নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক.
সংবাদ মাধ্যমের কালোদিবস পালন আজ মিডিয়া ভুলে গেছে!!!!!!
নৈতিক মূল্যবোধ থেকে সরে এসে সরকারের পদলেহন করছে ॥
সময়ের সাহসী সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান বিনা দোষে কারাগারে বন্দী??!!
সূফি বরষণ
গতকাল ২০১৫ সালের ১৬ জুন ছিল পুরোপুরি ব্যতিক্রম। ১৬ জুন ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের নাম॥ সংবাদপত্রের কালো দিবস॥ যেই অধ্যায়ের সূচনা করেন শেখ মুজিব॥ ১৯৭৫ সালের এইদিন তৎকালীন একদলীয় বাকশাল সরকার সংবাদপত্র ব্যবস্থাপনা আদেশ জারি করে। ওই আদেশ বলে সারাদেশে মাত্র ৪ (চার)টি দৈনিক পত্রিকা রেখে বাকি সকল দৈনিক পত্রিকা বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়। এই ৪টি দৈনিক ছিল- দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টামইস। এই ৪টি দৈনিককেই সরকারি মালিকানায় রাখা হয়। এই ৪টি দৈনিক পরিচালনার জন্য সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিউজ পেপার ম্যানেজমেন্ট বোর্ড নামে একটি কর্তৃপক্ষের সৃষ্টি করা হয়েছিল॥ গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক যায়যায়দিন, দৈনিক সংগ্রাম এবং দৈনিক দিনকাল ছাড়া অন্য কোনো জাতীয় পত্রিকায় 'সংবাদপত্রের কালো দিবস আজ' এই ধরনের কোন খবর চোখে পড়েনি??!!!!!
অনলাইনগুলোর মধ্যে বিডিনিউজ, বাংলানিউজ, বাংলামেইল- কোনো মূলধারার পোর্টালও খবরটি প্রকাশ করেনি??!! আর টিভি চ্যানেল !!!
সে তো আকাশের চাঁদ ॥ এটা তো সবাই ভালো করেই জানে টিভি চ্যানেল সরকারের আগ্গাবহ দালাল ॥ আজ একশ্রেণীর সাংবাদিকদের নৈতিক অবক্ষয়ের শেষ সীমায় পৌঁছে ॥ আজ না দেশের সংবাদপত্র স্বাধীন আর না দেশের সাংবাদিক স্বাধীন ॥
বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় দাবি করা হয়ে থাকে যে, 'এই সরকারের আমলে গণমাধ্যম সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে। এখন সংবাদিকতার স্বর্ণযুগ!' স্বাধীনতার এই 'স্বর্ণযুগে' নিজের অস্তিত্বের প্রতি আসা হুমকির কথা মুখ ফুটে বলতে না পারা বা চাওয়াও 'সংবাদপত্রের স্বাধীনতা'র একটি উদাহরণ বটে!
অথবা হতে পারে, পরিবর্তনের ওই ঝড়ো হাওয়ায় হয়তো এখানার সংবাদপত্রের কালো দিবসটি 'সাদা' হয়ে গেছে। তবে এই কালো থেকে সাদা হওয়ার প্রক্রিয়াটি খুবই নীরবে ঘটায় অনেক সচেতন মানুষের চোখও এড়িয়ে গেছে!॥
আজ সংবাদ মাধ্যম এবং সাংবাদিকের যদি এই অবস্থা হয় তবে প্রিয় পাঠক একটু ভাবেন, মুজিবের রক্ত যে হাসিনার শরীরের সে তো পিতার মতো বাকশালী আচরণ করবেই॥ শুধু মাত্র ধরন পাল্টেছে , মুজিব ঘোষণা করে করেছে কিন্তু হাসিনা কৌশল করে অঘোষিত বাকশালী শাসন চালিয়ে যাচ্ছে ॥ এবার তো দাপটের সাথে নির্বাচন বিহীন দেশে অপশাসন চালিয়ে যাচ্ছে ॥
আমরা আজ বড়ই দূর্ভাগা জাতি, যে রাজপদে প্রতিবাদ তো দূরের কথা ফেইসবুকে প্রতিবাদ করেও কেউ রেহাই পাচ্ছে না॥ আমি তো এক ছোটো খাটো সাংবাদিক সরকারের প্রতিবাদ করে আজ পাঁচ বছর ধরে বিদেশ পড়ে আছি মায়ের প্রিয় মুখখানা দেখতে পারছি না ॥
দুই.
১৬ জুনের ঘোষণার পর সরকারি মুখপত্র হিসেবে ইত্তেফাক যখন বের করা হয়, এই ঐতিহ্যবাহী পত্রিকাটির ২৬ বছরের ইতিহাস বেমালুম গায়েব করে দেয়া হয়েছিল। লেখা ছিল ‘১ম বর্ষ ১ম সংখ্যা’। কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের স্টাইলে তখন পত্রিকা চারটি 'সংবাদপত্র'র বদলে ‘সরকারিপত্র’র চরিত্র পরিগ্রহ করেছিল। ‘ইত্তেফাক’ আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে এর মুখপত্র ছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে জনপ্রিয় করেছে দীর্ঘদিনের প্রচারণায়। আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় এই পত্রিকা পাকিস্তান আমলে প্রায় তিন বছর প্রকাশিত হতে পারেনি, আর সম্পাদক মানিক মিয়াকে থাকতে হয়েছে জেলে। সে ইত্তেফাকের সাথে মুজিব নেতৃত্বাধীন বাকশাল সরকারের আচরণ জাতিকে বিস্মিত করেছে। তখন ইত্তেফাকের প্রাণপুরুষ এবং কার্যনির্বাহী ও বার্তা সম্পাদক আসফউদদৌলা রেজাকে কোনোমতেই বশীভূত করতে না পেরে সরিয়ে দেয়া হয় এক সময় এই দিনটি সংবাদপত্রের কালো দিবস হিসেবে সব সাংবাদিকই পালন করতেন। কিন্তু বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ভাগ হয়ে যাওয়ার পর থেকে এই দিবসটি আর সব সাংবাদিক পালন করেন না। এখন কেবল এটি পালন করে জাতীয়তাবাদীপন্থি বিএফইউজে ও ডিইউজে’র একাংশ। আওয়ামীপন্থি বিএফইউজে ও ডিইউজে দিবসটি পালন করে না। বিষয়টি একেবারেই রাজনৈতিক হয়ে গেছে॥
‘দৈনিক আমার দেশ'-এর প্রকাশনা বন্ধ, প্রেসে তালা মেরে পুলিশ দিয়ে সীলগালা করে রাখা এবং ঐ পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেফতার করে হয়রানিমূলক একাধিক মামলা দিয়ে দীর্ঘ রিমান্ডে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এর আগেই সরকার চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দিয়েছে। ইসলামীক ও দিগন্ত -টিভির সম্প্রচারইও বন্ধ করে রেখেছে সরকার দীর্ঘদিন ধরে॥ এর ফলে দুটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার শত শত সাংবাদিক-টেকনিশিয়ান ও সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। এসব ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিক-সাংবাদিকদের উচ্চ আদালতে গিয়ে প্রতিকার পাবার পথও সরকার তার নির্বাহী কর্তৃত্ব ও দাপটে বন্ধ করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক সমাজ আশংকার সাথে লক্ষ্য করছেন, আওয়ামী লীগ বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের অপরিহার্য প্রাণস্পন্দন স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং মুক্ত সাংবাদিকতাকে সহ্য করতে না পেরে নতুন করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণে রাজনৈতিকভাবে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। এ কারণে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয়॥গণমাধ্যমের প্রকাশনা ও সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয় এবং সাংবাদিক-সংবাদকর্মীদের চাকরিচ্যুত করে তাদের ওপর মামলা-হামলা চালানো হয়। সংবাদপত্র ও গণতন্ত্রের এই দুঃসময়ে সাংবাদিক সমাজকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে আরও সংহত, ঐক্যবদ্ধ ও সংগ্রামী হওয়া ছাড়া পেশাগত অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার আর কোন বিকল্প নেই॥
তিন.
৪টি দৈনিকের জন্য আলাদা আলাদা সম্পাদক ছিলেন, তবে তারা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হয়েছিলেন। যেমন দৈনিক ইত্তেফাকে সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী। : ঐতিহ্যবাহী দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আজাদী (চট্টগ্রাম)সহ শ শ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইলেকট্রনিক মিডিয়া বলতে বাংলাদেশ রেডিও ও বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি ছিল পিওর সরকারি সংস্থা। অর্থাৎ তখন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া একশভাগই ছিল সরকারের মালিকানায়॥ এমন সব ঘটনা ঘটেছিল সেই সময়কার বাকশাল নামের একটি করিৎকর্মা সরকারের আমলে। এই সরকারটি ছিল আবার ‘অনির্বাচিত’। তবে তা আইনী প্রলেপ পেয়েছিল। যাকে বলা হয় সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনী, তারই ফসল ছিল ওই বিনা ভোটের নির্বাচিত সরকার। জাতীয় সংসদে বিনা আলোচনায় পাস করে যে বাকশাল সরকার গঠিত হয়েছিল, তাকে ‘নির্বাচিত’ বলে ধরে নিতে হবে বলে উল্লিখিত ছিল ওই অদ্ভুত আইনে। : এই ‘অনির্বাচিত’ বাকশাল সরকার বাকশাল সম্পর্কে আওয়ামী লীগের মধ্যে আগেও যেমন বিরোধ ছিল, এখনো রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদকে বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হয়নি। আরেক কেন্দ্রীয় নেতা খোন্দকার মুশতাক আহমদ বাকশাল ধারণার বিরোধী ছিলেন। এই বাকশাল বা একদলীয় সরকার চালু করে দেশে এক ধরনের অদ্ভুত সমাজতন্ত্র’ চালুর জিগির তোলা হয়। ‘বিশ্বে এলো নতুন বাদ, মুজিববাদ, মুজিববাদ’ এমন স্লোগানও শোনা গিয়েছিল তখন। : এসব সম্পর্কে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ লিখিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থে নির্ভরশীল বর্ণনা পাওয়া যায়। দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লি: (রেড ক্রিসেন্ট বিল্ডিং ১১৪ মতিঝিল বা/এ, পোস্ট বক্স নং ২৬১১, ঢাকা-১০০০)। (২০০০ সালে বইটির চতুর্থ সংস্করণ ছাপা হয়েছিল। অর্থাৎ বলা যায় বইটি ভালো বাজার পেয়েছে। বইটি এখন বাজারে সুলভ নয় বলেও জানা যায়। কেউ কেউ এর ফটোকপি (সংস্করণ) ব্যবহার করেন। : যা হোক, এই গ্রন্থের ২৩৪ পৃষ্ঠায় ড. ওয়াজেদ লিখেছেন, “অতপর খন্দকার মোশতাক আহমদ সাহেব আমাকে গেটের নিকটস্থ আম গাছটির কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, আগামীকাল তোমার শ্বশুর (বঙ্গবন্ধু) সংবিধানের যে পরিবর্তন ঘটাতে যাচ্ছেন, তা করা হলে সেটা শুধু একটি মারাত্মক ভুলই হবে না, এর ফলে দেশে এবং বিদেশে তার ভাবমূর্তিও অপূরণীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতএব, এক্ষুণি বাড়ির (৩২ নং) তেতলায় বৈঠকখানায় গিয়ে তোমার শ্বশুরকে এ বিষয়টি সঠিকভাবে অনুধাবন করানোর চেষ্টা করো। আমি আমার শেষ চেষ্টা করে বিফল মনোরথে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।” এই কথাগুলো বলেই খোন্দকার মুশতাক আহমাদ বঙ্গবন্ধুর বাসা থেকে চলে গেলেন - সরকারের এ নীতির ফলে প্রায় আট হাজার সংবাদপত্রসেবী পেশাচ্যুত হন। বেকার অবস্থায় দীর্ঘ দিন সপরিবারে অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করতে হয়েছে বহু সাংবাদিককে। এমনকি তাদের কেউ কেউ এ অবস্থার মধ্য দিয়েই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন। গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকারের এই নগ্ন হস্তেক্ষেপ রুদ্ধ হয়ে যায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, গোষ্ঠীর স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা। সাংবাদিক সমাজ সেই থেকে এই দিনটিকে সংবাদপত্রের কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
©somewhere in net ltd.