নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুদীপ কুমার দে

অজানাকে জানার প্রবল ইচ্ছা....

সুদীপ কুমার দে › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধের ময়দানে গ্রেনেড বক্স, থালা, চামুচ দিয়ে গান গাইতাম : আজম খান

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:৩৫

দেশের মাটি আর প্রাণের মানুষদের কাছে নিজেকে উজার করে দিয়েছেন যিনি, তার নাম আজম খান। হঠাৎ করেই একদিন চলে গেলাম আজম ভাইয়ের ভাষায়। কমলাপুরের বাসার সিড়িতে আজম ভাই দাড়িয়ে। ঘরের ভেতরে ঢুকতেই আজম ভাই বিছানায় ডেকে বসালেন। বললেন বস, শরীরটা ভালো না, শুয়ে শুয়ে গল্প বলি শোন,,,,,এরপর আজম ভাইয়ের সাথে কিছুক্ষন কথা..তারপর স্মৃতি। মুক্তিযোদ্ধা আজম খান শুরু করলেন....গান আর অস্ত্র নিয়ে তার যুদ্ধের কিছু কথা,,,,,,,



একাত্তরে যখন যুদ্ধ শুরু হলে তখনতো আমাদের ছাত্রজীবন। আমরা বন্ধুরা সবাই তরুন। মেলেটারীদের জন্য তথন বাসায় থাকা যাচ্ছিল না। সব বন্ধুরা মিলে চিন্তা করলাম, মরব যখন তাহলে যুদ্ধ করেই মরি। আমি আর আমার দুই বন্ধু কচি আর শফি সকালের দিকে আম্মাকে বললাম যুদ্ধ যাব। আম্মা আব্বার অনুমতি নিতে বললেন। ভয় পেয়েছিলাম আব্বা মনে হয় এখনই চড় মারবেন। কিন্তু না আব্বা বললেন, যুদ্ধে যাবি ভালো কথা যা, কিন্তু দেশ স্বাধীন না করে ঘরে ফিরবি না। আব্বাকে সালাম করে বের হলাম দেশ স্বাধীন করতে।এরপর হাটতে হাটতে নরসিংদী, নবীনগরের উপর দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে সেই আগরতলায়। এরপর মেলাগর ক্যাম্পে গেলাম। ওখান থেকে ট্রেনিং নেই।টেনিং নেওয়ার পর সাহস বাড়ানোর জন্য আমাদের কুমিল্লা সালদা ফ্রন্টে পাঠানো হলো। আমরা গ্রামবাসীর সাথে মিশে থাকতাম। গ্রামবাসীরাও আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। আমি সেক্টর দুইতে ছিলাম। খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে।তখনও আমি মেলাগর ক্যাম্পে ছিলাম। অনেকগুলো অপারেশন করেছি। একটি অপারেশনের কথা খুব মনে পড়ে।পাকিস্তানী আর্মিরা তো যুদ্ধ করতে করতে তাদের রেশন, আর্মস এগুলো ফুরিয়ে আসছিল। তখন আমাদের অফিসাররা বললেন. লক্ষ্য রাখবেন তাদের নতুন রেশন আসার সময় এসেছে। যদি কোন নৌকা দেখেন আমাকে ডাকবেন। তখন আমি সালদা নদীর দিয়ে ব্রিজের তল দিয়ে আসছিলাম। একটি পুরান বাড়ি ছিল সামনে। সেসময় কয়েকটে নৌকা আসছিল । প্রায় ১২ থেকে ১৩টা নৌকা। ওস্তাদ বললেন, আপনারা আগে ফায়ার করবেন না। আমি ফায়ার করলে তারপর আপনারা ফায়ার করবেন। শুরু হলো ফায়ার । নৌকাগুলো টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। পরে আমরা খবর পেলাম যে ওই অপারেশনে প্রায় ৮১ জন আর্মি মারা গেছে। ওস্তাদ বললেন :এবার পাল্টা আক্রমন আসবে। এরপর পাকিস্তানীরাও পরে বৃষ্টির মতো গুলি শুরু করে। আমরাতো তখন মাটির বাড়িতে লুকিয়ে ছিলাম। খালের কিনার দিয়ে সড়ে যাই। ঘটনাটি মনে পড়লে এখনও আমার গায়ে শিউরে দিয়ে উঠে। মনে হয়, কেয়ামতের ময়দানে ছিলাম। মনে হয় জানটা হাতের তালুতে ছিল। বিজয় দিবসের দিন আমি লক্ষা নদী আর বালু নদীর কিনারে ছিলাম। খবর পেলাম দেশ স্বাধীন হয়েছে। সন্ধ্যার পর ঢাকায় ঢুকি। আমরা বিজয় পেলাম। এখন ছেলে মেয়েরা দিন বদলের চেষ্টা করছে। আশা করি একটি সোনার বাংলাদেশ হবে। নিশ্চয়ই আমিও একটা স্বর্গরাজ্য বাংলাদেশ দেখব।



এর আগে আইয়ুব গানের বিপক্ষে গনসঙ্গীত গাইতাম। ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী থেকে। আমরা অনেকেই তখন গনসঙ্গীত গাইতাম। এরপরতো শুরু হলো যুদ্ধ।যুদ্ধের ময়াদানে যখনই সময় পেতাম গান বাজনা করতাম। থালা, গ্রেনেড বক্স, চামুচ দিয়ে গান গাইতাম। অন্যান্য ব্যারাকের ছেলেরাতো আসতোই ওস্তাদরা পর্যন্ত চলে আসতো। অনেকেই বলতো কিরে তুই এখন গান গাচ্ছিন কেন : আমি ওদেরকে বললাম : গান গাইলেও মরবি না গাইলেও মরবি । মরব যখন গান গাইয়াই মরি। প্রতিদিন দুই ঘন্টা তিন ঘন্টা আসর বসত। মানুষ গান শুনে কান্না করতো। (স্মৃতিচারন)



সুদীপ দে। [email protected]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:৪৬

ফিরোজ-২ বলেছেন: ভালো লাগলো

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:৫১

সুদীপ কুমার দে বলেছেন: ধন্যবাদ...।

৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:১৯

সোহেল_সিএসই_ঢাবি বলেছেন: ভালো লাগলো

৪| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:৩৭

সত্যান্বেষী বলেছেন: গুরুকে স্যালুট।

৫| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:১০

আতিক একটেল বলেছেন: গুরু তোমায় সালাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.