![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিরামহীন, ক্রমবর্ধমান গতিতে ট্রেন এগিয়ে আসছে, দূর থেকে সে খবরটি সবাইকে জানিয়ে দিতে বাজাচ্ছে তার হুইসেল। লাইনের উপর যারা বসে কিংবা অন্য কাজে লিপ্ত ছিল তারা যে যার মতো যেন ছুটে পালাচ্ছে। কিন্তু তারপরও রেল লাইনের উপর দিয়ে পার হচ্ছে গাড়ি, রিকশা আর মানুষ। লাইনের ঠিক পাশেই বসে পিঠা বিক্রি করছিল রফিকুল ইসলাম, ট্রেন আসতে দেখে সে তড়িঘড়ি করে দৌড়ে গিয়ে রেলক্রসিং এর দন্ডটিকে নামিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিল। ঝকঝক করতে করতে ট্রেনটি চলে গেল, আবার শুরু হলো পূর্বের ব্যস্ত চলাচল। এভাবে ঝুকি নিয়ে মানুষ পারাপারের দৃশ্যটি দেখা গেল যাত্রাবাড়ীর মিরহাজিরবাগ ঘুন্টিঘর রেলক্রসিং এ। নামে এটি অবৈধ রেলক্রসিং এজন্য এখানে নেই কোন গেটম্যান কিংবা সর্তক ব্যবস্থা, পাশের অবস্থানরত দোকানদার গুলোই তাদের বেচাকেনার ফাকে ফাকে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ফলে যে কোন মুর্হূতে ঘটে যেতে পারে ট্রেন র্দূঘটনার মতো ভয়াবহ ঘটনা। তারপরও থেমে নেই এধরনের ঝুকি নিয়ে রাস্তা পারাপার। প্রতিদিনই সংবাদপত্রে তাকালেই দেখতে পায় প্রায়, দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে ট্রেন র্দূঘটনা কিন্তু এরপরও সমস্যাটি সমাধানে নেয়া হচ্ছে না কার্যকরী কোন পদক্ষেপ। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে অভিযোগ করে বলেন ‘ঘুন্টিঘর রেলক্রসিং দিয়েই গেন্ডারিয়া যাওয়া সহজ এবং দুরত্বও কম, এজন্য কেউ উল্টা ঘুরতে চাই না, কিন্তু এতোদিন ধরে রেলক্রসিংটি চালু থাকলেও কোন গেটম্যান দেয়া হয়নি। প্রতিনিয়ত ঝুকি নিয়েই আমরা রাস্তা পার হই’।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রেলক্রসিং ঘুরে দেখা গেছে যে, যেগুলো নামে মাত্র রেলক্রসিং হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কিন্তু সেখানে নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ট্রেন যাচ্ছে তার গতিতে অন্যদিকে মানুষ পার হচ্ছে আশংকাজনক র্দূঘটনার ঝুকি নিয়ে। রেল লাইনের আশপাশের যারা রয়েছে তাদের মর্জি হলে তারাই গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজধানীর মিরহাজিরবাগের রেলক্রসিংটি দিয়ে প্রায় দশ বৎসর যাবত মানুষ চলাচল করছে কিন্তু সেখানে রেল কর্তৃপক্ষের কোন লোক নেই। ফলে যে যখন সময় পাচ্ছে, সেই তখন গেটম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। ফল বিক্রেতা মো: আজিজ বলছিলেন ‘সিগন্যালের জন্য তো কোন লোক তো এইহানে নাই তাই ট্রেন আইলে আমরাই রাস্তা বন্ধ করে দেয়, আমরা দোকানদাররা, যে যখন বসি, সেই এই কামডা করি। রেল কর্তৃপক্ষের কোন লোক থাকলে অনেক ভাল হইতো’। ঘটনাস্থল থেকে জুরাইন অভিমুখে গেন্ডারিয়া রেল স্টেশনের সামনেই রয়েছে গেন্ডারিয়া বাজার রেলক্রসিংটি, ঠিক এক বছর আগে ট্রেনে কাটা পড়ে এইখানে মারা যান দুইজন ব্যক্তি। কিছুদিনের জন্য রাস্তাটি বন্ধ থাকলেও এখন তা চালু রয়েছে কিন্তু নেই কোন রেল কর্তৃপক্ষের গেটম্যান। অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন প্লাস্টিকের দোকানদার শান্তি সরকার, রেলক্রসিং থেকে দুরেই তার দোকান। একসাথে দোকানদারী এবং গেটম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন, যা খুব অভাবনীয় বিষয় হলেও এখানে সেটি অহরহ ঘটছে। বাজার কর্তৃপক্ষের সামান্য বেতনে তিনি এই কাজটি করেন। কিভাবে এটি সম্ভব জিজ্ঞেস করলে, শান্তি সরকার বলেন ‘প্রতিদিন কখন ট্রেন আসে এখন তা একরকম মুখস্ত হয়ে গেছে, ট্রেন হুইসেল দিলে আমি গিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। তবে আমি তো একা, এজন্য সব সময় থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। মাঝে মাঝে আমি না থাকলে, রেলক্রসিংটি খোলা থাকে’।
এভাবেই অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে রেলক্রসিংটি দিয়ে পার হচ্ছে মাইক্রোবাস সহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। খোজ নিয়ে জানা যায় বাজারের পাশেই রয়েছে জুরাইন কবরস্থান, ফলে প্রতিদিন চার থেকে পাচটি করে লাশ এখানে মাটি হয়। আর লাশের গাড়ি এইপথ দিয়ে যাওয়া আসা করে। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিস কিংবা সিটি কর্পোরেশনের আর্বজনার গাড়ি, কাচামালের ট্রাকও এখান দিয়ে যাতায়াত করে ফলে রাস্তাটি বন্ধ করে দিলে অনেক দিক থেকে সমস্যার সৃষ্টি হবে। স্থানীয় বাসিন্দা লিটন অভিযোগ করে বলেন ‘রেল কর্তৃপক্ষ শুধু রেলক্রসিংটি অবৈধ ঘোষণা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগাতে পারে কিন্তু আমরা কিভাবে যাতায়াত করবো সেদিকে খেয়াল করে না, ঝুকি নিয়েই আমরা রাস্তা পার হচ্ছি’।
তবে এধরনের সমস্যার মাধ্যমে সৃষ্ট দূর্ঘটনার দায়ভার এড়াতে কর্তৃপক্ষের রয়েছে সাবধানতার বাণী। ‘সামনে অবৈধ রেল ক্রসিং, পথচারী যানবাহন চলাচল
নিষেধ, কোন প্রকার দূর্ঘটনার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকিবেন না’, সাধারন মানুষের সচেতনতার উদ্দেশে প্রায় প্রতিটি রেলক্রসিং এ এধরনের সর্তকবার্তা লেখা রয়েছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা, অদক্ষ চালকেরা তো এগুলো মানার সময়ই পান না। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে গেন্ডারিয়া রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন ‘আমরা এধরনের অবৈধ রেল ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেয় আবার রাতের আধারে কে বা কারা তা খুলে দেয়। তাছাড়া চাইলেই তো আর সব জায়গায় গেটম্যান দেয়া সম্ভব না, যেখানে বেশি দরকার সেখানে অবশ্যই লোক আছে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ঠ সচেতন রয়েছে, কিছুদিন আগেও গেটম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে’। তবে সুশীল সমাজের একান্ত দাবি বিষয়টি নিয়ে যেন
কর্তৃপক্ষ আরো বেশি ততঃপর হয় এবং যে সকল জনবহুল রেলক্রসিং স্থানে পথচারী চলাচল ঝুকির্পূণ রয়েছে, সে সকল স্থানে যেন নতুন করে গেটম্যান নিয়োগ দেয়া হয়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৯
স্ট্রিট বয় বলেছেন: কেউ কি নাই