![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের ওপর খুব অল্প বয়েস থেকেই বিভিন্ন ধরণের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে চলছি, বাঁধনহারা হবার বাসনা চিরকাল ছিল,আজো আছে, তবে আজকাল বেশ সাহস আর আত্মবিশ্বাস আছে মনে, বুঝে গেছি নিজেকে মেলে দিলেই ভালো, তাতে কার কী আসে আসে যায়, এটা ভাবার দরকার নেই, এখন তাই আমি এক উড়ন্ত, দুরন্ত পাখি নই-অভ্র, খুশিতে ভিজিয়ে দিতে, দুঃখে অশ্রু লুকোতে, আমি সত্যিই আজ দু্রন্ত, দুরন্ত অভ্র।
চলুন একটা মন খারাপের গল্প শোনাই আপনাদের।
আজ তো ছুটির দিন ছিলো, সবাই বেশ মজায় মজায় দিন কাটিয়েছেন,
সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কর্মব্যস্ত একটা সপ্তাহ পার করে এরকম একটা ছুটির দিনে আরাম-আয়েশ
করে, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ঘুরে আনন্দ উদযাপন করা দোষের কিছু না।
ওকে, শুরুটা তো বলে দিলাম, পড়ে হয়ত খুব একটা খারাপ লাগেনি,
তবে পরের লাইনগুলোতে হয়ত এত মিষ্টি বা মজার কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে না,
যদি মনে করেন পড়ে কিছু অনুভব করবেন তাহলে চলুন, আর না হলে স্কিপ করে যেতে পারেন, ধন্যবাদ।
গত কিছুদিন থেকে পুরো দেশ জুড়ে বেশ বৃষ্টিপাত হয়েছে, এখনো কিছু কিছু এলাকায় হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদিগুলোর পানি বিপদসীমার উপরে বয়ে গেছে, প্লাবিত হয়েছে ব্যাপক এলাকা।
গ্রামাঞ্চলের কথা এখানে আমি খুব একটা লিখবো না, গ্রামাঞ্চলের মানুষের সাথে আমাদের শহরাঞ্চলে থাকা মানুষের জীবন যাপনের ধারার সাথে ব্যাপক তফাত। আর আমরা আমাদের নিজেদেরকে গ্রামবাসী থেকে বেশ উন্নত আর আধুনিক মনে করি।
আমাদের শহরে অনেক মানুষ আসেন গ্রাম থেকে, চোখে থাকে রঙ্গিন স্বপ্ন,
একটু বেঁচে থাকার আশায়, একটু ভালো কিছুর আশায়।
এসে ঠাঁই নেন ফুটপাথ, বস্তির ঝুপড়ি, বাস স্ট্যান্ড, কিংবা রেলওয়ের প্লাটফর্মে। রাতে বার হয়ে এসব জায়গায় চোখ বুলোলেই দেখা মিলবে মাথার নিচে কাপড়ের পুঁটলি, ব্যাগ, চটের বস্তা, প্লাস্টিকের বাসন, বসার পিঁড়ি, ইট, কাঠের টুকরো ইত্যাদি দিয়ে ঘুমোচ্ছেন। ঘুম আবার যে সে ঘুম নয়, গভীর ঘুম, চোখের পাতা দু’টো একদম ঘুমে বুঁদ হয়ে আছে। কী পরম শান্তিময় ঘুম ওদের!
একসময় ঘুম ভাঙে, সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ রিকশা ঠেলেন, কেউ তরকারি কুড়িয়ে বিক্রি করেন, কেউ পণ্যের বোঝা কাঁধে তোলেন, কেউ চিপস, চকোলেট, চানাচুর ইত্যাদি বিক্রি করেন।
এদের মধ্যে শারীরিকভাবে অক্ষম অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
সারাদিন ঘুরে ঘুরে নিজের নিজের কর্ম সেরে রাতে আবার সেই জায়গায় ফেরেন যেখানে ঘুমোবেন। আবার ঘুমিয়ে পড়েন।
কেউ কেউ আছেন রাতে ঘুমোন না, তারা বাড়তি পারিশ্রমিকের আশায় রাতে কাজ করেন, কেউ রিকশা চালান, কেউ পণ্যবাহী যানবাহনের পণ্য খালাস করেন, কেউবা করেন পাহারাদারের কাজ।
এভাবেই নিজের জীবন চাকার ঘূর্ণন সচল রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান।
এদের জীবনে আনন্দ বিনোদন নেই বললেই চলে, এদের জীবনে কোনো উৎসব নেই, পার্বন নেই, কর্মব্যস্ত সপ্তাহ বা মাস শেষে আয়েশে দিন কাটানোর ছুটি নেই। এদের বছর শেষে কোনো বোনাস নেই, পদোন্নতি নেই, কিংবা নেই অবসর গ্রহনের সুযোগ। এদের মৃত্যু অব্দি শ্রম দিয়ে যেতেই হয়। এদের একদিন কাজ বন্ধ হলে জুটবে না খাবার, হয়ত ঘুমোবার জায়গাটুকুও মিলবে না।
এদের জীবনের এই চক্র ভাঙবার বা রূপান্তরের কোনো পদ্ধতি নেই, বা থাকলেও আজ অব্দি সেটা প্রয়োগ করা হয়নি। ফলে ওদের জীবন নিরন্তর এক তারে বাঁধা।
অনেক ধৈর্য ধরে এতক্ষন পড়েছেন, জানি পড়ার পর কিছু ভাবনা মাথায় এসে জড়ো হয়েছে, কিছু জিজ্ঞাসা, কিছু পরিকল্পনা কিংবা স্বপ্ন জমেছে হয়ত মস্তিষ্কের কুঠুরিতে।
এখন, আপনার ভাবনাগুলোকে একটু ডাইভার্ট করে দেই,
দেখুন তো কেমন লাগে-
পুরো দেশের কথা বলবো না। শুধু ঢাকার কথা বলবো।
কারণ ঢাকায় এরকম বস্তি এবং ফুটপাথে বাস করা মানুষের সংখ্যা অজস্র।
এই যে অবিরাম বৃষ্টি হলো, পথ ঘাট সব ডুবে গেলো,
আমরা কেউ সেলফি তুলেছি, কেউ বা গ্রুপ ছবি তুলেছি,
কেউ বা ব্যঙ্গ করেছি যে রিকশা এবং নৌকা একই রাস্তায় চলছে,
ফেইসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, যানবাহন ইত্যাদির ছবি প্রচার করছি।
প্রশাসন এবং সরকার ব্যবস্থা ইত্যাদির মুন্ডুপাত করছি।
কেউ আমরা ভেবে দেখেছি, এই থই থই করা পানিতে ওইসব মানুষের কী অবস্থা হয়েছে, ওরা কেউ কাজ পেয়েছে কি না, কাজ শেষে ফিরে প্রতিদিনের যে ঘুমোনোর জায়গা সেখানে পানি দেখে ওরা কোথায় ঘুমোলো, কিংবা, এই যে পুরোটা দিন বৃষ্টি হলো, এতগুলো মানুষ কোথায় আশ্রয় নিলো।
জানি, অনেকের কাছেই উত্তরগুলো অজানা। এমনকি আমাদের মেইনস্ট্রিম অনেক তারকা রিপোর্টারও এসব বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ বোধ করেন না।
কারণ এসব নিউজ মানুষ খুব একটা ‘খায়’ না।
কিন্তু, ওইসব বাস্তুহীন মানুষগুলো খেয়েছে কি খায়নি তা নিয়ে কারোরই তেমন মাথা ব্যথা নাই।
না থাকারই কথা।
যাদের জীবনে কোনো আনন্দ উৎসব নাই, যাদের পকেটে আনন্দ কেনার মত টাকা নাই, তাদের কাছে আমরা কোন দুঃখে আনন্দ বিক্রি করতে যাবো।
শত হলেও সমাজে আমাদের একটা স্ট্যাটাস আছে। যার তার সাথে তো আমরা মিশতে পারি না।
হুম, আর কিছু বলার নাই।
অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.