![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমাপ্তির একটা ছেলে হলো। বড় মেয়েটার বয়স ১৩। সন্তানের পার্থক্য একটু বেশি যা বাঙ্গালী সমাজে দেখা যায় না। স্বামীর বয়স ৪১ এবং সমাপ্তির ৩৪।
সমাপ্তি গায়ের মেয়ে। লেখা পড়া কােন রকম শিখেছিল। বাবা গরিব কৃষক। মেয়ের বিয়ে দেওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াল। গ্রামের লােকের সহযোগিতায় সমাপ্তির বিয়ে হলো। স্বামী জেলে। বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে মাছ ধরে। বাড়ি ফেরে এক দুই মাস পর পর। থাকে দশ বরো দিন।
সমাপ্তির সংসারে দারুণ আর্থিক সংকট। স্বামী বাড়ি ফিরলে প্রথম কয়েকদিন বেশ স্বচ্ছল থাকে। আবারো যা তাই। ধার কর্য করে দিনাতিপাত করতে হয়। দুই বছরের মাথায় সমাপ্তির মেয়ে হয়। মেয়েটি সুন্দরী। তার নাম দিল যুথী। সােহাগ তার মেয়ে যুথীকে দেখতে পেল দুই মাস পর। পনের দিন থাকল। তার পরে আবার রওয়না দিল।
চার মাস কেটে গেল। ছয় মাস কাটল। সােহাগ আগে কােন বার এতোদিন থাকেনি। একটু খােজ খবর নিল। খোঁজ খবর নিতে নিতে বছর কাটল। এভাবেই ৩ বছর।
সংসার আর চলে না। সমাপ্তি মেয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি এলো। পাশের বাড়ির সীমার সাথে কাজ করতে ঢাকা এলো। সীমা গার্মেন্টস এ কাজ করে। মেয়ে ছেড়ে সমাপ্তি বেশি দিন থাকতে পারল না। দেড় মাস পরে মেয়েকে দেখতে এলো। মেয়ে এখন কথা বলতে পারে। মার সাথে যেতে চায়। যাওয়ার সময় বেশ কাঁদেও।
সমাপ্তি এখন বাড়ি আসা একটু কমিয়েছে। মেয়েও তেমন মার জন্য কাঁদে না। অনেক দিন হলো সমাপ্তিরও কােন খবর নেই। সীমার কাছে খবর নিয়ে জানা গেল সে নাকি কাজ ছেড়ে দিয়েছে। তবে কি হলো সমাপ্তির?
সমাপ্তি আবার বিয়ে করেছে আরেক গার্মেন্টস কর্মীকে। সে চাকরি ছেড়ে তার স্বামীর সাথে চলে গেছে। নতুন স্বামীর সাথে সংসার চলছে। দেখলে মনে হয় সমাপ্তি এখন খুব সুখে আছে। বাড়ির অবস্থা বেশ ছিমছাম।
সমাপ্তির আবার বাচ্চা হবে। কাজে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তার স্বামী একা কাজ করে । এখানেও একটু আর্থিক সংকট দেখা দিল। খাওয়া-দাওয়াায় কষ্ট হচ্ছে। তবু ভালো লাগছে। সমাপ্তির একটা ছেলে হলো। ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে যুথীর কথা মনে পড়ল। কিন্তু যুথী এখন অতীত। এই ছেলেটাই বর্তমান।
দিন চলছে। হঠাৎ একদিন কারখানায় আগুন লেগে তার স্বামী মারা গেল। সমাপ্তির করুণ দশা। আসলে সমাপ্তির স্বামীর দুর্ভাগ্য। কােন স্বামীই তার টিকল না।
ছেলেটাকে নিয়ে দিন কাটাতে লাগল। স্বামীর গচ্ছিত সব টাকাই শেষ। গার্মেন্টস মালিক তাকে দশ হাজার টাকা দিল। কিন্তু কয়েকদিনেই তা ফুরিয়ে গেল। ছেলের বয়স ছয় মাস। ছেলেটাকে রেখে কাজে আসে। পাশের বাসার মাসির কাছে ছেলেটাকে রাখে মাসে মাসে পাঁচশ টাকা দিতে হয়। কিন্তু দুই মাস পর মাসি ছেলেটাকে নিয়ে পালাল।
এবার সমাপ্তি সন্তান বেদনায় ভেঙ্গে পড়ল। শহর ছেড়ে বাড়ির দিকে রওয়না হলো। বাড়ি এসে শুনল সােহাগ তার মেয়েকে নিয়ে গেছে। একি নিদারুণ যন্ত্রণা। এখন সে কি করবে। সে এ মুখ নিয়ে কিভাবে সােহাগের কাছে যাবে। সে কি যেতে পারবে? পারবে না। কিন্তু মেয়েটার মুখ তার দেখতেই হবে নইলে পাগল হয়ে যাবে।
সমাপ্তির পুরনো ঘরে নতুন বেসে আগমন করল। এ সংসারে এসে ভালো মন্দ দুটো পরিস্থিতি তাকে আকূল করে তুলছে।
ছেলেটা চুরি হওয়া ভালোই হয়েছে। কিন্তু সে এখন কােথায়? কেমন আছে? তার জীবনতো আর পিতা-মাতার আদরে ভরে উঠবে না। সে রইল রহস্য পুরীর গােপন কুটিরে।
বছর না ঘুরতেই সমাপ্তির আবার ছেলে হলো। এ ছেলেটিকে বুকে নিলে তার সে ছেলেটির মুখখানা ভেসে ওঠে। তাইতো সে এই ছেলের চােখে সেই ছেলের হাসি দেখে।
সমাপ্তি সব সময় অপরাধীর মত থাকে। সােহাগ সমাপ্তির এই সরলতার কাছে নীরব হয়ে যায়। নতুন একটা মায়া এসে যােগদেয় তার হৃদয়ে। সমাপ্তি যেন জীবনে আর কােন কথাই বলতে চায় না যদি আসল কথা বেরিয়ে যায়। তাই চােখের ভাষায় অনেক কথা বলে ওঠে। ২০.০৩.২০১৪ইং
তেঁতুলিয়া, কাশিয়ানী, গােপালগঞ্জ।
২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৭
সুব্রত বৈরাগী বলেছেন: সত্য প্রকাশে ধন্যবাদ। আমি খুশি হয়েছি।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০০
সুমন কর বলেছেন: এতো দ্রুত গল্প এগিয়ে গেল......
ভালো লাগেনি।