নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদকাশক্তি ও সমাজ এবং আমাদের করণীয়

আমি শেষ কথা বলতে চাই সমাজ তুমি আগে ঠিক হও পরে আমি ঠিক হই।

শাম

আজকাল মানুষের মধ্যে সহ্য করার ক্ষমতা কমে গেছে । অতি অল্পে তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় । তাছাড়াও লোক দেখানো ভাব

শাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাদকাশক্তি ও সমাজ এবং আমাদের করণীয়

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:৫২

নেশা মানুষের একটি আদিম প্রবণতা, যা পৃথিবীর মানুষকে যুগে যুগে, কালে কালে ক্ষতি করে যাচ্ছে এবং উই পোকার মত কুরে কুরে শেষ করছে রাষ্ট্র, সমাজ এবং সংসারের কাঠামো-অবকাঠামো।

পৃথিবীর উন্নতির সাথে সাথে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কারের সঙ্গে মানুষ অনেক নতুন এবং অতি ক্ষতিকারক মাদক দ্রব্যের সন্ধান করে নিয়েছে। আদিম নেশা আফিম ছেড়ে মানুষ এখন জড়িযে পড়েছে হেরোইন, প্যাথেড্রিন, ব্রাউন সুগার সহ অনেক ক্ষতিকারক নেশার জ্বালে।

কিছুকাল আগেও মাদক দ্রব্য তৃতীয় বিশ্বের এই ভূখন্ড বাংলাদেশে কোন সমস্যার সৃষ্টি করেনি। কিস্তু আজকের সমাজের পেক্ষাপট ও তার বাস্ববতা থেকেই আমার অপটু হাতের এই ক্ষুদ্র রচনার প্রয়াস।

বর্তমানে ধুমপানের সাথে সাথে ড্রাগের আগ্রাসন ও ভয়ংকর সব মাদকের আগমন দেশকে এক প্রলয়ঙ্কারী সমস্যার মুখোমুখী করছে। এমনিতেই জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, অর্থনৈতিক স’বিরতা, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, শিক্ষাক্ষেত্রে সন্ত্রাস ধর্মীয় গোঁড়ামী, কুসংস্কার ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত এ সমাজ। তাই দেশের এই নতুন সমস্যা নিয়ে আমাদেরকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। আমরা এক মহান আন্দোলনের সদস্য, যাদের উদ্দেশ্য সমাজকে সুন্দর করা, সমাজের পরিবেশকে সুস’ রাখা।

ধুমপান ও বিভিন্ন প্রকার মাদক সমাজের স্বাভাবিক পরিবেশকে করছে কলুষিত। এটি পরিবেশ দূষণেরও পরিবেশকে করছে কলুষিত। এটি পরিবেশ দূষণেরও একটি কারণ ও অংশ। মানুষ এই অশুভ শক্তির কাছে হারাচ্ছে তার সামাজিক পরিবেশের সুন্দর অবস’া। অনেক স্বাগত কথন পারেনি এদেরকে রুখতে। তাই এখন দিন হলো সংলাপের সাথে সংগ্রামের, প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এ সম্পর্কে আলোচনার চেষ্টা আমি পরে করব।

এখন জানা দরকার অনেক কথাই, যেমন, মাদক কি? মাদকাসক্তির কারণ এবং কুফল ও তার অকাল পরিণতি সম্পর্কে মনে করা যাক। এসব কাজ এর আগেও অনেক হয়েছে। তাও নতুন করে নজর দিতে দোষ কি? এতে যদি আমার প্রিয় কোন স্কাউট ভাই-বোনের কিংবা সংশ্লিষ্ট সকলের করণীয় সম্পর্কে আগ্রহ জন্মায় ক্ষতি কি!

প্রথমে জানা যাক, নেশা বা ড্রাগ বা মাদক কি? নেশা শব্দটির মূল আরবী শব্দ ‘নেশাতুন’ যার অর্থ মত্ততা। কোন কিছুতে সাধারণের চাইতে অধিক আগ্রহকেই নেশা বলা হয়। যেমন পড়ার নেশা, খেলার নেশা, মাদকে নেশা বা আসক্তি। আর মাদক হলো এমন কিছু দ্রব্য বা রাসায়নিক ওষুধ, যা মানুষ তার স্বাভাবিক ব্যবহার যেমন-চিকিৎসার প্রয়োজন ব্যতিরেকে ক্ষণিক আনন্দের অভিজ্ঞতা লাভের জন্য, অথবা হতাশা থেকে সাময়িক মুক্তির আশায় অননুমোদিত ভাবে ব্যবহার করে থাকে। প্রয়োজনের ক্ষেত্রে পদার্থগুলো নির্দোষ ভেষজ, আবার এক্ষেত্রে সদোষ নেশাবস’।

খুব সামপ্রতিক কালের গবেষণায় ড্রাগ আসক্ত হবার পেছনে কারণগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

১. প্রাথমিক এবং

২. সাহায্যকারী কারণ।

প্রাথমিক কারণ ব্যক্তি নিজেই। তার আসক্তিমূলক চিন-াভাবনা, মনোভাব, দেহ রসায়ন, মানসিক অবস’া মূল্যবোধ ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি এর অন-র্ভুক্ত। বংশানুক্রমিক ভাবে মাদকাসক্তির সম্ভাবনাও গুরুত্বপূর্ণ।

সাহায্যকারী কারণ হিসাবে প্রধানভাবে যেগুলো আসে, তার মধ্যে নেতিবাচক দলগত চাপ, কৌতুহল বা নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রয়াস, নৈতিক শিক্ষার অভাব, হতাশা, মনস-াত্ত্বিক বিকাশের অভাব, মাদকের সহজলভ্যতা প্রভৃতি। তবে উল্লিখিত সাহায্যকারী কারণগুলোর মধ্যে দলগত চাপ এবং কৌতুহলকেই সব চাইতে শক্তিশালী এবং বিপদজনক কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দুটির প্রভাব তরুনদের মধ্যে সবচাইতে বেশি কাজ করে।

যে কোন বয়সের মানুষই বিশেষভাবে বন্ধুরা তাদের সম্পর্কে কি বলে? কি রকম চিন-া করে? সে বিষয়ে সজাগ। সমবয়সী মানুষের কাছ থেকে বা গ্রুপ থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের থেকে সৃষ্ট এবং শক্তিশালী প্রভাবই দলগত চাপ। দলগত চাপের প্রতিফলন দেখা যায মানুষের অনুভুতিতে, কাজে আচরণে, পোশাক-পরিচ্ছদে এবং জীবন যাপনের আরও নানা দিক। ইতিবাচক দলগত চাপের প্রভাবে অনেক ভালোকিছু হওয়া সম্ভব। কিন’ নেতিবাচক দলগত চাপ মানুষকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। এ রকম প্রভাবেরই একটি ফলাফল ড্রাগের ব্যবহার। কারণ এক্ষেত্রে যে অবস’াটি কাজকরে তা হলো- ‘বন্ধুরা করছে আমিও করতে পারি। না করলে দল ছাড়া হতে পারি অথবা ওদের কাছে ছোট হয়ে যেতে পারি ইত্যাদি।’

ড্রাগ আসক্তি আজ শহর-বন্দর ছাপিয়ে দেশের প্রত্যন- গ্রামাঞ্চল পর্যন- অধিক সংখ্যক লোকের মধ্যে বিস-ার লাভ করেছে এক সময়ের ব্যক্তিগত সমস্যা আজ প্রকট জনস্বাস’্য সমস্যা ও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সংকটের আকার নিয়েছে। পরিবার ও সমাজ জীবনে সর্বশ্রেণীর মাদকের যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তার ধারায় একটি সাধারণ সুর লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। ড্রাগের করলে অনেক সুখের সংসার তছনছ হয়ে যায়। সমাজে অনেক অপরাধ প্রবণতার সৃষ্টি হয়। মানুষ তার নেশার পয়সা জোগাড় করতে যে কোন কাজ করতে প্রস’ত হয়ে পড়ে। ব্যক্তিত্ব হারিয়ে সামাজিক রীতিনীতিকে লংঘন করে সমাজকে ধ্বংসের মুখোমুখি করে তোলে।

শিক্ষাই সমাজ ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিশোর ও তরুণদের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিসহ সর্বাধিক ও সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রকেই রুদ্ধ করে দেয় মাদক। গবেষণায় দেখা গেছে মাদকাসক্ত বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই পরবর্তীতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে এবং অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রি, চুরি, মাস-ানীসহ বিভিন্ন প্রকার বেআইনী তৎপরতায় লিপ্ত হয়। যেমন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায় স্কুল ও কলেজের একটি বড় অংশ ছেলে-মেয়ে মাদকাসক্ত এবং তারা প্রতিষ্ঠানে মাদক ব্যবসা চালানোর জন্য অস্ত্র পর্যন- ব্যবহার করে থাকে। আমাদের দেশের অবস’া যদিও এ রকম নয়, তবে এভাবে চললে হতে কত দিন-যদি তার বাধভাঙ্গা স্রোতকে রোধ করা না যায়?

নেশা বা ড্রাগ ব্যবহারের কোন সুফল আছে কিনা, তা এ পর্যন- কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। কিন’ এর কুফল সুদুর প্রসারী। তার আলোচনা না হয় নাই করলাম। কারণ তাতে আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। বরং কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় এবং স্কাউটদের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলি।

প্রথমে আসা যাক সমাজকে আমরা কতটা মাদকমুক্ত করার ব্যবস’া নিয়েছি- সে প্রসঙ্গে। রোভার প্রোগ্রামে পঞ্চশীলের মাধ্যমে কিছুটা মাদক বিরোধী চেতনার উন্মেষ ঘটাতে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন’ অপর দিক টিন এজ বা বয়সন্ধিকালে যখন এ ধরনের কুঅভ্যাসের জন্ম অর্থাৎ বয়স্কাউটিং প্রোগ্রামে এরকম বাস-বিক কোন বিষয়ের পদচারণা খুব বেশি দরকার। স্কাউট প্রোগ্রামে এরকম চেতনা উন্মেষক বিষয়ের সরাসরি উপসি’তির কিছুটা অভাব রয়েছে বলে আমি মনে করি। অথচ বি,পি রচিত স্কাউটিং ফর বয়েজ গ্রনে’র একটি অধ্যায়ই রচিত হয়েছে এই বিষয়টি নিয়ে। বিশ্বের এবং এশিয়ার অনেক দেশের স্কাউট প্রোগ্রামে বিষয়টি সরাসরিভাবে এসেছে। আমাদেরও আর বসে থাকলে চলবে না।

এছাড়া স্কাউটরা মাদক ও মাদকাসক্তি প্রতিরোধে অত্যন- কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের সেই প্রাচীন বাণীটিই মনে রাখতে হবে। “মাদকাসক্তকে নয়, মাদককে ঘৃণা কর।” স্কাউটদের কাজের পরিধি ব্যাপক হতে হবে। শুধুমাত্র মাদকমুক্ত দিবসে র্যালীতে অংশগ্রহণ ও উপঢৌকন স্বরূপ একটি সদৃশ্য ‘টিশার্ট’ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজের প্রতি বিশ্বব্যাপী সর্ববৃহৎ সংগঠনের সদস্য হিসেবে পুরো দায়িত্ব পালন তো হবেই না, বরং তা হবে ঘুণে ধরা এই মৃত সমাজের লোক দেখানো বার্ষিক মিলাদ মাহফিলের এক প্যাকেট রসালো আলাউদ্দিনের মত।

মাদকাসক্তি প্রতিরোধে স্কাউটদের কাজ প্রথমে আরম্ভ করতে হবে তার নিজের ব্যক্তিগত প্রতিরোধ তৈরির জেহাদের মাধ্যমে। পরবর্তীতে স্কাউটরা যে সব কাজ করতে পারে, তার মধ্যে আছে ঃ

১. মাদকাসক্তির প্রধান কারণ দলগত। এই দলকেই যদি দলকেন্দ্রিক স্কাউটিং-এ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য বাস-বতা সমৃদ্ধ সময়োপযোগী প্রোগ্রামের অন-র্ভুক্ত করা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবেই তাদের এই মগের মুল্লুক থেকে মুক্ত করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

২. নিজ এলাকার ধুমপায়ী ও মাদকাসক্তদের সংখ্যা ও অবস’া নিয়ে সমীক্ষা।

৩. সুস’ বিনোদনের ব্যবস’া করণ ও ব্যক্তিগত কৌতুহল (যা মাদকাসক্তের কারণ) কে সুস’ খাতে পরিচালনার প্রকল্প গ্রহণ ইত্যাদি।

এগুলো হলো আমার ব্যক্তিগত কিছু পরিকল্পনা ও চিন-া ভাবনা। প্রতিটি দলই মাদক বিরোধী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নিজেরাই অনেক নতুন নতুন প্রস-াবনা গ্রহণ ও বাস-বায়ন করতে পারে। তবে সব পরিকল্পনা গ্রহণের আগে আমাদের অবশ্যই মানুষের খুব কাছাকাছি গিয়ে ব্যাপারটি অনুধাব করানোর ব্যবস’া নিতে হবে। তার জন্য দরকার প্রথমতঃ স্কাউট সমাজে সত্যিকার মাদক বিরোধী চেনার উন্মেষ ও সদিচ্ছা এবং নিঃস্বার্থ কিছু ত্যাগ।

আমরা তরুণ সমাজই এ দেশের ও জাতির ভবিষ্যত সম্পদ। তাই আমরা নিজেরাও মাদকের মাজরা পোকার আক্রমনে ধ্বংস হবনা এবং অন্যকেও ধ্বংস হতে দেবনা। এটাই হোক আজকের অঙ্গিকার।-------------------------------ইমতিয়াজ রহমান শাম

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.