কিন্তু নাঈম ভাই তা হতে দেননি। তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিজে আহত হলেন।
তৎক্ষণাৎ ভাইকে নিয়ে পাশের একটা ফার্মেসীতে গেলাম। ভাগ্যিস হাতে লেগেছে। বিশ কিছু হয়নি। নয়তো আমার জন্য ভাইয়ের কী একটা ক্ষতি হয়ে যেত। হাতে ব্যাণ্ডেজ করিয়ে কিছু ব্যথার আর ক্ষত শুকানোর ঔষুধ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। যেখানে ভাইয়ের এই অবস্থা, সেখানে ঘুরাঘুরি করাটা কেবলই বেয়াদবি। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। আমার জন্যই ভাইয়ের এমনটা হলো। আমার মন খারাপ দেখে তিনি বললেন, আরে তুমি মন করে আছো কেন? একটুই তো লেগেছে। দিন কয়েক গেলেই ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া এমন একটু আধটু তো নিত্যই লাগে।
.
রাতে বৃষ্টি ছাঁদে এলে আমি বললাম, নাঈম ভাই অসুস্থ আছেন। আজ আমরা ছাঁদে না বসি। ভাই তখন পাশেই শুয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, আরে আরে আমার তেমন কিছু হয়নি। তোমরা যাও। আর এই দেখো আমার হাত একদম ঠিক হয়ে গিয়েছে। রিকশার হুড়ের কোণা লেগে হালকা ছিঁলে গিয়েছিল শুধু।
আমি তবুও বৃষ্টিকে 'না' করলাম। ভাই এবার আমাকে ধমক দিলেন। তারপর উঠে বসে দুই হাত দিয়ে ল্যাপটপ চাপতে লাগলেন। বললেন, তোমরা ছাঁদে যাও। একটুপর আমিও আসছি।
পূর্বের মতো আজও আমরা দু'জন ছাঁদের এককোণে দাঁড়িয়ে আছি। আকাশটা একদম পরিষ্কার। কোনো মেঘ নেই। ছাঁদের একপাশে কিছু পুঁইয়ের গাছ ছিল। সেগুলো বড় হয়ে চারিদিকে তার অবস্থানের জানান দিচ্ছে। আমি বৃষ্টিকে বললাম, আচ্ছা বৃষ্টি আমি তোর মনের কতখানি জুড়ে আছি?
সে কোনো ভণিতা না করে বললো, যতখানি জুড়ে থাকলে তার অবর্তমানে তাকে প্রচণ্ড মিস করা যায়!
- আচ্ছা পূর্ণিমা রাতে চাঁদ এত আলো দেয় কেন?
- কারণ সেই রাতে চাঁদ পূর্ণরূপে নিজেকে প্রদর্শন করে।
- আমার আকাশের চাঁদটা যে কবে পূর্ণরূপে প্রদর্শিত হবে।
- তুই চাইলে অতি শীঘ্রই হবে। নয়তো তোর অনার্স শেষ হলে।
- আমি চাইলে অতি শীঘ্রই মানে পালিয়ে বিয়ে করার চিন্তা আছে নাকি?
বৃষ্টি স্টেডিয়ামের মধ্যে থাকা গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো, ইচ্ছা থাকলেই বা প্রবলেম কী? শুধু তুই রাজি থাকলেই হলো।
- আগে তো তোর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেখবো। তারপর তোর পরিবার না করলে তখন না হয় পালানোর চিন্তা-ভাবনা করবো।
- এজন্যই তোকে এত ভালো লাগে আমার।
- হুম।
- তোকে ভালো লাগার কয়েকটা কারণ শুনবি?
- হ্যাঁ বল, শুনি।
- প্রথমত তুই সিগারেট খাস না। দ্বিতীয়ত কোনো বাজে আড্ডায় সময় ব্যয় করিস না। আর তৃতীয়ত তুই ওভারঅল একটা ভালো ছেলে।
- এত কিছু জানলি কী করে?
- কলেজে যেদিন ভর্তি হই, সেদিন দেখলাম একটা পিচ্চি ছেলে এসে তোর থেকে খাবার খাওয়ার জন্য টাকা চাইছে। কিন্তু তুই কী করলি? তুই তাকে টাকা না দিয়ে বরং হোটেলে নিয়ে গিয়ে পেট-পুরে খাওয়ালি। আর তখন থেকেই তোকে ফলো করতে শুরু করলাম।
- তারপর?
- তারপর দেখলাম তুই আমার আন্টির বাড়িতেই থাকিস। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তুই চিলেকোঠায় থাকিস।
- তারপর?
- তারপর এইতো! তোকে ভালোবেসে ফেললাম।
- হায়রে! এই হলো কাহিনী! তাইতো বলি একটা অপরিচিত মেয়ে হুট করে কিভাবে আমার বন্ধু হয়ে গেল। আবার বন্ধু থেকে একদিনের মধ্যেই প্রেমিকা!
বৃষ্টি হাসলো। এখন কেন যেন তার এই হাসিটা আরও বেশি ভালো লাগছে।
নাঈম ভাই ছাঁদে এসে হালকা কাঁশি দিলেন। তারপর বললেন, দেখো কাল কত ঝড়-বৃষ্টি হলো। আর আজ আকাশটা কত পরিষ্কার। আমি বললাম, একদম ঠিক বলেছেন ভাই। এই মেঘগুলো একদম মেয়েদের মতো।
বৃষ্টি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, মেয়েদের মতো মানে?
আমি একটু হেসে বললাম, মেয়েদের মতো মানে, এইযে মেয়েরা এখনই রাগ করবে, আবার খানিকপরেই আদর করবে।
- ও, তাই বুঝি?
- তা নয়তো কী?
- খুব মেয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে গিয়েছো, না?
- এই না না, তা হতে যাবো কেন?
- তা যদি নাই হবি, তবে জানলি কী করে এই মেঘগুলো মেয়েদের মতো?
নাঈম ভাই মুখে হাত নিয়ে হালকা শব্দ করলেন। আর বললেন, তোমাদের খুনসুটিগুলো কিন্তু দারুণ। আমি বরং আসি। তোমরা কথা বলো।
ভাই প্রস্থান করলেন। ভাই চলে গেলে বৃষ্টি বললো, তোর মন আর নাঈম ভাইয়ের মন একদম এক। আমার দেখা আজ পর্যন্ত যত ভালো মানুষ আছে। তার মধ্যে তুই আর নাঈম ভাইও।
- হয়তো!
- হয়তো নয়। সত্য।
- বৃষ্টি।
- বল।
- তোকে আজ দারুণ লাগছিলো।
- সে তো বিকেলেও বলেছিলি।
- হুম।
- তোকেও কিন্তু মন্দ লাগেনি।
- প্রেমিকার চোখে প্রেমিককে কখনো মন্দ লাগে না।
- দার্শনিক হতে পারবি না এসব বাণী বলে, হু!
- আচ্ছা তোর নাম বৃষ্টি না হয়ে যদি মেঘ হতো, তাহলে আরও দারুণ হতো তাইনা?
- কেন?
- এইযে তখন বলতে পারতাম, শ্রাবণের মেঘ।
- তখন যে এটা বলতি পারতি না, রোজই শ্রাবণে বৃষ্টি নামে!
- তাও ঠিক।
- শ্রাবণ।
- হ্যাঁ বল।
- শ্রাবণ মাস আসতে কত দেরিরে?
- এইতো তিন মাস।
- শ্রাবণ মাসে যেদিন বৃষ্টি নামবে, সেদিন কিন্তু একটু বেশিই রোমাঞ্চ হবে। ওকে?
- এখনই একটু হোক না!
- এইতো দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় ঢুকেছে তোর।
- একটু।
- না।
- ওকে, তাহলে আমার কাঁধে মাথা রাখ।
- দুষ্টুমি করবি না তো?
- তুই না বলা পর্যন্ত করবো না।
- অত ভদ্র হতে হবে না। তোর যখন যা মনে চাইবে করবি। বলেছি না, তুই মানেই আমি। আর আমি মানেই তুই?
- হুম।
- তাহলে আমার বলা পর্যন্ত অপেক্ষা করবি কেন?
- একটু জড়িয়ে ধরি?
- শুধু জড়িয়ে ধরবি?
- আপাতত জড়িয়েই ধরি। নয়তো নাঈম এসে গেলে কী একটা অবস্থা হয়ে যাবে।
- ওকে ধর।
আজ একটু শক্ত করেই তাকে জড়িয়ে ধরলাম। কতক্ষণ এভাবে জড়িয়ে ছিলাম মনে নেই। নাঈম ভাইয়ের কাঁশির শব্দে তাকে ছেড়ে দিলাম। ভাই বললেন, রাত কিন্তু অনেক হলো। বৃষ্টিকে এখন যেতে দাও। নয়তো আন্টি আবার ছাঁদে চলে আসতে পারে।
.
বাড়ি থেকে আম্মু করেছিলো। বললো, সেই কবে বাড়ি এসেছিলি। আর তো আসার কোনো নামগন্ধও নেই। দ্রুত বাড়ি আয়। আমি বললে তো আসিস না। নে তোর আব্বার সাথে কথা বল।
পরে আব্বা আমাকে দ্রুত বাড়ি থেকে ঘুরে যেতে বললেন। নাঈম ভাইকে বিষয়টা জানালে তিনি বললেন, যাও। অনেকদিনই তো হলো। একবার গিয়ে ঘুরে আসো।
বৃষ্টিকে বাড়ি যাওয়ার কথা বললে সে সিক্ত কণ্ঠে বললো, কবে ফিরবি?
আমি তাকে আমার বুকে টেনে নিয়ে বললাম, আরে পাগলী! মন খারাপ করার কী আছে? অতি শীঘ্রই ফিরবো।
- বাড়ি গিয়ে আমাকে ভুলে যাবি না তো?
- আমাকে দেখে তোর এমনটা মনে হয়?
- না।
- তাহলে?
- শ্রাবণ।
- হুম বল।
- ভালোবাসি তোকে।
- আমিও ভালোবাসিরে পাগলী। ভীষণ ভালোবাসি তোকে।
- যাওয়ার সময় দেখা করে যাবি। কেমন?
- এটা বলতে হবে না। তোকে না দেখে গেলে যে আমার একদমই ভালো লাগবে না।
- কখন যাবি?
- কাল সকালে রওনা দিবো।
- পৌঁছাবি কখন?
- রাস্তায় জ্যাম না থাকলে বিকেলেই পৌঁছে যাবো।
- তোকে ছাড়তে মনে চাইছে নারে।
- আমারও চাইছে না। কিন্তু বাড়িতে তো যেতেই হবে কতদিন হলো বাড়ি যাই না।
রাতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলাম। নাঈম ভাইকে বললাম, ভাই সকালে একটু ডেকে দিয়েন। সকাল সকাল বের হলে বিকেল হতেই পৌঁছে যাবো।
তিনি "আচ্ছা" বলে বললেন, এখন রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়ো।
সকালে নাঈম ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর বৃষ্টিকে কল করে বললাম, একটুপর বের হবো। ছাঁদে আয়।
সে মিনিট কয়েক পর ছাঁদে এলো। মেয়েটাকে কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগছে। একটু অন্যরকম। রাতে ঘুমায়নি বোধ হয়। আমি বললাম, মন খারাপ?
সে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লো। আমি বললাম, এইযে মেয়ে তোমাকে ছাড়া বেশিদিন থাকবো না আমি। এখন একটু হাসো। আর মন খারাপ করে থেকো না।
সে হাসলো। আর বললো, একটু বাইরে আয়।
আমি রুম থেকে বাইরে গেলাম। বাইরে যেতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো। তারপর ছেড়ে দিয়ে বললো, এবার যা।
আমি রুম থেকে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে নাঈম ভাইকে বলে বেরিয়ে পড়লাম। তিনি আমাকে এগিয়ে দিতে চাইলে বললাম, সমস্যা নেই ভাই। আমি যেতে পারবো।
তিনি বললেন, সাবধানে যেও। আর বাড়ি পৌঁছেই আমাকে একটা কল করবে।
- জ্বী ভাই।
আমি আর বৃষ্টি একসাথেই সিড়ি দিয়ে নামলাম। সে তৃতীয় তালায় এসে বললো, শ্রাবণ।
- হুম বল।
- সাবধানে যাস।
- আচ্ছা। আর তুই নিজের খেয়াল রাখিস।
- হুম, শোন।
- বল।
সে আবারও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম, এখন ছাড়। লোক এসে যাবে। আর এখন তুই রুমে যা। আমি বাড়িতে পৌঁছে তোকে কল করবো।
সে বিষন্ন মনে ভেতরে চলে গেল। আর আমি নিচে নেমে এলাম। মনে মনে ভাবছি, একটা মানুষ একটা মানুষকে কতটা ভালোবাসলে তার চোখ দিয়ে জল বের হয়। এই মেয়েটাকে আমার কিছুতেই হারানো যাবে না। এর মতো করে কেউ আমাকে এতটা ভালোবাসতে পারবে না। অনার্সটা কমপ্লিট করেই বিয়ে করে নেবো। আর দেখি এবার বাড়ি থেকে এসে সাবজেক্ট রিলেটেড কোনো জবের জন্য এপ্লাই করবো। তাতে জব মার্কেটের জন্য নিজেকে কিছুটা ডেভোলোপড করতে পারবো।
গাড়িতে উঠে বৃষ্টিকে কল করলাম। সে কল ধরলে বললাম, গাড়িতে উঠলাম কেবল। নিজের প্রতি যত্ন নিস। আমি শীঘ্রই ফিরবো। একদম টেনশন করবি না। ওকে?
সে "হুম" বললো। আমি ফোন রাখলাম। কেন যেন নিজেকে শূন্য শূন্য লাগছে। নাঈম ভাইকে কল করে বললাম , ভাই রওনা দিয়েছি।
তিনি শুভকামনা জানালেন। আমি বললাম, ভাই একটা কথা।
- বৃষ্টিকে মিস করছো তাইনা?
- হ্যাঁ ভাই।
- বৃষ্টি তোমার মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে।
- ভাই এটার নামই কি প্রেম? এটার নামই কি ভালোবাসা।
- হ্যাঁ, এটার নামই প্রেম। এটার নামই ভালোবাসা।
বিকেলে বাড়ি পৌঁছালাম। রাস্তায় তেমন কোনো জ্যাম ছিল না। তাই বেশি সময় লাগেনি। বাড়িতে পৌঁছে প্রথমেই বৃষ্টিকে কল করলাম। মেয়েটা বোধ আমার কলের অপেক্ষাতেই বসে আছে। কিন্তু তার নাম্বার ওয়েটিং দেখাচ্ছে।
১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫৬
শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: হ্যাঁ গো ভাইজান
২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:১৮
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আহা প্রেম,বড়ই মধুর প্রেম। খালি মজাই মজা।
আমারো করবার মুনচায়।
১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫৬
শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: মজার জিনিস ছাড় দিতে নেই। করে ফেলুন একটা প্রেম
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর তো আসবেই।