![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের ওপর খুব অল্প বয়েস থেকেই বিভিন্ন ধরণের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে চলছি, বাঁধনহারা হবার বাসনা চিরকাল ছিল,আজো আছে, তবে আজকাল বেশ সাহস আর আত্মবিশ্বাস আছে মনে, বুঝে গেছি নিজেকে মেলে দিলেই ভালো, তাতে কার কী আসে আসে যায়, এটা ভাবার দরকার নেই, এখন তাই আমি এক উড়ন্ত, দুরন্ত পাখি নই-অভ্র, খুশিতে ভিজিয়ে দিতে, দুঃখে অশ্রু লুকোতে, আমি সত্যিই আজ দু্রন্ত, দুরন্ত অভ্র।
(বিষয়টি খুব স্পর্শকাতর, পাঠকের বিচক্ষণতা কাম্য)
আমাদের সমাজে সাধারণভাবে নারীদের মতকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়ার চল নেই। একেবারে যে দেয়া হয় না, তা না। তবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়েই ঘরের নারী সদস্যকে জিগ্যেস করার খুব প্রয়োজন মনে করা হয় না। এমনকি সেটা একজন নারীর ব্যক্তিগত কোনো বিষয় হলেও।
আমাদের দেশে এখনো বিয়ের ব্যাপারে পুরুষের সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা পাত্রী পছন্দ করা হোক বা পাত্রীর জন্যে পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রেই হোক। সর্বশেষ মত বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পুরুষ মহল থেকেই আসে। সেখানে নারীদের মতকে আমলে নেয়ার ইতিহাস বিরল।
এতকিছুর পর যখন একজন নারী বধূ হয়ে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা একটি পরিবেশে নিজেকে আবিষ্কার করেন, খাপ খাইয়ে নেয়ার নিরন্তর চেষ্টায় হাবুডুবু খেতে থাকেন, সবার সাথে মানিয়ে নেয়ার অক্লান্ত চেষ্টা করেন, তার মাঝেও তাকে নিয়মিতই টিপ্পনি, বকা, খোঁটা, ঝাড়ি ইত্যাদি সহ্য করে যেতে হয়।
আর এক্ষেত্রে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা থাকেন আতসী কাঁচের তলায় খুঁত খুঁজে বার করার বিরামহীন চেষ্টায়। আর বাড়ির মহিলারা মুখ দিয়ে নানান ধরণের তীর্যক মন্তব্য করতে থাকেন। এভাবেই সাধারণত আমাদের দেশের নতুন বউকে প্রায় সকল সমাজে এবং শ্রেণী, পেশা নির্বিশেষে অভ্যর্থনা জানানো হয়। ব্যতিক্রম যে নেই, তা মোটেও নয়, এখন অনেকেই এসব ব্যাপারে সচেতন হয়েছেন, হবার চেষ্টা করছেন। যা প্রশংসার দাবিদার।
এসকল বিষয়ের মধ্যে আমার ব্যক্তিগত নজরে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ধরা পড়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের দেশে প্রবাসী কোনো লোকের স্ত্রী, বা সদ্য বিবাহিত বিধবা- এদের প্রতি প্রায় সকল পরিবারেই বেশ রূঢ় আচরণ করা হয়। প্রবাসীর স্ত্রীর ক্ষেত্রে যেটা হয়, স্বামী দূরে থাকার কারণে পরিবারের সকলে বধূটিকে নিজের ইচ্ছেমত খাটিয়ে মারেন, একটু ঊনিশ-বিশ হলেই চলে মানসিক, শারীরিক নির্যাতন। নির্যাতিত স্ত্রীটি স্বামীকে সেসব বলার সুযোগ পায় না বললেই চলে। আবার অনেক পরিবার অনৈতিক বা অমানুষিক শ্রমেও সেই অসহায় স্ত্রীকে বাধ্য করেন। ফলে বিবাহিত জীবন তার কাছে হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। একসময় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে পাল্টা আঘাত হানেন, কেউ হয়ত পথ হারিয়ে নিজেই বেছে নেনে অনৈতিক পথ। কেউ কৌশলে স্বামীর সংসার থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়ে নিজের মত করে জীবন যাপন করেন। দোষ সব তখন সেই নারীর ওপরেই এসে পড়ে, কেউ দেখতে চায় না পেছনের কারণগুলো কী।
এর চাইতে মারাত্মক অবস্থায় পতিত হন বিয়ের পর সদ্য বিধবা হওয়া নারী। একে তো স্বামী হারানোর শোক। তার ওপর সামাজিক বিভিন্ন অপবাদ, গঞ্জনা। শশুরবাড়ী থেকে বিরূপ আচরণ পাওয়া নারী যখন শেষ অবলম্বন হিসেবে নিজের বাপের বাড়ির দিকে চোখ ফেরান, সেখানেও অনেকেই দেখেন ভাই-ভাবিদের রাঙা চোখ। ফলে তার মনে দুনিয়া ত্যাগের জন্যে প্রস্তুতি নেয়া বা আত্মহত্যা করাই হয়ে ওঠে এই বিষাদময় জীবন থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ। অনেকে তা-ই করেন। অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী হয়ত এক-দুই জন সন্তান রেখে মৃত্যু বরণ করেছেন, সন্তানদের নিয়ে তখন বিধবা নারীর দূর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। অনেক পরিবার সন্তানদের দেখভাল করলেও স্বামী হারানো বধূর প্রতি সুনজর দেন না।
কেউ কেউ নিজের বোন বা কন্যাকে নিজের কাছেই নিয়ে আসেন। বাপ-ভাই সকলে মিলে তার ভরণ-পোষণ করেন। সন্তান থাকলে তার দায়িত্বও নেন। কিন্তু, তারাও একটা বিষয় গুরুত্ব দিয়ে খেয়াল করেন না। যে নারী হাতে রাঙা মেহেদি দিয়ে আজীবনের জন্যে স্বামীর ঘরে পা দিয়েছিলো, চোখে ছিলো অজস্র রঙ্গিন স্বপ্ন, স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় তার মনের যে অবস্থা হয়, তার জন্যে উপশম কী হতে পারে। যে নারী বিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে বৈধব্য প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি বাকি জীবন কীভাবে নিঃসঙ্গ কাটিয়ে দেবেন। তার কি ইচ্ছে করে না কারো সাথে নিজের একান্ত সময়গুলো কাটাতে, নিজের আবেগ, অনুভূতিগুলো ভাগ করে নিতে। তারও তো মনের চাহিদা আছে, যৌবনের তৃপ্তি লাভের আকাঙ্ক্ষা আছে। প্রায় সময়ই এই বিষয়গুলো আমাদের পরিবার বা সমাজ এড়িয়ে যায়। কখনো সামাজিক কাঠামোর অসম আচরণের কারণে, কখনো নিজেদের সঙ্কোচের কারণে। অথচ অল্প বয়েসে বিধবা হওয়া নারীটির কামনা, বাসনা, সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা, ভাবাবেগ, মৌল-মানবিক চাহিদা কোনো কিছুরই মৃত্যু ঘটেনি। আমাদের সমাজ স্বামী হারানো নারীকে সমাজের পরিত্যক্ত, উচ্ছিষ্টের মত মনে করে। অথচ, স্বামী হারানোয় না তার কোনো হাত আছে, বা, কোনো অভিপ্রায়। স্বামী বিয়োগের সাথে সাথে বিধবা স্ত্রীটিকেও আমরা জীবন্ত লাশে পরিণর করে ফেলি।
অথচ, এমন হবার কথা ছিলো না। একজন বিপত্নীক ষাট-সত্তর বয়েসে বা এর চেয়ে বেশি বয়েসে বিয়ে করতে চাইলে সমাজ চোখ বাঁকা করে না, বাধা দেয় না। আর পুরুষ যদি চল্লিস-পয়তাল্লিশ হয় তাহলে কথা-ই নাই। বিয়ে দিতে পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনদেরও উৎসাহের কমতি থাকে না, সেই বিয়েতে হৈ হুল্লোড় কম হয় না। অথচ বাইশ-তেইশের বিধবা নারীর বিয়ের কথা শুনলেই অনেকে মুখ বাঁকা করেন, টিপ্পনি কাটেন। অনেক পরিবার নিজের কন্যা সন্তানের ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক, মানসিক জীবন যাপনের অভিপ্রায়ে পুনরায় বিয়ের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু, পুরুষটির মত অত হাঙ্গামা করে নয়, বরং চেষ্টা করেন কিছুটা আড়ালে, ঘরোয়াভাবে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করতে। কারণ সমাজের চোখে হেয় হতে হবে। বিপত্নীক পাত্রও কুমারি মেয়ে খোঁজেন, অল্প বয়েস, ছিমছাম গড়ন ইত্যাদির দিকে খুব নজর থাকে। কিন্তু, বিধবা নারীর জন্যে কোনো রকম একটা পাত্র পেলেই হলো, প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাত্রের বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে, বিপত্নীক, আগের স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়েছে ইত্যাদি। এরকম পাত্রই বিধবাদের জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে ভাবা হয়।
আমাদের সামাজিক কাঠামোটাই এমন যে এখানে সব একটি সমাজের নিজস্ব নিক্তির মানের নিরিখে মাপা হয়। সেখানে উদারতা, অবাধ স্বাধীনতা, বর্ণ, লিঙ্গ, সামাজিক অবস্থান, অর্থ, ক্ষমতা ইত্যাদি প্রধান বৈষম্য সৃষ্টিকারী উপাদান। চাইলেই একজন ব্যক্তি তার নিজস্ব মতের অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। সেটা যদি যুক্তিগ্রাহ্য, আইনানুগ হয় তার পরেও।
এসব কারণেই বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন রকম সামাজিক বিশৃংখলা, বিচ্যুত আচরণ, অপরাধ প্রবণতা, সহিংসতা, অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি দেখা দেয়। নেমে আসে চরম দূর্ভোগ।
ব্যক্তি স্বাধীনতার পথ অবারিত করে দিলেই এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থা মানুষকে পেছনের দিকেই নিয়ে যাবে।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪৫
নীল অভ্র বলেছেন: ধন্যবাদ। আমাদের সমাজ নারীকে প্রাপ্য মর্যাদা এবং গুরুত্ব প্রদান থেকে বঞ্চিত করেছে, ফলে সমাজে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিচ্ছে। নারীর জন্যে পুরুষ সমাজ পদক্ষেপ না নিলে ওরা এগিয়ে যেতে পারবে না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০
raselabe বলেছেন: ভাল বলেছিন। তবে আমাদের দেশে নারীরা সত্যিই কোন সন্মান পায় না।