নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন, পরিবর্তন এবং বিপ্লব !!

অসীম মুহূর্ত

অসীম মুহূর্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোমবাতি জ্বালানো বিদাত ! রাসূল (স) তো কখনো জ্বালাননি শ্রদ্ধা বা ভালবাসা দেখাতে !

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৭

গতকাল ফেসবুকে কথা প্রসঙ্গে আমাকে একজন বলেন-

"মোমবাতি জ্বালানো , জ্বালিয়ে ভালবাসা, শ্রদ্ধা দেখানো , এগুলো সব বিদাত ! এগুলা থেকে দুরে থাকা উচিত।"



আমি তাকে বললাম -

" ভাই আগে যখন বিদ্যুত চলে গেলে আমরা হারিকেন বা মোমবাতি জ্বালায়তাম তখন সেটা কি বিদাত হয় ? মৌলানা তো বিদ্যুত চলে গেলে মোমবাতি জ্বালিয়ে বলে উঠে- আল্লাহ তাড়াতাড়ি কারেন্ট আইনা দাও !" এটা কি তাহলে ভাই বিদাত ?



তিনি জবাবে বললেন-

" সেটা হল প্রয়োজনে জ্বালানো। প্রয়োজনে জ্বালানো যায়। তবে একটা কথা আছে না ? যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি, আশু গৃহে তার থাকিবেনা আর নিশীথে প্রদীপ বাতি।"



আমি বলি-

"ওহ আচ্ছা তাহলে প্রয়োজনে করলে তখন বিদাত নয় !! এটা আবার কেমন ফতোয়া ! যা ভুল তা সবসময় ভুল।ইসলামে তো দুইরকম কোনো কথা নাই ! আর আপনি যে প্রবাদটি বললেন সেটা তো আক্ষরিক অর্থে নিলে হবে না। এটার একটা ভাবার্থ আছে।এরপরও যদি আক্ষরিক অর্থে নেই তাহলে বলব আমরা কেউ তো সেদিন প্রজন্ম চত্বরে বা কোনো মানববন্ধনে মনের হরষে প্রদীপ জ্বালায় না। জ্বালায় একটা প্রতিকী হিসেবে।"



কেমন প্রতীক ?



যেরকম আমরা শান্তির প্রতীক হিসেবে শান্তির পায়রা উড়াই। প্রদীপ হল নিঃস্বার্থ এবং নিঃশর্ত ভালবাসার প্রতীক। আমরা যখন কোনো মানববন্ধনে প্রদীপ জ্বালায় তখন এই ভালবাসা প্রকাশের জন্য।একটি প্রদীপ নিজে ক্ষয় হতে থাকে কিন্তু ক্ষয় হতে হতে তার চারিদিকে শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আলো ছড়াতে থাকে। এও ভালবাসা প্রকাশের জন্য। আমরা যখন প্রজন্ম চত্বরে প্রদীপ জ্বালায় তাও হল শহীদদের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের জন্য এবং ৪২ বছরের যে অন্ধকার দেশে আছে তা দূর করার জন্য ঠিক যেমনটা আমরা ঘরে মোম জ্বালিয়ে বলি- "কখন যে কারেন্ট আসবে ? !!"



তিনি সব শুনে বলেন- " এরপরেও এটা বিদাত। আপনার ইসলাম সম্পর্কে ভাল জ্ঞান নাই।জেনে এরপর বলবেন। বিদাত কি ভালভাবে জেনে নিবেন।



আমি বলি-

ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান আমার আছে তবে এখনো আমি একজন শিক্ষার্থী। তবে আমি এও জানি যে আল্লাহ আমাকে বিবেক দিয়েছেন কাজে লাগানোর জন্য এবং চিন্তা করার জন্য। আপনি ভাই বিলেন দেখি পবিত্র কুরআন বা হাদীসের কোথায় লিখা আছে প্রদীপ জ্বালাইলে বিদাত হবে ? একটা সমর আরব যুগে মানুষ যখন অগ্নি পূজা করত সেটা ছিল ভিন্ন প্রেক্ষাপট। তখন আগুনকেই দেবতা ভাবত! আমরা তো সেটা করছি না ! আপনি কি একটু দয়া করে আমাকে জানিয়ে উপকৃত করবেন যে কোথায় এমনটি লিখা আছে ?



অনেকক্ষণ চুপ----কোন প্রত্যুত্তর নেই----



কিছুক্ষণ পর আবার তার আগমন এবং এসেই বললেন-

এই ব্যাপারে স্পষ্ট হাদীস আছে। তা হল- if u immitate the kafirs in any of the acts..then that is regarded as haram

অর্থাৎ কেউ কাফিরদের অনুকরণে কিছু করলে তা হারাম হবে। আর রাসুল স: কি কখনো প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন কারো প্রতি ভালবাসা বা সম্মান দেখাতে?



আমি বলি-

আমি জানতাম আপনি এই হাদীসখানার কথা বলবেন। এই হাদিসটি এভাবে এসেছে যে-" যে অন্য জাতির পদাঙ্ক অনুসরণ করল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হল" (বাংলা অনুবাদে শব্দগত ভুল থাকতে পারে।) এই হাদিসটির প্রেক্ষাপট যদি চিন্তা করেন তখন দেখবেন তখনকার মানুষরা কেমন ছিল। সে সময় মানুষ স্রষ্টায় বিশ্বাস করত না এবং অনেকেই বহু স্রষ্টায় বিশ্বাস করত। তাই বলা হয়েছে অন্যের পদাঙ্ক অনুসরণ না করতে।পদাঙ্ক বলতে অন্য জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস বুঝিয়েছে। আমি যদি ভুল বলে থাকি তবে খোদা আমার ক্ষমা করুক তবে খোদা আমার ভিতরে বিবেক নামের যে শ্রেষ্ট একটা ধর্ম দিয়েছে সেটা দিয়ে বিবেচনা করলাম আর কি !

তবু মনে করুন আপনার কথাটি সঠিক। পদাঙ্ক বলতে - অর্থাৎ কাফির বা বিধর্মীদের অনুকরণের যে কোনো কিছু করা হারাম। যদিও আমরা কথা বলছিলাম বিদাত নিয়ে কিন্তু আপনি বলেছেন এখন আবার হারাম ! দুইটার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে যদিও। যাই হোক, তাহলে আপনার কথামত একটু বিশ্লেষণ করা যাক।



কাফির বা বিধর্মী বা অন্য জাতির অনুকরণ করা যদি নিষেধ বা হারাম হয়ে থাকে তবে-



১) আপনি কেন ফেইসবুক ব্যবহার করছেন। ফেইসবুকের আবিষ্কারক তো অন্য জাতির।বিধর্মী বা নাস্তিক ও হতে পারে।আবিষ্কারক মার্ক জুকারবার্গ এই প্লাটফর্ম তৈরী করেছিলেন তার স্বার্থে। তাহলে আমি আপনি যে ফেসবুক ব্যবহার করছি এটা কি হারাম ? আপনি বললেন- রাসুল (স:) কখনো প্রদীপ জ্বালায় নাই শ্রদ্ধা বা ভালবাসা দেখাতে। তবে রাসূল (স:) কি ফেসবুক ব্যবহার করেছিলেন ?



২) আমি আপনি পশ্চিমাদের অনুকরণে শার্ট প্যান্ট পরছি। তবে এটা কি হারাম ?



৩) ইসলামে ছিল মাদ্রাসা শিক্ষা। আমরা এখন পশ্চিমাদের অনুকরণে জিপিএ সিস্টেমে পড়াশুনা করেছি। এই শিক্ষাব্যবস্থা কি তবে হারাম?



৪) টমাস এডিসন বিদ্যুত আবিস্কার করলেন।তিনি ভয় অন্ধকার ভয় পেতেন তাই ! পরে তা দিয়ে মানবজাতির কল্যাণ হল। তিনি তো বিধর্মী, অন্য জাতি তবে বিধর্মী বা অন্য জাতির এত এত আবিষ্কার যে আমরা ব্যবহার করছি তাদের অনুকরণে সবই কি হারাম ?



৫) আমরা এখন কম্পিউটার ব্যবহার করি, মোবাইলে কথা বলি, ইমাম মাইক ব্যবহার করে খুতবা দেয়, মুয়াজিন মাইকে আজান দেয়। এগুলা তো রাসুল (স:) করতেন না, সাহাবীরা করতেন না, তবে এসব কি হারাম বা বিদাত ?



৬) কওমী মাদ্রাসায় বা এদের মসজিদে নাকি মাইক ব্যবহার নিষেধ, তাদের ছাত্রদের ইন্টারনেট ব্যবহার নিষেধ কারণ এগুলা নাকি বিদাত!



এইরকম হাজার উদাহরণ দেয়া যাবে।



ভাই আসল কথা হল ইসলাম অনেক যুগোপযুগী এবং উদার একটা ধর্ম।ইসলামে এমন কোনো ঘাটতি নাই যে এটার ভিত্তি নিয়ে বা যেকোন কিছু নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। কিন্তু আফসোস এখন সবাই তা করছে এবং এর কারণ হল ভুল জানা , বিভ্রান্তি, টিভিতে নানা আলেম এর নানা মত , একেক মুফতির একেক ফতওয়া , পথে পথে ওয়াজ মাহফিল এ নানা মোল্লার নানা মত !

তাই বলছি প্রদীপ জ্বালানো নিয়ে আল্লাহ কাউকে জাহান্নামে নিবে না। এসব ক্ষুদ্র চিন্তা বাদ দিয়ে ইসলাম এ ভাবার এবং চিন্তা করার অনেক গভীর বিষয় আছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.