নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা স্যার

সুব্রত বৈরাগী

সুব্রত বৈরাগী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘটনাটা কেমন হলো

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৮


“তোমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ঘটনাটা তোমার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষের কাছে কােন দিনই বলো না। বললে সেই তােমার জীবনের সবচেয়ে দূরের মানুষ হয়ে দাঁড়াবে।” মৃত্যুর কিছুকাল আগে ঠাকুর দাদা কথাগুলো বলেছিলেন। কথাগুলো আজও সুজনের মনের কােণে জমে আছে।
সুজন তিন মাস বিয়ে করেছে। স্ত্রীর কাছে মজার ঘটনাগুলো বলতে দারুণ ইচ্ছে করে কিন্তু ঠাকুর দাদার কথাগুলো মনে হলে আবার থেমে যায়। কথাগুলো অনেক কষ্টে চাপা দিয়ে রাখে।
আজ রমা বাড়িতে নেই। সুজন একা। অনেক কথা ভাবল। মনের আবেগ বেড়ে গেল। মনকে আর চাপিয়ে রাখতে পারল না। চিন্তা করল দূরের কােথাও গিয়ে তার মনের কথা অনেকাংশ কাউকে বলে আসবে।
রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল। ভাবল দিন শেষ যেখানে যাবে সেখানের কাউকে কিছুটা বলবে। কথাগুলো ভালোমত সাজালো। ঝিলমিল পার্কে যেতে বিকেল হয়ে এলো। মনে মনে প্লান করল আজ আর বাড়ি ফিরবে না। রমা বাড়ি নেই। কেউ তার খবরই নেবে না।
একটা প্রস্তর খন্ডের উপর বসল। একটা সিগারেট ধরাল। আরেক জন লােক এসে তার পাশে বসল। সুজন তাকে বসার জন্য একটু জায়গা করে দিল। লােকটা বসতে বসতে বলল, “না ঠিক আছে। বসতে পারবো।”
“সিগারেট চলবে?”
“তা চলবে। যুগ-যামানা যা পড়ছে তাতে কােথাও বসাই যায় না।”
“বয়স কালে এ একটু হয়ে থাকে।”
“কি বলেন? আপনিও দেখছি ওদের দলের। তা একা কেনো?”
“শুনবেন। তা শুনলে আপনাকে একটা গল্প বলতে পারি।”
“নিরিবিলি যখন বসে আছি বলুন। শুনি।”
“বছর পাঁচেক আগের কথা। আমি তখন মামার বাড়ি থকে কলেজ আসি। আমার এক বান্ধবীর কাকাতো বেনের সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উ?ল। মেয়েটির নাম রাধা। রাধা খুব মিষ্টি মেয়ে। যাই হােক ভালোবাসলে সবারই এমন লাগে। আমারও সেই অবস্থা।
বান্ধবীর সাথে কােন না কােন অজুহাতে প্রায়ই তাদের বাড়িতে যেতাম। ওর মা আমাকে দেখে খুব আনন্দিত হতো।
কিন্তু তাদেরকে কখনই এ ব্যাপারখানা বুঝতে দিতাম না। রাধাও ছিল এ ব্যাপারে খুব সতর্ক। আমরা আড়ে অন্তরালে আমাদের সম্পর্ক গভীর করে ফেললাম। রাধাকে ছাড়া যেন দিনই কাটে না। কিন্তু কত বার অজুহাত দেখিয়ে যাওয়া যায়। রাধাকে একদিন আসতে বললাম মামাদের বাড়িতে। রাধা আসতে রাজি হলো। কিন্তু তাকে মামা বাড়িতে উঠতে ভয় পেয়ে গেলাম। মাথায় কােন কাজ করল না। এদিকে বিকেল হয়ে এলো। সন্ধ্যাব্দি রাধা এসে পড়বে। ওকে আনার জন্য আমি বেরিয়ে পড়লাম। দেখলাম রাধার আসতে দেরী হচ্ছে। এর ভেতর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, হােটেলে খেয়ে যাবো। যদি কােন অসুবিধে হয় অনন্ত রাতটা চলা যাবে। তাই করলাম।
হেঁটে আসতে পথে দারুণ বৃষ্টি শুরু হলো। হরসিতদার মেসিন ঘরে উঠে পড়লাম। কেউ নেই। হরসিতদা রাত্রে এখানেই থাকে। মশারী ঠেলে রাধাকে বসতে দিলাম। বৃষ্টি যেন আরো বেড়ে উঠল। রাত নটার দিকে বৃষ্টি একটু থামল। রাধা বলল, তাড়াতাড়ি চলো।”
“বৃষ্টি আরেকটু কুমুক।”
“রাত হয়ে গেলতো।”
যাওয়ার জন্য রেডি হলাম। আবার শুরু হলো বৃষ্টি। বৃষ্টির থামার আর কােন লক্ষণ নেই।
রাত বারোটা বাজল। আমার ঘড়ি বাজতে থাকল। বললাম, “তুমি ঘুমোও। আমি বসে থাকি।”
“আমার ভয় করছে। আমারও।”
“দরজা এখন বন্ধ করে দাও। কেউ আসলে আবার খুলে দিও না কিন্তু।”
“পাগল নাকি।”
দরজা বন্ধ করে দিলাম। রাধা মশারীর ভেতর বসে আছে। আমাকে ডাকলো। বলল, “যা হবার তাতো হয়ে গেছে। তােমার কষ্ট কারার দরকার নেই।”
তবু মশারীর ভেতর গেলাম না। রাধা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। আমি তার মুখো-মুখি বসলাম। ওর দিকে তাকালাম। ওকে আজ সব দিনের চেয়ে আলাদা লাগল। ওর চােখে যেন নেশার যাদু ভেসে উঠছে। দেখলাম সে খুব বেশি ভীতু না। সাহস গড়ে তুলছে।
“তুমিইতো আমার সব। ইহকাল পরকাল।”
“না।”
“কেনো? একজন পুরুষ একজন নারীকে এর চেয়ে সুন্দর ভাবে পেতে পারে না। তুমি আমার মাথায় হাত রাখো।”
“না। তা হয় না।”
“কেনো? তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমিও। আমাদেরতো হারাবার ভয় নেই। আমিতো তােমারি। তােমার কাছে আমার সব সমর্পণ করতে চাই।”
রাধা আমার বুকে মাথা রাখল। আমি ওকে স্পর্শ করলাম না। ও আমাকে ভয় পেল না। কারণ, নারী যাকে মন দেয় তার কাছ থেকে দেহকে দূরে রাখতে পারে না। মন হারালে নারীর দেহে কিছু থাকে না। তবু বাঙ্গালি কেবল দেহ হারানোর অপবাদ দেয়।
সারা রাত সে আমাকে বুকে জড়িয়ে রাখল। মুখের সব কথা বন্ধ হয়ে গেল। কেবল দুটি হৃদয়ের স্পন্দন জেগে উঠল।
ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেল। হরসিতদা আমাকে ডেকে উঠাল। আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। ভয়ও করল।
“কিরে এখানে ঘুমোচ্ছিস কেন?”
নীরবে বসে রইলাম। এদিক উদিক তাকিয়ে রাধার খোঁজ করলাম। কিন্তু জীবনে আর কখনই তার দেখা পেলাম না।”
“বেশ রােমাণ্টিক দেখছি।”
সুজন একটু নীরব হলো। লােকটা বলল, এতো দূরই যখন এলেন চলেন না আমার বাড়ি দিয়ে একটু বেরিয়ে যাবেন। একটু জল খাবেন। পাশেই আমার বাড়ি।
লোকটার পিছন পিছন গেল। ঘরে গিয়ে বসল। লােকটা ঘরে গেল। তার স্ত্রী জল নিয়ে এলো। সুজন থেমে গেলাম।
“তুমি?”
“হ্যাঁ। আমি রাধা।”
“কেমন আছো?”
“ভালো।”
কিন্তু সে সুস্থ্যভাবে বসে থাকতে পারল না। উঠার জন্য ছট-ফট করতে লাগল এবং চলেও গেল।
রাধা নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। লােকটা তার পিছনে গিয়ে দাঁড়াল। ডান হাতটা রাধার পিঠের উপর দিয়ে বলল, “ঐ লােকটা যাই বলুক না কেনো আমি তােমাকে বিশ্বাস করি। সেদিন সে তােমার তেমনি একজন ছিল। আজ নেই। যে নেই তার কথা আর কাউকে বলতে নেই। তাতে তার জীবনে কষ্ট নেমে আসতে পারে । যে তােমার ছিল সে যদি সব দিন না থাকে তবে তার কথা আর কাউকে বলতে হয় না। নিজে হালকা হতে গিয়ে আরেকজনের জীবন ভারী করা হয়।”
সুজন আবার এসে সেখানে বসল। সিগারেট ধরালো। কখন যেন রাত নেমে এলো।

১৬/১১/১৫ইং
অনিল চেয়ারম্যানের বাড়ি,
পুইশুর, কাশিয়ানী, গােপালগঞ্জ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৭

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: ভালোই তো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.