![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের ওপর খুব অল্প বয়েস থেকেই বিভিন্ন ধরণের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে চলছি, বাঁধনহারা হবার বাসনা চিরকাল ছিল,আজো আছে, তবে আজকাল বেশ সাহস আর আত্মবিশ্বাস আছে মনে, বুঝে গেছি নিজেকে মেলে দিলেই ভালো, তাতে কার কী আসে আসে যায়, এটা ভাবার দরকার নেই, এখন তাই আমি এক উড়ন্ত, দুরন্ত পাখি নই-অভ্র, খুশিতে ভিজিয়ে দিতে, দুঃখে অশ্রু লুকোতে, আমি সত্যিই আজ দু্রন্ত, দুরন্ত অভ্র।
ছেলেটা রোজ হেঁটে যায় আনমনে মাথা নামিয়ে,
কোনোদিন কেউ দেখেনি তাকে চোখ তুলে খুব তাকাতে,
কাঁধে থাকে বিভিন্ন রকম ব্যাগ, ঘুড়ি বা ফুলের ঝুড়ি,
কোনোদিন দেখা যায় পুরো শরীরে কাঁদা মাখমাখি,
বেশ লাজুক ভঙ্গিতে সে পার হয়ে যায় অলি-গলি,
বিকেলে দেখা যায় সাইকেল চালিয়ে পাড়াময় ঘুরে বেড়াতে,
কোনোদিন মাঠে নেমে ধূলোবালি মেখে খেলতে।
এভাবেই কেটে যায় বছর কয়েক,
এলোমেলো সেই ছেলেটা কিছুটা গোছালো হয়,
গুছিয়ে চুল আঁচড়ায়, বেশ পরিপাটি পোষাক পরে,
সাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি কমিয়ে দেয়,
মাঝেমাঝে দেখা যায় হাতে ফুলের তোড়া বা রঙিন বাক্স,
কাঁধের ব্যাগে কাগজ-কলমের ভার কমে,
সেখানে লাল-নীল-সবুজ রঙয়ের নকশা করা ছবি,
গান, মুভি, নাটকের সিডি, কবিতার বই ইত্যাদি।
ওকে নিয়ে কারোরই তেমন আগ্রহ নেই,
সবাই ওকে রোজ রোজ দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে,
কেউ আর প্রশ্ন করে না এখন,
হঠাৎ একদিন কেউ দেখে ছেলেটা গলির ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে,
হাতে বিশাল এক ফুলের তোড়া, আর একটি ঢাউস চিঠি,
পড়ছে বিড়বিড় করে, মৃদু শব্দে হাসছে, একটু একটু দুলে দুলে।
এরপর বেশ কয়েক বছর কেটে যায়, ছেলেটাকে আর কেউ দেখে না।
সবাই ফিসফাস করে কী হোলো ছেলেটার? কোথায় হারালো?
নাকি চিরতরে হারিয়েই গেলো?
অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে, অনেকেই বলে ‘ফালতু পোলা’,
এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো দিনগুলো,
পাড়ার ডোবা, পুকুর, জলাশয়গুলো ভরে ভরে উঠে গেলো দালানকোঠা,
রাস্তাগুলোয় পিচ পড়লো, শপিং মল হোলো কয়েকটা,
মানুষের গিজগিজ বেড়ে গেলো, বাড়লো হাঙ্গামাও,
সবাই একরকম ভুলেই গেলো ছেলেটার কথা।
ফাগুনের রোদ ঝলমল একদিনে, পাড়ার মূল সড়কে,
এক যুবককে ধীরে ধীরে হেঁটে আসতে দেখা গেলো,
গায়ে কেতাদুরস্ত পোষাক, চোখে সানগ্লাস,
খুব পরিপাটি চুলগুলো আঁচড়ানো, মুখে মৃদু হাসি,
কাছে আসতেই দেখা গেলো, এ তো সেই ছেলে,
বছর সাতেক আগে যে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলো,
মোড়ের রেস্তোরার মানিক- ‘আরে লাল্লা ভাই, আপনে কই থিকা?’
বলেই দিলো এক দৌঁড়, কোথায় গেলো কে জানে,
ছেলেটার পেছন পেছন আসছিলো নীল রঙয়ের মার্সিডিজ,
ধীরে ধীরে ছেলেটা আর নীল মার্সিডিজ গিয়ে থামলো এক গলির সামনে,
গলির ভেতর থেকে ঠিক সিনেমার মত-
সোনালি লেহেঙ্গা জড়ানো এক শ্যামবর্ণা মেয়ে দৌঁড়ে আসছে,
ছেলেটাও চোখ থেকে সানগ্লাস নামিয়ে, দাঁড়ালো সিআর সেভেনের মত,
মেয়েটা এসেই ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো, পেছনে একদল মানুষ,
সবাই ‘ওই কই যাস তুই, মাইনকায় তোরে কী কইলো, পাগলি হইলি?’
বলে মেয়েটার পেছন পেছন ছুটে এসে দেখলো ছেলেটাকে,
দেখেই সবার চক্ষু চড়কগাছ, কেউ বললো ‘ভূত নাকি মানুষ?’,
ছেলেটা মেয়েটাকে কোলে নিয়েই চড়ে বসলো গাড়িতে,
সাঁই করে ছুটে বার হয়ে গেলো মূল সড়কের দিকে।
মানিক আজ রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে,
সবাইকে ফ্রী মিষ্টি খাওয়াচ্ছে, এলাকায় সবাই মুখ ডুবিয়ে,
হাতে-মুখে মাখমাখি করে মিষ্টি পুরছে একে অন্যের মুখে।
©somewhere in net ltd.