নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শখের ব্লগার, ব্লগ লিখছি প্রায় বারো বছর হবে, তবে কোনো ব্লগে বেশীদিন থাকতে পারিনি, কেননা, লেখার কারণে হউক, বা ব্লগের নিয়ম কানুনের কারণে হউক, বার বার থেমে যেতে হয়েছে, ব্লগ লেখার বা হেল্প চাওয়ার কারণে সব কিছু হারিয়েছি।

সভ্য

আমি একজন ভালো মানুষ।

সভ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুইল্লা

২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০২

বুইল্লা
====
লিখেছেন: সেলাষ্টিয়ান পিনারু
চট্টগ্রামে জন্ম, কিংবা চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করেছে এমন ৯০ এর ইয়াং জেনারেশন মানে আমাদের জমানার ছেলেপেলেরা বুইল্লা চিনেনা এমন তখনকার ছেলে খুব কম পাওয়া যাবে। অনেকে বুইল্লা খেয়ে গান করে সাইন করে এখন বেশ বহাল তবিয়তে আছে, এমন এমন ব্যাক্তি আছে যাদের কথা বলতে পারছি না তবে নিজ চোখে দেখেছি আজকে হয়তো কালো গাড়ী হাকিয়ে ঘুরছে কিংবা মিউজিক ডাইরেক্টর বনে গেছে কিন্তু একটা সময় পকেটে ফুটো কড়ি ও ছিলো না অথচ ঠিকই প্রেকটিস করেছে আর টেনেছে বুইল্লা।

আশির দশকে বুইল্লার প্রকাশ হলে ও অনেক আগ থেকে বু্ইল্লা পরিবার বেটারী গলিতে থাকতো..আমি তখন এত্তসব জানি না, ছোট ছিলাম, আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম জামিয়াতুল ফালাহ মাঠে, আমাদের বাসা থেকে রাস্তা পাড় হলেই সেই মাঠ, খুব সিগারেট খেতে মন আনচান করছিলো..আমরা ৫/৬ জন মাঠে আড্ডা দিচ্ছিলাম, কারো কাছে তখন সিগারেট নেই..লুকিয়ে চুরিয়ে সিগারেট খেতাম, আমি তখন বললাম, অনেক হয়েছে এখন একটা সিগারেট ধরাতে মন চাইছে..কি করবো..পাশ থেকে এক বন্ধু বললো সিগারেট একটা আছে যদি খেতে চাস দিতে পারি। বলে রাখা ভালো আমি খ্রীষ্টান হলেও আমার বেশীর ভাগ বন্ধুই ছিলো মুসলিম, কখনো মনে করিনি সে মুসলিম আমি খ্রীষ্টান..এই ভাবে চিন্তা করতেই পারিনি। যাক, আমি তার থেকে সিগারেট নিয়ে ধরালাম, ঐ একটা টান দিয়েই আমার কাজ সেরে গেলো..এবার সবাই মিলে সেটাকে একটান একটান করে দিচ্ছে..সেটা ঘুরতে ঘুরতে আমার কাছে যখন আসলো তখন আর তার অবস্হা আগের মতো নেই..আমি তখন বুঝতে পারলাম এই হারামজাদা বন্ধুটা সিগারেট খাওয়াই নি..সিগারেট খেলে এমন লাগে না..এটা হলো বুইল্লা..সবাই কি যে হাসি তামাশা করছে আমাকে নিয়ে এক পর্যায়ে অনেকে চলে গেলো শুধু আমি আর আমার পাড়ার বন্ধুটি আছি..আমি মাঠে শুয়ে শুয়ে তারাদের গুনছি..বন্ধু বললো কিরে যাবি না..সে আমাকে ফেলে যাবে না..তার নাম ছিলো রহিম, আমার একেবারে লেঙ্টা কালের বন্ধু। যাই হউক, সে আমাকে না নিয়ে যাবেই না..আমি বললাম কয়টা হয়েছেরে..সে বললো উঠ, আর তারা গুনতে হবে না, চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি, আমি বললাম তাকে এটা খাওয়ানো কি ঠিক হয়েছে, সিগারেটের জায়গায় বুইল্লা খাইয়ে দিলো..আর মাথা কেমন উলোট পালোট হয়ে গেলো না হলে কেউ আকাশের তারা গুনে..১, ২ ৩ ৪ ৫......গুনে শেষ না করে আমি উঠবোই না..বন্ধুটি শেষ পর্যন্ত আমাকে টানতে টানতে বাসায় দিয়ে আসলো, জীবনে প্রথম বুইল্লা খেয়েছিলাম তখন।

পরেরদিন সব আবার ঠিক, আড্ডায় সে বন্ধুটা আসলো, আমি তাকে ধরে বসলাম, তুই এমন করলি কেন রে..? সে বললো তোকে একটা টেষ্ট দিলাম, তুই তো পারলি না..শুয়ে পড়লি। আমি তারপর থেকে বুইল্লার বিষয়ে খোজ নিতে বেটারী গল্লি গেলাম রহিমকে নিয়ে, সেখানে খুজে খুজে তার বাসা বের করলাম। তার আসল নাম হলো আবুইল্লা..ওমা তার বাসা পাওয়ার পর আমি নিজে থ বনে গেলাম..একি..ঘরের সবাই মিলে বুইল্লা বানাচ্ছে..ছোটো থেকে বড়ো কেউ বসে নেই। কি সিন। মোবাইলের চল ছিলো না, না হলে ছবি তুলে রাখতাম, যাক, বললাম বুইল্লা কই। মুখে পাট্টি দেওয়া এক মানুষ যার সারা শরীরে অভাবের চিহ্ন, আমি দমে গেলাম, এটা বিক্রী করে তার এতো বড়ো সংসার চলে, এই বুইল্লার দাম মাত্র এক টাকা। কি দিন ছিলো।

চট্টগ্রামের অনেক রথি মহারথিরা এখান থেকে বুইল্লা নিতে আসতো..বুইল্লা খেয়ে গিটারে ঝড় উঠাতো..এমন কিছু মিউজিসিয়ানের নাম জানি যারা বুইল্লা না খেলে বাজাতে পারতো না। যাক, সে কথা আমি বলে কি হবে তাদের পিছনের স্মৃতির কথা মনে থাকলেই চলবে যে আজকে কালো গাড়ী হাকিয়ে মিউজিক করার জন্ন ষ্টুডিও পাড়ায় যাচ্ছে খুব ভালো কিন্তু একদিন তারা ও এই বুইল্লা মুখে দিয়ে জোরসে টান দিয়ে 'হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া' কিংবা সালতানাত সুইং বাজিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছিলো..এই কথা ভুলে গেলে চলবে না।
মোদ্দা কথা আমরা সব কিছু ভুলে যায়, একটু উপরে উঠে গেলে পিছনে যাদের কে টপকিয়ে উপড়ে উঠে গেছি, যাদের সেক্রিফাইসের কারনে আজ আমি মিউজিকের বিল গেটস হয়েছি সে বন্ধুদের বা ব্যান্ড মেম্বারদের কথা ভুলে গেলে চলবে কি করে, এটা বারে বারে ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে লিখা চলে আসবে যে এই মানুষগুলোর জন্নি আজকে আমি মিউজিকের বিল গেটস হতে পেরেছি..যাকে বলছি তার গায়ে যদি গন্ডারের চামড়া না হয় তাহলে একবার হলে ও ভাববে কেনো আমি বার বার তাকে এতটা কড়া নাড়াচ্ছি..খোজ নিবে। অন্তত বর্তমান যুগে একটা খোজ নেওয়ার কথা বললে যদি বলে সময় নাই, তাহলে বলবো আসলে খোজ নেওয়ার ইচ্ছা নেই, বা আস্তরিকতার অভাব আছে, আমার অনেক ব্যান্ড ফ্রেন্ড আছে, আছে বড় ভাইরা, তাদের অনেকে সাথে আমার ভালো রিলেশন, কিন্তু যাকে আমি একটু চাইছি যে আমার সাথে যোগাযোগ করুক, বা আমাকে বলুক যে এইখানে আসো, আমি সেইখানে এই করোনার টাইমেও উপস্তিত হতে রাজী আছি..এবং প্রয়োজনে আমি আইসোলেশনে থাকতে ও রাজী আছি।

আমি জানি আমার লেখায় অনেকের পিছনের কথা মনে পড়ে যাবে, অনেকে ভাববে পিছনের কথা, আজ আমরা সবাই হয়তো স্বাবলম্বী, মিউজিক করার জন্য এম্পলিফায়ার কাধে করে বয়ে গাড়ীতে উঠাতে হচ্ছে না..কিন্তু দিন এমন ছিলো না..প্রত্যেককে পরিশ্রম করতে হয়েছে, করতে হয়েছে বেঈমানীও, অনেকে নিজের ব্যান্ড সোলজারদের সাথে বেইমানি ভালো ব্যান্ড দলের সাথে ভিড়ে গেছে তাতে আমরা যারা ছিলাম একবারও মাইন্ড করিনি বা কিছু বলিনি। কেননা আমরা মনে প্রানে চেয়েছি একজন হলেও উঠুক, চট্টগ্রামের একজন উঠলে আর দশজনকে টানতে পারবে, এই মানষিকতা কাজ করেছে আমাদের। নিজেদের মানিয়ে নিতে আমরা হয়তো ব্যান্ড ভেঙ্গে দিয়েছি বা কেটে পড়েছি অন্য রিজিকের ধান্ধায় আর কেউ কেউ হয়তো বিদেশ গিয়ে গান/মিউজিক হাতড়িয়েছে কিন্তু, যারা দেশে আমার মতো আছে তারা ও সেম টু সেম আমার মতো ইউটিউব খুলে গান গাচ্ছে কিন্তু মনের শান্তি কি পাচ্ছে? পাচ্ছে না। মিউজিক অঙ্গনে এমন মানুষ খুব বিরল আছে যে তার সঙ্গী সাথীদের ভুলে যায়, এই ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম দেখেছি আমাদের বস আয়ুব বাচ্চুকে. (উপরওয়ালা উনাকে হেদায়েত দান করুক).তিনি যেখানে যে অবস্তায় দেখা হতো দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরতেন কিংবা..কল কল দিয়ে খবর নিতেন, বা সময় বলে দিতেন যে পিনারু অমুক সময় অমুক রেকর্ডিং ষ্টুডিও তে আয়, এক আজিব মানুষ ছিলেন, কোনো অহঙ্কার নেই সাদামাটা মানুষ। কিং বাচ্চু ভাইটা স্বর্গে চলে গেছেন আর যারা আমরা আছি এখন শুধু তার জন্য দোয়া ই করতে পারি, কখন কার ডাক আসে কেউ বলতে পারবে না, কেননা আমাদের সকলেরই বয়স হয়েছে তাই বলবো..এখন একটু এইসব অহঙ্কার বাদ দেন না, পিছনে ফিরে তাকান। তাদের সাথে কথা বলুন। আর কত করবেন। মিউজিক নিয়ে ভন্ডামী বাদ দিন। পারলে নতুন কিছু করুন। পুরানো মিউজিক কে কাপড় চোপড় পরিয়ে নতুন চকচকে দামী গিটার দিয়ে কিংবা দেশীয় মাল সামালা দিয়ে আর যাই করুন, এগুলে কিন্তু হয়ে গেছে সংরক্ষণ ও করা আছে, বার বার এইসবের দোয়ায় দিয়ে নুতন করে আমাদের সামনে বাজিয়ে বাহবা নেওয়ার আর কত।

আজ মনটা অনেক হালকা লাগছে বেশ কিছু কথা উগড়ে দিতে পেরেছি বলে, এমন না যে আমি খুব বড় কিছু হয়ে গেছি তবে সাদাকে সাদা বলতে আমার কখনো আপত্তি নেই, আগামীতে হয়তো আরও এমনকিছু নিয়ে হাজির হবো তখন ছবি সহ দিয়ে দিবো, আর পিছনে এসে আমাকে বলতে পারবে না পিনারু তুমি এটা কেনো করলে। আমার নিজেরই পিছনের কথা সবার সম্মুখে বলতে আপত্তি নেই, বরং এর চাইতে মারাত্ত্বক পাপ করেও মিউজিক অঙ্গনে দিব্যি কালো গাড়ী নিয়ে পুরো পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছে এমন মানুষকে ও আমি চিনি। সময় হলে তার কথা ও বলবো, যে সময়ে অসময়ে আমাকে পাঠিয়ে দিতো ঢাকার কাটাবনের সেই গুপছি গলিতে সেইখানে আছে গুরু আইটেম। সেটা আর পরিস্কার করবো না। নিজের হাতে বানিয়ে বানিয়ে সেবন করাতাম তখন আমি ভালো ছেলে ছিলাম আর আজ একটু খবরও নিচ্ছে না। আজব। হয়তো পুরো বাংলাদেশের মানুষ তাকে যাই বলুক আমার কাছে সে হলো মিউজিকের একজন সঙ্গী। আমরা মিউজিক এক সাথে করেছি। তিনি বড় ভাই হতে পারেন, তিনি ও কি গান চুরি করে গান নি? তারপর লাইটে আসার পর এখন মানুষ তাকে গুরু বলছে, নিজের জীবনী প্রকাশ হলে কারই বা ভালো লাগবে কিন্তু যারা একসাথে সময় দিয়েছে তাদের কে ভুলে গেলে চলবে কেনো?

যাক আজ এতটুকু..যেদিন মনে হবে ছিদ্র করার দরকার সেদিন ছিদ্র করবো না...টাইটানিকের মতো জাহাজ বলা হয়েছিলো ডুববে না..গেরান্টি দেওয়া হয়েছিলো আনসিঙ্কেবল..কই? ডুবে গেলো তো, আমি তেমন ডুবিয়ে দেবো, ছিদ্র করার দরকার নেই। আমার সাথে ভালো তো জগত ভালো..তাই বলছিলাম বুইল্লাকে ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না, সেই কাটাবনের আইটেম কে ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না, ঠিক হবে না মেহেদি সুপার মার্কেটে কিংবা সেন্ট মেরিস স্কুলের ঝুল পথে বসে বসে প্রেম করার সেই স্মৃতি গুলোকে ভুলে যাওয়া...একদিকে প্রেকটিস অন্নদিকে প্রেম এইসব কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে।

তখনকার সিচুয়েশনে আমি কি ছিলাম আর আজ আমি কি হয়েছি এটা কখনও মাথা থেকে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না..মনে রাখবেন স্মৃতি সব সময় আনন্দের যেমন হয় তেমন কষ্টের ও হয়। হ্যাপি ব্লগিং।

পিনারু (এই নামে সবাই আমাকে মিউজিক অঙ্গনে চিনতেন এবং এখনো চিনেন)
এপ্রিল ২৮, বুধবার ২০২১।
বি:দ্র: আমার নিজের ফেবু ওয়াল থেকে আজকের লেখা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কথাগুলো বলতে পেরে নিশ্চয়ই মনটা হালকা হয়েছে, তাই না? এখন প্রাণ উজাড় করে গান করুন। গানে মনোযোগ দিন। আপনি অবশ্যই শাইন করবেন।

শুভেচ্ছা আপনার জন্য।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:১৮

সভ্য বলেছেন: সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই ভাই, ভালো বলেছেন, গানে মনোনিবেশ করার জন্নই সব কিছু, গলা উগড়ে কষ্ট বের করে দিতে পেরেছি। অনেক হালকা লাগছে। আপনি আছেন বলেই গান হচ্ছে, যদি ভালো কোনো মানসম্মত লিরিকস এন্ড কম্পোজার পান একটু খবর দিয়েন। আমি আছি, মোটা মুটি খরচ করতে পারবো। বাট মান সম্মত হতে হবে, কতদিন আর মানুষের গান করবো বলুন, নিজের কিছু দরকার। আশা করছি আপনি হাত গুটিয়ে নিবেন না। পরামর্শের জন্ন ধন্নবাদ। ভালো থাকবেন।

২| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: পিনারু নামটা সুন্দর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.