নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব পাঁচ ক
উপমহাদের রাজনীতিতে রক্ত দেয়া নেয়ার খেলা চলছে এবং ভবিষ্যতেও কি চলবে ????
রাজিব গান্ধীর যেভাবে মৃত্যু হয়॥
সূফি বরষণ
ইন্দিরাপুত্র রাজিব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার জীবনেও ঝুঁকি নেমে আসে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কায় সেনা পাঠিয়ে তিনি তামিল গেরিলাদের বিরাগভাজন হন। শ্রীলঙ্কা সফরকালে এক সেনা সদস্য তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ১৯৯১ সালের ২১ মে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়–তে কংগ্রেসের এক নির্বাচন প্রচারাভিযানে অংশ নিতে গিয়ে তিনি তামিল গেরিলাদের আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন। রাজিব গান্ধীর ছোট ভাই সঞ্জয় গান্ধী রাজনৈতিক কারণে নিহত না হলেও বিমান চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারান।
৩১শে অক্টোবর ১৯৮৪, যেদিন ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দেহরক্ষীদের দ্বারাই নিহত হন সেদিন গান্ধী পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন। তাঁর মায়ের দুই শিখদেহরক্ষী দ্বারা হত্যা-কান্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উচ্চ পর্যায়ের কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ এমনকি রাষ্ট্রপতি জৈল সিং ও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য চাপ দিতে থাকেন। দেশের রাজধানী দিল্লিতে শিখ-বিরোধী দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে রাজীব গান্ধীর, "যখন একটি বিশালাকৃতি বৃক্ষের পতন হয় তখন তার তলায় ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়; এই মন্তব্যটির জন্য ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হতে হয়েছিল। বহু কংগ্রেস রাজনীতিককে এই দাঙ্গা পরিকল্পনার/পরিচালনার জন্য দায়ী করা হয়েছিল॥ যেহেতু তত্কালীন লোকসভা তার পাঁচ বছর কার্যকাল সম্পূর্ণ করেছিলো সেহেতু রাজীব কার্যভার গ্রহণের অব্যবহতি পরেই রাষ্ট্রপতি জৈল সিংকে লোকসভা ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন করতে অনুরোধ জানান। রাজীব গান্ধী আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেস পার্টির সভাপতি ও মনোনীত হলেন।
ভারত বর্ষের সংসদের ইতিহাসে সর্বকালীন সর্ববৃহদ সংকখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে কংগ্রেস পার্টি এক অভূতপূর্ব বিজয় লাভ করে॥ সরকারের ওপর গান্ধীর একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তারুণ্য, নিষ্কলুষ (মি. ক্লিন) ভাবমূর্তি ও 'দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিক' এই প্রেক্ষাপট-বিহীনতা তাঁর সহায়ক হয়েছিল। রাজীব তাই কংগ্রেসের অনুকূলে ভারতের জনসাধারণের আশা ও উদ্দীপনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে পেরেছিলেন।
গান্ধী তাঁর মায়ের, সমাজবাদী, পথের বিশিষ্ট ভাবে ভিন্ন পথে নেতৃত্ব প্রদান আরম্ভ করেছিলেন। তিনি, ভারতের সমাজতান্ত্রিক নীতি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বন্ধুত্যপুর্ণ সম্পর্কের কারণে দীর্ঘ সংকটাদীর্ণ ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি এবং অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার প্রসার সাধন করেন। তিনি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা এবং সমগোত্রীয় শিল্পে সরকারী সহায়তা বৃদ্ধি, বৈদেশিক আমদানির পরিমাণ হ্রাস, প্রযুক্তি-নির্ভর শিল্প, বিশেষত কম্পিউটার, এয়ারলাইনস, সামরিক ও টেলিযোগাযোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কর ও শুল্ক হ্রাস কম্পিউটার করেন.তিনি, ব্যবসায়ীদের মূলধন সংগ্রহ, ব্যক্তি বিশেষের ভোগ্য পণ্য ক্রয় এবং আমদানির ওপর আমলাতান্ত্রিক বিধি-নিষেধ সৃষ্টিকারীলাইসেন্স রাজ এর হ্রাসের জন্য কিছ গুরুত্বপূর্ণ পন্থার প্রচলন করেছিলেন। সারা ভারত ব্যাপী উচ্চ শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৮৬ সালে জাতীয় শিক্ষা নীতি ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে জওহর নবোদয় বিদ্যালয় সিস্টেম-এই নামে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন একটি প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেন যার প্রধান লক্ষ ছিল ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত অবৈতনিক-গৃহশিক্ষা সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে সমাজের গ্রামীন ক্ষেত্রে মানুষের উন্নয়ন। তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৯৮৬ সালে MTNL -এর সৃষ্টি হয় এবং পাবলিক কল অফিস যা PCO এই নামেই খ্যাত গ্রামীন এলাকাগুলিতে টেলিফোনের বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেছে।
তাঁর অনুমোদনেই জঙ্গি কার্যকলাপের রাশ টানতে পঞ্জাবে এক বিস্তীর্ণ পুলিশী ও সামরিক অভিযান চালানো হয়। পাঞ্জাব রাজ্যে এক সামরিক আইন জারির মতো অবস্থা চলছিলো যার ফলে অসামরিক মুক্ত জীবনযাপন, ব্যবসা-বানিজ্য ও পর্যটন শিল্প বিশেষ ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছিল। সেই সময় এখানে পুলিশ অধিকর্তা ও জঙ্গি উভয়ের দ্বারাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এরকম অভিযোগ ও করা হয় যে, যখন পঞ্জাবের পরিস্থিতি আয়ত্তের মধ্যে তখন ভারত সরকার শ্রীলঙ্কা সরকারের সঙ্গে যুদ্ধরত LTTE বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেছে। ১৯৮৭ সালের ২৯শে জুলাইকলম্বোতে রাজীব গান্ধী ও শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রপতি জে আর জয়ার্ধনের মধ্যে ইন্দো-শ্রীলঙ্কা পীস একর্ড স্বাক্ষরিত হয়। তার পর দিনই, ৩০শে জুলাই১৯৮৭ সালে রাজীব গান্ধী যখন গার্ড অফ অনার নিচ্ছিলেন তখন ভিজয়ামুনিগে রোহন দি সিলভা নামে একজন নবীন সিহ্নলী নৌ-সেনা সদস্য রাইফেলের কুদো দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে। আঘাতটি রাজীব গান্ধীর মাথার পিছনে করার উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকলেও তা তাঁর কাঁধে লাগে। "রাজীব একটু লাফিয়ে উঠেছিলেন এবং তাঁর সামান্য ভারসাম্য হারিয়ে ছিল" এই বলে লজ্জিত শ্রীলঙ্কা খ
রাষ্ট্রপতি,জুনিয়াস রিচার্ড জয়েবার্দেনে প্রথমিক ভাবে এই অদ্ভূত ঘটনাটিকে পাস কাটাতে চয়েছিলেন, রাজীব গান্ধী নতুন দিল্লিতে ফেরার পথে জে এন দীক্ষিত কে বলেছিলে "নিশ্চিত রূপে আমার আঘাত লেগেছিলো"। নৌ-সেনা সদস্য রোহন সেই সময় ভারতের সাম্রাজ্যবাদিতার বিরুদ্ধে সিন্ঘলীদের কাছে জাতীয়তাবাদের এক প্রতিভূ হয়ে উঠেছিলো। শ্রীলঙ্কা সরকার ও LTTE বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর প্রচেষ্টাটি যখন প্রত্যাঘাত করে তখন রাজীব গান্ধীর সরকারও এই কাজের জন্য বড়ো একটি ধাক্কা খায়॥
এতো ভালো কিছু করার পরও কেন মরতে হলো গান্ধীকে, নেহেরু কে, ইন্দিয়া কে এবং রাজিব গান্ধীকে ॥ একজনেরও তো স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারতো কিন্তু হয়নি আর হওয়ার কথাও না কারণ ইতিমধ্যে আমি আপনি আমরা সবাই জেনে গেছি এরা ক্ষমতার জন্যে মিলিয়ন মিলিয়ন
মানুষ হত্যা করেছে ॥ এদের সবার হাত শরীর ভারত বর্ষের মানুষের রক্তে রাঙানো॥ এরা সবাই খুনী এদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় কি করে ॥ পৃথিবীতে প্রকৃতির শাস্তি বলে একটা কথা আছে তা তো ভোগ করতেই হবে॥
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
©somewhere in net ltd.